Skip to main content

কেমন হবে বয়সভেদে শিশুদের ত্বকের যত্ন?

বাড়িতে নতুন সদস্যের আগমন হলে তাকে ঘিরে সবার আনন্দের সীমা থাকে না। সবার সব মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু যেন হয়ে থাকে ওই ছোট্ট শিশুটি। খাওয়া ও ঘুমের পাশাপাশি শিশুদের ত্বকের যত্ন নিয়েও হতে হবে বিশেষভাবে সচেতন। আজকের ফিচারে আপনাদের জানাবো বয়সভেদে কীভাবে শিশুদের ত্বকের যত্ন নিবেন তা সম্পর্কে বিস্তারিত।

নবজাতকের ত্বকের যত্নে যা করতে পারেন

নবজাতকের ত্বক এমনিতেই বেশ সংবেদনশীল হয়ে থাকে। তাই তাদের ত্বকের যত্নে মেনে চলুন এই বিষয়গুলো-

১) নবজাতকের বয়স ১৫ দিন পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত কোনো ধরনের তেল, লোশন বা পাউডার লাগানো ঠিক নয়। ১৫ দিন বয়স পার হওয়ার পর শিশুর ত্বকে জলপাই তেল (olive oil) লাগানো শুরু করতে পারেন। তবে সেটিও দিনে এক থেকে দুইবারের বেশি নয়। জলপাই তেলের বদলে নারকেল তেলও লাগানো যেতে পারে।

২) শিশুকে জন্মের তিন দিনের মধ্যে গোসল করানো ঠিক নয়। যেসব শিশু পূর্ণ গর্ভকাল পেরিয়ে জন্মেছে, তাদের এক দিন পর পর গোসল করানো যেতে পারে। তবে যেসব শিশু পূর্ণ গর্ভকাল পার হওয়ার আগেই জন্মেছে অথবা যাদের ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে কম, তাদের সপ্তাহে ১ থেকে ২ দিন গোসল করাতে হবে। গোসলের আগে বা পরে তেল মালিশ করতে হবে এমন কোনো কথা নেই।

৩) শীতে নবজাতকের চুল কাটা একেবারেই উচিত নয়। মূলত জন্মের ২ থেকে ৩ মাস পার হলে চুল কাটানো উচিত।

নবজাতকের ত্বকের যত্ন

৪) শিশুর জন্মের ২ থেকে ৩ দিনের মধ্যে কিছু র‍্যাশ উঠতে দেখা যায়। এটিকে অনেকে মাসি-পিসি রোগ বলে থাকেন। এতে ভয় পাওয়াার কিছু নেই। ধীরে ধীরে এই র‍্যাশ ভালো হয়ে যায়।

৫) জন্মের কিছুদিন পর নবজাতকের ত্বকে একধরনের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হতে দেখা যায়। নবজাতকের ত্বকে ছোট ছোট গোটা (যেগুলোতে পুঁজ জমে থাকে) দেখা দিলে দ্রুত শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন, এ সমস্যার চিকিত্সা শুরু করতে দেরি হলে পরবর্তী সময়েতে পুরো শরীরে ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে গিয়ে শিশু মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে।

৬) নাভি পাকলে অর্থাত নাভি থেকে পুঁজ পড়লে, দুর্গন্ধ ছড়ালে কিংবা নাভির চারপাশ লাল হয়ে গেলে চিকিৎসা নিতে দেরি করবেন না। নাভিতে এমন মারাত্মক সংক্রমণ এড়াতে শিশুর জন্মের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে একবার ৭.১% ক্লোরহেক্সিডিন দ্রবণটি নাভিতে লাগিয়ে দিতে হয়।

৭) শিশুদের ত্বক খুবই সংবেদনশীল ও নরম। সংক্রমণ বা অ্যালার্জি-জাতীয় সমস্যায় খুব দ্রুত আক্রান্ত হয়। আর শিশুদের সাধারণ খোসপাঁচড়া থেকেও কিডনি রোগ, বাতজ্বরের মতো জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।

৮) শিশুর কাপড়চোপড় নরম ম্যাটেরিয়ালের হতে হবে। এমনকি উৎসব অনুষ্ঠানের জন্যও হালকা সুতির কাপড়ই সবচেয়ে নিরাপদ। কাপড় বেশি আঁটসাঁট হওয়া উচিত নয়। কারণ আলো-বাতাস প্রবেশ করতে না পারলে ঘাম আটকে থাকে এবং বিভিন্ন চর্মরোগ হয়।

৯) নবজাতক একটু বড় হলে পরিষ্কার ও কুসুম গরম পানি দিয়ে প্রতিদিনই গোসল করানো ভালো। শীতের দিনে প্রয়োজনে এক দিন পর পর গোসল করান। তবে সাবান ও শ্যাম্পু প্রতিদিন ব্যবহার না করলেও চলে। গোসলের শেষে নরম শুকনো সুতি কাপড় দিয়ে দ্রুত ভালোভাবে পানি মুছে ফেলতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে তাদের শরীরের ভাঁজগুলোতে যেন পানি লেগে না থাকে।

১০) শিশু প্রস্রাব-পায়খানা করার পর যত দ্রুত সম্ভব ভেজা ন্যাপকিন বা ডায়াপার বদলে ফেলা উচিত। কারণ, দীর্ঘক্ষণ ভেজা অবস্থায় থাকলে ন্যাপকিন র‌্যাশ হতে পারে এবং শিশু অস্বস্তিতেও ভোগে।

১১) শিশুর জামাকাপড় বা কাঁথা সাবান দিয়ে ধোয়ার পর পরিষ্কার পানিতে বারবার চুবিয়ে সম্পূর্ণ সাবানমুক্ত করে রোদে বা খোলা হাওয়ায় শুকানো উচিত। কারণ, সাবানের ক্ষার শিশুর ত্বকের ক্ষতি করতে পারে। তবে হ্যাঁ, শিশুর গোসলের পানিতে বা কাপড় ধোয়ার সময় জীবাণুনাশক রাসায়নিক না দেওয়াই ভালো, কারণ এগুলো ত্বকের স্বাভাবিক উপকারী ব্যাকটেরিয়াকেও ধ্বংস করে।

১২) শিশুরা বারবার হাত মুখে দেয়, তাই সবসময় নখ পরিষ্কার রাখতে হবে এবং নির্দিষ্ট সময় পরপর কেটে ছোট রাখতে হবে।

১৩) শিশুদের কোমল ত্বকে অ্যান্টিসেপটিক ও বড়দের কসমেটিকস যখন তখন না লাগানোই ভালো। বরং শিশুদের জন্য ফর্মুলেট করা হয়েছে এমন ক্রিম, লোশন ইত্যাদি বেছে নিন।

২ বছরের কম বয়সী শিশুদের ত্বকের যত্ন

১) এই বয়সের শিশুদের প্রতিদিন গোসল করানোর প্রয়োজন নেই। এক দিন পর পর গোসল করালেই শিশুর ত্বক ভালো থাকবে।

২) শিশুর গোসলের জন্য স্বাভাবিক বা কুসুমগরম পানি ব্যবহার করুন। গোসলের পর জলপাই তেল বা শিশুর ত্বকের উপযোগী হালকা কোনো ময়েশ্চারাইজিং লোশন লাগিয়ে দিতে পারেন।

শিশুদের ত্বকের যত্ন

২ থেকে ৭ বছর বয়সের শিশুদের ত্বকের যত্ন

১) বাইরে গিয়ে খেলাধুলা শুরু করা এবং অন্যদের সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপনের উপযুক্ত সময় এটি। তাই প্রতিবার খেলা শেষে এবং বাইরে থেকে ফেরার পর অবশ্যই হাত-পা পরিষ্কার করিয়ে দিন।

২) খেলার সময় শিশু ঘেমে যাচ্ছে কিনা, সেদিকে খেয়াল রাখুন। ঘাম হলে বা গরম লাগলে ভারী পোশাক খুলে দিন এবং নরম কাপড় দিয়ে ঘাম মুছে দিন।

৩) শিশুকে প্রতিদিন গোসল করাতে হবে। গোসলের সময় সাবানও ব্যবহার করা যাবে, তবে সাবানটি হতে হবে শিশুর ত্বকের উপযোগী।

৪) গোসলের পর ভালোভাবে মাথা ও শরীর মুছে শিশুদের উপযোগী লোশন লাগিয়ে দিন।

৮ থেকে ১২ বছরের শিশুর ত্বকের যত্ন

এই বয়সী শিশুরা সাধারণত নিজের যত্ন নিতে শিখে যায়। ঘেমে গেলে শরীর মুছে নেওয়া বা ভারী কাপড় খুলে ফেলা, কুসুম গরম পানিতে গোসল করা, গোসলের সময় সাবান ব্যবহার করা, ত্বকের উপযোগী লোশন বা জলপাই তেল লাগানোর মতো কাজগুলো শিশুকে নিজেই করতে অভ্যস্ত করুন।

এটুকুই ছিলো শিশুদের ত্বকের যত্ন নিয়ে আজকের আলোচনা। সঠিকভাবে শিশুদের ত্বকের যত্ন নিলে ত্বক যেমন ভালো থাকে, তেমনি ত্বকের বিভিন্ন সমস্যাও এড়ানো সম্ভব হয়।

লিখেছেন: তাজরিনা রহমান জেনি
চাইল্ড স্পেশালিষ্ট

ছবিঃ সাটারস্টক

The post কেমন হবে বয়সভেদে শিশুদের ত্বকের যত্ন? appeared first on Shajgoj.



from Shajgoj https://ift.tt/xdWfbsj
Sumaiya Rahman

Comments

Popular posts from this blog

রেগুলার ব্রা vs পুশ-আপ ব্রা | সঠিক ইনার ওয়্যার কীভাবে সিলেক্ট করবেন?

রেগুলার ব্রা আর পুশ-আপ ব্রা, এই দু’টার মধ্যে আসলে পার্থক্য কী আর কখন কোনটা ইউজ করতে হবে, এই বিষয়গুলো আমাদের অনেকেরই অজানা। আমাদের অ্যাকটিভিটি আর আউটফিটের সাথে ইনার ওয়্যারেও ভ্যারিয়েশন আসে। যেমন সকালে ঘুম থেকে উঠে ওয়ার্ক আউট করছি, এরপর ভার্সিটি বা অফিসে যাচ্ছি, সন্ধ্যায় পার্টি অ্যাটেন্ড করছি। সব সময় কি আমরা সেইম ব্রা পরি? না তো! শাড়ি পরলে এক ধরনের ব্রা পরি, জিমে গেলে অন্য ধরনের ব্রা পরি, বাসায় থাকলে আবার আরেক রকম! কখন কোন ব্রা পরা উচিত বা কোন ড্রেসের সাথে কোনটা মানাবে এই বিষয়গুলো নিয়ে অনেকেরই কনফিউশন আছে। এই বিষয়গুলো এখনও অনেকের কাছেই ট্যাবু। দিন বদলাচ্ছে, এই সামাজিক ট্যাবু থেকে বেরিয়ে আসতে হবে সবাইকে। লঞ্জেরি মেয়েদের জন্য বেসিক একটি জিনিস। তাই লঞ্জেরির ক্যাটাগরিটা আমাদের জেনে রাখা উচিত। পুশ-আপ ব্রা কেন ইউজ করে, এটাই এখনও অনেক মেয়েরা জানে না! রেগুলার ব্রা এর সাথে সাথে নিজের কালেকশনে পুশ-আপ ব্রা কেন রাখা উচিত, সেটা কিন্তু অনেকে বুঝতে পারে না। চলুন এই কনফিউশনগুলো আজ দূর করা যাক। রেগুলার ব্রা vs পুশ-আপ ব্রা    বেসিক রেগুলার ব্রা-এর ক্ষেত্রে ফেব্রিক ম্যাটেরিয়াল ও কমফোর্টের বিষ...

বিবি ক্রিম vs সিসি ক্রিম | স্কিন টাইপ অনুযায়ী কোনটি আপনার জন্য স্যুইটেবল?

ন্যাচারাল মেকআপ লুকের জন্য এখন বিবি ক্রিম ও সিসি ক্রিম বেশ জনপ্রিয়। পার্টি মেকআপ বা ফুল কভারেজ মেকআপের ক্ষেত্রে ফাউন্ডেশন ইউজ করা হয়। কিন্তু যারা রেগুলার হালকা মেকআপ করে বাইরে বের হন, তাদের জন্য বেস্ট অপশন হচ্ছে BB বা CC ক্রিম । কিন্তু আমরা অনেকেই বুঝতে পারি না যে স্কিন টাইপ ও কনসার্ন অনুযায়ী কীভাবে রাইট প্রোডাক্টটি সিলেক্ট করতে হবে। এই দু’টি মেকআপ প্রোডাক্টের বেনিফিট বা কার্যকারিতা নিয়ে আজকের ফিচার। এগুলোর মধ্যে বেসিক ডিফারেন্সটা আসলে কোথায়, সেটাও জানা হয়ে যাবে। বিবি ক্রিম BB (Beauty Balm, Blemish Balm) ক্রিম স্কিনকে ইভেন টোনড করে এবং ব্লেমিশ হাইড করে ফ্ললেস লুক দেয় নিমিষেই। এতে স্কিন ময়েশ্চারাইজিং ও হাইড্রেটিং এলিমেন্টস থাকে, যার কারণে ড্রাই বা নরমাল স্কিনের জন্য এটি একদম পারফেক্ট। এর টেক্সচার ফাউন্ডেশনের থেকে লাইট, তাই কভারেজটাও হয় একদম ন্যাচারাল। মানে একদমই হেভি ফিল হয় না, আর স্কিনটাও পিকচার পারফেক্ট দেখায়। অনেক বিবি ক্রিমে সান প্রোটেকশন ফ্যাক্টর বা SPF থাকে। সিসি ক্রিম CC (Color Corrector, Complexion Corrector) ক্রিমের ফর্মুলা লাইট ওয়েট ও লং লাস্টিং। ম্যাট ফর্মুলার হওয়াতে অয়েল...

লো পোরোসিটি চুল | কীভাবে চিনবেন এবং সঠিক যত্ন নিবেন?

একরাশ সুন্দর ও ঝলমলে চুল কে না চায়? কিন্তু অনেক সময় সঠিক যত্নের অভাবে সুন্দর চুলগুলো দিন দিন নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ে। চুলের যত্নের ক্ষেত্রে আমাদের সবচেয়ে সবচেয়ে বড় ভুল হলো পোরোসিটি না বুঝে হেয়ার কেয়ার করা। এতে করে চুল আরো ড্যামেজ হওয়ার চান্স থাকে। আজকের ফিচারটি মূলত লো পোরোসিটি হেয়ার কেয়ার নিয়ে। লো পোরোসিটি চুল কীভাবে বুঝবো, কীভাবে যত্ন নিতে হবে, কী ব্যবহার করা যাবে ও যাবেনা ইত্যাদি বিস্তারিত জানবো আজকের ফিচারে। লো পোরোসিটি বলতে কী বোঝানো হয়? পোরোসিটি শব্দের বাংলা অর্থ হচ্ছে ছিদ্র। ত্বকে যেমন অসংখ্য পোর বা ছিদ্র থাকে, চুলের ক্ষেত্রেও কিন্তু তাই রয়েছে। অর্থাৎ প্রতিটি চুলে অসংখ্য ছিদ্র বিদ্যমান, যার মাধ্যমে চুলে আর্দ্রতা প্রবেশ করে এবং চুল আর্দ্রতা ধরে রাখার চেষ্টা করে। একেই হেয়ার পোরোসিটি বলে। পোরোসিটি ৩ রকম, হাই, মিডিয়াম ও লো। এই হেয়ার পোরোসিটির মাত্রা প্রত্যেক মানুষের ক্ষেত্রে আলাদা হয়ে থাকে। লো পোরোসিটির চুলগুলো কম ছিদ্র সম্পন্ন হয়ে থাকে। লো পোরোসিটি চুলের কিউটিকল লেয়ার খুব শক্ত ভাবে সংযুক্ত থাকে। যার ফলে এ ধরনের চুল আর্দ্রতা সহজে গ্রহণ করতে পারেনা, তবে একবার আর্দ্রতা গ্রহণ করলে এ ধরনের...