Skip to main content

শিশুর ওজন না বাড়ার পিছনে কারণগুলো কী হতে পারে?

মিথিলা ডায়াপারের প্যাকেটের হাস্যোজ্জ্বল, স্বাস্থ্যবান শিশুর দিকে তাকিয়ে আছে, আর ভাবছে তার নবজাতক শিশুটি কীভাবে এমন স্বাস্থ্য পেতে পারে! তার বাচ্চাটির জন্মের সময় যে ওজন ছিল, বর্তমানে তার চেয়ে কম আছে। এই নিয়ে মিথিলা ও তার পরিবার খুবই চিন্তিত। মিথিলার মতো নতুন মায়েরা আতঙ্কিত হওয়ার আগে জেনে রাখুন, একটি সুস্থ, পূর্ণ মেয়াদে বুকের দুধ খাওয়ানো নবজাতক তাদের প্রথম কয়েক দিনে জন্মের সময়ের ওজনের ৭ থেকে ৮ শতাংশ (বা একটু বেশি) কমে যাওয়া স্বাভাবিক। যখন তারা ২ সপ্তাহ বয়সে পৌঁছাবে, বেশিরভাগ নবজাতক তাদের জন্মের ওজন ফিরে পাবে। প্রথম বছরের শেষ নাগাদ তাদের ওজন স্বাভাবিকভাবে তিনগুণ বেড়ে যাবে। কখনও কখনও একটি শিশুর ওজন প্রত্যাশা অনুযায়ী নাও বাড়তে পারে। শিশুর ওজন কেন বাড়ছে না এবং কীভাবে সমস্যাটি সমাধান করা যায় সে সম্পর্কেই জানবো আজকের আর্টিকেলে।

শিশুর ওজন যে কারণে বাড়ছে না

কিচ্ছুক্ষণ পর পর নবজাতককে খাওয়ানো, ডায়াপার পরিবর্তন ও সারা রাতের নির্ঘুম জার্নিতে আপনি হঠাৎ করে লক্ষ্য করেন এরই মাঝে সপ্তাহ দুয়েক সময় পেরিয়ে গেছে এবং আপনার শিশুর ওজন বাড়ছে না। শিশুর ওজন বাড়ানোর জন্য তার দেহের প্রয়োজনীয় মোট ক্যালোরির চেয়ে অবশ্যই তাকে বেশি ক্যালোরি গ্রহণ করতে হবে। ওজন বৃদ্ধি না হওয়ার তিনটি কারণ হলো:

শিশু পর্যাপ্ত ক্যালোরি গ্রহণ করছে কিনা দেখুন

  • শিশু পর্যাপ্ত ক্যালোরি গ্রহণ করছে না।
  • শিশু যে ক্যালোরি গ্রহণ করে, তার দেহ সেটা শোষণ করছে না
  • শিশুর দেহে ক্যালোরি বেশি বার্ন করছে।

পর্যাপ্ত ক্যালোরি গ্রহণ না করা

স্বাস্থ্যকর পূর্ণ মেয়াদে বুকের দুধ খাওয়ানো শিশুরা সাধারণত প্রতি ২ থেকে ৩ ঘন্টা অন্তর বুকের দুধ খায়। ফর্মুলা খাওয়ানো শিশুদের প্রতি ৩ ঘন্টায় ১.৫ থেকে ২ আউন্স ফর্মুলা প্রয়োজন। তাদের পেট বড় হওয়ার সাথে সাথে খাওয়ানোর সময় বাড়তে থাকে, কিন্তু কিছু শিশু তাদের প্রয়োজনীয় ক্যালোরি নাও পেতে পারে। মনে প্রশ্ন আসতে পারে কেন এমন হয়?

ঘুমন্ত শিশু

নবজাতক ঘুমিয়ে থাকতে পারে, তাই আপনি যদি আপনার শিশুকে জাগানোর চেষ্টা করেন বা তাকে জাগিয়ে রাখার চেষ্টা করেন, তাহলে তাদের পায়ে আলতো করে সুড়সুড়ি দিন, কম্বল সরিয়ে ফেলুন বা ডায়পার খুলে সহজ করে পরিয়ে দিন। অনেক সময় দেখা যায় ঘুমের কারণে শিশু পর্যাপ্ত ক্যালোরি গ্রহণ করতে পারে না।

শেখার প্রচেষ্টা

বাচ্চাদের শিখতে হবে ফিডিং, শ্বাস নেওয়া ও গিলতে পারা। এটি মানিয়ে নিতে কেউ কেউ অন্যদের তুলনায় একটু বেশি সময় নিতে পারে। আপনার দিক থেকে নিশ্চিত করুন যে দুধ খাওয়ানোর সময় তারা আপনার সাথে গভীরভাবে লেগে আছে। ভালভাবে বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ।

শক্ত খাবার শুরু করা কঠিন

শিশু বিশেষজ্ঞরা ৬ মাস বয়সের পর থেকে শক্ত খাবার (Solid food) শুরু করার পরামর্শ দেন। সলিড খাবার শুরু করার পরেও তাদের বেশিরভাগ ক্যালোরি প্রথম বছরে বুকের দুধ বা ফর্মুলা থেকে আসবে। কখনও কখনও শক্ত খাবার শুরু করার সময় ওজন বৃদ্ধি কিছু কম হতে পারে। নিশ্চিত করুন যে আপনার শিশু ঘন ঘন বুকের দুধ বা ফর্মুলা খাওয়ানো শুরু করার পরেও ঘন ঘন অন্য খাবারও খাচ্ছে।

শিশুকে সলিড খাবার দিন

শিশু যে ক্যালোরি গ্রহণ করে তা দেহে শোষণ না হওয়া

কেন এটি ঘটতে পারে, এই বিষয়ে গবেষণায় জানা গেছে-

খাদ্যে অ্যালার্জি ও সংবেদনশীলতা

অল্প সংখ্যক শিশুর খাদ্যে অ্যালার্জি বা অসহিষ্ণুতা থাকে। আপনার শিশুর অ্যালার্জির সমস্যা আছে সন্দেহ হলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। গ্লুটেন ও দুগ্ধজাত দ্রব্য খাদ্য-সংবেদনশীল শিশুর জন্য হজম করা কঠিন হতে পারে এবং তাদের অন্ত্রে জ্বালাতন করতে পারে, যার ফলে ডায়রিয়া হতে পারে। আপনি যদি বুকের দুধ খাওয়ান এবং আপনার শিশু সংবেদনশীলতায় ভুগছে, তাহলে তার খাদ্যতালিকা পরিবর্তন ডায়রিয়া বন্ধ করতে পারে কিনা সেটা জানতে হলে শিশুর খাবারের প্ল্যান পরিবর্তন করতে পারেন। যদি শিশুকে ফর্মুলা খাওয়ানো হয়, তাহলে ফর্মুলা পরিবর্তন করার চেষ্টা করুন।

জন্ডিস

গবেষণায় জানা যায়, গুরুতর জন্ডিসে আক্রান্ত শিশুদের ওজন কমার সম্ভাবনা বেশি। কিছু শিশুর অতিরিক্ত ক্যালোরি প্রয়োজন কারণ তারা যে ক্যালোরি গ্রহণ করে তা দ্রুত বিপাক করে।

প্রি-ম্যাচুয়র শিশু

৩৭ সপ্তাহের আগে জন্ম নেওয়া শিশুদের পূর্ণ মেয়াদী শিশুদের চেয়ে বেশি ক্যালোরির প্রয়োজন হয়।

শ্বাসকার্যের সমস্যা

শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যায় ভুগছে এমন শিশুদের অতিরিক্ত পরিশ্রমের জন্য আরও ক্যালোরির প্রয়োজন হয়, যা তাদের নিজেদেরকে পরিশ্রম করতে এবং টিস্যু বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন।

হৃদরোগ

গবেষণা দেখায় যে হৃদরোগে আক্রান্ত শিশুরা ৪০% বেশি শক্তি ব্যয় করে। ক্ষুধামান্দ্য হলে তাদের ওজন বাড়াতে অনেক সংগ্রাম করতে হয়।

শিশুর ওজন বৃদ্ধি নিয়ে দুশ্চিন্তা না করুন

স্বাস্থ্যকর ওজন বৃদ্ধি নিয়ে দুশ্চিন্তা

আপনার শিশুর যথেষ্ট ওজন বাড়ছে কিনা তা বের করার চেষ্টা করা আপনার চিন্তার কারণ হতে পারে। প্রতিটি ফিড সম্পর্কে চাপ না নিয়ে একজন নবজাতকের পিতামাতা হিসেবে প্রতিটি দিন সম্পর্কে ভাবার জন্য আপনার কাছে যথেষ্ট অপশন আছে। এই দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পাওয়ার প্রথম ধাপ হল, আপনার শিশুকে নিয়মিত চিকিৎসকের কাছে চেকআপে নিয়ে যান।

শিশুর বৃদ্ধি নিরীক্ষণ

শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি নিরীক্ষণ করতে শিশু চিকিৎসকরা গ্রোথ চার্ট ব্যবহার করেন। একজন সুস্থ স্বাভাবিক ছেলে এবং মেয়ের ওজন বিভিন্ন হারে বাড়ে। বুকের দুধ খাওয়া শিশু সাধারণত জীবনের প্রথম বছরে ফর্মুলা খাওয়া শিশুদের তুলনায় ধীরে ধীরে ওজন বাড়ে। আপনি যদি শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ান, তাহলে শিশুর ওজন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) গ্রোথ স্ট্যান্ডার্ড চার্টের সাথে পরিমাপ করা উচিত, কারণ এই চার্টগুলো বুকের দুধ খাওয়ানো শিশুদের বৃদ্ধিকে প্রতিফলিত করে। চিকিৎসকরা মায়েদের জানিয়ে দেন, শিশু যদি ২৪ ঘন্টার মধ্যে ৬ বা তার বেশি প্রস্রাব করে থাকে তবে সে ভালো অবস্থায় আছে।

সাফল্য লাভে ব্যর্থতা

যখন শিশুর পর্যাপ্ত ওজন বাড়ে না, তখন তাদের সামগ্রিক বৃদ্ধি ও বিকাশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এক্ষেত্রে তাদের যেমন লম্বা হওয়া উচিত তেমন লম্বা নাও হতে পারে এবং হাঁটার মতো দক্ষতা অর্জনে বিলম্বিত হতে পারে। তাদের বেড়ে উঠা একইভাবে প্রভাবিত হতে পারে।

আপনার শিশুর ওজন বাড়াতে যেভাবে সাহায্য করতে পারেন

প্রথম ধাপ হল, আপনার শিশুর প্রয়োজনীয় ক্যালোরি পেতে বাধা সৃষ্টি করে এমন সমস্যা দূর করা। আপনার শিশুর যদি গিলতে অসুবিধা হয়, খাবারের মধ্যে বমি হয়, খাবারে অ্যালার্জি বা রিফ্লাক্স বা ডায়রিয়া হয় বলে মনে হয়, তবে একজন শিশু বিশেষজ্ঞের সাথে যোগাযোগ করুন।

এছাড়া, আপনি যদি মনে করেন শিশু পর্যাপ্ত বুকের দুধ পাচ্ছে না, সেক্ষেত্রে চিন্তা করবেন না – এটি বাড়ানোর কৌশল রয়েছে। শিশুকে আপনার কাছে রাখুন, প্রতি ঘন্টা বা দুই ঘন্টা পর পর বুকের দুধ খাওয়ান ও বিশ্রাম নিন। আপনি নিজে পর্যাপ্ত খাবার ও পানীয় গ্রহণ করুন। এতে দুধের উৎপাদন বাড়বে।

শিশু বিশেষজ্ঞের সাথে যোগাযোগ করুন

মনে রাখবেন শিশুর ওজন নিয়ে টেনশন করার আগে খেয়াল করুন শিশু সুস্থ কিনা। শিশুরা যদি সুস্থ থাকে এবং নির্দিষ্ট গতিতে বাড়তে থাকে, তাহলে তারা স্থুলাকার এবং লম্বায় বাড়লো কিনা এসব নিয়ে আপনার চিন্তা করার দরকার নেই। শিশু সঠিক গতিতেই এগিয়ে যাচ্ছে। সকল শিশুই হাসুক মায়ের কোলে।

ছবিঃ সাটারস্টক।

The post শিশুর ওজন না বাড়ার পিছনে কারণগুলো কী হতে পারে? appeared first on Shajgoj.



from Shajgoj https://ift.tt/SE9ZP7L
Apsara Hossain

Comments

Popular posts from this blog

স্ট্রেসের কারণে একনে বা প্রিম্যাচিউর এজিং সাইনস দেখা দিচ্ছে না তো?

আপনি যখন এই লেখাটি পড়ছেন তখন আমি বুঝতেই পারছি আপনার হাতে টেকনোলজির সুবিধা রয়েছে। যার কারণে আপনি এখন চাইলেই যে কোনো ভিডিও দেখতে পারেন, যে কোনো তথ্য সম্পর্কে জানতে ইন্টারনেটে সার্চ করতে পারেন। জীবন আগের চেয়ে এখন অনেক সহজ। তারপরও কিন্তু আমরা সবাই কমবেশি স্ট্রেসের মধ্য দিয়ে যাই। আর এই স্ট্রেস মানসিকভাবে আমাদের যতটা অসুস্থ করে দিচ্ছে, ঠিক ততটাই এফেক্ট ফেলছে আমাদের স্কিনের উপর। যেমন- স্ট্রেসের কারণে একনে বা প্রিম্যাচিউর এজিং সাইনস দেখা দিচ্ছে, সেই সাথে হচ্ছে ত্বকের নানা সমস্যা। স্ট্রেস কতভাবে স্কিনের উপর প্রভাব ফেলে এবং কীভাবে স্ট্রেস কমিয়ে আনা যায় তা নিয়েই আলোচনা করবো আজ। স্ট্রেস কেন হয়? বিভিন্নভাবে স্ট্রেস হতে পারে। যেমন- এনভায়রনমেন্টাল বা টেম্পারেচার চেঞ্জ (এক্সটার্নাল ফ্যাক্টর)। ধরুন আপনি অনেকটা সময় ঠান্ডা রুমে ছিলেন। হুট করে যখন গরম পরিবেশে চলে আসলেন তখন শরীরে একটা স্ট্রেস হয়। আবার আর্থিক অবস্থা, লেখাপড়া, পারিবারিক সমস্যা ইত্যাদির কারণে সাইকোলজিক্যাল স্ট্রেস দেখা দেয়। স্ট্রেস এমন একটি বিষয় যেটার সাথেও আমরা থাকতে পারি না, যেটা ছাড়াও আমাদের থাকা সম্ভব নয়। সময়ের সাথে সাথে আমরা বেশ আধু

কীভাবে পারফেক্টলি ক্যামেরা বন্দী করা যায় সুন্দর মুহূর্তগুলো?

একটা সময় ছিল, যখন ছবি তোলা বা কারো কাছে ক্যামেরা থাকা যেন বড়সড় ব্যাপার। স্টুডিওতে যেয়ে ছবি তুলতে হতো বা কোনো কিছুর ছবি, ভিডিও এত সহজ ছিল না। অনেকদিন অপেক্ষা করে হাতে ছবি পাওয়া যেতো এবং সেটা অ্যালবামে যত্নের সাথে সংরক্ষণ করা হতো। আর এখন ছবি তোলা অনেক সহজ। বাজারের বিভিন্ন মডেলের ক্যামেরা বা হাই মেগাপিক্সেল সম্পন্ন ফোন সবার হাতে হাতে। আমরা এখন চাইলেই আমাদের সুন্দর সময়গুলোর বা শখের কাজ কিংবা ঘুরতে যেয়ে মনোমুগ্ধকর প্রকৃতির ছবি, ভিডিও ক্যামেরা বন্দী করতে পারি। এখন কীভাবে পারফেক্টলি ক্যামেরা বন্দী করা যায় সুন্দর মুহূর্তগুলো তা নিয়েই টুকিটাকি টিপস শেয়ার করবো আপনাদের সাথে। ক্যামেরা নিয়ে কিছু বেসিক ধারণা যেকোনো ডিভাইস ব্যবহার করার পূর্বে তার সম্পর্কে ধারণা নেওয়া জরুরী। অনেক সময় দেখা যায় একটা ডিভাইস সম্পর্কে ঠিকভাবে না জানার কারণে ছবি তুলতে গিয়ে আমরা অনেক অপশন মিস করে ফেলি। ফলস্বরূপ ছবি সুন্দর হয় না। এই জন্য ম্যানুয়ালটায় একবার চোখ বুলিয়ে নিতে পারেন। তবে ম্যানুয়াল পড়াটা অনেকের কাছে বিরক্তিকর লাগে। তাই বিভিন্ন ফিচার নিয়ে যদি বারবার প্র্যাকটিস করা যায় তাহলে ফটোগ্রাফি বিষয়টা সহজে আয়ত্তে আসে। এখন

Dr. Fariah Sharmeen - Woman Oncology Specialist

Dr. Fariah Sharmeen Specialty - Associate Consultant, Oncology Degree - MBBS, FCPS (Radiotherapy) Chamber: SQUARE Hospitals Ltd. Dhaka Address: 18/F Bir Uttam Qazi Nuruzzaman Sarak, West Panthapath, Dhaka - 1205, Bangladesh Call For Appointment 10616 Call Now About: Dr. Fariah Sharmeen successfully completed her MBBS from Cumilla Medical College, and subsequently completed a one-year internship at BIRDEM Hospital, Dhaka. After completing of the internship, she started her post-graduate training in Medical Oncology at the National Institute of Cancer Research & Hospital. She started her fellowship in Radiotherapy in 2010. She completed 4 years of training at the National Institute of Cancer Research & Hospital on External Beam Radiotherapy Planning and Brachytherapy. She achieved FCPS in Radiotherapy from the Bangladesh College of Physicians & Surgeons (BCPS) in 2015. She has obtained several hands-on pieces of training on Head - Neck, Lung, Genitourina