Skip to main content

কীভাবে পারফেক্টলি ক্যামেরা বন্দী করা যায় সুন্দর মুহূর্তগুলো?

একটা সময় ছিল, যখন ছবি তোলা বা কারো কাছে ক্যামেরা থাকা যেন বড়সড় ব্যাপার। স্টুডিওতে যেয়ে ছবি তুলতে হতো বা কোনো কিছুর ছবি, ভিডিও এত সহজ ছিল না। অনেকদিন অপেক্ষা করে হাতে ছবি পাওয়া যেতো এবং সেটা অ্যালবামে যত্নের সাথে সংরক্ষণ করা হতো। আর এখন ছবি তোলা অনেক সহজ। বাজারের বিভিন্ন মডেলের ক্যামেরা বা হাই মেগাপিক্সেল সম্পন্ন ফোন সবার হাতে হাতে। আমরা এখন চাইলেই আমাদের সুন্দর সময়গুলোর বা শখের কাজ কিংবা ঘুরতে যেয়ে মনোমুগ্ধকর প্রকৃতির ছবি, ভিডিও ক্যামেরা বন্দী করতে পারি। এখন কীভাবে পারফেক্টলি ক্যামেরা বন্দী করা যায় সুন্দর মুহূর্তগুলো তা নিয়েই টুকিটাকি টিপস শেয়ার করবো আপনাদের সাথে।

ক্যামেরা নিয়ে কিছু বেসিক ধারণা

যেকোনো ডিভাইস ব্যবহার করার পূর্বে তার সম্পর্কে ধারণা নেওয়া জরুরী। অনেক সময় দেখা যায় একটা ডিভাইস সম্পর্কে ঠিকভাবে না জানার কারণে ছবি তুলতে গিয়ে আমরা অনেক অপশন মিস করে ফেলি। ফলস্বরূপ ছবি সুন্দর হয় না।

এই জন্য ম্যানুয়ালটায় একবার চোখ বুলিয়ে নিতে পারেন। তবে ম্যানুয়াল পড়াটা অনেকের কাছে বিরক্তিকর লাগে। তাই বিভিন্ন ফিচার নিয়ে যদি বারবার প্র্যাকটিস করা যায় তাহলে ফটোগ্রাফি বিষয়টা সহজে আয়ত্তে আসে। এখন তো ইউটিউবেও বেশ ভিডিও অ্যাভেইলেবল ক্যামেরা নিয়ে।

আগে জেনে নিন ক্যামেরা সম্পর্কে

যেভাবে পারফেক্টলি ক্যামেরা বন্দী করবেন সুন্দর মুহূর্তগুলো

গ্রিড মোড

যেকোনো ফটোগ্রাফিতে এই বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান থাকা মাস্ট। গ্রিড কী? যখন কোন ছবি এডিট করা হয় তখন খেয়াল করবেন একটা ছবি স্কয়ারের মতন অনেক গুলো ভাগে বিভক্ত। এই প্রত্যেকটা ভাগই গ্রিড।
এখন ছবি তোলার সময় চেষ্টা করবেন ৩’×৩’ /৪’×৪’ গ্রিডে তুলতে। অর্থাৎ ছবিতে সাবজেক্ট ফিক্সড করার টোটাল ৯টা বা ১৬টা বক্সের মাঝে থাকে। আর এই ৩’×৩’ মোডে রাখা কে বলে রুল অফ থার্ডস।

ফোকাস

বেশিরভাগ ক্যামেরাই অটো ফোকাসড হয়ে থাকে। তারপরও সাবজেক্ট চুজ করে ফোকাসিং ঠিক করে নিন। ধরুন পাতার উপর প্রজাপতির ছবি তুলতে চান, এক্ষেত্রে ফোকাসটা ঠিক করুন। না হলে পাতা বা প্রজাপতি দুইটাই ব্লারড হয়ে যেতে পারে।

F number এবং অ্যাপারচার

F number হচ্ছে ক্যামেরা লেন্সের আলোক গ্রহণের ক্ষমতা। ফটোগ্রাফিতে অ্যাপারচার দিয়ে এই F number কে বুঝানো হয়। এই F নাম্বার বা ফোকাল লেন্থ যত ছোট হবে অ্যাপারচারের তত বড় হবে। এতে করে আপনি ঠিক করতে পারবেন যে কতটুকু সাবজেক্টের ছবি নিতে চান। একটা লতানো গাছে বেয়ে ফুল ঝুলছে। এই ফোকাল লেন্থ বাড়িয়ে কমিয়ে ঠিক করতে পারবেন শুধু ফুলের ছবি নিতে চান নাকি গাছে থেকে ঝুলে পড়ছে এই দৃশ্য সহ। সেই সাথে এটি আপনার ক্যামেরা লেন্স কতটুকু আলো ক্যাপচার করতে পারে সেটাও নির্ধারণ করে। তাই ক্যামেরা কেনার পূর্বে লেন্সের উপর বেশ জোর দেওয়া হয়।

ফটোগ্রাফিতে লেন্স এর উপর জোর দিতে হবে

শাটার স্পিড

ছবি কেমন হবে? স্থির নাকি চলমান। এই সব কিছু শাটার স্পিডের উপর নির্ভর করে। শাটার বাটন তো সবাই চিনি। যখন ছবি তুলার সময় প্রেস করি আলো ক্যামেরায় প্রবেশ করে প্রথম পর্দায় পড়ে সাথে সাথে ফিল্ম আলোতে এক্সপোজ হয়। এর পরের মুহুর্তেই দ্বিতীয় পর্দা নেমে যায়, ফলে এক্সপোজারে আলো আর প্রবেশ করে না। এই যে দুই পর্দার মাঝামাঝি সময় এটাই শাটার স্পিড।

এই স্পিড ৩০ সেকেন্ড থেকে ১/ ৮০০০ সেকেন্ড হয়ে থাকে। এই যেমন চলন্ত সাইকেলে কেউ আসছে এর ছবি তুলতে চান তাহলে শাটার স্পিড বাড়িয়ে দেওয়ার ফলে আমরা মোটামুটি স্থির ছবি পাবো। আর কমিয়ে দিলে ছবিটি ব্লারড মোশনে আসবে। একই ভাবে চায়ে কিছু সুগার কিউব উপর থেকে ফেলছেন এই অবস্থায় ছবি তুলতে চান তাহলে শাটার স্পিড বাড়িয়ে দিন। এটা সম্পুর্ণ ফটোগ্রাফারের ইচ্ছার উপরে ডিপেন্ড করে।

ডেপথ অফ ফিল্ড

ফটোগ্রাফি মূলত চারটা জিনিসের উপর নির্ভরশীল। তা হলো ক্যামেরার অ্যাপারচার, কী লেন্স ব্যবহার হচ্ছে, কী ক্যামেরা ব্যবহার হচ্ছে আর ক্যামেরা থেকে সাবজেক্টের দূরত্ব। এই বিষয় গুলোতো আগেই আলোচনা করেছি। তাই ছবি তোলার পূর্বে চেষ্টা করবেন ডেপথ অফ ফিল্ড ঠিক আছে কিনা দেখে নেয়ার।

ISO স্কেল

একটা ভালো ছবি তুলতে এর স্কেলের মান অনেকাংশে নির্ভর করে। এটি ছবির উজ্জ্বলতার উপর প্রভাব ফেলে। ডিজিটাল ক্যামেরার ক্ষেত্রে এই মান ১০০ থেকে ৬৪০০ পর্যন্ত হয়ে থাকে। কোন আলোতে ছবি তুলছেন সেটা বিবেচনা করে আইএসও এর মান বাড়াতে বা কমাতে হয়। রাতের বেলায় এটি বাড়িয়ে ছবি তোলা ভালো।

রাতের বেলায় ISO বাড়িয়ে নিন

Aspect Ratio

ছবি তুললে সেটির দৈর্ঘ্য প্রস্থের অনুপাত ঠিক কেমন হবে এটি তা বুঝায়। ফুল স্ক্রিন, ১:১, ৩:৪ নাকি ৯:১৬ ঠিক কতটুকু অনুপাতে রাখলে ছবিটা ঠিকমত আসবে তা বুঝায়। এটার উপর আবার ক্রপিংয়ের এবং জুম করার বিষয়ও জড়িত।

ক্যামেরার ফ্ল্যাশ

সবসময়ই উচিত পর্যাপ্ত দিনের আলোতে ছবি তোলা। তবে আলো না থাকলে ফ্ল্যাশের ব্যবহার করা যেতে পারে।

ফটোগ্রাফির বেসিক কিছু টিপস

১) সবার প্রথম চিন্তা করুন আপনার সাবজেক্ট কী? সঠিক সাবজেক্ট বেছে নেওয়ার উপর ভালো একটা ছবি তোলা ডিপেন্ড করে। একসাথে অনেক সাবজেক্ট ক্যামেরায় না এনে যেকোনো একটির উপর ফোকাস করলে ছবি ভালো আসে।

২) লাইট বিষয়টাকে সবসময়ই প্রাধান্য দিতে হবে। ন্যাচারাল লাইট হলো বেস্ট চয়েস। সানরাইজের ২ ঘন্টা পরে এবং সানসেটের ২ঘন্টা পূর্বে হলো গোল্ডেন টাইম।

৩) ক্লোজড পজিশনে ছবি তুলতে পারা। জুমিং করা যতটা এভয়েড করা যায় ততটাই ভালো। আর কাছে থেকে ছবি তুললে সেটি বেশ স্পষ্ট এবং পরিষ্কার হয়ে ফুটে উঠে।

৪) ক্যামেরা ঠিক ভাবে ধরতে শিখুন। অনেকেরই হাত কাপে বা ঘেমে যায়। যত স্থির থাকবেন তত ছবি ভালো আসবে। আর এক্ষেত্রে আপনি ট্রাইপড ব্যবহার করতে পারেন যাতে স্থির রাখা যায়।

ট্রাইপড ব্যবহার করতে পারেন

৫) ছবির সাবজেক্টকে আপনার ক্যামেরায় কতটুকু স্পেস দিবেন সেটাও বিবেচনায় রাখুন। পাহাড় এবং সমুদ্র একই সাথে তুলতে চাইলে, সমুদ্র কে ফোকাসে রাখতে চাইলে ছবির দুই তৃতীয়াংশ ভাগ সমুদ্রকেই রাখুন। ছবি ভালো আসবে।

৬) যখন সাবজেক্ট উঁচু টাওয়ার বা বিল্ডিং বা গাছ পুরোটা ক্যামেরায় আনার সময় খেয়াল করবেন উপর অংশ যেন ক্রপ হয়ে না যায়। তবে কখনো কখনো ফুল ছবির চেয়ে হাফ ছবি বেশ ভালো আসে। তাই পারিপার্শ্বিক পরিবেশ বুঝে ছবি তুলুন।

৭) লিভিং সাবজেক্টের একদম কাছে যেয়ে ধরুন, যেমন, বাচ্চার হাস্যোজ্জ্বল ছবি এক্ষেত্রে আই লেভেল বরাবর ছবি তুললে সেটা আকর্ষণীয় হয়।

৮) টাইমারের সঠিক ব্যবহার করুন। ধরুন আপনি জানেন ঠিক ৫ সেকেন্ড পরেই প্লেন যাবে। তখন সব পজিশন ঠিক রেখে টাইমার সেট করলে ছবি ভালো আসবে। তাই জায়গা এবং সাবজেক্ট বুঝে টাইমার ব্যবহার করবেন। সব ছবিতে টাইমারের প্রয়োগ না করাটাই ভালো।

আরও পড়ুনঃ বডি টাইপ অনুযায়ী আউটফিট সিলেকশন

লুকরুম এবং হেডরুম

লুকরুম এবং হেডরুম সেট করুন। আমরা প্রায়ই  ছবি তুলি যেখানে হাতে ফুল নিয়ে ফুলের দিকে তাকিয়ে আছি। এখানে যেহেতু সাবজেক্ট ফুলের দিকে তাকানো তাই ফুল হাফ আনলে হবে নাহ অর্থাৎ লুকরুমে ফ্রেমে আনতে হবে।

এবার আসি হেডরুম। কেউ বসে আছে, এখন এমন ভাবে ছবি তোলা হলো যে সাবজেক্টের মাথার উপরের অংশ মানে হেড রুমের জন্য কোন স্পেস ই থাকলো নাহ। এতে ছবির মান কমে যায়।

খেয়াল রাখুন ব্যাকগ্রাউন্ড

ব্যাকগ্রাউন্ড যতটা সুন্দর করা যায়। এখন তো ফুড ফটোগ্রাফিতে ব্যাকগ্রাউন্ডে বেশ গুরুত্ব দেওয়া হয়। একটা ভালো ছবি তুললেন অথচ ব্যাকগ্রাউন্ডে উপস্থিত থাকা অবাঞ্ছিত জিনিসের কারণে পুরো ছবির সৌন্দর্য কিন্তু নষ্ট হয়ে যেতে পারে। একই সাবজেক্টের বিভিন্ন পজিশনে বারবার ছবি তুলুন। এতে করে পার্থক্যটা ভালো বুঝা যায়। কারণ অনেক সময় ছবি ব্লারড হয়ে যেতে পারে বা লাইটের তারতম্য হতে পারে। তাছাড়া যত প্র্যাকটিস করবেন ততই ফটোগ্রাফির হাত আপনার দক্ষ হবে।

কীভাবে পারফেক্টলি ক্যামেরা বন্দী করবেন ছবি আশা করি বুঝা গেল

ক্যামেরা নিয়ে টুকটাক কিছু কথা

  • ছবি তুলে সেটাকে যত এডিট করবেন তত সুন্দর হবে এক্ষেত্রে অবশ্য এক্সট্রা মেমোরি কার্ডের প্রয়োজন হবে।
  • যত ছবি তুলেন না কেনো সেগুলোকে ঠিক ভাবে এ্যালবাম নাম এবং ফোল্ডার দিয়ে সাজিয়ে রাখবেন। এতে করে ছবি খুঁজে পেতে সহজ হয়।
  • মাঝেমধ্যে ক্যামেরা টা বের করে ক্লিন করে নিতে ভুলবেন না। আর চার্জ দিয়ে রাখা তো মাস্ট। কেননা সুন্দর মুহূর্ত কিন্তু সীমিত সময়ের জন্যই হয়ে থাকে।

এই ছিল বেসিক ফটোগ্রাফি নিয়ে কিছু কথা। একটা ছবি শুধু আপনার মেমোরি কে তাজা করে না তার সাথে একেকটা ঘটনা বা মুহূর্তকেও বর্ণনা করে। তাই ক্যামেরা যদি ব্যবহার করেই থাকেন চেষ্টা করবেন যেন পারফেক্টলি ক্যামেরা বন্দী করা যায় সুন্দর মুহূর্তগুলো।

ছবিঃ সাটারস্টক

Comments

Popular posts from this blog

স্ট্রেসের কারণে একনে বা প্রিম্যাচিউর এজিং সাইনস দেখা দিচ্ছে না তো?

আপনি যখন এই লেখাটি পড়ছেন তখন আমি বুঝতেই পারছি আপনার হাতে টেকনোলজির সুবিধা রয়েছে। যার কারণে আপনি এখন চাইলেই যে কোনো ভিডিও দেখতে পারেন, যে কোনো তথ্য সম্পর্কে জানতে ইন্টারনেটে সার্চ করতে পারেন। জীবন আগের চেয়ে এখন অনেক সহজ। তারপরও কিন্তু আমরা সবাই কমবেশি স্ট্রেসের মধ্য দিয়ে যাই। আর এই স্ট্রেস মানসিকভাবে আমাদের যতটা অসুস্থ করে দিচ্ছে, ঠিক ততটাই এফেক্ট ফেলছে আমাদের স্কিনের উপর। যেমন- স্ট্রেসের কারণে একনে বা প্রিম্যাচিউর এজিং সাইনস দেখা দিচ্ছে, সেই সাথে হচ্ছে ত্বকের নানা সমস্যা। স্ট্রেস কতভাবে স্কিনের উপর প্রভাব ফেলে এবং কীভাবে স্ট্রেস কমিয়ে আনা যায় তা নিয়েই আলোচনা করবো আজ। স্ট্রেস কেন হয়? বিভিন্নভাবে স্ট্রেস হতে পারে। যেমন- এনভায়রনমেন্টাল বা টেম্পারেচার চেঞ্জ (এক্সটার্নাল ফ্যাক্টর)। ধরুন আপনি অনেকটা সময় ঠান্ডা রুমে ছিলেন। হুট করে যখন গরম পরিবেশে চলে আসলেন তখন শরীরে একটা স্ট্রেস হয়। আবার আর্থিক অবস্থা, লেখাপড়া, পারিবারিক সমস্যা ইত্যাদির কারণে সাইকোলজিক্যাল স্ট্রেস দেখা দেয়। স্ট্রেস এমন একটি বিষয় যেটার সাথেও আমরা থাকতে পারি না, যেটা ছাড়াও আমাদের থাকা সম্ভব নয়। সময়ের সাথে সাথে আমরা বেশ আধু

Dr. Fariah Sharmeen - Woman Oncology Specialist

Dr. Fariah Sharmeen Specialty - Associate Consultant, Oncology Degree - MBBS, FCPS (Radiotherapy) Chamber: SQUARE Hospitals Ltd. Dhaka Address: 18/F Bir Uttam Qazi Nuruzzaman Sarak, West Panthapath, Dhaka - 1205, Bangladesh Call For Appointment 10616 Call Now About: Dr. Fariah Sharmeen successfully completed her MBBS from Cumilla Medical College, and subsequently completed a one-year internship at BIRDEM Hospital, Dhaka. After completing of the internship, she started her post-graduate training in Medical Oncology at the National Institute of Cancer Research & Hospital. She started her fellowship in Radiotherapy in 2010. She completed 4 years of training at the National Institute of Cancer Research & Hospital on External Beam Radiotherapy Planning and Brachytherapy. She achieved FCPS in Radiotherapy from the Bangladesh College of Physicians & Surgeons (BCPS) in 2015. She has obtained several hands-on pieces of training on Head - Neck, Lung, Genitourina