স্ক্যাবিস বা খোসপাঁচড়া ত্বকের খুবই সংক্রামক একটি সমস্যা। শিশু থেকে শুরু করে যেকোনো বয়সের যে কারোরই এই স্কিন ডিজিজ হতে পারে। তবে শিশুদের এই রোগটি বেশি হয়ে থাকে। প্রচন্ড চুলকানির ফলে শরীরে অনেক অস্বস্তি হয়। বিশেষ করে রাতে এই সমস্যা বেশি হয় দেখে বাচ্চারা সারারাত ঘুমাতে পারে না। কিন্তু অনেকেই এখনো জানেন না এই স্ক্যাবিস কী, এর পিছনের কারণ ও চিকিৎসা কী হতে পারে। তাই আজকের আর্টিকেলে জানবো এই সম্পর্কে বিস্তারিত।
স্ক্যাবিস কী?
এটি হল ক্ষুদ্র ইচ মাইট (আটপাযুক্ত পোকা) দ্বারা সংঘটিত অত্যন্ত সংক্রামক একটি রোগ। একে খালি চোখে দেখা যায় না, কিন্তু মানুষের ত্বককে এরা প্রজনন ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার করে। যখন এই পোকাগুলো ত্বকের নিচে প্রবেশ করে ডিম পাড়ে তখন চুলকানির সৃষ্টি হয়, যা সাধারণত রাতে বৃদ্ধি পায়। শিশু ও বয়স্কদের উপর এদের আক্রমণের প্রবণতা বেশি। ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের ফলে এটি আরো জটিল হতে পারে, এর থেকে ত্বকে ক্ষতের সৃষ্টি, হার্টের রোগ, সেপ্টিসেমিয়া (রক্তে ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণের প্রবেশ), এমনকি কিডনির সমস্যা পর্যন্ত হতে পারে।
শরীরের যেসব স্থানে স্ক্যাবিস দেখা যায়
- হাত ও পায়ের আঙুলের ফাঁকে
- কব্জিতে
- বগল ও ঊরুসন্ধিতে
- একপর্যায়ে সারা শরীরেই
যথাযথ চিকিৎসা করা হলে এই ইচ মাইটগুলোর মৃত্যু হয় ও সংক্রমণ সেরে যায়। কিন্তু চিকিৎসা না করলে এই পোকাগুলো অনায়াসে আরো বংশবিস্তার করে ও সমস্যার বৃদ্ধি ঘটায়।
লক্ষণ ও উপসর্গগুলো কী হতে পারে?
১) প্রচন্ড চুলকানি বিশেষ করে রাতে। চুলকানি সাধারণত প্রথমে হাতের আঙ্গুলের ফাঁকে তারপর সেখান থেকে ঘাড়ে, নাভির আশে পাশে চামড়ায়, লজ্জাস্থানের আশেপাশে ও পায়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
২) চুলকানোর জায়গা একটু ফোসকা পড়ে লাল হয়ে ফুলে যাওয়া।
৩) অতিরিক্ত চুলকানির কারণে চামড়া ফেটে যাওয়া।
৪) আগে থেকে আপনার কোনো চামড়ার অসুখ থাকলে সেটা আরো খারাপ হওয়া।
৫) ত্বকে ফুসকুড়ি ওঠা বা ত্বক আঁশের মত হয়ে যাওয়া।
৬) ত্বকে ক্ষতের সৃষ্টি।
প্রধান কারণগুলো কী হতে পারে?
১) ইচ মাইট একজন মানুষ থেকে অন্যজনের মধ্যে স্থানান্তরিত হতে পারে, এটি হতে পারে সরাসরি ত্বকের সংস্পর্শের মাধ্যমে, অথবা অন্যের বিছানা, কাপড় বা আসবাবপত্র ব্যবহারের মাধ্যমে।
২) রোগীর ব্যবহৃত কাপড় গামছা, বিছানার চাদর ও বালিশ ব্যবহার করলে এই রোগ হতে পারে।
৩) একইভাবে, এই পোকাগুলো মায়ের থেকে সদ্যোজাতের শরীরে যেতে পারে। কোনো গ্রাহক ছাড়া এই পোকা ৩-৪ দিন অবধি বেঁচে থাকে।
এই রোগের চিকিৎসা কী?
প্রয়োজন অনুযায়ী যথাযথ ক্রিম, লোশন ও ট্যাবলেট ব্যবহারের মাধ্যমে স্ক্যাবিসের জটিলতা এড়ানো সম্ভব। চিকিৎসকের জন্য উপযুক্ত লোশন ও ক্রিমের নির্দেশ দেবেন। সংক্রমিত ব্যক্তির পরিবারের অন্যান্য সদস্য ও পার্টনারের জন্যও একই চিকিৎসার পরামর্শ দেওয়া হয়। চিকিৎসা বন্ধ করে দেওয়ার পর আবার চুলকানি বা ফুসকুড়ি দেখা দিলে পুনরায় চিকিৎসা শুরু করার দরকার হতে পারে।
এই সম্পর্কে কয়েকটি সাবধানতা অবলম্বন করা যেতে পারে
- আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত পোশাক, বিছানার চাদর সবকিছু গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে এবং ভালোভাবে রোদে শুকাতে হবে।
- পরিষ্কার বিছানা ও কাপড়ের ব্যবহার।
- 50 ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি তাপমাত্রায় কাপড় ধোয়া।
স্ক্যাবিস কী তা এতক্ষণে আমরা জেনে নিলাম। কিছু স্বাস্থ্যবিধি ও পরিচ্ছন্নতার নিয়ম মেনে চললেই একে রুখে দেওয়া সম্ভব। বিশেষ করে এই রোগ এড়াতে বাচ্চাদের দরকার বাড়তি যত্ন। আক্রান্ত ব্যাক্তিকে অবজ্ঞা না করে প্রোপার ট্রিটমেন্ট দিতে হবে। মনে রাখতে হবে শুধু চুলকানি ভেবে এই রোগের সঠিক চিকিৎসা না করলে পরবর্তীতে আরো বড় কোনো রোগ হতে পারে। তাই এই রোগ প্রকাশ পেলেই যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসা শুরু করতে হবে।
লিখেছেনঃ ডা: তাজরিনা রহমান জেনি, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ, চট্রগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ।
ছবিঃ সাটারস্টক।
The post স্ক্যাবিস কী, এর লক্ষণগুলো ও চিকিৎসা কী হতে পারে? appeared first on Shajgoj.
from Shajgoj https://ift.tt/J9QamIk
Apsara Hossain
Comments
Post a Comment