Skip to main content

উচ্চতা ভীতি বা অ্যাক্রোফোবিয়া! এই অযৌক্তিক ভয় কীভাবে কাটাবেন?

নির্দিষ্ট বস্তু, বিষয় বা পরিস্থিতিতে একটি নির্দিষ্ট মাত্রা পর্যন্ত ভয় গ্রহণযোগ্য। কিন্তু এই ভয়ের অনুভূতি যদি স্বাভাবিকতার সীমা অতিক্রম করে তখন তা একটি রোগ। একে বলে ফোবিয়া / ফোবিক ডিজঅর্ডার বা অহেতুক ভীতি রোগ। যেকোনো কিছুতেই অতিরিক্ত ভীতি থাকতে পারে, আর তা যদি হয় উচ্চতা নিয়ে; তবে তাকে বলে অ্যাক্রোফোবিয়া (Acrophobia)। বহুতল ভবনের ব্যালকনি, ছাদে ওঠা, এমনকি লিফটেও উচ্চতাজনিত ভয়ের কারণে অনেকে অপ্রীতিকর পরিস্থিতিতে পরে থাকেন। আপনারও কি এই প্রবলেমটি আছে? চলুন আজ তাহলে এই সমস্যাটি নিয়ে কিছু তথ্য জানা যাক।

উচ্চতা ভীতি বা অ্যাক্রোফোবিয়া কী?

অ্যাক্রোফোবিয়া এমন এক মানসিক রোগ যেখানে ব্যক্তি উচ্চতা সম্পর্কে তীব্র ভয় অনুভব করে। এটি এক ধরনের অ্যানজাইটি ডিজঅর্ডার। অ্যাক্রোফোবিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তি যখন উঁচু স্থানের কথা ভাবেন বা উঁচু স্থানে অবস্থান করেন তখন তীব্র ভয় এবং উদ্বেগ অনুভব করেন। তাই বেশিরভাগ সময় তারা উঁচু স্থান এড়িয়ে চলেন। উচ্চতা নিয়ে ভীত থাকা একটি নির্দিষ্ট মাত্রা পর্যন্ত স্বাভাবিক, তবে অ্যাক্রোফোবিয়ায় আক্রান্ত ব্যাক্তি সামান্য উচ্চতায় গেলেও অতিরিক্ত ভীত ও সতর্ক থাকেন, যা তাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব ফেলে।

উচ্চতা ভীতি বা অ্যাক্রোফোবিয়া এর কারণ

উঁচু জায়গা থেকে নিচে তাকালে অনেকেরই একটু আধটু ভয় হতে পারে। তবে অনেকের এই ভীতি প্রকট আকার ধারণ করে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় প্রভাব ফেলে। উচ্চতা ভীতি বা অ্যাক্রোফোবিয়া, এই ভীতির নির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই আসলে, এটি একটি মানসিক বিষয়। চলুন গবেষকরা কী বলছেন, জেনে নেওয়া যাক।

১) বিবর্তনের ধারা

অনেকেই ধারণা করে থাকেন যে উচ্চতা ভীতি মানব সভ্যতা বিবর্তনের সাথে সাথে চলে এসেছে। ধারণা করা হয়ে থাকে, আদিকালে যেসব মানুষ উচ্চতা নিয়ে সতর্ক থাকতেন এবং ঝুঁকিপূর্ণ উচ্চতা এড়িয়ে চলতেন, তারা ভালোভাবে সে সময় সার্ভাইভ করতে পেরেছে। সেই থেকে মানুষের মনে উচ্চতা ভীতির ধাঁচ কিছুটা থেকে গেছে, অনেক বিশেষজ্ঞরা এই মতামত দিয়েছেন।

২) পূর্বঘটিত কোনো ট্রমা

উচ্চতা নিয়ে কোনো ট্রমা বা খারাপ স্মৃতি থেকেও উচ্চতা ভীতি কাজ করতে পারে। যেমন, উঁচু কোন জায়গা থেকে পড়ে বড় ধরনের আঘাত পাওয়া, বা উচ্চতাজনিত অপঘাতের সাক্ষী হওয়া ইত্যাদির ফলে উচ্চতার সাথে সাথে বিপদের অনুভূতি মনে প্রভাব ফেলে।

৩) জিনগত কারণ

অনেক সময় পরিবারে কারো উচ্চতা ভীতি থাকলে তা বংশগতভাবেও কারো কারো ভেতরে দেখা দিতে পারে। ছোট শিশুদের অনেক সময় এই হাইট ফেয়ার থাকে, যা বড় হওয়ার সাথে অনেকক্ষেত্রে কমে যায়।

লক্ষণসমূহ

উঁচু মই বেয়ে উপরে ওঠা, সেতু বা ব্রিজ পার হওয়া, লিফটে বহুতল ভবনে ওঠা, উঁচু বিন্ডিং এর উপর থেকে নিচে তাকানো- এই সময়ে কিছু লক্ষণ দেখে আপনি বুঝতে পারবেন যে আপনার উচ্চতা ভীতি বা অ্যাক্রোফোবিয়া আছে কিনা!

শারীরিক লক্ষণঃ- দ্রুত হৃদস্পন্দন, অতিরিক্ত ঘাম, কাঁপুনি হওয়া, মাথা ঘোরা, নিঃশ্বাসের দুর্বলতা, বমি বমি ভাব বা পেটে অস্বস্তি।

মানসিক লক্ষণঃ- তীব্র উদ্বেগ বা প্যানিক অ্যাটাক, উঁচু জায়গা থেকে পড়ে যাওয়ার অতিরিক্ত ভয়, উঁচু জায়গা থেকে দ্রুত সরে যাওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা ইত্যাদি।

আচরণগত লক্ষণঃ- উঁচু স্থান এড়িয়ে চলার জন্য অনেক লম্বা দূরত্ব পারি দেওয়া, উঁচু জায়গায় কাজ করতে অস্বস্তিবোধ করা ইত্যাদি।

এই ভীতি মোকাবেলার কৌশল

১) ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হওয়া-

নিরাপদ পরিবেশে উঁচু স্থানের সাথে ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হওয়ার প্র্যাকটিস করতে হবে। এভাবে একটি নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে ভয়কে জয় করা যায়। কম ভীতিজনক উচ্চতা থেকে শুরু করে ধীরে ধীরে আরো চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে।

২) বিহেভিওরাল থেরাপি-

এটি সাইকোথেরাপির এমন এক রূপ যার মাধ্যমে উচ্চতা বা ভীতি নিয়ে নেগেটিভ চিন্তাগুলো সনাক্ত করতে এবং তা পরিবর্তন করতে সাহায্য করে। এর সাহায্যে ভয়কে মোকাবেলা করার নতুন পদ্ধতি জানা যায় এবং ভীতি সম্পর্কে অযৌক্তিক ধারণা পরিবর্তন হয়।

২) রিল্যাক্সেশন টেকনিক-  

শরীর ও মনকে রিল্যাক্স করতে হবে। গভীর শ্বাস নেওয়া, পেশী শিথিলকরণ, মেডিটেশন ইত্যাদি কার্যকর পদ্ধতি। যেকোনো ধরনের ভয়ের পরিস্থিতি মোকাবেলায় এই কৌশলগুলো খুবই কার্যকর।

৩) উচ্চতা ভীতি বা অ্যাক্রোফোবিয়া কাটাতে মেডিকেশন-

ভীতি যদি এমন পর্যায়ে চলে যায় যে দৈনন্দিন কার্যকলাপ ব্যাহত হয় তা হলে সে ক্ষেত্রে কিছু ঔষধ ব্যবহার করা যায়। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবন করতে পারেন।

উচ্চতা ভীতি বা অ্যাক্রোফোবিয়া সহ যেকোনো বিষয়ে অযৌক্তিক ভয় যেকোনো মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রাকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করতে পারে। এই সমস্যায় ভুক্তভোগী হলে যে কখনোই আপনি উঁচু জায়গায় স্বাভাবিকভাবে যেতে পারবেন না, এই ধারণা কিন্তু সঠিক নয়। এই ফোবিয়া কাটাতে প্রয়োজনে মনোবিজ্ঞানী, মনরোগ বিশেষজ্ঞ বা প্রশিক্ষিত থেরাপিস্ট এর সহায়তা ও নির্দেশনা গ্রহণ করা যেতে পারে।

ছবি- সাটারস্টক

The post উচ্চতা ভীতি বা অ্যাক্রোফোবিয়া! এই অযৌক্তিক ভয় কীভাবে কাটাবেন? appeared first on Shajgoj.



from Shajgoj https://ift.tt/9Tm3J1s
Munia

Comments

Popular posts from this blog

রেগুলার ব্রা vs পুশ-আপ ব্রা | সঠিক ইনার ওয়্যার কীভাবে সিলেক্ট করবেন?

রেগুলার ব্রা আর পুশ-আপ ব্রা, এই দু’টার মধ্যে আসলে পার্থক্য কী আর কখন কোনটা ইউজ করতে হবে, এই বিষয়গুলো আমাদের অনেকেরই অজানা। আমাদের অ্যাকটিভিটি আর আউটফিটের সাথে ইনার ওয়্যারেও ভ্যারিয়েশন আসে। যেমন সকালে ঘুম থেকে উঠে ওয়ার্ক আউট করছি, এরপর ভার্সিটি বা অফিসে যাচ্ছি, সন্ধ্যায় পার্টি অ্যাটেন্ড করছি। সব সময় কি আমরা সেইম ব্রা পরি? না তো! শাড়ি পরলে এক ধরনের ব্রা পরি, জিমে গেলে অন্য ধরনের ব্রা পরি, বাসায় থাকলে আবার আরেক রকম! কখন কোন ব্রা পরা উচিত বা কোন ড্রেসের সাথে কোনটা মানাবে এই বিষয়গুলো নিয়ে অনেকেরই কনফিউশন আছে। এই বিষয়গুলো এখনও অনেকের কাছেই ট্যাবু। দিন বদলাচ্ছে, এই সামাজিক ট্যাবু থেকে বেরিয়ে আসতে হবে সবাইকে। লঞ্জেরি মেয়েদের জন্য বেসিক একটি জিনিস। তাই লঞ্জেরির ক্যাটাগরিটা আমাদের জেনে রাখা উচিত। পুশ-আপ ব্রা কেন ইউজ করে, এটাই এখনও অনেক মেয়েরা জানে না! রেগুলার ব্রা এর সাথে সাথে নিজের কালেকশনে পুশ-আপ ব্রা কেন রাখা উচিত, সেটা কিন্তু অনেকে বুঝতে পারে না। চলুন এই কনফিউশনগুলো আজ দূর করা যাক। রেগুলার ব্রা vs পুশ-আপ ব্রা    বেসিক রেগুলার ব্রা-এর ক্ষেত্রে ফেব্রিক ম্যাটেরিয়াল ও কমফোর্টের বিষ...

বিবি ক্রিম vs সিসি ক্রিম | স্কিন টাইপ অনুযায়ী কোনটি আপনার জন্য স্যুইটেবল?

ন্যাচারাল মেকআপ লুকের জন্য এখন বিবি ক্রিম ও সিসি ক্রিম বেশ জনপ্রিয়। পার্টি মেকআপ বা ফুল কভারেজ মেকআপের ক্ষেত্রে ফাউন্ডেশন ইউজ করা হয়। কিন্তু যারা রেগুলার হালকা মেকআপ করে বাইরে বের হন, তাদের জন্য বেস্ট অপশন হচ্ছে BB বা CC ক্রিম । কিন্তু আমরা অনেকেই বুঝতে পারি না যে স্কিন টাইপ ও কনসার্ন অনুযায়ী কীভাবে রাইট প্রোডাক্টটি সিলেক্ট করতে হবে। এই দু’টি মেকআপ প্রোডাক্টের বেনিফিট বা কার্যকারিতা নিয়ে আজকের ফিচার। এগুলোর মধ্যে বেসিক ডিফারেন্সটা আসলে কোথায়, সেটাও জানা হয়ে যাবে। বিবি ক্রিম BB (Beauty Balm, Blemish Balm) ক্রিম স্কিনকে ইভেন টোনড করে এবং ব্লেমিশ হাইড করে ফ্ললেস লুক দেয় নিমিষেই। এতে স্কিন ময়েশ্চারাইজিং ও হাইড্রেটিং এলিমেন্টস থাকে, যার কারণে ড্রাই বা নরমাল স্কিনের জন্য এটি একদম পারফেক্ট। এর টেক্সচার ফাউন্ডেশনের থেকে লাইট, তাই কভারেজটাও হয় একদম ন্যাচারাল। মানে একদমই হেভি ফিল হয় না, আর স্কিনটাও পিকচার পারফেক্ট দেখায়। অনেক বিবি ক্রিমে সান প্রোটেকশন ফ্যাক্টর বা SPF থাকে। সিসি ক্রিম CC (Color Corrector, Complexion Corrector) ক্রিমের ফর্মুলা লাইট ওয়েট ও লং লাস্টিং। ম্যাট ফর্মুলার হওয়াতে অয়েল...

Uttara Lake View Specialized Hospital

Uttara Lake View Specialized Hospital Address: Address: House#34, Road# 5A/10B, Sector#11, Uttara, Dhaka, 1230 Phone:  01813-904080 Available Services: 24 hours emergency service Self-contained ICU NICU HDU Cabin General Ward Corona Unit Chamber of Specialist Doctors. Also, all units are open including any complex operation. from Specialist Doctor List https://ift.tt/GFQ56KdRb via IFTTT