Skip to main content

ওজন কমাতে একদম কম খাওয়া | ভয় নাকি কোনো মানসিক রোগ?

এনোরেক্সিয়া নার্ভোসা একটি গুরুতর খাদ্য বিষয়ক মানসিক সমস্যা। সাধারণত মেয়েদের মধ্যেই বেশি দেখা যায় এটি। এই রোগের ফলে মানুষের মধ্যে ওজন বেড়ে যাওয়ার তীব্র ভয় সৃষ্টি হয়। তবে এর পাশাপাশি অন্যান্য উপসর্গও থাকতে পারে। এই রোগের ফলে শরীর ও মন উভয়ই প্রভাবিত হয় এবং চিকিৎসা না করা হলে মারাত্মক পরিণতি হতে পারে। আজকের ফিচারে থাকছে এনোরেক্সিয়া নার্ভোসা সম্পর্কে বিস্তারিত।

লক্ষণ

এনোরেক্সিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের কঠোরভাবে ডায়েট কন্ট্রোল করা এবং ক্ষুধার্ত থাকা সত্ত্বেও খাবার ত্যাগ করার মানসিক প্রবণতা তৈরি হতে পারে। এই রোগের লক্ষণগুলো হলো-

উল্লেখযোগ্য ওজন হ্রাস– এনোরেক্সিয়া নার্ভোসা রোগে আক্রান্ত রোগীদের উল্লেখযোগ্য হারে ওজন হ্রাস পায়। তবে এটি নির্ণয় করা কিছুটা কঠিন হতে পারে। কারণ সঠিক ওজনের বিষয়টি প্রতিটি ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে।

ডায়েট নিয়ে দুশ্চিন্তা – এ রোগে আক্রান্ত রোগীরা খাদ্যাভ্যাস, ডায়েট ও শরীরের আকার নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তিত থাকে। এই দুশ্চিন্তা থেকে ক্যালরি গুনে খাবার খাওয়া, চর্বি ও কম ক্যালরি যুক্ত খাবার খাওয়া, খাবারের পুষ্টিগুণ নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করা, অন্যের সাথে নিজের শরীরের তুলনা করা ইত্যাদি অভ্যাস দেখা দেয়।

শরীর সম্পর্কে বিকৃত ধারণা- এ রোগে আক্রান্ত রোগীরা শরীর সম্পর্কে অন্যরকম ধারনা রাখেন। যেমন, কম ওজন থাকার পরেও নিজেকে অতিরিক্ত ওজনের বলে মনে করেন।

এনোরেক্সিয়া নার্ভোসা

খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন– খেতে না চাওয়া, ঘন ঘন খাবার এড়িয়ে চলা বা খেতে অস্বীকার করা, ক্ষুধা অস্বীকার করা বা না খাওয়ার অজুহাত তৈরি করা ইত্যাদি স্বভাব দেখা দিতে পারে। এছাড়াও কেউ কেউ ক্যালরি পোড়ানোর জন্য অতিরিক্ত ব্যায়াম করতে পারে। অনেক সময় তারা ইচ্ছাকৃতভাবে বমিও করে।

শারীরিক লক্ষণ– বিভিন্ন রকম অপুষ্টিজনিত শারীরিক লক্ষণ দেখা দিতে পারে, যেমন, ক্লান্তি, অনিদ্রা, মাথা ঘোরা, নখ পাতলা হওয়া ও ভেঙ্গে যাওয়া, চুলের আগা ফাটা ও পড়ে যাওয়া ইত্যাদি। এছাড়াও অনিয়মিত ঋতুস্রাব, কোষ্ঠকাঠিন্য, পেটে ব্যথা, নিম্ন রক্তচাপ, পানিশূন্যতা, হাত-পা ফুলে যাওয়া, ঠাণ্ডা সহ্য করতে না পারা, দাঁতের ক্ষয় ইত্যাদি দেখা দিতে পারে।

এনোরেক্সিয়া নার্ভোসা কেন হয়?

বিভিন্ন কারণে এনোরেক্সিয়া নার্ভোসা দেখা দিতে পারে। যেমনঃ

১) জৈবিক কারণ– বংশগত ভাবে পরিবারে পূর্বে যদি কারো এনোরেক্সিয়া নার্ভোসা থেকে থাকে, তবে এ রোগ দেখা দিতে পারে। তাছাড়া মস্তিষ্কে কোনো রাসায়নিক পরিবর্তন বা হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণেও এ রোগ দেখা দিতে পারে।

২) মানসিক কারণ– ইনসিকিউরিটি, উদ্বেগ ইত্যাদি কারণে এ রোগের উদ্ভব হতে পারে। এছাড়াও কোনো মানসিক আঘাত বা জীবনে কোনো বড় পরিবর্তনের ফলেও হতে পারে।

৩) সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাব– পারিবারিক ও সামাজিক চাপ থেকেও এনোরেক্সিয়া নার্ভোসা দেখা দিতে পারে। সমবয়সীদের মধ্যে বিশেষ করে অল্পবয়সী মেয়েদের মধ্যে চিকন হওয়ার আকাঙ্ক্ষা অনেক সময় প্রতিযোগিতায় রুপ নেয় এবং তা থেকেও না খেয়ে চিকন হওয়ার স্পৃহা জেগে উঠে।

এনোরেক্সিয়া নার্ভোসা হলে বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিতে পারে

জটিলতা

১) পুষ্টির ঘাটতি- দীর্ঘদিন অপর্যাপ্ত খাদ্য গ্রহণের ফলে গুরুতর অপুষ্টি হতে পারে, যার ফলে প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজগুলির ঘাটতি দেখা দিতে পারে।

২) হাড়ের ঘনত্ব ক্ষয়- অপর্যাপ্ত পুষ্টি, বিশেষত ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি-এর অভাবের ফলে হাড়ের ঘনত্ব হ্রাস পেতে পারে, যা ফ্র্যাকচার ও অস্টিওপরোসিসের ঝুঁকি বাড়ায়।

৩) এন্ডোক্রাইন এবং হরমোনের ভারসাম্যহীনতা- এনোরেক্সিয়া নার্ভোসা মানুষের স্বাভাবিক হরমোনের কার্যকারিতা ব্যহত করে। মহিলাদের মাসিক অনিয়মিত হয় এবং পুরুষদের মধ্যে, এটি টেস্টোস্টেরনের মাত্রা হ্রাস করতে পারে।

৪) ইলেকট্রোলাইট ইমব্যালেন্স- অপর্যাপ্ত খাওয়া দাওয়ার কারণে শরীরে প্রয়োজনীয় ইলেকট্রোলাইট এর অভাব দেখা দেয়। যা হার্ট ও পেশী সহ বিভিন্ন শারীরিক ক্রিয়াকলাপকে প্রভাবিত করতে পারে।

৫) দাঁত ও মুখের হাইজিন জনিত সমস্যা- অপুষ্টি এবং স্ব-প্ররোচিত বমি দাঁতের ক্ষয়, দাঁতের এনামেল ক্ষয় এবং মাড়ির রোগ সহ দাঁতের সমস্যা হতে পারে।

৬) এছাড়াও দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, মাল্টি অরগ্যান ফেইলিউর, রক্তশূন্যতা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়।

এনোরেক্সিয়া নার্ভোসা দূর করতে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন

এনোরেক্সিয়া নার্ভোসা এর চিকিৎসা 

১) গুরুতর ক্ষেত্রে, এনোরেক্সিয়া আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করতে, শরীরে সঠিক মাত্রায় পুষ্টির ঘাটতি মেটাতে এবং শারীরিক সমস্যাগুলো সমাধান করতে হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হতে পারে।

২) শারীরিক চিকিৎসার পাশাপাশি মানসিক সুস্থতার জন্যেও কাউন্সেলিং প্রয়োজন। খাবার সম্পর্কে ভয় কাটিয়ে তুলতে যথাযথ কাউন্সেলিংয়ের জুড়ি নেই। অনেক সময় রোগী ভাবতে পারে যে এটি কোনো রোগ নয়, তাই তার কোনো চিকিৎসা প্রয়োজন নেই। এই ভুলটি অবশ্যই ভাঙ্গাতে হবে।

৩) ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ অনুযায়ী রোগীকে বোঝাতে হবে যে ঠিক কতটুকু পরিমাণ খাবার ও পুষ্টি তার শরীরের জন্য দরকার।

৪) এনোরেক্সিয়া কাটিয়ে তুলতে কোনো ওষুধের সেভাবে ভূমিকা নেই, তবে ওজন নিয়ে চিন্তা থেকে যদি হতাশা কাজ করে কিংবা অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা দেখা দেয়, তবে তা দূর করার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টি ডিপ্রেশনের ওষুধ সেবন করা যেতে পারে।

আশা করছি এনোরেক্সিয়া নার্ভোসা নিয়ে আপনাদের বিস্তারিত তথ্য জানাতে পেরেছি। এর উপসর্গগুলো দেখা দিলে দেরি না করে দ্রুত বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিতে হবে।

ছবিঃ সাটারস্টক

Comments

Popular posts from this blog

রেগুলার ব্রা vs পুশ-আপ ব্রা | সঠিক ইনার ওয়্যার কীভাবে সিলেক্ট করবেন?

রেগুলার ব্রা আর পুশ-আপ ব্রা, এই দু’টার মধ্যে আসলে পার্থক্য কী আর কখন কোনটা ইউজ করতে হবে, এই বিষয়গুলো আমাদের অনেকেরই অজানা। আমাদের অ্যাকটিভিটি আর আউটফিটের সাথে ইনার ওয়্যারেও ভ্যারিয়েশন আসে। যেমন সকালে ঘুম থেকে উঠে ওয়ার্ক আউট করছি, এরপর ভার্সিটি বা অফিসে যাচ্ছি, সন্ধ্যায় পার্টি অ্যাটেন্ড করছি। সব সময় কি আমরা সেইম ব্রা পরি? না তো! শাড়ি পরলে এক ধরনের ব্রা পরি, জিমে গেলে অন্য ধরনের ব্রা পরি, বাসায় থাকলে আবার আরেক রকম! কখন কোন ব্রা পরা উচিত বা কোন ড্রেসের সাথে কোনটা মানাবে এই বিষয়গুলো নিয়ে অনেকেরই কনফিউশন আছে। এই বিষয়গুলো এখনও অনেকের কাছেই ট্যাবু। দিন বদলাচ্ছে, এই সামাজিক ট্যাবু থেকে বেরিয়ে আসতে হবে সবাইকে। লঞ্জেরি মেয়েদের জন্য বেসিক একটি জিনিস। তাই লঞ্জেরির ক্যাটাগরিটা আমাদের জেনে রাখা উচিত। পুশ-আপ ব্রা কেন ইউজ করে, এটাই এখনও অনেক মেয়েরা জানে না! রেগুলার ব্রা এর সাথে সাথে নিজের কালেকশনে পুশ-আপ ব্রা কেন রাখা উচিত, সেটা কিন্তু অনেকে বুঝতে পারে না। চলুন এই কনফিউশনগুলো আজ দূর করা যাক। রেগুলার ব্রা vs পুশ-আপ ব্রা    বেসিক রেগুলার ব্রা-এর ক্ষেত্রে ফেব্রিক ম্যাটেরিয়াল ও কমফোর্টের বিষ...

বিবি ক্রিম vs সিসি ক্রিম | স্কিন টাইপ অনুযায়ী কোনটি আপনার জন্য স্যুইটেবল?

ন্যাচারাল মেকআপ লুকের জন্য এখন বিবি ক্রিম ও সিসি ক্রিম বেশ জনপ্রিয়। পার্টি মেকআপ বা ফুল কভারেজ মেকআপের ক্ষেত্রে ফাউন্ডেশন ইউজ করা হয়। কিন্তু যারা রেগুলার হালকা মেকআপ করে বাইরে বের হন, তাদের জন্য বেস্ট অপশন হচ্ছে BB বা CC ক্রিম । কিন্তু আমরা অনেকেই বুঝতে পারি না যে স্কিন টাইপ ও কনসার্ন অনুযায়ী কীভাবে রাইট প্রোডাক্টটি সিলেক্ট করতে হবে। এই দু’টি মেকআপ প্রোডাক্টের বেনিফিট বা কার্যকারিতা নিয়ে আজকের ফিচার। এগুলোর মধ্যে বেসিক ডিফারেন্সটা আসলে কোথায়, সেটাও জানা হয়ে যাবে। বিবি ক্রিম BB (Beauty Balm, Blemish Balm) ক্রিম স্কিনকে ইভেন টোনড করে এবং ব্লেমিশ হাইড করে ফ্ললেস লুক দেয় নিমিষেই। এতে স্কিন ময়েশ্চারাইজিং ও হাইড্রেটিং এলিমেন্টস থাকে, যার কারণে ড্রাই বা নরমাল স্কিনের জন্য এটি একদম পারফেক্ট। এর টেক্সচার ফাউন্ডেশনের থেকে লাইট, তাই কভারেজটাও হয় একদম ন্যাচারাল। মানে একদমই হেভি ফিল হয় না, আর স্কিনটাও পিকচার পারফেক্ট দেখায়। অনেক বিবি ক্রিমে সান প্রোটেকশন ফ্যাক্টর বা SPF থাকে। সিসি ক্রিম CC (Color Corrector, Complexion Corrector) ক্রিমের ফর্মুলা লাইট ওয়েট ও লং লাস্টিং। ম্যাট ফর্মুলার হওয়াতে অয়েল...

Uttara Lake View Specialized Hospital

Uttara Lake View Specialized Hospital Address: Address: House#34, Road# 5A/10B, Sector#11, Uttara, Dhaka, 1230 Phone:  01813-904080 Available Services: 24 hours emergency service Self-contained ICU NICU HDU Cabin General Ward Corona Unit Chamber of Specialist Doctors. Also, all units are open including any complex operation. from Specialist Doctor List https://ift.tt/GFQ56KdRb via IFTTT