কিশোরী রিমির একদিন হঠাৎ করেই পিঠে ব্যথা আরম্ভ হয় আর আয়নায় নিজেকে খেয়াল করে দেখে পিঠটা যেন একদিকে বাঁকা দেখাচ্ছে। ডাক্তার দেখানোর পর জানা গেল, তার স্কোলিওসিস হয়েছে। পিঠের হাড়, অর্থাৎ মেরুদণ্ড সোজা না থেকে ‘S’ বা ‘C’-আকৃতিতে বাঁকা হয়ে গেছে।
রিমির গল্পটা কল্পনা হলেও, এরকম হাজারো শিশু-কিশোর বা প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ আছেন যারা স্কোলিওসিসে ভুগছেন অথচ সময়মতো চিকিৎসা না পেয়ে সমস্যা আরও জটিল করে ফেলছেন।
আজ আমরা জানবো— স্কোলিওসিস আসলে কী, এর কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা বিষয়ক সমস্ত তথ্য।
স্কোলিওসিস কী?
স্কোলিওসিস হলো এমন একটি অবস্থা, যেখানে মেরুদণ্ড একপাশে বাঁকা হয়ে যায়। সাধারণত মেরুদণ্ড সামনের দিকে বা পিছনের দিকে স্বাভাবিকভাবে একটু বেঁকে থাকে, কিন্তু যখন এই বক্রতা পাশের দিকে হয় এবং সেটি ১০ ডিগ্রি বা তার বেশি হয়, তখন সেটিকে স্কোলিওসিস বলা হয়।
বাঁকটি দেখতে ‘S’ বা ‘C’ আকৃতির হতে পারে। এটি একাধিক হাড় (vertebrae) জুড়ে ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে।
স্কোলিওসিসের ধরন
১. ইডিওপ্যাথিক স্কোলিওসিস (Idiopathic): সবচেয়ে সাধারণ। মূলত কিশোর কিশোরীদের মধ্যে দেখা যায়। কারণ জানা যায় নি।
২. কনজেনিটাল স্কোলিওসিস (Congenital): জন্মগতভাবে হাড়ের গঠনজনিত সমস্যা থেকে হয়।
৩. নিউরোমাসকুলার স্কোলিওসিস: সেরিব্রাল পালসি বা মাসকুলার ডিসট্রফির মতো রোগের কারনে হয়ে থাকে।
৪. ডিজেনারেটিভ স্কোলিওসিস: বয়স্কদের ক্ষেত্রে ডিস্ক ক্ষয় বা আর্থ্রাইটিসজনিত কারণে হয়ে থাকে।
স্কোলিওসিস হওয়ার লক্ষণসমূহ
১।পিঠের একপাশ উঁচু বা নিচু হয়ে যাওয়া
২। এক কাঁধ বা কোমর নিচু হয়ে যাওয়া
৩। মেরুদণ্ড দৃশ্যমানভাবে বাঁকা হয়ে যাওয়া
৪। ব্যথা (বিশেষ করে কোমরে বা ঘাড়ে)
৫। শ্বাসকষ্ট (মারাত্মক ক্ষেত্রে)
৬। লম্বা সময় দাঁড়িয়ে থাকলে বা হাঁটলে ক্লান্তিবোধ করা
স্কোলিওসিসের চিকিৎসা পদ্ধতি
স্কোলিওসিসের চিকিৎসা নির্ভর করে বক্রতার ডিগ্রি, বয়স ও রোগীর শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী। নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
১. মেডিসিন:
স্কোলিওসিস কোনও মেডিসিনে পুরোপুরি ভালো হয় না, তবে ব্যথা বা পেশির টান কমাতে মেডিসিন দেওয়া হয়। চিকিৎসক রোগীর ব্যথা কমাতে, পেশির টান কমাতে এবং স্নায়ুবিক ব্যথা কমাতে মেডিসিন দিয়ে থাকেন।
২. ফিজিওথেরাপি:
স্কোলিওসিসের প্রাথমিক বা মাঝারি স্তরে ফিজিওথেরাপিই সবচেয়ে কার্যকর ও নিরাপদ সমাধান। ফিজিওথেরাপি শুধু ব্যথা কমায় না, বরং মেরুদণ্ডের ভারসাম্য রক্ষা করে বাঁকা হওয়ার গতি কমিয়ে দেয়।
৩. ব্রেস (Brace):
যদি মেরুদন্ডের বক্রতা ২৫–৪০ ডিগ্রির মধ্যে থাকে এবং রোগীর বয়স কম হয়, তবে স্পাইনাল ব্রেস ব্যবহার করা হয়। এটি বক্রতা আরও বাড়তে দেয় না।
প্রতিদিন প্রায় ১৬–২৩ ঘন্টা ব্রেস পরতে হয়।
৪. সার্জারি:
যখন বক্রতা ৫০ ডিগ্রির বেশি, বা ব্যথা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তখন সার্জারি বিবেচনা করা হয়।
৫. যোগ ব্যায়াম (Yoga):
সঠিক নির্দেশনায় যোগব্যায়াম স্কোলিওসিস রোগীদের ব্যথা কমাতে ও শরীর নমনীয় রাখতে সহায়ক হতে পারে। কিন্তু ভুল ভঙ্গিতে ইয়োগা করলে ক্ষতিও হতে পারে, তাই অবশ্যই একজন ভালো ফিজিওথেরাপিস্টের তত্ত্বাবধানে ব্যায়াম করতে হবে।
রিমির মতো অনেকেই আছে যারা ছোটখাটো লক্ষণকে অবহেলা করেন, ফলে পরে বড় জটিলতায় ভোগেন। স্কোলিওসিস হলে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। সময়মতো নির্ভরযোগ্য চিকিৎসা পেলে অনেক ক্ষেত্রেই সার্জারির দরকার হয় না। আপনি যদি কখনো আপনার পিঠ বাঁকানো, কাঁধ নিচু, বা একপাশ উঁচু দেখেন, তবে দেরি না করে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। মনে রাখবেন, সচেতনতা সুস্থতার প্রথম ধাপ।
ছবি- সাটারস্টক
The post স্কোলিওসিস | মেরুদণ্ডের এই সমস্যা নিয়ে জানা আছে কি? appeared first on Shajgoj.
from Shajgoj https://ift.tt/opYIZc1
Jannatul Kawser
Comments
Post a Comment