Skip to main content

পেপটিক আলসারে ভুগছেন কিনা তা কোন কোন লক্ষণ দেখে বুঝবেন?

পাকস্থলী ও পাকস্থলীর পরবর্তী অঙ্গ বা পরিপাকতন্ত্রের ক্ষত বা ঘা সৃষ্টিকারী রোগের নাম পেপটিক আলসার। কোনো কারণে পাকস্থলীর ভেতরের আবরণ ও ক্ষুদ্রান্ত্রের উপরের অংশ বা ডিওডেনামের কোনো অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হলে পেপটিক আলসার দেখা দেয়। এটি অত্যন্ত অস্বস্তিকর এবং যন্ত্রণাদায়ক একটি রোগ। সময়মতো চিকিৎসা না করালে অনেক সামান্য থেকেই অনেক বড় ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। তাই এ রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে রাখা ভালো। পেপটিক আলসারে ভুগলে বেশ কিছু লক্ষণ আপনি নিজেই দেখতে পারবেন। চলুন জানা যাক।

পেপটিক আলসার এর কারণ

পাকস্থলীর ভেতরে এক ধরনের পাচক রস থাকে যা খাবার হজমে সাহায্য করে। এই পাচক রস অতি উচ্চ মাত্রার অ্যাসিড এবং এই অ্যাসিডের কবল থেকে পাকস্থলি ও ডিওডেনামের দেয়ালকে রক্ষা করতে উভয়ের মাঝে এক ধরনের মিউকাস জাতীয় আবরণ থাকে। প্রাথমিকভাবে এই পাচক রস এবং পাকস্থলী-ডিওডেনামের ভেতরের আবরণের ভারসাম্যে তারতম্যের ফলে পেপটিক আলসার দেখা দেয়। এই ভারসাম্যহীনতার পেছনেও কিছু কারণ রয়েছে, যেমন-

১) হেলিকোব্যাক্টার পাইলোরি সংক্রমণ- পেপটিক আলসারের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো (Helicobacter Pylori) হেলিকোব্যক্টার পাইলোরি নামক ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ। এটি পাকস্থলি ও ডিওডেনামের প্রতিরক্ষামূলক আস্তরণকে দূর্বল করে দেয়।

২) অনিয়ন্ত্রিতভাবে (NSAID জাতীয়) ঔষধ সেবন- অ্যাসপিরিন, আইবুপ্রফেন, ন্যাপ্রক্সেন এর মতো ঔষধ নিয়মিত ভাবে ব্যবহার করলে পাকস্থলীর ভেতরের আস্তরণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যার ফলে পেপটিক আলসার হতে পারে।

৩) অ্যালকোহল সেবন ও ধূমপান- অ্যালকোহল পাকস্থলীর অ্যাসিড উৎপাদন বাড়াতে পারে। যার ফলে আস্তরণে ক্ষত সৃষ্টি হয় এবং পেপটিক আলসার দেখা দেয়। অতিরিক্ত ধূমপানও ক্ষতিকর। ধূমপানের মাধ্যমে তামাক সেবনের ফলে পাকস্থলীর অভ্যন্তরে ক্ষত সৃষ্টি হয় এবং পেপটিক আলসার হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

৪) ফাস্ট ফুড বা জাংক ফুড- অতিরিক্ত ফাস্ট ফুড ও জাংক ফুড বা ভাজাপোড়া জাতীয় খাবার খেলে পাকস্থলীর অ্যাসিড নিঃসরণ বেড়ে যায়। যার ফলে পেপটিক আলসারের ঝুঁকি অনেক বৃদ্ধি পায়।

৫) স্ট্রেস- অতিরিক্ত স্ট্রেস বা দুঃশ্চিন্তা সরাসরিভাবে পেপটিক আলসার সৃষ্টি করে না, তবে পেপটিক আলসার এর লক্ষণগুলো তীব্র করে দেয় এবং কিছু ক্ষেত্রে রোগ নিরাময়ও বিলম্বিত করে।

পেপটিক আলসারে ভুগছেন কিনা কীভাবে বুঝবেন?

পেপটিক আলসার সাধারণত দুই ধরনের হয়, গ্যাস্টিক আলসার বা পাকস্থলীর আলসার এবং ডিওডেনাল আলসার বা ক্ষুদ্রান্ত্রের আলসার। আলসারের অবস্থান এবং তীব্রতার উপর নির্ভর করে এর লক্ষণ ও উপসর্গ বিভিন্ন রকম হতে পারে, তবে সাধারণ কিছু লক্ষণের মধ্যে রয়েছে, যেমন-

পেটে জ্বালাপোড়া, ব্যথা- এই ব্যথা সাধারণত বুকের একটু নিচ থেকে নাভি বরাবর হয় এবং থেকে থেকে যার তীব্রতা কম বেশি হতে পারে।

বমি বমি ভাব ও বমি- কারো কারো ক্ষেত্রে খাওয়ার পরপরই বমি বমি ভাব ও বমি হতে পারে।

পেট ফাঁপা ভাব- অল্প একটু খেলেই পেট ভরে গেছে মনে হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সারক্ষণ পেট ফাঁপা ভাব থাকে।

বুক জ্বালাপোড়া- অনেকের মধ্যে দেখা যায় সাধারণত খাওয়ার পরপরই বা বিশেষ করে রাতে বুক জ্বালাপোড়া করে। এটি গ্যাস্ট্রো ইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স (GERD) এর লক্ষণ হতে পারে, যা পেপটিক আলসারের সাথেই থাকতে পারে।

ওজন হ্রাস- পেপটিক আলসার মারাত্মক আকার ধারণ করলে ক্ষুধা কমে যেতে পারে এবং অতিরিক্ত ওজন হ্রাস হতে পারে।

রক্ত বমি- পেপটিক আলসারে আক্রান্ত হলে যদি তা অতি তীব্র আকার ধারণ করে তাহলে রক্ত বমি হতে পারে, সেই সাথে রক্ত মল বা কালচে মল দেখা দিতে পারে।

এই রোগ নির্ণয়ের উপায়

নির্দিষ্ট কিছু পরীক্ষার মাধ্যমে পেপটিক আলসার নির্ণয় করা যায়। যেমন- এন্ডোস্কোপি, বেরিয়াম সোয়ালো এক্স-রে, হেলিকোব্যাক্টার পাইলোরি টেস্ট বা রক্ত ও মল এর স্যাম্পল এবং নিঃশ্বাসে কার্বন মনোক্সাইডের পরিমাণের উপর ভিত্তি করে হেলিকোব্যাক্টার পাইলোরি ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি নির্ণয় করা যায়। আলসারের তীব্রতা অতিরিক্ত হলে অনেক সময় আলসারের স্থানে ছিদ্র হয়ে যেতে পারে, সেটি নির্নয় করার জন্য সিটি স্ক্যান বা এম আর আই করার প্রয়োজন হতে পারে।

চিকিৎসা

পেপটিক আলসার এর চিকিৎসার মূল লক্ষ্য হলো এর লক্ষণ ও উপসর্গগুলোর উপশম করা, রোগ নিরাময়কে ত্বরান্বিত করা এবং জটিলতা প্রতিরোধ করা। সে ক্ষেত্রে যা করা যায়,

ঔষধ- প্রটোন পাম্প ইনহিবিটর গ্রুপের ঔষধ পাকস্থলীর অতিরিক্ত অ্যাসিড উৎপাদন কমাতে এবং আলসার দ্রুত নিরাময়ে সাহায্য করে।

অ্যান্টিবায়োটিক- হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি শনাক্ত করা গেলে তা নির্মূলের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক সেবন প্রয়োজন হতে পারে।

অ্যান্টাসিড- এ জাতীয় ঔষধ ব্যবহারে পাকস্থলীর অ্যাসিডের কার্যক্ষমতা কিছুটা হ্রাস পায় এবং সাময়িক আরাম বোধ হয়।

জীবন যাত্রার মান পরিবর্তন- অনিয়ন্ত্রিত NSAID সেবন, অতিরিক্ত মদ্যপান ও ধূমপান ইত্যাদি স্বভাব ত্যাগ করলে পেপটিক আলসার সহ আর অনেক জটিল রোগ থেকে দূরে থাকা যায়।

সার্জারি- কিছু কিছু ক্ষেত্রে আলসারের মাত্রা তীব্র আকার ধারণ করে পরিপাকতন্ত্রে ছিদ্র হয়ে যেতে পারে, সেক্ষেত্রে জরুরী ভিত্তিতে অপারেশন করার প্রয়োজন হয়।

পেপটিক আলসারে আক্রান্ত হলে তা একজন মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রাতেও প্রভাব ফেলে। কিন্তু নিয়ম মেনে চললে এবং সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা নিলে বেশিরভাগ রোগ-বালাই থেকে নিরাপদ থাকা যায়। আজ এই পর্যন্তই।

ছবি- সাটারস্টক

The post পেপটিক আলসারে ভুগছেন কিনা তা কোন কোন লক্ষণ দেখে বুঝবেন? appeared first on Shajgoj.



from Shajgoj https://ift.tt/p5rMa7v
Munia

Comments

Popular posts from this blog

Dr. Fariah Sharmeen - Woman Oncology Specialist

Dr. Fariah Sharmeen Specialty - Associate Consultant, Oncology Degree - MBBS, FCPS (Radiotherapy) Chamber: SQUARE Hospitals Ltd. Dhaka Address: 18/F Bir Uttam Qazi Nuruzzaman Sarak, West Panthapath, Dhaka - 1205, Bangladesh Call For Appointment 10616 Call Now About: Dr. Fariah Sharmeen successfully completed her MBBS from Cumilla Medical College, and subsequently completed a one-year internship at BIRDEM Hospital, Dhaka. After completing of the internship, she started her post-graduate training in Medical Oncology at the National Institute of Cancer Research & Hospital. She started her fellowship in Radiotherapy in 2010. She completed 4 years of training at the National Institute of Cancer Research & Hospital on External Beam Radiotherapy Planning and Brachytherapy. She achieved FCPS in Radiotherapy from the Bangladesh College of Physicians & Surgeons (BCPS) in 2015. She has obtained several hands-on pieces of training on Head - Neck, Lung, Genitourina...

রেগুলার ব্রা vs পুশ-আপ ব্রা | সঠিক ইনার ওয়্যার কীভাবে সিলেক্ট করবেন?

রেগুলার ব্রা আর পুশ-আপ ব্রা, এই দু’টার মধ্যে আসলে পার্থক্য কী আর কখন কোনটা ইউজ করতে হবে, এই বিষয়গুলো আমাদের অনেকেরই অজানা। আমাদের অ্যাকটিভিটি আর আউটফিটের সাথে ইনার ওয়্যারেও ভ্যারিয়েশন আসে। যেমন সকালে ঘুম থেকে উঠে ওয়ার্ক আউট করছি, এরপর ভার্সিটি বা অফিসে যাচ্ছি, সন্ধ্যায় পার্টি অ্যাটেন্ড করছি। সব সময় কি আমরা সেইম ব্রা পরি? না তো! শাড়ি পরলে এক ধরনের ব্রা পরি, জিমে গেলে অন্য ধরনের ব্রা পরি, বাসায় থাকলে আবার আরেক রকম! কখন কোন ব্রা পরা উচিত বা কোন ড্রেসের সাথে কোনটা মানাবে এই বিষয়গুলো নিয়ে অনেকেরই কনফিউশন আছে। এই বিষয়গুলো এখনও অনেকের কাছেই ট্যাবু। দিন বদলাচ্ছে, এই সামাজিক ট্যাবু থেকে বেরিয়ে আসতে হবে সবাইকে। লঞ্জেরি মেয়েদের জন্য বেসিক একটি জিনিস। তাই লঞ্জেরির ক্যাটাগরিটা আমাদের জেনে রাখা উচিত। পুশ-আপ ব্রা কেন ইউজ করে, এটাই এখনও অনেক মেয়েরা জানে না! রেগুলার ব্রা এর সাথে সাথে নিজের কালেকশনে পুশ-আপ ব্রা কেন রাখা উচিত, সেটা কিন্তু অনেকে বুঝতে পারে না। চলুন এই কনফিউশনগুলো আজ দূর করা যাক। রেগুলার ব্রা vs পুশ-আপ ব্রা    বেসিক রেগুলার ব্রা-এর ক্ষেত্রে ফেব্রিক ম্যাটেরিয়াল ও কমফোর্টের বিষ...

বিবি ক্রিম vs সিসি ক্রিম | স্কিন টাইপ অনুযায়ী কোনটি আপনার জন্য স্যুইটেবল?

ন্যাচারাল মেকআপ লুকের জন্য এখন বিবি ক্রিম ও সিসি ক্রিম বেশ জনপ্রিয়। পার্টি মেকআপ বা ফুল কভারেজ মেকআপের ক্ষেত্রে ফাউন্ডেশন ইউজ করা হয়। কিন্তু যারা রেগুলার হালকা মেকআপ করে বাইরে বের হন, তাদের জন্য বেস্ট অপশন হচ্ছে BB বা CC ক্রিম । কিন্তু আমরা অনেকেই বুঝতে পারি না যে স্কিন টাইপ ও কনসার্ন অনুযায়ী কীভাবে রাইট প্রোডাক্টটি সিলেক্ট করতে হবে। এই দু’টি মেকআপ প্রোডাক্টের বেনিফিট বা কার্যকারিতা নিয়ে আজকের ফিচার। এগুলোর মধ্যে বেসিক ডিফারেন্সটা আসলে কোথায়, সেটাও জানা হয়ে যাবে। বিবি ক্রিম BB (Beauty Balm, Blemish Balm) ক্রিম স্কিনকে ইভেন টোনড করে এবং ব্লেমিশ হাইড করে ফ্ললেস লুক দেয় নিমিষেই। এতে স্কিন ময়েশ্চারাইজিং ও হাইড্রেটিং এলিমেন্টস থাকে, যার কারণে ড্রাই বা নরমাল স্কিনের জন্য এটি একদম পারফেক্ট। এর টেক্সচার ফাউন্ডেশনের থেকে লাইট, তাই কভারেজটাও হয় একদম ন্যাচারাল। মানে একদমই হেভি ফিল হয় না, আর স্কিনটাও পিকচার পারফেক্ট দেখায়। অনেক বিবি ক্রিমে সান প্রোটেকশন ফ্যাক্টর বা SPF থাকে। সিসি ক্রিম CC (Color Corrector, Complexion Corrector) ক্রিমের ফর্মুলা লাইট ওয়েট ও লং লাস্টিং। ম্যাট ফর্মুলার হওয়াতে অয়েল...