একবিংশ শতাব্দীতে এসে মানুষ এখন ব্যস্ত জীবনের মাঝে থেকেও হেলদি লাইফস্টাইলকে বেশ প্রায়োরিটি দিচ্ছে, ফিটনেস নিয়ে সচেতন হচ্ছে। পরিবর্তন আসছে ডায়েটে। বর্তমানে যেটাকে আমরা সোশ্যাল মিডিয়ায় হ্যাশট্যাগ নিউ ট্রেন্ড হিসেবেও প্রচার করে থাকি। কিটো ডায়েটের কথা নিশ্চয়ই মনে আছে সবার। একটা সময় ছিলো যখন এই ডায়েট প্ল্যান বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছিলো। ঐ যে ট্রেন্ডের কথা যদি বলি, তাহলে বলা যায় এখন হেলদি লাইফস্টাইলের জন্য ৩০-৩০-৩০ রুলস বেশ পপুলার হয়ে উঠছে। শুধু ওয়েট কন্ট্রোলেই না, শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকার জন্য দারুণ একটি কনসেপ্ট এটি। ওজন কমানোর নতুন ট্রেন্ড নিয়েই আজকের ফিচার।
ওজন কমানোর নতুন ট্রেন্ড
৩০-৩০-৩০ পদ্ধতি কী?
তিনটি রুলসকে একত্র করে এই কনসেপ্টটি বানানো হয়েছে। এগুলো হলো প্রতিদিনের খাবার থেকে ৩০ শতাংশ ক্যালরি বাদ দেওয়া, ৩০ মিনিট ব্যায়াম এবং ৩০ মিনিট মানসিক প্রশান্তি নিশ্চিত করা। ব্যাপারটা কিন্তু ইন্টারেস্টিং, তাই না? চলুন জেনে নেই বিস্তারিত।
১) খাবারের চার্ট থেকে ৩০ শতাংশ ক্যালরি কমানো
আপনি যখনই ভাবছেন, আপনার লাইফস্টাইল ঠিক নেই, বাইরের তেলে ভাজা খাবার বা অপুষ্টিকর খাবার আপনার প্রতিদিনের ফুডচার্টে থাকছে। এই রুটিনে তো চেঞ্জ আনা জরুরি! তাহলে এই অভ্যাসে পরিবর্তন আনতে হলে প্রথমেই বের করে নিতে হবে বডি ম্যাস ইনডেক্স ও ক্যালরি কাউন্ট। বডি ম্যাস ইনডেক্স দিয়ে আপনার হাইটের সাথে ওয়েটের রেশিও বা কতটুকু বেশি/কম তা জানা যায়। সে অনুয়ায়ী কতটুকু ক্যালরি নিচ্ছেন বা কতটুকু কমাতে হবে এটা সম্পর্কে ধারণা থাকবে। রেগুলার যা খাচ্ছেন তা থেকে ক্যালরি ইনটেক অনুসারে বেশি হলে সেটা প্রথমেই কমিয়ে আনুন। ৩০ শতাংশ কমিয়ে ফেলবেন। অর্থাৎ যদি ডেইলি ৩০০০ ক্যালরি ইনটেক করেন তাহলে সেটাকে ২১০০ তে আনুন।
তাহলে ডায়েট চার্টে কী রাখা উচিত?
অল্প কার্বোহাইড্রেট, বেশি প্রোটিন আর ফলমূল এবং সেই সাথে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি। আপনি যদি চিনি জাতীয় খাবার, ভাজাপোড়া, অতিরিক্ত ভাত, এক কথায় যেগুলো স্বাস্থ্যের জন্য উপযোগী না তা বাদ দিতে পারেন দেখবেন ৩০ শতাংশ কমানো খুব কঠিন কিছু মনে হবে না। তাই একটি প্রোপার ডায়েট চার্ট তৈরি করুন, সেই সাথে বিভিন্ন খাবারের ক্যালরি সম্পর্কে ধারণা রাখুন।
প্রায় সময় আমাদের মাঝে এমন ধারণা থাকে, খাবার তো অল্প-ই খেলাম তাহলে কেন বাড়লো ওজন। এই যেমন ভাত ১ কাপের জায়গায় ৩ কাপ খাওয়া। রেস্টুরেন্টে যেয়ে যদি বার্গার খেয়ে থাকেন, এতে তো এমনিতেই ৬০০ ক্যালরির মতো ইনটেক হচ্ছে। তারপর অন্যান্য খাবার, কোল্ড ড্রিংকস তো আছেই। এতে অল্প পরিমাণে খেলেও কিন্তু হাই ক্যালরি ইনটেক করে ফেলছেন।
আবার ডায়েট করতে যেয়ে আমরা অনেক সময় না বুঝে এমন খাবার খেয়ে থাকি সেগুলো ওয়েট কমানোর থেকে উল্টো বাড়িয়ে দেয়। আর সবার বডি ম্যাস ইনডেক্স বা মেটাবলিজম এক না। তাই অন্য একজন যে ডায়েট চার্ট ফলো করে ওজন কমিয়ে এনেছে, সেই একই খাবার খেলে যে আপনারও ওজন কমবে তা ঠিক নয়। এজন্য প্রয়োজনে পুষ্টিবিদের সাথে কনসাল্ট করে নিতে পারেন, সেই অনুযায়ী ফুড হ্যাবিট মেনটেইন করতে পারেন।
নিয়ম মেনে এগিয়ে চলুন
ক্যালরি কমানোর ক্ষেত্রে কিছুদিন পর হাল ছেড়ে দিলে সেটা কখনোই আপনার জন্য ভালো ফলাফল আনবে না। কোনো ডায়েট প্ল্যান শুরু করলেই যে সেটা ১ সপ্তাহে ওজন কমিয়ে দিবে বা রাতারাতি ফলাফল পাবেন, এই আশা করা বোকামি। ভেবে দেখুন আপনি বছরের পর বছর ধরে হেলদি ফুড হ্যাবিটে অভ্যস্ত না। অথচ সেই আপনি ৭ দিনেই পুরো অভ্যাস পরিবর্তন করে তাড়াতাড়ি ওজন কমিয়ে ফেলবেন, সেটা কি আসলেই পসিবল? না! তাই ধৈর্য ধরে নিয়মের সাথে এগিয়ে চলুন।
২) ৩০ মিনিট শরীরচর্চা করা
দিনে ৩০ মিনিট বের করে নিন এক্সারসাইজের জন্য। আপনি ওজন কমান বা না কমান, শরীরকে মুভমেন্টের উপর না রাখলে আস্তে আস্তে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। তখন ছোট ছোট কাজ এমনকি ৩/৪ তলা সিঁড়ি বেয়ে উঠতেও কষ্ট হয়। খাবার ঠিকমতো হজম হতে চায় না, আলসেমি লাগে, ব্রেইনও ঠিকমতো কাজ করে না।
সকালবেলা চেষ্টা করুন ৩০ মিনিট হাঁটার। বাইরে যেতে না চাইলে ইয়োগা ম্যাটে ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ করে ফেলুন ৩০ মিনিটের জন্য৷ অ্যারোবিক এক্সারসাইজ, জুম্বা ডান্স, যোগব্যায়াম যেটা সুবিধা সেটা করুন। অফিস থেকে ফেরার পথে ৩০ মিনিট হেঁটে নিতে পারেন।
৩) ৩০ মিনিট মানসিক প্রশান্তি
উপরের ২টি নিয়ম কাজ করবে যদি এই তৃতীয় নিয়মটিকে দৈনন্দিন জীবনে অ্যাপ্লাই করতে পারেন। প্রথম ২টি যাও মোটামুটি ফলো করা যায়, কিন্তু মানসিক প্রশান্তিকে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয় না। মেন্টালি যদি ফিট না থাকেন, তাহলে কিন্তু শরীরেও বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। অতিরিক্ত স্ট্রেসে ওজন বাড়ে, ফুড ক্রেভিং হয়; জানেন তো?
স্ট্রেস কমিয়ে আনতে মেডিটেশন করতে পারেন। মিউজিকও অনেকের ক্ষেত্রে স্ট্রেস দূর করার ইফেক্টিভ সল্যুশন হতে পারে। পরিবারের সাথে সময় কাটানো, টুকটাক শখের কাজ করা, ক্রিয়েটিভ অ্যাকটিভিটিতে নিজেকে ব্যস্ত রাখা- এগুলো মানসিক প্রশান্তি দিতে পারে। আর একান্তই যদি কিছু না করা যায়, তাহলে ৩০ মিনিট নিরিবিলি বসে থাকুন। সারাদিন স্মার্টফোনের প্রতি এতোটাই আসক্ত আমরা যে সারা দিনে ৩০ মিনিটও ফোন ছাড়াও থাকতে নারাজ! একটানা স্ক্রিনটাইম ব্রেইন ডেভেলপমেন্টে প্রভাব ফেলে এবং ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়। স্ট্রেস ফ্রি হেলদি লাইফস্টাইলের জন্য ফোনের প্রতি আসক্তি কমানো খুব জরুরি। সুস্থ শরীরের জন্য প্রয়োজন সুস্থ মন, এটা ভুলে গেলে চলবে না!
ওজন কমানোর নতুন ট্রেন্ড ‘৩০-৩০-৩০ পদ্ধতি’ সম্পর্কে যারা জানতেন না, তারাও আজ ক্লিয়ার আইডিয়া পেলেন আশা করি। সুস্থভাবে বেঁচে থাকাটা শুধু নিজের জন্য না, আপনার আশেপাশে থাকা আপন মানুষের জন্যও কিন্তু এটি দরকার। কারণ আপনি নিজে যদি ভালো থাকতে না পারেন, তাহলে অন্যকেও ভালো রাখতে পারবেন না! যেকোনো শারীরিক সমস্যায় ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নিতে হবে। তাহলে আজ এই পর্যন্তই। ভালো থাকবেন।
ছবি- সাটারস্টক
The post ওজন কমানোর নতুন ট্রেন্ড ‘৩০-৩০-৩০ পদ্ধতি’ জানা আছে কি? appeared first on Shajgoj.
from Shajgoj https://ift.tt/Fqu458c
Munia
Comments
Post a Comment