Skip to main content

পিরিয়ডের সময় বিশেষ পুষ্টি | কী খাবেন ও খাবেন না?

পিরিয়ড প্রতিটি নারীর জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। প্রতি মাসের এই ৩ থেকে ৭ দিন অনেকটা রক্ত বের হয়ে যায় শরীর থেকে, যার ফলে আয়রনসহ নানা পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি দেখা দিতে পারে আমাদের শরীরে। এছাড়াও পিরিয়ড হলে অনেকের মাথা ব্যথা,তলপেটে বা কোমরে ব্যথা, বমি ভাব, অ্যাসিডিটি, পাতলা পায়খানা সহ নানা সমস্যা দেখা যায়। আর তাই পিরিয়ডের সময় বিশেষ পুষ্টি নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে দেহে প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাব দেখা দিবে, সাথে যোগ হবে নানা রকম শারীরিক সমস্যা। আজকের ফিচারে জানাবো পিরিয়ডের সময় আমাদের ডায়েট কেমন হতে পারে সে সম্পর্কে বিস্তারিত।

পিরিয়ডের সময় বিশেষ পুষ্টি কীভাবে নিশ্চিত করবেন?

মাসিকের সময় মেয়েদের শরীরে আয়রনের ঘাটতি দেখা যায়, তাই এ সময় ডায়েটে এমন খাবার রাখতে হবে যেগুলো শরীরে আয়রনের ঘাটতি পূরণ করে। সবুজ শাকসবজি পিরিয়ডের সময় খাওয়া খুবই প্রয়োজন। এতে থাকে প্রচুর আয়রন যা শরীরের ক্ষয়পূরণে সহায়তা করে। তাই অবশ্যই প্রতিবেলার খাবারে রাখতে হবে সবুজ পাতা, বিভিন্ন শাক-সবজি ও সালাদ। এগুলোর মাঝে কচু শাক, পুঁই শাক, ডাঁটা শাক, ফুলকপির পাতা, কলমি শাক, লাল শাক অন্যতম।

দেহের চাহিদা অনুযায়ী প্রোটিন জাতীয় খাবার খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। প্রতিদিন পরিমিত পরিমাণে ডিম, মাছ অথবা মাংস এবং সম্ভব হলে সপ্তাহে ১-২ বার সামুদ্রিক মাছ খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। কেননা সামুদ্রিক মাছে থাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, মিনারেল, ফ্যাটি এসিড ইত্যাদি। তাই পিরিয়ডের সময় মাছ বাদ দেওয়া যাবে না। আবার রেড মিটও খেতে পারেন পরিমাণমত, এটি আয়রনের ঘাটতি পূরণে সাহায্য করে। তবে অবশ্যই মাংস চর্বি ছাড়া হতে হবে এবং পরিমাণে কম খেতে হবে।

পিরিয়ডের সময় বিশেষ পুষ্টি ও ভিটামিন সি

শরীরে আয়রনের ঠিকমত শোষণ ও কার্যকারিতার জন্য ভিটামিন সি অতি আবশ্যক। তাই পিরিয়ডের সময় বিশেষ পুষ্টি নিশ্চিত করতে খাদ্য তালিকায় – পেয়ারা, আমড়া, তরমুজ,কালো জাম, পাকা তেতুল, আমলকি, লেবু, জলপাই, জাম্বুরা, পাকা টমেটো, কামরাঙা, পাকা পেঁপে, আনারস রাখতে পারেন। পিরিয়ডের সময় ফলমূল যতটা সম্ভব বেশি খাওয়ার চেষ্টা করা উচিত। এছাড়া নিয়ম করে কলা খাওয়া উচিত। কলায় পটাশিয়াম ও ভিটামিন থাকে যা পিরিয়ডের সময় অতি দরকারি। কিছু সংখ্যক নারী পিরিয়ডের সময় ডা‍য়ারিয়াতে ভুগেন,তাদের জন্য কলা অনেক উপকারী। এছাড়া ভালো ঘুম হওয়া এবং বিষণ্ণতা দূর করতেও কলা খেতে পারেন।

পিরিয়ডের সময় প্রচুর পানি ও পানি জাতীয় খাবার খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে। তবে এর মানে এই না বাইরের ড্রিংক বা অন্য কিছু খাওয়া যাবে। সাধারণ পানি, ফলের জুস,লিকুইড খাবার,স্যুপ এগুলো খেতে হবে। কারো যদি পেটে পেইন থাকে সেক্ষেত্রে হালকা কুসুম গরম পানি পান করতে পারেন, এটি পেইন রিলিফে ভূমিকা পালন করবে।

আমরা জানি বাদামে রয়েছে নানা ধরনের ভিটামিন ও খনিজ উপাদান, যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে। পিরিয়ডের সময় বাদাম শরীরকে সুস্থ ও এনার্জেটিক রাখতে সহায়তা করে। চীনা বাদাম, কাজু বাদাম, কাঠ বাদাম, পেস্তাবাদাম পিরিয়ডে শরীরের ঘাটতি পূরণে সাহায্য করে। তাই নিয়ম করে মাসের এ সময় আপনার ডায়েটে বাদাম রাখতে পারেন। তবে অবশ্যই রোস্টেড বা সল্টেড বাদাম খাওয়া থেকে দূরে থাকতে হবে। এছাড়াও সাথে খেতে পারেন কুমড়া, শিমের বীজসহ নানা ধরনের বিচি জাতীয় খাবার। এর পাশাপাশি ডায়েটে অ্যাড করতে পারেন ২-৩ পিস ডার্ক চকলেট। ডার্ক চকলেটে সুগারের পরিমাণ তুলনামূলক কম থাকে, আর এতে থাকে ম্যাগনেসিয়াম, যা আপনাকে পিরিয়ডে কিছুটা হলেও পুষ্টি যোগাবে আর সেই সাথে দূর করবে আপনার বিষণ্ণতা।

আদা চা পিরিয়ডের সময় বেশ উপকারী

আদা,হলুদ,টক দই এই জাতীয় খাবার রেগুলার ডায়েটে রাখা জরুরী। হলুদে কারকিউমিন থাকে, যা অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি স্পাইস হিসেবে কাজ করে। হলুদ মেশানো দুধ এ সময় বিশেষ উপকারী ভূমিকা পালন করে। আদা বমি ভাব দূর করে। তাই আদা চা হতে পারে আপনার জন্য এ সময় ভালো ড্রিংক, তবে অবশ্যই পরিমাণের দিক খেয়াল রাখতে হবে। এছাড়া যাদের ইউরিন ইনফেকশন আছে, তাদের জন্য প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ টকদই পিরিয়ডে উপকারী ভূমিকা রাখে।

কী কী খাওয়া উচিত না

পিরিয়ডের সময় সল্টেড বিস্কুট থেকে শুরু করে চিপস, এক্সট্রা লবণ ও তেল মশলা দেওয়া যেকোনো খাবার বাদ দিতে হবে। সেই সাথে সকল প্রকার সফট ড্রিংকস পরিহার করুন। মিষ্টি জাতীয় খাবার যত কম খাওয়া যায় ততই ভালো।

পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে ব্যথা, হরমোনাল ইমব্যালেন্স ইত্যাদির কারণে অনেকের রাতে ঘুম হয় না, মাথাব্যথা করে কিংবা ক্লান্তিভাব দেখা যায়, তাই অনেকে খুব বেশি চা-কফি খেয়ে থাকেন। কিন্তু চা-কফির ক্যাফেইন শরীরকে ডিহাইড্রেটেড করে এবং আয়রন শোষণে বাধা দেয়। তাই কয়েক দিনের জন্য চা-কফি বন্ধ রাখা ভালো।

আশা করি কোন কোন খাবার খেলে পিরিয়ডের সময় বিশেষ পুষ্টি নিশ্চিত করা যায় তা সবাই বুঝতে পেরেছেন। সবাই পিরিয়ড নিয়ে সচেতন থাকবেন, পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখবেন এবং ডায়েট মেনে চলবেন। তাহলেই সুস্থ থাকতে পারবেন।

লিখেছেন,

সাদিয়া ইসরাত স্মৃতি

নিউট্রিশনিস্ট

ডক্টর সিরাজুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হসপিটাল

ছবিঃ সাটারস্টক

The post পিরিয়ডের সময় বিশেষ পুষ্টি | কী খাবেন ও খাবেন না? appeared first on Shajgoj.



from Shajgoj https://ift.tt/o90rVYi
Sumaiya Rahman

Comments

Popular posts from this blog

রেগুলার ব্রা vs পুশ-আপ ব্রা | সঠিক ইনার ওয়্যার কীভাবে সিলেক্ট করবেন?

রেগুলার ব্রা আর পুশ-আপ ব্রা, এই দু’টার মধ্যে আসলে পার্থক্য কী আর কখন কোনটা ইউজ করতে হবে, এই বিষয়গুলো আমাদের অনেকেরই অজানা। আমাদের অ্যাকটিভিটি আর আউটফিটের সাথে ইনার ওয়্যারেও ভ্যারিয়েশন আসে। যেমন সকালে ঘুম থেকে উঠে ওয়ার্ক আউট করছি, এরপর ভার্সিটি বা অফিসে যাচ্ছি, সন্ধ্যায় পার্টি অ্যাটেন্ড করছি। সব সময় কি আমরা সেইম ব্রা পরি? না তো! শাড়ি পরলে এক ধরনের ব্রা পরি, জিমে গেলে অন্য ধরনের ব্রা পরি, বাসায় থাকলে আবার আরেক রকম! কখন কোন ব্রা পরা উচিত বা কোন ড্রেসের সাথে কোনটা মানাবে এই বিষয়গুলো নিয়ে অনেকেরই কনফিউশন আছে। এই বিষয়গুলো এখনও অনেকের কাছেই ট্যাবু। দিন বদলাচ্ছে, এই সামাজিক ট্যাবু থেকে বেরিয়ে আসতে হবে সবাইকে। লঞ্জেরি মেয়েদের জন্য বেসিক একটি জিনিস। তাই লঞ্জেরির ক্যাটাগরিটা আমাদের জেনে রাখা উচিত। পুশ-আপ ব্রা কেন ইউজ করে, এটাই এখনও অনেক মেয়েরা জানে না! রেগুলার ব্রা এর সাথে সাথে নিজের কালেকশনে পুশ-আপ ব্রা কেন রাখা উচিত, সেটা কিন্তু অনেকে বুঝতে পারে না। চলুন এই কনফিউশনগুলো আজ দূর করা যাক। রেগুলার ব্রা vs পুশ-আপ ব্রা    বেসিক রেগুলার ব্রা-এর ক্ষেত্রে ফেব্রিক ম্যাটেরিয়াল ও কমফোর্টের বিষ...

বিবি ক্রিম vs সিসি ক্রিম | স্কিন টাইপ অনুযায়ী কোনটি আপনার জন্য স্যুইটেবল?

ন্যাচারাল মেকআপ লুকের জন্য এখন বিবি ক্রিম ও সিসি ক্রিম বেশ জনপ্রিয়। পার্টি মেকআপ বা ফুল কভারেজ মেকআপের ক্ষেত্রে ফাউন্ডেশন ইউজ করা হয়। কিন্তু যারা রেগুলার হালকা মেকআপ করে বাইরে বের হন, তাদের জন্য বেস্ট অপশন হচ্ছে BB বা CC ক্রিম । কিন্তু আমরা অনেকেই বুঝতে পারি না যে স্কিন টাইপ ও কনসার্ন অনুযায়ী কীভাবে রাইট প্রোডাক্টটি সিলেক্ট করতে হবে। এই দু’টি মেকআপ প্রোডাক্টের বেনিফিট বা কার্যকারিতা নিয়ে আজকের ফিচার। এগুলোর মধ্যে বেসিক ডিফারেন্সটা আসলে কোথায়, সেটাও জানা হয়ে যাবে। বিবি ক্রিম BB (Beauty Balm, Blemish Balm) ক্রিম স্কিনকে ইভেন টোনড করে এবং ব্লেমিশ হাইড করে ফ্ললেস লুক দেয় নিমিষেই। এতে স্কিন ময়েশ্চারাইজিং ও হাইড্রেটিং এলিমেন্টস থাকে, যার কারণে ড্রাই বা নরমাল স্কিনের জন্য এটি একদম পারফেক্ট। এর টেক্সচার ফাউন্ডেশনের থেকে লাইট, তাই কভারেজটাও হয় একদম ন্যাচারাল। মানে একদমই হেভি ফিল হয় না, আর স্কিনটাও পিকচার পারফেক্ট দেখায়। অনেক বিবি ক্রিমে সান প্রোটেকশন ফ্যাক্টর বা SPF থাকে। সিসি ক্রিম CC (Color Corrector, Complexion Corrector) ক্রিমের ফর্মুলা লাইট ওয়েট ও লং লাস্টিং। ম্যাট ফর্মুলার হওয়াতে অয়েল...

লো পোরোসিটি চুল | কীভাবে চিনবেন এবং সঠিক যত্ন নিবেন?

একরাশ সুন্দর ও ঝলমলে চুল কে না চায়? কিন্তু অনেক সময় সঠিক যত্নের অভাবে সুন্দর চুলগুলো দিন দিন নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ে। চুলের যত্নের ক্ষেত্রে আমাদের সবচেয়ে সবচেয়ে বড় ভুল হলো পোরোসিটি না বুঝে হেয়ার কেয়ার করা। এতে করে চুল আরো ড্যামেজ হওয়ার চান্স থাকে। আজকের ফিচারটি মূলত লো পোরোসিটি হেয়ার কেয়ার নিয়ে। লো পোরোসিটি চুল কীভাবে বুঝবো, কীভাবে যত্ন নিতে হবে, কী ব্যবহার করা যাবে ও যাবেনা ইত্যাদি বিস্তারিত জানবো আজকের ফিচারে। লো পোরোসিটি বলতে কী বোঝানো হয়? পোরোসিটি শব্দের বাংলা অর্থ হচ্ছে ছিদ্র। ত্বকে যেমন অসংখ্য পোর বা ছিদ্র থাকে, চুলের ক্ষেত্রেও কিন্তু তাই রয়েছে। অর্থাৎ প্রতিটি চুলে অসংখ্য ছিদ্র বিদ্যমান, যার মাধ্যমে চুলে আর্দ্রতা প্রবেশ করে এবং চুল আর্দ্রতা ধরে রাখার চেষ্টা করে। একেই হেয়ার পোরোসিটি বলে। পোরোসিটি ৩ রকম, হাই, মিডিয়াম ও লো। এই হেয়ার পোরোসিটির মাত্রা প্রত্যেক মানুষের ক্ষেত্রে আলাদা হয়ে থাকে। লো পোরোসিটির চুলগুলো কম ছিদ্র সম্পন্ন হয়ে থাকে। লো পোরোসিটি চুলের কিউটিকল লেয়ার খুব শক্ত ভাবে সংযুক্ত থাকে। যার ফলে এ ধরনের চুল আর্দ্রতা সহজে গ্রহণ করতে পারেনা, তবে একবার আর্দ্রতা গ্রহণ করলে এ ধরনের...