Skip to main content

মম ব্রেইন | নতুন মায়ের মনের জটিলতা

একজন নারী নতুন মা হয়ে ওঠার পর অনেকসময় ভুলে যাওয়া, বিভ্রান্তি বা মনোযোগের অভাবের মতো সমস্যার সম্মুখীন হন। অনেক সময়ই এটিকে মজার ছলে “মম ব্রেইন” বলা হয়। কিন্তু বাস্তবে এটি কোনো কল্পিত ব্যাপার নয়, বরং গর্ভাবস্থা এবং সন্তান জন্মের পর একজন নারীর মস্তিষ্কে ও মানসিকতায় যে বিশাল পরিবর্তন ঘটে, তারই প্রতিফলন।

মম ব্রেইন আসলে কী?

“মম ব্রেইন ” বলতে বোঝানো হয় সেই মানসিক পরিবর্তন, যা অনেক নারী গর্ভাবস্থার সময় এবং সন্তান জন্মের পর অনুভব করেন। গবেষণায় দেখা গেছে, এই সময় নারীদের মস্তিষ্কের কিছু অংশে পরিবর্তন ঘটে, বিশেষ করে সামাজিক উপলব্ধির সঙ্গে সম্পর্কিত অংশে। এটি স্বাভাবিক হলেও, অনেক সময় নতুন মায়েদের জন্য এটি হতাশাজনক হয়ে উঠতে পারে।

মায়ের দায়িত্ব শুরু হয় সন্তান জন্ম নেওয়ার আগেই, তবে সন্তানের জন্মের পর এটি আরও জটিল হয়ে ওঠে। অনিদ্রা, মানসিক চাপ এবং অতিরিক্ত দায়িত্ব নেওয়ার কারণে অনেক মা ভুলে যাওয়া, সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যা হওয়া বা মনোযোগ হারানোর মতো সমস্যায় পড়েন।

কেন নতুন মায়েরা এমন অনুভব করেন?

নতুন মায়েরা প্রায়ই রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারেন না, কারণ শিশুকে খাওয়ানো, শান্ত করা বা দেখভাল করতে হয়। পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়ার ফলে তাদের স্মৃতিশক্তি ও মনোযোগে প্রভাব পড়ে। পাশাপাশি, অনেক মা প্রসব পরবর্তী বিষণ্ণতা (Postpartum Depression) বা উদ্বেগজনিত সমস্যার মুখোমুখি হন। এটি তাঁর মানসিক স্বাস্থ্যকে আরও দুর্বল করে তুলতে পারে।

একটি গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি পাঁচজন নতুন মায়ের মধ্যে একজন প্রসব পরবর্তী মানসিক সমস্যার শিকার হন। তাই, মায়েদের এই পরিবর্তনগুলোকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা উচিত এবং মানসিকভাবে তাদের পাশে থাকা প্রয়োজন।

প্রসব পরবর্তী বিষণ্ণতা (PPD) কেমন লাগে?

অনেকে মনে করেন, প্রসব পরবর্তী বিষণ্ণতা মানেই দুঃখী থাকা, কিন্তু এটি আরও জটিল। অনেক মা অকারণে কান্না করে ফেলেন, খিদে কমে যায় বা খেতে ভুলে যান, রাগ বেড়ে যায় এবং পরিবারের কাছের মানুষদের উপর বিরক্ত হন। এমনকি, নিজের শিশুর প্রতিও কোনো অনুভূতি না থাকার মতো অবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে পারেন। এই অনুভূতিগুলো তাদের মধ্যে অপরাধবোধ তৈরি করে, যা মানসিক অবস্থাকে আরও খারাপ করে তুলতে পারে।

কীভাবে মায়েদের সাহায্য করা যায়?

“মম ব্রেইন ” বা প্রসব পরবর্তী বিষণ্ণতা কাটিয়ে ওঠার জন্য সাধারণ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।

১. মানসিক সহায়তা নিন: পরিবারের সদস্য, বন্ধু বা চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন। প্রয়োজনে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

২. শারীরিক বিশ্রাম নিন: পর্যাপ্ত ঘুম না হলে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমে যায়। তাই, সুযোগ পেলেই বিশ্রাম নেওয়া জরুরি।

৩. সাহায্য নিতে দ্বিধা নয় : পরিবারের সদস্য বা কাছের বন্ধুরা যদি সাহায্য করতে চায়, তবে তা গ্রহণ করুন।

৪. মেডিটেশন চর্চা করুন: মেডিটেশন এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম মনকে শান্ত রাখতে সাহায্য করতে পারে।

৫. নিজের যত্ন নিন: শুধু সন্তানের দেখভাল করাই নয়, নিজের প্রতি যত্নশীল হওয়া দরকার। হালকা ব্যায়াম করা বা যা আপনাকে স্বস্তি দেয়, তেমন কিছু করা যেতে পারে।

বাবারাও এই পরিবর্তনের শিকার হন

মজার বিষয় হলো, শুধু মায়েরাই নয়, যারা শিশুর পরিচর্যা করেন, যেমন বাবা বা অন্যান্য অভিভাবকরাও মানসিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যান। গবেষণায় দেখা গেছে, নতুন বাবা-মায়ের মস্তিষ্কে কাঠামোগত পরিবর্তন ঘটে, যা তাদের সংবেদনশীলতা এবং যত্নশীল মনোভাব বাড়িয়ে দেয়।

নতুন মায়েদের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন হওয়া উচিত?

একজন নতুন মা অনেক চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যান, এবং এটি সহজ কোনো কাজ নয়। তাই, আমরা যদি তাদের ভুলত্রুটি নিয়ে বিচার না করে, বরং সাহায্য করতে এগিয়ে আসি, তবে তাদের জন্য এটি অনেক বেশি সহায়ক হবে। মাতৃত্ব শুধু দায়িত্ব নয়, এটি এক গভীর মানসিক পরিবর্তন, যা সবার কাছ থেকে বোঝাপড়া, সহানুভূতি এবং শ্রদ্ধার দাবি রাখে।

মাতৃত্ব এক গভীর মানসিক ও শারীরিক পরিবর্তনের সময়। “মম ব্রেইন ” কোনো অলীক ধারণা নয়; এটি নতুন মায়েদের জন্য বাস্তব এক অভিজ্ঞতা, যা তাদের জীবনকে অনেকভাবে প্রভাবিত করে। এটি শুধুমাত্র ভুলে যাওয়া বা মনোযোগ কমে যাওয়ার বিষয় নয়, বরং সন্তান জন্মের পর মায়ের মানসিক ও আবেগিক অবস্থার একটি স্বাভাবিক প্রতিফলন। আমাদের উচিত নতুন মায়েদের প্রতি আরও সহানুভূতিশীল হওয়া, তাদের মানসিক ও শারীরিক পরিবর্তনগুলোকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করা এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করা। সমাজ, পরিবার ও কাছের মানুষদের সহানুভূতি, সাহায্য এবং ইতিবাচক মনোভাব একজন নতুন মায়ের জন্য বিশাল পার্থক্য তৈরি করতে পারে।
মাতৃত্ব কোনো সহজ পথ নয়, তবে এটি ভালোবাসা, ত্যাগ এবং আনন্দের এক অনন্য যাত্রা। তাই, নতুন মায়েদের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি হওয়া উচিত সহানুভূতিশীল ও সহায়ক, যাতে তারা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে তাদের নতুন ভূমিকাটি গ্রহণ করতে পারেন।

ছবি-সাটারস্টক

The post মম ব্রেইন | নতুন মায়ের মনের জটিলতা appeared first on Shajgoj.



from Shajgoj https://ift.tt/j1LgqWm
Jannatul Kawser

Comments

Popular posts from this blog

রেগুলার ব্রা vs পুশ-আপ ব্রা | সঠিক ইনার ওয়্যার কীভাবে সিলেক্ট করবেন?

রেগুলার ব্রা আর পুশ-আপ ব্রা, এই দু’টার মধ্যে আসলে পার্থক্য কী আর কখন কোনটা ইউজ করতে হবে, এই বিষয়গুলো আমাদের অনেকেরই অজানা। আমাদের অ্যাকটিভিটি আর আউটফিটের সাথে ইনার ওয়্যারেও ভ্যারিয়েশন আসে। যেমন সকালে ঘুম থেকে উঠে ওয়ার্ক আউট করছি, এরপর ভার্সিটি বা অফিসে যাচ্ছি, সন্ধ্যায় পার্টি অ্যাটেন্ড করছি। সব সময় কি আমরা সেইম ব্রা পরি? না তো! শাড়ি পরলে এক ধরনের ব্রা পরি, জিমে গেলে অন্য ধরনের ব্রা পরি, বাসায় থাকলে আবার আরেক রকম! কখন কোন ব্রা পরা উচিত বা কোন ড্রেসের সাথে কোনটা মানাবে এই বিষয়গুলো নিয়ে অনেকেরই কনফিউশন আছে। এই বিষয়গুলো এখনও অনেকের কাছেই ট্যাবু। দিন বদলাচ্ছে, এই সামাজিক ট্যাবু থেকে বেরিয়ে আসতে হবে সবাইকে। লঞ্জেরি মেয়েদের জন্য বেসিক একটি জিনিস। তাই লঞ্জেরির ক্যাটাগরিটা আমাদের জেনে রাখা উচিত। পুশ-আপ ব্রা কেন ইউজ করে, এটাই এখনও অনেক মেয়েরা জানে না! রেগুলার ব্রা এর সাথে সাথে নিজের কালেকশনে পুশ-আপ ব্রা কেন রাখা উচিত, সেটা কিন্তু অনেকে বুঝতে পারে না। চলুন এই কনফিউশনগুলো আজ দূর করা যাক। রেগুলার ব্রা vs পুশ-আপ ব্রা    বেসিক রেগুলার ব্রা-এর ক্ষেত্রে ফেব্রিক ম্যাটেরিয়াল ও কমফোর্টের বিষ...

বিবি ক্রিম vs সিসি ক্রিম | স্কিন টাইপ অনুযায়ী কোনটি আপনার জন্য স্যুইটেবল?

ন্যাচারাল মেকআপ লুকের জন্য এখন বিবি ক্রিম ও সিসি ক্রিম বেশ জনপ্রিয়। পার্টি মেকআপ বা ফুল কভারেজ মেকআপের ক্ষেত্রে ফাউন্ডেশন ইউজ করা হয়। কিন্তু যারা রেগুলার হালকা মেকআপ করে বাইরে বের হন, তাদের জন্য বেস্ট অপশন হচ্ছে BB বা CC ক্রিম । কিন্তু আমরা অনেকেই বুঝতে পারি না যে স্কিন টাইপ ও কনসার্ন অনুযায়ী কীভাবে রাইট প্রোডাক্টটি সিলেক্ট করতে হবে। এই দু’টি মেকআপ প্রোডাক্টের বেনিফিট বা কার্যকারিতা নিয়ে আজকের ফিচার। এগুলোর মধ্যে বেসিক ডিফারেন্সটা আসলে কোথায়, সেটাও জানা হয়ে যাবে। বিবি ক্রিম BB (Beauty Balm, Blemish Balm) ক্রিম স্কিনকে ইভেন টোনড করে এবং ব্লেমিশ হাইড করে ফ্ললেস লুক দেয় নিমিষেই। এতে স্কিন ময়েশ্চারাইজিং ও হাইড্রেটিং এলিমেন্টস থাকে, যার কারণে ড্রাই বা নরমাল স্কিনের জন্য এটি একদম পারফেক্ট। এর টেক্সচার ফাউন্ডেশনের থেকে লাইট, তাই কভারেজটাও হয় একদম ন্যাচারাল। মানে একদমই হেভি ফিল হয় না, আর স্কিনটাও পিকচার পারফেক্ট দেখায়। অনেক বিবি ক্রিমে সান প্রোটেকশন ফ্যাক্টর বা SPF থাকে। সিসি ক্রিম CC (Color Corrector, Complexion Corrector) ক্রিমের ফর্মুলা লাইট ওয়েট ও লং লাস্টিং। ম্যাট ফর্মুলার হওয়াতে অয়েল...

লো পোরোসিটি চুল | কীভাবে চিনবেন এবং সঠিক যত্ন নিবেন?

একরাশ সুন্দর ও ঝলমলে চুল কে না চায়? কিন্তু অনেক সময় সঠিক যত্নের অভাবে সুন্দর চুলগুলো দিন দিন নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ে। চুলের যত্নের ক্ষেত্রে আমাদের সবচেয়ে সবচেয়ে বড় ভুল হলো পোরোসিটি না বুঝে হেয়ার কেয়ার করা। এতে করে চুল আরো ড্যামেজ হওয়ার চান্স থাকে। আজকের ফিচারটি মূলত লো পোরোসিটি হেয়ার কেয়ার নিয়ে। লো পোরোসিটি চুল কীভাবে বুঝবো, কীভাবে যত্ন নিতে হবে, কী ব্যবহার করা যাবে ও যাবেনা ইত্যাদি বিস্তারিত জানবো আজকের ফিচারে। লো পোরোসিটি বলতে কী বোঝানো হয়? পোরোসিটি শব্দের বাংলা অর্থ হচ্ছে ছিদ্র। ত্বকে যেমন অসংখ্য পোর বা ছিদ্র থাকে, চুলের ক্ষেত্রেও কিন্তু তাই রয়েছে। অর্থাৎ প্রতিটি চুলে অসংখ্য ছিদ্র বিদ্যমান, যার মাধ্যমে চুলে আর্দ্রতা প্রবেশ করে এবং চুল আর্দ্রতা ধরে রাখার চেষ্টা করে। একেই হেয়ার পোরোসিটি বলে। পোরোসিটি ৩ রকম, হাই, মিডিয়াম ও লো। এই হেয়ার পোরোসিটির মাত্রা প্রত্যেক মানুষের ক্ষেত্রে আলাদা হয়ে থাকে। লো পোরোসিটির চুলগুলো কম ছিদ্র সম্পন্ন হয়ে থাকে। লো পোরোসিটি চুলের কিউটিকল লেয়ার খুব শক্ত ভাবে সংযুক্ত থাকে। যার ফলে এ ধরনের চুল আর্দ্রতা সহজে গ্রহণ করতে পারেনা, তবে একবার আর্দ্রতা গ্রহণ করলে এ ধরনের...