Skip to main content

প্রেগনেন্সিতে ডায়াবেটিস গর্ভের সন্তানের উপর কী ধরনের প্রভাব ফেলে?

প্রেগনেন্সিতে ডায়াবেটিস, শুনলেই মনে প্রথমে যেটা আসে এটি কি গর্ভাবস্থায় প্রসূতি মায়ের শরীরে ডায়াবেটিস ধরা পড়াকে বলা হচ্ছে? আসলে গর্ভকালীন সময়ে প্রসূতি মায়ের রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেড়ে যাওয়াকে বলা হয় প্রেগনেন্সি ডায়াবেটিস বা Gestational Diabetes Mellitus. গর্ভকালে নারীদের শারীরবৃত্তীয় ও হরমোনের পরিবর্তন দেখা দেয়। হরমোনের উচ্চমাত্রাসহ কিছু ঝুঁকির কারণে কিছু ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস হতে পারে। তবে ভয়ের কারণ নেই, সন্তান জন্মদানের পরপরই সাধারণত ঠিক হয়ে যায়। গর্ভাবস্থার যেকোনো ধাপেই এটি হতে পারে তবে ২য় বা ৩য় ট্রাইমেস্টার অর্থাৎ ৪র্থ বা ৯ম মাসের সময় এটি হওয়াটা বেশ কমন। চলুন জেনে নেওয়া যাক বিস্তারিত।

প্রেগনেন্সিতে ডায়াবেটিস কেন হয়?

এক কথায় বলতে গেলে, যখন প্রেগনেন্ট মায়ের শরীর গর্ভকালীন সময়ের বাড়তি চাহিদা অনুযায়ী ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না, তখন এই সমস্যাটি শুরু হয়। চলুন এর কারণগুলো একটু দেখে আসি-

১) গর্ভধারণের আগে মায়ের ওজন স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি থাকলে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। মায়ের BMI যদি ৩০ র বেশি হয় তাহলে ঝুঁকি বাড়ে।

২) অতীতে কোনো সন্তান যদি ৪.৫ কেজি বা ১০ পাউন্ডের বেশি ওজন নিয়ে জন্মায় সেক্ষেত্রে প্রেগনেন্সি ডায়াবেটিস এর ঝুঁকি বাড়ে।

প্রেগনেন্সিতে ডায়াবেটিস

৩) পরিবারের কারো ডায়াবেটিসের ইতিহাস থাকলে এই ঝুঁকি আরো বেড়ে যায়।

৪) কায়িক শ্রমের ঘাটতির জন্যও এটি হতে পারে।

৫) বয়স বেশি হয়ে গেলে, পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম বা PCOS থাকলেও এটি হওয়ার রিস্ক থাকে।

৬) প্রথম প্রেগনেন্সিতে ডায়াবেটিস হলে দ্বিতীয় গর্ভধারণেও এই ঝুঁকি থেকে যায়।

৭) থাইরয়েডের সমস্যা, হাইপারটেনশন, হাই কোলেস্টেরল এগুলো থাকলেও ঝুঁকি বাড়ে।

দক্ষিণ এশীয়, কৃষ্ণাঙ্গ, আফ্রিকান-ক্যারিবিয়ান বা মধ্যপ্রাচ্যের অধিবাসীদের মধ্যে ঝুঁকি বেশি থাকে।

লক্ষণ

এই ক্ষেত্রে সাধারণত বিশেষ লক্ষণ দেখা যায় না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এটি রুটিন চেকআপের সময় ধরা পড়ে। তবে কারো ক্ষেত্রে যদি রক্তে চিনির মাত্রা অনেক বেড়ে যায়, তবে সেক্ষেত্রে কিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারে, যেমন-

  • ঘন ঘন পিপাসা লাগা
  • ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ আসা
  • মুখ শুকিয়ে যাওয়া
  • ক্লান্ত বোধ করা
  • হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া
  • ক্ষুধা বেশি লাগা

তবে এই লক্ষণগুলো থাকা মানেই যে গর্ভবতী মায়ের ডায়াবেটিস আছে এমনটা নয়। অনেক ক্ষেত্রে স্বাভাবিক প্রেগনেন্সিতেও এই লক্ষণগুলো দেখা যেতে পারে। তবে আপনার মধ্যে যদি এরকম কোনো লক্ষণ থাকে এবং সেটি নিয়ে আপনি যদি চিন্তিতবোধ করে, তাহলে দেরি না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিন!

গর্ভের সন্তানের উপর কী ধরনের প্রভাব পরে?

অনেক ক্ষেত্রেই প্রেগনেন্সি ডায়াবেটিস থাকলেও গর্ভকাল অনেকটাই স্বাভাবিক থাকে এবং গর্ভের সন্তানও সুস্থভাবেই জন্ম নেয়। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে সন্তান ও মায়ের জটিলতা দেখা দিতে পারে, যেমন-

১) সন্তানের আকার স্বাভাবিকের চেয়ে বড় হওয়া। এতে করে প্রসবের সময় বিভিন্ন জটিলতা দেখা দেয়। ফলে কৃত্রিমভাবে ওষুধ দিয়ে বা সিজারিয়ান পদ্ধতিতে সন্তান প্রসব করানো লাগে।

২) ৩৭ সপ্তাহ পূর্ণ হওয়ার আগেই সন্তান প্রসব হওয়া, একে প্রিম্যাচিউর লেবার বলে।

৩) অ্যামনিওটিক ফ্লুইডের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে, ফলে সময়েই আগেই প্রসব হয়ে যেতে পারে।

৪) গর্ভাবস্থায় ব্লাড প্রেশার ওঠানামা করতে পারে।

৫) জন্মের পর শিশুর শরীরে সুগারের মাত্রা কমে যেতে পারে বা অনেক ক্ষেত্রে ত্বক ও চোখের সাদা অংশ হলদেটে হয়ে যেতে পারে। এক্ষেত্রে শিশুকে অবশ্যই হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া প্রয়োজন।

৬) মৃত সন্তান প্রসব হতে পারে, যদিও এইটি খুবই বিরল।

গর্ভকালীন ডায়াবেটিস নিশ্চিত হওয়ার উপায়

সাধারণত গর্ভাবস্থায় ৮ম থেকে ১২তম সপ্তাহে গর্ভবতী মায়ের প্রথম চেক আপের সময় তাকে কিছু রুটিন প্রশ্ন করা হয়, যার মাধ্যমে প্রেগনেন্সি ডায়াবেটিস এর ঝুঁকি আছে কিনা সেটি নিরূপণ করা হয়। যদি কারো ক্ষেত্রে এক বা একাধিক ঝুঁকি মিলে যায় সেক্ষেত্রে তাকে একটি স্ক্রিনিং করতে দেওয়া হয়, যেটি মাত্র ২ ঘন্টায় সম্পন্ন করা যায়। এর থেকেই নিশ্চিত হওয়া যায় প্রেগনেন্সি ডায়াবেটিস এর অস্তিত্ব সম্পর্কে।

এই স্ক্রিনিং টেস্টের নাম ওরাল গ্লুকোজ টলারেন্স টেস্ট বা OGTT. এই টেস্ট মূলত গর্ভাবস্থায় ২৪তম থেকে ২৮তম সপ্তাহে করা হয়। তবে প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে যদি ডাক্তারের মনে হয় গর্ভবতী মায়ের মধ্যে প্রেগনেন্সি ডায়বেটিসের ঝুঁকি আছে, তাহলে এইটি তিনি আগেই করতে পরামর্শ দেন।

চিকিৎসা

চিকিৎসা

মূলত জটিলতা কমানোর জন্য এই সময় ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখা প্রয়োজন। বাসায় রক্তের গ্লুকোজ মাপার যন্ত্র বা গ্লুকোমিটার থাকলে এটি সহজেই মাপা যায়। খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ ও শরীরকে সচল রাখলে খুব সহজেই ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। তবে এরপরেও যদি নিয়ন্ত্রণে না আসে তাহলে অবশ্যই ওষুধের প্রয়োজন পড়বে এবং ওষুধটি হতে পারে ট্যাবলেট বা ইনসুলিন ইনজেকশন।

প্রেগনেন্সিতে ডায়াবেটিস বেশ কমন, একটু সচেতন হলেই অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। আর যেহেতু এর চিকিৎসা আছে, তাই দুশ্চিন্তা না করে যতোদূর সম্ভব খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপনকে নিয়ন্ত্রণ করে একে বশে রাখাতেই মায়ের ও সন্তানের উভয়ের জন্যই মঙ্গল। ভালো থাকবেন, শুভ কামনা প্রতিটি হবু মায়ের জন্য।

ছবি- সাটারস্টক

Comments

Popular posts from this blog

স্ট্রেসের কারণে একনে বা প্রিম্যাচিউর এজিং সাইনস দেখা দিচ্ছে না তো?

আপনি যখন এই লেখাটি পড়ছেন তখন আমি বুঝতেই পারছি আপনার হাতে টেকনোলজির সুবিধা রয়েছে। যার কারণে আপনি এখন চাইলেই যে কোনো ভিডিও দেখতে পারেন, যে কোনো তথ্য সম্পর্কে জানতে ইন্টারনেটে সার্চ করতে পারেন। জীবন আগের চেয়ে এখন অনেক সহজ। তারপরও কিন্তু আমরা সবাই কমবেশি স্ট্রেসের মধ্য দিয়ে যাই। আর এই স্ট্রেস মানসিকভাবে আমাদের যতটা অসুস্থ করে দিচ্ছে, ঠিক ততটাই এফেক্ট ফেলছে আমাদের স্কিনের উপর। যেমন- স্ট্রেসের কারণে একনে বা প্রিম্যাচিউর এজিং সাইনস দেখা দিচ্ছে, সেই সাথে হচ্ছে ত্বকের নানা সমস্যা। স্ট্রেস কতভাবে স্কিনের উপর প্রভাব ফেলে এবং কীভাবে স্ট্রেস কমিয়ে আনা যায় তা নিয়েই আলোচনা করবো আজ। স্ট্রেস কেন হয়? বিভিন্নভাবে স্ট্রেস হতে পারে। যেমন- এনভায়রনমেন্টাল বা টেম্পারেচার চেঞ্জ (এক্সটার্নাল ফ্যাক্টর)। ধরুন আপনি অনেকটা সময় ঠান্ডা রুমে ছিলেন। হুট করে যখন গরম পরিবেশে চলে আসলেন তখন শরীরে একটা স্ট্রেস হয়। আবার আর্থিক অবস্থা, লেখাপড়া, পারিবারিক সমস্যা ইত্যাদির কারণে সাইকোলজিক্যাল স্ট্রেস দেখা দেয়। স্ট্রেস এমন একটি বিষয় যেটার সাথেও আমরা থাকতে পারি না, যেটা ছাড়াও আমাদের থাকা সম্ভব নয়। সময়ের সাথে সাথে আমরা বেশ আধু

কীভাবে পারফেক্টলি ক্যামেরা বন্দী করা যায় সুন্দর মুহূর্তগুলো?

একটা সময় ছিল, যখন ছবি তোলা বা কারো কাছে ক্যামেরা থাকা যেন বড়সড় ব্যাপার। স্টুডিওতে যেয়ে ছবি তুলতে হতো বা কোনো কিছুর ছবি, ভিডিও এত সহজ ছিল না। অনেকদিন অপেক্ষা করে হাতে ছবি পাওয়া যেতো এবং সেটা অ্যালবামে যত্নের সাথে সংরক্ষণ করা হতো। আর এখন ছবি তোলা অনেক সহজ। বাজারের বিভিন্ন মডেলের ক্যামেরা বা হাই মেগাপিক্সেল সম্পন্ন ফোন সবার হাতে হাতে। আমরা এখন চাইলেই আমাদের সুন্দর সময়গুলোর বা শখের কাজ কিংবা ঘুরতে যেয়ে মনোমুগ্ধকর প্রকৃতির ছবি, ভিডিও ক্যামেরা বন্দী করতে পারি। এখন কীভাবে পারফেক্টলি ক্যামেরা বন্দী করা যায় সুন্দর মুহূর্তগুলো তা নিয়েই টুকিটাকি টিপস শেয়ার করবো আপনাদের সাথে। ক্যামেরা নিয়ে কিছু বেসিক ধারণা যেকোনো ডিভাইস ব্যবহার করার পূর্বে তার সম্পর্কে ধারণা নেওয়া জরুরী। অনেক সময় দেখা যায় একটা ডিভাইস সম্পর্কে ঠিকভাবে না জানার কারণে ছবি তুলতে গিয়ে আমরা অনেক অপশন মিস করে ফেলি। ফলস্বরূপ ছবি সুন্দর হয় না। এই জন্য ম্যানুয়ালটায় একবার চোখ বুলিয়ে নিতে পারেন। তবে ম্যানুয়াল পড়াটা অনেকের কাছে বিরক্তিকর লাগে। তাই বিভিন্ন ফিচার নিয়ে যদি বারবার প্র্যাকটিস করা যায় তাহলে ফটোগ্রাফি বিষয়টা সহজে আয়ত্তে আসে। এখন

Dr. Fariah Sharmeen - Woman Oncology Specialist

Dr. Fariah Sharmeen Specialty - Associate Consultant, Oncology Degree - MBBS, FCPS (Radiotherapy) Chamber: SQUARE Hospitals Ltd. Dhaka Address: 18/F Bir Uttam Qazi Nuruzzaman Sarak, West Panthapath, Dhaka - 1205, Bangladesh Call For Appointment 10616 Call Now About: Dr. Fariah Sharmeen successfully completed her MBBS from Cumilla Medical College, and subsequently completed a one-year internship at BIRDEM Hospital, Dhaka. After completing of the internship, she started her post-graduate training in Medical Oncology at the National Institute of Cancer Research & Hospital. She started her fellowship in Radiotherapy in 2010. She completed 4 years of training at the National Institute of Cancer Research & Hospital on External Beam Radiotherapy Planning and Brachytherapy. She achieved FCPS in Radiotherapy from the Bangladesh College of Physicians & Surgeons (BCPS) in 2015. She has obtained several hands-on pieces of training on Head - Neck, Lung, Genitourina