Skip to main content

হাঁটু ব্যথা থেকে পরিত্রাণের কিছু কার্যকর উপায়

শায়লা জামান ছোটবেলা থেকেই নামাজের প্রতি খুব যত্নশীল। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের একটাও বাদ দেন না। কিন্তু কয়েক মাস ধরে তার তীব্র হাঁটু ব্যথা শুরু হয়েছে। প্রথমে বিষয়টা তেমন গুরুত্ব না দিলেও ধীরে ধীরে ব্যথা বাড়তে লাগল, রুকু ও সিজদায় গেলে হাঁটুতে তীব্র যন্ত্রণা অনুভব করতেন। শেষ পর্যন্ত ব্যথা সহ্য করতে না পেরে চেয়ারে বসে নামাজ পড়া শুরু করলেন। এতে নামাজ ঠিকই হচ্ছিল, কিন্তু মনটা খারাপ লাগত। মনে হতো আর কখনো স্বাভাবিকভাবে নামাজ পড়তে পারবেন না। পরিচিত এক আত্মীয়া তাকে পরামর্শ দিলেন একজন ফিজিওথেরাপিস্টের সঙ্গে কথা বলতে। শায়লা ভাবলেন, চেষ্টা করে দেখাই যাক!

একজন বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপিস্টের কাছে যাওয়ার পর, সেখানে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানা গেল, তার হাঁটু ব্যথার কারণ অস্টিওআর্থ্রাইটিস (হাড়ের ক্ষয়), মাংসপেশির দুর্বলতা ও অনিয়মিত জীবনযাত্রা। চিকিৎসক জানালেন, নিয়মিত ব্যায়াম, কিছু চিকিৎসা ও জীবনধারার পরিবর্তনের মাধ্যমে তিনি ধীরে ধীরে আবার স্বাভাবিকভাবে নামাজ পড়তে পারবেন।

এখন চলুন জেনে নিই, কীভাবে শায়লা জামানের মতো আরও অনেকে হাঁটু ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে পারেন এবং স্বাভাবিকভাবে নামাজ পড়তে পারেন।

হাঁটু ব্যথা হওয়ার পেছনে যে কারণগুলো থাকতে পারে

শায়লা জামানের মতো অনেকেরই বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাঁটু ব্যথা দেখা দেয়। সাধারণত এটি যে সকল কারণ থেকে হতে পারে তা হলঃ

অস্টিওআর্থ্রাইটিস: হাড়ের জোড়ায় ক্ষয়জনিত সমস্যা।

মাংসপেশির দুর্বলতা: হাঁটুর চারপাশের পেশি দুর্বল হয়ে গেলে হাঁটুর উপর চাপ বেড়ে যায়।

অতিরিক্ত ওজন: ওজন বেশি হলে হাঁটুর উপর বাড়তি চাপ পড়ে।

অনিয়মিত জীবনযাত্রা: দীর্ঘ সময় বসে থাকা বা পর্যাপ্ত শারীরিক পরিশ্রম না থাকলে হাঁটু শক্ত হয়ে যায়। যে কারণে হাঁটু ব্যথা দেখা দিতে পারে।

হাঁটু ব্যথা কমানোর জন্য প্রাথমিক চিকিৎসা

গরম ও ঠান্ডা সেক: সকালে উঠে ও রাতে শোবার আগে ১৫-২০ মিনিট গরম পানির ব্যাগ অথবা ঠান্ডা বরফ সেক দিন। এক্ষেত্রে কোন ব্যথার জন্য গরম সেক, আর কোনটির ক্ষেত্রে ঠান্ডা সেক ব্যবহার করবেন, তার জন্য ফিজিওথেরাপিস্টের পরামর্শ নিন।

ব্যথানাশক ক্রিম ও মেডিসিন: চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে প্রয়োজনে ব্যথানাশক ক্রিম বা মেডিসিন ব্যবহার করতে পারেন।

ওজন নিয়ন্ত্রণ: অতিরিক্ত ওজন থাকলে সেটি কমানোর চেষ্টা করুন। এতে হাঁটু ব্যথার অনেকটাই উপশম হবে।

হাঁটু ব্যথা কমানোর জন্য ব্যায়াম

শায়লার ফিজিওথেরাপিস্ট তাকে কয়েকটি ব্যায়াম দিয়েছেন, যা প্রতিদিন সকালে ও বিকেলে করতে হবে।

হালকা স্ট্রেচিং (Stretching Exercise):

১। একটি পায়ের গোড়ালি ধরে পেছনের দিকে টেনে রাখুন, ২০ সেকেন্ড ধরে রাখুন, এরপর পা বদলান।

২। এক পা সোজা রেখে সামনের দিকে ঝুঁকে পায়ের আঙুল স্পর্শ করার চেষ্টা করুন।

মাংসপেশির শক্তি বাড়ানোর ব্যায়াম (Strengthening Exercise):

১। বিছানায় শুয়ে থেকে এক পা সোজা রেখে ওপরে তুলুন, ৫ সেকেন্ড ধরে রেখে নামিয়ে ফেলুন।

২। পিঠ দেয়ালে ঠেকিয়ে বসার মতো অবস্থানে যান এবং ১০-১৫ সেকেন্ড ধরে রাখুন।

হাঁটার অভ্যাস:

১। প্রতিদিন সকালে ও বিকেলে ১৫-২০ মিনিট ধীরে ধীরে হাঁটুন।

২। সিঁড়ি এড়িয়ে চলুন এবং সমতল জায়গায় হাঁটুন।

হাঁটু ব্যথা কমাতে জীবনধারার যে পরিবর্তন আনতে হবে

১) লম্বা সময় বসে থাকা এড়িয়ে চলুন

২) নরমাল চেয়ার ব্যবহারের পরিবর্তে হাঁটুতে সাপোর্ট দেয়া যায়, এমন চেয়ারে বসুন

৩) অতিরিক্ত ঝুঁকে বা ভারী জিনিস তোলা এড়িয়ে চলুন

৪) প্রয়োজনে অভিজ্ঞ ফিজিওথেরাপিস্টের সেবা নিন

ধীরে ধীরে নামাজে ফিরে আসা

প্রথম দিকে চেয়ারে বসে নামাজ পড়তে থাকুন, তবে ধীরে ধীরে হাঁটু মুড়ে বসার অভ্যাস তৈরি করুন।

প্রথমে শুধু রুকু ও সিজদার সময় সামান্য সামনে ঝুঁকুন। ব্যথা কমলে ধীরে ধীরে হাঁটু ভাঁজ করে বসার চেষ্টা করুন।

নামাজের সময় সিজদায় যাওয়ার জন্য হাঁটুতে অতিরিক্ত চাপ না দিয়ে ধীরে ধীরে নামাজ পড়ুন। প্রয়োজন হলে সিজদার সময় নিচে নরম কুশন ব্যবহার করুন।

ফলাফল ও মনোবল ধরে রাখা

নিয়মিত ফিজিওথেরাপি ও ব্যায়াম করার ফলে ধীরে ধীরে হাঁটু ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। একসময় আবারও স্বাভাবিকভাবে নামাজ পড়া এবং অন্যান্য কাজে ফিরে আসা যায়। কিন্তু এই যাত্রায় ধৈর্য ধরতে হবে, নিয়ম মেনে চলতে হবে এবং নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখতে হবে।

যদি আপনারও হাঁটুতে ব্যথা থাকে এবং চেয়ারে বসে নামাজ পড়তে বাধ্য হন, তাহলে দুশ্চিন্তা করবেন না। সঠিক চিকিৎসা, ব্যায়াম ও ধৈর্যের মাধ্যমে ধীরে ধীরে আপনিও স্বাভাবিকভাবে নামাজে ফিরে আসতে পারবেন।

ছবি-সাটারস্টক

The post হাঁটু ব্যথা থেকে পরিত্রাণের কিছু কার্যকর উপায় appeared first on Shajgoj.



from Shajgoj https://ift.tt/sMAFT3K
Jannatul Kawser

Comments

Popular posts from this blog

Dr. Fariah Sharmeen - Woman Oncology Specialist

Dr. Fariah Sharmeen Specialty - Associate Consultant, Oncology Degree - MBBS, FCPS (Radiotherapy) Chamber: SQUARE Hospitals Ltd. Dhaka Address: 18/F Bir Uttam Qazi Nuruzzaman Sarak, West Panthapath, Dhaka - 1205, Bangladesh Call For Appointment 10616 Call Now About: Dr. Fariah Sharmeen successfully completed her MBBS from Cumilla Medical College, and subsequently completed a one-year internship at BIRDEM Hospital, Dhaka. After completing of the internship, she started her post-graduate training in Medical Oncology at the National Institute of Cancer Research & Hospital. She started her fellowship in Radiotherapy in 2010. She completed 4 years of training at the National Institute of Cancer Research & Hospital on External Beam Radiotherapy Planning and Brachytherapy. She achieved FCPS in Radiotherapy from the Bangladesh College of Physicians & Surgeons (BCPS) in 2015. She has obtained several hands-on pieces of training on Head - Neck, Lung, Genitourina...

রেগুলার ব্রা vs পুশ-আপ ব্রা | সঠিক ইনার ওয়্যার কীভাবে সিলেক্ট করবেন?

রেগুলার ব্রা আর পুশ-আপ ব্রা, এই দু’টার মধ্যে আসলে পার্থক্য কী আর কখন কোনটা ইউজ করতে হবে, এই বিষয়গুলো আমাদের অনেকেরই অজানা। আমাদের অ্যাকটিভিটি আর আউটফিটের সাথে ইনার ওয়্যারেও ভ্যারিয়েশন আসে। যেমন সকালে ঘুম থেকে উঠে ওয়ার্ক আউট করছি, এরপর ভার্সিটি বা অফিসে যাচ্ছি, সন্ধ্যায় পার্টি অ্যাটেন্ড করছি। সব সময় কি আমরা সেইম ব্রা পরি? না তো! শাড়ি পরলে এক ধরনের ব্রা পরি, জিমে গেলে অন্য ধরনের ব্রা পরি, বাসায় থাকলে আবার আরেক রকম! কখন কোন ব্রা পরা উচিত বা কোন ড্রেসের সাথে কোনটা মানাবে এই বিষয়গুলো নিয়ে অনেকেরই কনফিউশন আছে। এই বিষয়গুলো এখনও অনেকের কাছেই ট্যাবু। দিন বদলাচ্ছে, এই সামাজিক ট্যাবু থেকে বেরিয়ে আসতে হবে সবাইকে। লঞ্জেরি মেয়েদের জন্য বেসিক একটি জিনিস। তাই লঞ্জেরির ক্যাটাগরিটা আমাদের জেনে রাখা উচিত। পুশ-আপ ব্রা কেন ইউজ করে, এটাই এখনও অনেক মেয়েরা জানে না! রেগুলার ব্রা এর সাথে সাথে নিজের কালেকশনে পুশ-আপ ব্রা কেন রাখা উচিত, সেটা কিন্তু অনেকে বুঝতে পারে না। চলুন এই কনফিউশনগুলো আজ দূর করা যাক। রেগুলার ব্রা vs পুশ-আপ ব্রা    বেসিক রেগুলার ব্রা-এর ক্ষেত্রে ফেব্রিক ম্যাটেরিয়াল ও কমফোর্টের বিষ...

বিবি ক্রিম vs সিসি ক্রিম | স্কিন টাইপ অনুযায়ী কোনটি আপনার জন্য স্যুইটেবল?

ন্যাচারাল মেকআপ লুকের জন্য এখন বিবি ক্রিম ও সিসি ক্রিম বেশ জনপ্রিয়। পার্টি মেকআপ বা ফুল কভারেজ মেকআপের ক্ষেত্রে ফাউন্ডেশন ইউজ করা হয়। কিন্তু যারা রেগুলার হালকা মেকআপ করে বাইরে বের হন, তাদের জন্য বেস্ট অপশন হচ্ছে BB বা CC ক্রিম । কিন্তু আমরা অনেকেই বুঝতে পারি না যে স্কিন টাইপ ও কনসার্ন অনুযায়ী কীভাবে রাইট প্রোডাক্টটি সিলেক্ট করতে হবে। এই দু’টি মেকআপ প্রোডাক্টের বেনিফিট বা কার্যকারিতা নিয়ে আজকের ফিচার। এগুলোর মধ্যে বেসিক ডিফারেন্সটা আসলে কোথায়, সেটাও জানা হয়ে যাবে। বিবি ক্রিম BB (Beauty Balm, Blemish Balm) ক্রিম স্কিনকে ইভেন টোনড করে এবং ব্লেমিশ হাইড করে ফ্ললেস লুক দেয় নিমিষেই। এতে স্কিন ময়েশ্চারাইজিং ও হাইড্রেটিং এলিমেন্টস থাকে, যার কারণে ড্রাই বা নরমাল স্কিনের জন্য এটি একদম পারফেক্ট। এর টেক্সচার ফাউন্ডেশনের থেকে লাইট, তাই কভারেজটাও হয় একদম ন্যাচারাল। মানে একদমই হেভি ফিল হয় না, আর স্কিনটাও পিকচার পারফেক্ট দেখায়। অনেক বিবি ক্রিমে সান প্রোটেকশন ফ্যাক্টর বা SPF থাকে। সিসি ক্রিম CC (Color Corrector, Complexion Corrector) ক্রিমের ফর্মুলা লাইট ওয়েট ও লং লাস্টিং। ম্যাট ফর্মুলার হওয়াতে অয়েল...