Skip to main content

১০টি সহজ ও ছোট অভ্যাস যা আপনার জীবনে আনবে বড় পরিবর্তন

জীবনে উন্নতি করতে তো আমরা সবাই চাই। কিন্তু সেই লক্ষ্য অর্জনের পথে দাঁড়িয়ে থাকে একটি প্রশ্ন, “কোন জায়গা থেকে শুরু করবো?” জীবনে উন্নতি ও পরিবর্তন আনতে চাইলে প্রথমেই আমাদের মনে রাখতে হবে, বড় পরিবর্তন কখনো রাতারাতি আসে না। তবে ছোট ছোট কিছু ভালো অভ্যাস গড়ে তোলা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনে যা আমাদের বড় লক্ষ্য অর্জনে সাহায্য করে। এই অভ্যাসগুলো আমাদের প্রতিদিনের জীবনে সহজেই প্রয়োগ করা যায় এবং জীবনের দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের ক্ষেত্রে এগুলো বেশ বড় প্রভাব ফেলে। এই ছোট ছোট অভ্যাসগুলোকে বলা হয় মাইক্রো হ্যাবিট। মাইক্রো হ্যাবিট নিয়মিত চর্চা করতে থাকলে প্রায় অজান্তেই এগুলো আমাদের রুটিনের অংশ হয়ে ওঠে এবং সময়ের সাথে আমাদের সামগ্রিক জীবনের উন্নতি ঘটায়। চলুন জেনে নিই এমন ১০টি সহজ ও ছোট অভ্যাস যা আপনার জীবনে আনবে বড় পরিবর্তন!

১০টি সহজ ও ছোট অভ্যাস

১. সকালটা শুরু হোক এক গ্লাস পানি পান করে

সারারাত ঘুমানোর পর সকালে উঠে পানি পান করা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত জরুরি। ঘুমের সময়ে আমাদের শরীর দীর্ঘ সময় ধরে পানি পায় না বলে শরীর ডিহাইড্রেটেড হয়ে পড়ে। তাই সকালে এক গ্লাস পানি পান করলে তা শরীরকে দ্রুত হাইড্রেটেড করে।এটি আমাদের মেটাবলিজম বাড়াতে সাহায্য করে এবং শরীরকে সক্রিয় করে। সকালে পানি পান করার ফলে আমাদের মস্তিষ্কও সতেজ হয়ে ওঠে, যা দিন শুরু করার জন্য আমাদের প্রস্তুত করে।

২. প্রতিদিন অন্তত ৫ মিনিট মেডিটেশন করা

মেডিটেশন বা প্রার্থনা মানসিক শান্তি অর্জনের একটি কার্যকরী উপায়। প্রতিদিন মেডিটেশন করলে চিন্তার জটিলতা কমে এবং মন শান্ত রাখা সহজ হয়। মেডিটেশন আমাদের মানসিক চাপ কমাতে এবং দৈনন্দিন জীবনে মনোযোগ বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এছাড়াও প্রার্থনা করার মাধ্যমে আমরা আমাদের অনুভূতিগুলোকে প্রকাশ করতে পারি এবং আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠতে পারি। প্রার্থনা আমাদের মধ্যে ইতিবাচক অনুভূতির সঞ্চার করে।

৩. কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন

প্রতিদিন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা আমাদের মনোভাবকে ইতিবাচক রাখতে সাহায্য করে। যখন আমরা আমাদের দিনটি নিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি, তখন আমরা আরও পজিটিভ হতে পারি এবং জীবনের প্রতি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি পেতে পারি। সারাদিনে অন্তত একটি জিনিসের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা অভ্যাসে পরিণত করলে, আপনার মানসিক স্বাস্থ্য অনেক উন্নত হবে।

৪. জার্নাল লিখুন, তৈরি করুন টু-ডু লিস্ট

প্রতিদিনের কাজের পরিকল্পনা তৈরি করা এবং জার্নাল লেখা আমাদের সংগঠিত রাখতে সাহায্য করে। আপনার দৈনন্দিন কাজের তালিকা তৈরি করলে আপনি আপনার দায়িত্বগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকবেন, কোনও কাজ বাদ পড়বে না এবং কাজগুলো গুরুত্ব অনুসারে সম্পন্ন করতে পারবেন। এটি টাইম ম্যানেজমেন্টেও সাহায্য করে। এছাড়া আপনার চিন্তা-ভাবনা, অনুভূতি ও অভিজ্ঞতাগুলো জার্নালে লিখলে তা স্ট্রেস কমাতে সহায়তা করে। এটি নিজের অগ্রগতি বুঝতে সাহায্য করে যা আত্ম উন্নয়নে ভূমিকা রাখে।

৫. সোশ্যাল মিডিয়া থেকে বিরতি নিন

একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য প্রতিদিন সোশ্যাল মিডিয়া থেকে বিরতি নিন। এটি আপনাকে মানসিক প্রশান্তি দিবে এবং নিজের সাথে সময় কাটানোর সুযোগ দিবে। তাছাড়া কাজের দিকে ভালোভাবে ফোকাস করতে পারবেন যদি সোশ্যাল মিডিয়া থেকে কিছু সময় দূরে থাকেন। প্রতিদিন কিছু সময়ের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া থেকে দূরে থাকলে ঘুমের মান উন্নত হয়। বিশেষ করে ঘুমের আগে ডিভাইস থেকে দূরে থাকা আমাদের মন ও শরীরকে আরাম দেয় এবং ঘুমের আগে মস্তিষ্ককে রিফ্রেশ করতে সাহায্য করে।

৬. প্রতিদিন কয়েক পৃষ্ঠা বই পড়ুন

বই পড়ার অভ্যাস আমাদের জ্ঞানের ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করে। এটি আমাদের কল্পনাশক্তি বাড়ায় এবং নতুন নতুন ধারণা গ্রহণের সুযোগ দেয়। বই পড়ার মাধ্যমে আমরা ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি উপলব্ধি করতে পারি এবং নিজেদের চিন্তাকে আরো উন্মুক্ত করতে সক্ষম হই। তাই প্রতিদিন কিছু সময় বই পড়ার জন্য বের করুন, এটি আপনাকে জীবনের নতুন পথ দেখাতে সাহায্য করবে।

৭. প্রতিদিন নতুন কিছু শিখুন

প্রতিদিন নতুন কিছু শেখার অভ্যাস দীর্ঘমেয়াদে আমাদের ব্যক্তিগত ও পেশাগত উন্নতিতে অসাধারণ প্রভাব ফেলে। ছোট পরিসরে হলেও প্রতিদিন কিছু নতুন দক্ষতা অর্জন করলে আমাদের মন আরও দ্রুত কাজ করতে শেখে, সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বাড়ায় এবং সৃজনশীলতা বৃদ্ধি করে। হতে পারে নতুন একটি ডিজিটাল ফিচারের ব্যবহার শিখলেন অথবা নতুন কোনও তথ্য জানলেন। এ ধরনের ছোট ছোট দক্ষতা অর্জন আমাদের আত্মবিশ্বাসী করে তোলে।

৮. রোজ কোনও বন্ধুর সাথে যোগাযোগ করুন

বন্ধুর সঙ্গে যোগাযোগ রাখা আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। এটি আমাদের একাকিত্ব কমায় এবং সামাজিক সম্পর্কগুলো উন্নত করে। বন্ধুরা আমাদের জীবনের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় আমাদের সাপোর্ট দিতে পারে এবং আমাদের আনন্দের মুহূর্তগুলোকে ভাগ করে নিতে পারে। তাই সময় পেলেই কোনও বন্ধুর সঙ্গে কথা বলুন, কথা বলতে না পারলে ছোট একটি ম্যাসেজ দিন। এটি আপনার সামাজিক দক্ষতার উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।

৯. নিজের সাথে সময় কাটান

নিজের জন্য কিছু সময় বের করা জীবনে পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কিছু সময় নিজের পছন্দের কাজ করলে বা প্রকৃতির মাঝে ঘুরতে গেলে মানসিক চাপ কমে যায়। নিজেকে বোঝার জন্য নিজের সাথে সময় কাটানো খুবই কার্যকরী একটি চর্চা। এটা আপনার মাইন্ড রিফ্রেশ করে এবং জীবনের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য শক্তি জোগায়।

১০. আপনার সারাদিনের পর্যালোচনা করুন

প্রতিটি দিনের শেষে কিছুটা সময় নিয়ে ভাবুন, আজকের দিনটি কেমন গেল। কী কী ভালো হয়েছে, কোন কোন ক্ষেত্রে আপনি আরও উন্নতি করতে পারেন- তা নিয়ে একটু চিন্তা করুন। এই অভ্যাসটি আমাদের প্রতিদিনের অভিজ্ঞতা থেকে শেখার সুযোগ দেয়। নিজেকে আরও উন্নত করতে সাহায্য করে।

এই মাইক্রো হ্যাবিটগুলোর প্রত্যেকটির নিজস্ব গুরুত্ব রয়েছে এবং এগুলো একত্রে আমাদের জীবনযাত্রাকে উন্নত করে। এ ধরনের মাইক্রো হ্যাবিট আমাদের মধ্যে শৃঙ্খলা গড়ে তোলে, ইতিবাচক মানসিকতা তৈরি করে এবং সময়ের সাথে সাথে জীবনে গভীর পরিবর্তন আনে। তাই জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে চাইলে আজ থেকেই এই অভ্যাসগুলো গড়ে তুলতে শুরু করুন। শুরুতে একটি দুটি করে অভ্যাসগুলোর চর্চা শুরু করুন এবং ধীরে ধীরে আরও যোগ করুন। যদি এই অভ্যাসগুলো দৈনন্দিন জীবনে অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন, তাহলে আপনি দেখবেন সময়ের সাথে সাথে আপনার জীবন কতটা সুন্দর ও অর্থপূর্ণ হয়ে উঠছে।

ছবি- সাটারস্টক

The post ১০টি সহজ ও ছোট অভ্যাস যা আপনার জীবনে আনবে বড় পরিবর্তন appeared first on Shajgoj.



from Shajgoj https://ift.tt/dsbAQme
Munia

Comments

Popular posts from this blog

রেগুলার ব্রা vs পুশ-আপ ব্রা | সঠিক ইনার ওয়্যার কীভাবে সিলেক্ট করবেন?

রেগুলার ব্রা আর পুশ-আপ ব্রা, এই দু’টার মধ্যে আসলে পার্থক্য কী আর কখন কোনটা ইউজ করতে হবে, এই বিষয়গুলো আমাদের অনেকেরই অজানা। আমাদের অ্যাকটিভিটি আর আউটফিটের সাথে ইনার ওয়্যারেও ভ্যারিয়েশন আসে। যেমন সকালে ঘুম থেকে উঠে ওয়ার্ক আউট করছি, এরপর ভার্সিটি বা অফিসে যাচ্ছি, সন্ধ্যায় পার্টি অ্যাটেন্ড করছি। সব সময় কি আমরা সেইম ব্রা পরি? না তো! শাড়ি পরলে এক ধরনের ব্রা পরি, জিমে গেলে অন্য ধরনের ব্রা পরি, বাসায় থাকলে আবার আরেক রকম! কখন কোন ব্রা পরা উচিত বা কোন ড্রেসের সাথে কোনটা মানাবে এই বিষয়গুলো নিয়ে অনেকেরই কনফিউশন আছে। এই বিষয়গুলো এখনও অনেকের কাছেই ট্যাবু। দিন বদলাচ্ছে, এই সামাজিক ট্যাবু থেকে বেরিয়ে আসতে হবে সবাইকে। লঞ্জেরি মেয়েদের জন্য বেসিক একটি জিনিস। তাই লঞ্জেরির ক্যাটাগরিটা আমাদের জেনে রাখা উচিত। পুশ-আপ ব্রা কেন ইউজ করে, এটাই এখনও অনেক মেয়েরা জানে না! রেগুলার ব্রা এর সাথে সাথে নিজের কালেকশনে পুশ-আপ ব্রা কেন রাখা উচিত, সেটা কিন্তু অনেকে বুঝতে পারে না। চলুন এই কনফিউশনগুলো আজ দূর করা যাক। রেগুলার ব্রা vs পুশ-আপ ব্রা    বেসিক রেগুলার ব্রা-এর ক্ষেত্রে ফেব্রিক ম্যাটেরিয়াল ও কমফোর্টের বিষ...

বিবি ক্রিম vs সিসি ক্রিম | স্কিন টাইপ অনুযায়ী কোনটি আপনার জন্য স্যুইটেবল?

ন্যাচারাল মেকআপ লুকের জন্য এখন বিবি ক্রিম ও সিসি ক্রিম বেশ জনপ্রিয়। পার্টি মেকআপ বা ফুল কভারেজ মেকআপের ক্ষেত্রে ফাউন্ডেশন ইউজ করা হয়। কিন্তু যারা রেগুলার হালকা মেকআপ করে বাইরে বের হন, তাদের জন্য বেস্ট অপশন হচ্ছে BB বা CC ক্রিম । কিন্তু আমরা অনেকেই বুঝতে পারি না যে স্কিন টাইপ ও কনসার্ন অনুযায়ী কীভাবে রাইট প্রোডাক্টটি সিলেক্ট করতে হবে। এই দু’টি মেকআপ প্রোডাক্টের বেনিফিট বা কার্যকারিতা নিয়ে আজকের ফিচার। এগুলোর মধ্যে বেসিক ডিফারেন্সটা আসলে কোথায়, সেটাও জানা হয়ে যাবে। বিবি ক্রিম BB (Beauty Balm, Blemish Balm) ক্রিম স্কিনকে ইভেন টোনড করে এবং ব্লেমিশ হাইড করে ফ্ললেস লুক দেয় নিমিষেই। এতে স্কিন ময়েশ্চারাইজিং ও হাইড্রেটিং এলিমেন্টস থাকে, যার কারণে ড্রাই বা নরমাল স্কিনের জন্য এটি একদম পারফেক্ট। এর টেক্সচার ফাউন্ডেশনের থেকে লাইট, তাই কভারেজটাও হয় একদম ন্যাচারাল। মানে একদমই হেভি ফিল হয় না, আর স্কিনটাও পিকচার পারফেক্ট দেখায়। অনেক বিবি ক্রিমে সান প্রোটেকশন ফ্যাক্টর বা SPF থাকে। সিসি ক্রিম CC (Color Corrector, Complexion Corrector) ক্রিমের ফর্মুলা লাইট ওয়েট ও লং লাস্টিং। ম্যাট ফর্মুলার হওয়াতে অয়েল...

লো পোরোসিটি চুল | কীভাবে চিনবেন এবং সঠিক যত্ন নিবেন?

একরাশ সুন্দর ও ঝলমলে চুল কে না চায়? কিন্তু অনেক সময় সঠিক যত্নের অভাবে সুন্দর চুলগুলো দিন দিন নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ে। চুলের যত্নের ক্ষেত্রে আমাদের সবচেয়ে সবচেয়ে বড় ভুল হলো পোরোসিটি না বুঝে হেয়ার কেয়ার করা। এতে করে চুল আরো ড্যামেজ হওয়ার চান্স থাকে। আজকের ফিচারটি মূলত লো পোরোসিটি হেয়ার কেয়ার নিয়ে। লো পোরোসিটি চুল কীভাবে বুঝবো, কীভাবে যত্ন নিতে হবে, কী ব্যবহার করা যাবে ও যাবেনা ইত্যাদি বিস্তারিত জানবো আজকের ফিচারে। লো পোরোসিটি বলতে কী বোঝানো হয়? পোরোসিটি শব্দের বাংলা অর্থ হচ্ছে ছিদ্র। ত্বকে যেমন অসংখ্য পোর বা ছিদ্র থাকে, চুলের ক্ষেত্রেও কিন্তু তাই রয়েছে। অর্থাৎ প্রতিটি চুলে অসংখ্য ছিদ্র বিদ্যমান, যার মাধ্যমে চুলে আর্দ্রতা প্রবেশ করে এবং চুল আর্দ্রতা ধরে রাখার চেষ্টা করে। একেই হেয়ার পোরোসিটি বলে। পোরোসিটি ৩ রকম, হাই, মিডিয়াম ও লো। এই হেয়ার পোরোসিটির মাত্রা প্রত্যেক মানুষের ক্ষেত্রে আলাদা হয়ে থাকে। লো পোরোসিটির চুলগুলো কম ছিদ্র সম্পন্ন হয়ে থাকে। লো পোরোসিটি চুলের কিউটিকল লেয়ার খুব শক্ত ভাবে সংযুক্ত থাকে। যার ফলে এ ধরনের চুল আর্দ্রতা সহজে গ্রহণ করতে পারেনা, তবে একবার আর্দ্রতা গ্রহণ করলে এ ধরনের...