Skip to main content

স্ট্রেচ মার্কস প্রতিরোধের ৭টি উপায় যা সবারই জেনে রাখা জরুরি!

কয়েক মাস আগেই হয়তো শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমিয়েছেন। নিজেকে এখন বেশ ফিট মনে হলেও বিরক্তির কারণ হয়ে দাড়াচ্ছে স্ট্রেচ মার্কস। শরীরের যেকোনো অংশে বিশেষ করে তল পেটে, হাতে কিংবা পায়ে সাদা সাদা আঁচড়ের মতো দাগ বা ফুলে থাকাই মূলত স্ট্রেচ মার্ক। আমাদের ডেইলি লাইফস্টাইলে কিছু পরিবর্তন আনা হলে তা স্ট্রেচ মার্কস প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। স্ট্রেচ মার্কস প্রতিরোধের উপায় জানতে চোখ রাখুন আজকের ফিচারে।

স্ট্রেচ মার্ক কী?

স্ট্রেচ মার্ক হলো কোলাজেন বা ত্বকের ইলাস্টিসিটি কমে যাওয়ার জন্য ত্বকে সৃষ্টি হওয়া এক ধরনের দাগ। স্ট্রেচ মার্কসের বিভিন্ন ধরন আছে, যেমন: Striae rubrae,  Striae albae ও Striae gravidarum ইত্যাদি। Striae rubrae হলে ত্বকে কিছুটা লালচে বা গোলাপি রঙের ফাটা ফাটা দাগের মতো দেখা যায়। অন্যদিকে Striae albae সাধারণত সাদা রঙের হয়ে থাকে। অনেকের বাহু বা পেটের নিচ সাইডে সাদা সাদা ফাটা দাগ থাকে যেটি Striae albarle। এছাড়াও Striae Gravidarum হলো প্রেগনেন্সিতে হওয়া এক ধরনের স্ট্রেচ মার্কস।

কেন স্ট্রেচ মার্কস দেখা দেয়?

চলুন প্রথমেই জেনে ঠিক কী কারণে আমাদের শরীরে স্ট্রেচ মার্কস তৈরি হয়।

১. খুব দ্রুত ওজন কমে যাওয়া অথবা বৃদ্ধি পাওয়া

শরীরের ওজন যদি খুব দ্রুত বেড়ে যায়, তাহলে ত্বকের ইলাস্টিসিটি কমে যায় এবং ত্বক প্রসারিত হয়, যার ফলে ত্বকের উপরের লেয়ার ফেটে গিয়ে স্ট্রেচ মার্কস দেখা দেয়। আবার যদি অতিরিক্ত মেদ অল্প সময়ের মাঝে ঝরিয়ে ফেলা হয়, তখনও ত্বকে স্ট্রেচ মার্কস দেখা যায়।

২. ত্বক অতিরিক্ত ডিহাইড্রেটেড হয়ে যাওয়া

ত্বক যদি খুব শুষ্ক অথবা ডিহাইড্রেটেড হয়, তাহলে ত্বকের ইলাস্টিসিটি কমে যায় এবং সহজেই কিন্তু ত্বকের লেয়ার ড্যামেজ হতে পারে৷ এই ড্যামেজ থেকেই ত্বকের উপরের অংশে স্ট্রেচ মার্কস পড়তে থাকে।

৩. ভিটামিনের অভাব

কিছু প্রয়োজনীয় ভিটামিনের অভাবে ত্বকে স্ট্রেচ মার্কস দেখা দিতে পারে। ভিটামিন সি, ডি, ই, জিংক ও প্রোটিনের অভাব হলে ত্বকে কোলাজেন প্রোডাকশন কম হয়। যার ফলে ত্বকের ইলাস্টিসিটি কমে গিয়ে স্ট্রেচ মার্কস দেখা দেয়।

৪. জীবনযাপনের ধরন

যদি আপনি খুব অলস জীবনযাপন করে থাকেন অর্থাৎ খুব বেশি মুভ না করেন, তবে সেটিও স্ট্রেচ মার্কসের কারণ হতে পারে। দিনের বেশিরভাগ সময় অ্যাকটিভ না থাকলে শরীরে ব্লাড সার্কুলেশন কমে আসে। আর তখন ত্বকের শরীরের ইলাস্টিসিটি আগের মতো থাকে না এবং স্ট্রেচ মার্কস দেখা যায়।

৫. মানসিক চাপ বা স্ট্রেস

অতিরিক্ত মানসিক চাপ দেহে কর্টিসল হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি করে। অ্যাড্রেনাল গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হওয়া কর্টিসল হরমোন আমাদের ত্বককে মসৃণ রাখতে সাহায্যকারী কোলাজেন ফাইবারকে লুজ করে দেয়। এর ফলে ত্বকের  টানটান ভাব কমে যেতে থাকে এবং স্ট্রেচ মার্কস পড়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

৬. সান ড্যামেজ

সূর্য রশ্মিতে থাকা ক্ষতিকর ইউভি রে এর কারণে হওয়া সান ড্যামেজের ফলে ত্বকের কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ত্বকের বার্ধক্যজনিত ছাপ দ্রুত দৃশ্যমান হয়। সরাসরি সান এক্সপোজারে অনেকক্ষণ থাকলে ইলাস্টিসিটি কমে যেয়ে ত্বকে স্ট্রেচ মার্কস দেখা দেয়।

৭. প্রেগনেন্সি, পোস্ট প্রেগনেন্সি

প্রেগনেন্সির সময়টায় যেহেতু শরীরের ওজন বৃদ্ধি পায়, বিশেষত পেটের চামড়া স্বাভাবিকের চাইতে অনেকাংশে বৃদ্ধি পায়, তাই এ সময় পেটের পাশাপাশি শরীরের অন্যান্য অংশে স্ট্রেচ মার্কস দেখা দেয়। আবার পোস্ট প্রেগনেন্সিতে হঠাৎ করে ওজন কমে যাওয়ার কারণেও স্ট্রেচ মার্কস দেখা দেয়।

কীভাবে প্রতিরোধ করবেন?

চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক স্ট্রেচ মার্কস প্রতিরোধ করতে যে বিষয়গুলো মেনে চলতে হবে তা সম্পর্কে বিস্তারিত।

১. ত্বককে হাইড্রেটেড রাখা

শুষ্ক ও ডিহাইড্রেটেড ত্বক যেহেতু স্ট্রেচ মার্কস তৈরির অন্যতম কারণ, তাই ত্বককে সবসময় হাইড্রেটেড রাখতে হবে। পানি, তরল জাতীয় খাবার, ফ্রেশ জুস ইত্যাদি পর্যাপ্ত পরিমাণে পান করতে হবে। দিনে অন্তত ২-৩ লিটার পানি পান করতে হবে। এছাড়াও ডিহাইড্রেটেড ত্বকে ভালো মানের ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে।

২. ভিটামিন সমৃদ্ধ ব্যালেন্সড ডায়েট মেনে চলুন

ভিটামিন সি, ই, প্রোটিন ও জিংক সমৃদ্ধ খাবার বেশি বেশি খান, যাতে করে শরীরে এর ঘাটতি তৈরি না হয়। এছাড়াও প্রচুর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সম্বলিত খাদ্য গ্রহণ করুন। এর ফলে ত্বকে কোলাজেন প্রোডাকশন বৃদ্ধি পাবে, ত্বক টানটান হবে এবং স্ট্রেচ মার্কস কমে আসবে।

৩. শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন

যদি আপনার শরীরে অতিরিক্ত মেদ থাকে, তাহলে খুব অল্প দিনের ব্যবধানে ওজন না কমিয়ে চেষ্টা করুন একটু সময় নিয়ে ওজন কমিয়ে ফেলার। হুট করে খুব দ্রুত ওজন কমিয়ে ফেললে তা ত্বকের উপর স্ট্রেস তৈরি করে এবং এ থেকে স্ট্রেচ মার্কস দেখা দেয়। আবার ওজন বাড়াতে চাইলেও ধীরে ধীরে বাড়ান। সবসময় চেষ্টা করুন শরীরের স্বাভাবিক ওজন বজায় রেখে হেলদি ও ফিট থাকতে। এর ফলে সহজে স্ট্রেচ মার্কস দেখা দিবে না।

৪. ত্বকের ধরন বুঝে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন

আপনার ত্বক কতটুক ড্রাই সেদিকে লক্ষ্য রেখে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। আপনার ত্বক যত ময়েশ্চারাইজড থাকবে, ত্বকে স্ট্রেচ মার্ক পড়ার সম্ভাবনা তত কম থাকবে।

৫. ড্রাই ব্রাশিং টেকনিক ফলো করুন

ড্রাই ব্রাশিং টেকনিক স্ট্রেচ মার্কস কমাতে ও প্রতিরোধ করতে বেশ কার্যকর। ত্বকের জন্য খুব বেশি হার্শ নয় এমন একটি শুষ্ক ব্রাশ নিয়ে শরীরের যে জায়গাগুলোতে স্ট্রেচ মার্কস আছে অথবা খুব সহজেই স্ট্রেচ মার্কস পড়ার সম্ভাবনা আছে, সেসব জায়গায় সার্কুলার মোশনে ব্রাশ করুন। তবে ত্বকে অবশ্যই হালকাভাবে এবং বেশি স্ট্রেস না দিয়ে ব্রাশ করতে হবে। প্রতিদিন গোসলের আগে এভাবে কিছু সময় ড্রাই ব্রাশিং করলে ত্বকের ডেড সেলস রিমুভ হবে, ত্বকের ব্লাড সার্কুলেশন বাড়বে এবং ত্বকের কোষগুলোও রিজেনারেট হবে। যার ফলে ত্বকে স্ট্রেচ মার্কস কমে আসবে এবং নতুনভাবে স্ট্রেচ মার্কস তৈরিও হবেনা ।

৬. পর্যাপ্ত ঘুম

ভাবছেন ঘুম কীভাবে স্ট্রেচ মার্কস কমাতে সাহায্য করে? কিন্তু সত্য এটাই যে ঘুম আমাদের পুরো শরীরকে রিল্যাক্স করে পুরো শরীরের ত্বকের কোষগুলোকে রিজেনারেট করে এবং ত্বকের ড্যামেজ রিপেয়ার করে। তাই যদি সুস্থ সুন্দর ত্বক পেতে চান, তাহলে অবশ্যই রাতে পর্যাপ্ত ঘুমের দরকার।

৭. সান প্রোটেকশন নিতে হবে

সরাসরি সান এক্সপোজার এড়িয়ে চলতে হবে, এটি আমাদের কম বেশি সবারই জানা আছে। দিনের বেলায় সানস্ক্রিনের ব্যবহার জরুরি। সেই সাথে ছাতা, স্কার্ফ ও হ্যাট ব্যবহারও জরুরি। এর পাশাপাশি সরাসরি সূর্যের আলো থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হবে। তাহলেই স্ট্রেচ মার্কস মিনিমাইজ ও প্রিভেন্ট হবে।

স্ট্রেচ মার্কস প্রতিরোধের উপায় জানা হয়ে গেলো তাহলে। এটুকুই ছিলো স্ট্রেচ মার্কস নিয়ে আজকের আলোচনা। আজকের ফিচারে উল্লেখিত অভ্যাসগুলো মেনে চললে যেমন স্ট্রেচ মার্কস প্রতিরোধ করা সম্ভব, তেমনি দাগগুলো যথেষ্ট কমিয়ে ফেলাও সম্ভব।

ছবি- সাটারস্টক

The post স্ট্রেচ মার্কস প্রতিরোধের ৭টি উপায় যা সবারই জেনে রাখা জরুরি! appeared first on Shajgoj.



from Shajgoj https://ift.tt/4WoqPp3
Munia

Comments

Popular posts from this blog

Dr. Fariah Sharmeen - Woman Oncology Specialist

Dr. Fariah Sharmeen Specialty - Associate Consultant, Oncology Degree - MBBS, FCPS (Radiotherapy) Chamber: SQUARE Hospitals Ltd. Dhaka Address: 18/F Bir Uttam Qazi Nuruzzaman Sarak, West Panthapath, Dhaka - 1205, Bangladesh Call For Appointment 10616 Call Now About: Dr. Fariah Sharmeen successfully completed her MBBS from Cumilla Medical College, and subsequently completed a one-year internship at BIRDEM Hospital, Dhaka. After completing of the internship, she started her post-graduate training in Medical Oncology at the National Institute of Cancer Research & Hospital. She started her fellowship in Radiotherapy in 2010. She completed 4 years of training at the National Institute of Cancer Research & Hospital on External Beam Radiotherapy Planning and Brachytherapy. She achieved FCPS in Radiotherapy from the Bangladesh College of Physicians & Surgeons (BCPS) in 2015. She has obtained several hands-on pieces of training on Head - Neck, Lung, Genitourina...

রেগুলার ব্রা vs পুশ-আপ ব্রা | সঠিক ইনার ওয়্যার কীভাবে সিলেক্ট করবেন?

রেগুলার ব্রা আর পুশ-আপ ব্রা, এই দু’টার মধ্যে আসলে পার্থক্য কী আর কখন কোনটা ইউজ করতে হবে, এই বিষয়গুলো আমাদের অনেকেরই অজানা। আমাদের অ্যাকটিভিটি আর আউটফিটের সাথে ইনার ওয়্যারেও ভ্যারিয়েশন আসে। যেমন সকালে ঘুম থেকে উঠে ওয়ার্ক আউট করছি, এরপর ভার্সিটি বা অফিসে যাচ্ছি, সন্ধ্যায় পার্টি অ্যাটেন্ড করছি। সব সময় কি আমরা সেইম ব্রা পরি? না তো! শাড়ি পরলে এক ধরনের ব্রা পরি, জিমে গেলে অন্য ধরনের ব্রা পরি, বাসায় থাকলে আবার আরেক রকম! কখন কোন ব্রা পরা উচিত বা কোন ড্রেসের সাথে কোনটা মানাবে এই বিষয়গুলো নিয়ে অনেকেরই কনফিউশন আছে। এই বিষয়গুলো এখনও অনেকের কাছেই ট্যাবু। দিন বদলাচ্ছে, এই সামাজিক ট্যাবু থেকে বেরিয়ে আসতে হবে সবাইকে। লঞ্জেরি মেয়েদের জন্য বেসিক একটি জিনিস। তাই লঞ্জেরির ক্যাটাগরিটা আমাদের জেনে রাখা উচিত। পুশ-আপ ব্রা কেন ইউজ করে, এটাই এখনও অনেক মেয়েরা জানে না! রেগুলার ব্রা এর সাথে সাথে নিজের কালেকশনে পুশ-আপ ব্রা কেন রাখা উচিত, সেটা কিন্তু অনেকে বুঝতে পারে না। চলুন এই কনফিউশনগুলো আজ দূর করা যাক। রেগুলার ব্রা vs পুশ-আপ ব্রা    বেসিক রেগুলার ব্রা-এর ক্ষেত্রে ফেব্রিক ম্যাটেরিয়াল ও কমফোর্টের বিষ...

বিবি ক্রিম vs সিসি ক্রিম | স্কিন টাইপ অনুযায়ী কোনটি আপনার জন্য স্যুইটেবল?

ন্যাচারাল মেকআপ লুকের জন্য এখন বিবি ক্রিম ও সিসি ক্রিম বেশ জনপ্রিয়। পার্টি মেকআপ বা ফুল কভারেজ মেকআপের ক্ষেত্রে ফাউন্ডেশন ইউজ করা হয়। কিন্তু যারা রেগুলার হালকা মেকআপ করে বাইরে বের হন, তাদের জন্য বেস্ট অপশন হচ্ছে BB বা CC ক্রিম । কিন্তু আমরা অনেকেই বুঝতে পারি না যে স্কিন টাইপ ও কনসার্ন অনুযায়ী কীভাবে রাইট প্রোডাক্টটি সিলেক্ট করতে হবে। এই দু’টি মেকআপ প্রোডাক্টের বেনিফিট বা কার্যকারিতা নিয়ে আজকের ফিচার। এগুলোর মধ্যে বেসিক ডিফারেন্সটা আসলে কোথায়, সেটাও জানা হয়ে যাবে। বিবি ক্রিম BB (Beauty Balm, Blemish Balm) ক্রিম স্কিনকে ইভেন টোনড করে এবং ব্লেমিশ হাইড করে ফ্ললেস লুক দেয় নিমিষেই। এতে স্কিন ময়েশ্চারাইজিং ও হাইড্রেটিং এলিমেন্টস থাকে, যার কারণে ড্রাই বা নরমাল স্কিনের জন্য এটি একদম পারফেক্ট। এর টেক্সচার ফাউন্ডেশনের থেকে লাইট, তাই কভারেজটাও হয় একদম ন্যাচারাল। মানে একদমই হেভি ফিল হয় না, আর স্কিনটাও পিকচার পারফেক্ট দেখায়। অনেক বিবি ক্রিমে সান প্রোটেকশন ফ্যাক্টর বা SPF থাকে। সিসি ক্রিম CC (Color Corrector, Complexion Corrector) ক্রিমের ফর্মুলা লাইট ওয়েট ও লং লাস্টিং। ম্যাট ফর্মুলার হওয়াতে অয়েল...