Skip to main content

প্রি ডায়াবেটিস এর লক্ষণ এবং ঝুঁকি কমানোর উপায় কী হতে পারে?

ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হবার পর সবাই বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করে, লাইফস্টাইলে নিয়ে আসে পরিবর্তন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ৮০ শতাংশ মানুষ জানেন না যে তারা প্রি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। যেকোনো রোগ শুরু থেকেই শনাক্ত করতে পারলে তার ঝুঁকি কিছুটা হলেও কমিয়ে নিয়ে আসা সম্ভব। তাই আজকে আমরা জানবো প্রি ডায়াবেটিস কী এবং এর ঝুঁকি কীভাবে কমানো যায়।

প্রি ডায়াবেটিস কী?

রক্তে যখন গ্লুকোজের পরিমান বেশি থাকে কিন্তু আবার ডায়াবেটিসের নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে কম তখন তাকে প্রি ডায়াবেটিস বলা হয়। একে বর্ডার লাইন ডায়াবেটিসও বলা হয়। প্রি ডায়াবেটিস ইনসুলিনের সাথে সম্পর্কিত। গবেষণা বলে প্রি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে আগামী পাঁচ থেকে দশ বছরের মধ্যে ডায়াবেটিস হবার সম্ভবনা রয়েছে। প্রি ডায়াবেটিস শনাক্ত করার পদ্ধতি ডায়াবেটিসের মতোই। রোগীকে সকালে খালি পেটে একবার রক্তে গ্লুকোজ পরীক্ষা করতে হয়, তারপর ৭৫ গ্রাম গ্লুকোজ পান করিয়ে দুই ঘণ্টা পর আরেকবার রক্তে গ্লুকোজ পরীক্ষা করা হয়। এই পদ্ধতিতে ডায়াবেটিস ও প্রি-ডায়াবেটিস দুটোই শনাক্ত করা হয়। পরীক্ষার পর রক্তে গ্লুকোজের পরিমান ৫ এর নিচে থাকলে নরমাল হিসেবে ধরা হয় কিন্ত ৬.৫ এর বেশি হলে পূর্ণাঙ্গ ডায়াবেটিস রোগী হিসেবে গণ্য করা হয়। মূলত এই ৫ থেকে ৬.৫ এর মধ্যে থাকলে তাকে প্রি ডায়াবেটিস বলা হয়ে থাকে। পরীক্ষা করার এই পদ্ধতির নাম ওরাল গ্লুকোজ টলারেন্স টেস্ট।

প্রি ডায়াবেটিস

এর লক্ষণগুলো কী হতে পারে?

কিছুটা আতঙ্কের বিষয় হচ্ছে প্রি ডায়াবেটিসের নির্ধারিত কোন লক্ষণ নেই। তাই সময় মতো অনেকেই জানতে পারেন না যে শরীরে ডায়াবেটিসের বাসা বাঁধা শুরু করেছে। তবে কিছু ক্ষেত্রে প্রি ডায়াবেটিসেও ঠিক ডায়াবেটিসের মতো লক্ষণ দেখা দেয়। যেমন, বারবার ক্ষুধা অনুভব করা, চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসা, অতিরিক্ত প্রস্রাবের চাপ, বারবার পিপাসা পাওয়া ও গলা শুকিয়ে আসা, ওজন কমে যাওয়া, ঘা দেরিতে শুকানো, সহজেই কাহিল হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।

প্রি ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কী হতে পারে?

এর প্রধান ঝুঁকি হচ্ছে এটি ধীরে ধীরে শরীরকে পুরোপুরি ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের দিকে নিয়ে যাবে। ইনসুলিন দেহের বেড়ে যাওয়া গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। ইনসুলিন ঠিকমতো কাজ না করলে মাত্রা হারিয়ে ফেলে। দেহের গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার ফলে ডায়াবেটিস হয়ে থাকে। এছাড়া প্রি ডায়াবেটিসের ফলে স্ট্রোক ও হার্টে নানা ধরনের সমস্যার ঝুঁকি রয়ে যায়।

প্রি ডায়াবেটিস হলে করণীয়

এই থেকে নিজেকে একদম নরমাল স্টেজে নিয়ে আসা সম্ভব৷ তার জন্য লাইফস্টাইলে মডিফিকেশন করতে হবে। প্রি ডায়াবেটিস থেকে মুক্তি পাবার জন্য নিদিষ্ট কোনো মেডিসিন নেই তাই লাইফস্টাইল পরিবর্তন করার বিকল্প আর কিছুই নেই।

খাদ্যাভাসে পরিবর্তন করুন

খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন

এক্ষেত্রে খাবারের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। তাই খাবারের প্রতি বিশেষ নজর দেয়া প্রয়োজন। কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার পরিমাণ বুঝে খেতে হবে যেমন সাদা ভাত, রুটি, মিষ্টি ফল, আলু ইত্যাদি। সেক্ষেত্রে লাল চাল ও লাল আটা বেছে নেয়া যেতে পারে কারণ এতে ফাইবারের পরিমান বেশি। প্রি ডায়াবেটিসে ঘন ঘন ক্ষুধা লাগার প্রবণতা থাকতে পারে সেক্ষেত্রে ফাইবার জাতীয় খাবার খেলে দীর্ঘ সময় পেট ভরা থাকবে। প্রতিদিন আঁশজাতীয় খাবার খেতে হবে, যেকোনো ধরণের শাক-সবজি খেতে হবে। ঘি-মাখনের মতো স্যাচুরেটেড ফ্যাট কম খেতে হবে। ফাস্টফুড, চিনি ও চিনি জাতীয় খাবারকে সম্পূর্ণ পরিহার করতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রোটিন গ্রহণ করতে হবে। যেমন মাছ-মুরগির মাংস, বিভিন্ন ধরণের ডাল, ডিম ইত্যাদি। কিন্তু গরুর মাংস ও চিংড়ির মতো অতিরিক্ত কোলেস্টেরল যুক্ত প্রোটিন কম গ্রহণ করতে হবে। প্রতিদিন খাদ্যতালিকায় দুধ ও টক দই খাবার রাখতে হবে। কারণ এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম। ক্যাফেইন যুক্ত খাবার গ্রহণ করা বন্ধ করতে হবে।

শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম

প্রতিদিন কিছুটা ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রম করার চেষ্টা করতে হবে। কারণ প্রি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত বেশিরভাগ রোগীদেরই ওজনের আধিক্য লক্ষ্য করা যায়। তাই ব্যায়ামের মাধ্যমে ওজন কমিয়ে নিয়ে আসা প্রয়োজন। প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করতে হবে। নিয়মিত হাঁটার ফলে রক্তে চলমান ফ্যাট ধ্বংস হয়ে যায়। ব্যায়াম মানে এই না যে জিমে গিয়ে খুব ভারী ব্যায়াম করতে হবে, ঘরে বসেই প্রতিদিন কিছু ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ ও ইয়াগো করা যেতে পারে।

রুটিন মাফিক জীবনব্যবস্থা গড়ে তুলুন

রুটিন মাফিক জীবনব্যবস্থা

এলোমেলো জীবনযাপন না করে জীবনকে রুটিনের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। প্রতিবেলার খাবার সময়মতো খেতে হবে এবং কোনো বেলার খাবার মিস করা যাবে না। বেশি রাত করে ডিনার করা পরিহার করতে হবে, ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত দুই ঘণ্টা আগে খাবার খাওয়া সেরে ফেলতে হবে। রাতে অতিরিক্ত ক্ষুধা লাগলে চিনি ছাড়া দুধ খাওয়া যেতে পারে। রাতে ৮ থেকে ৯ ঘন্টা ঘুমাতে হবে। প্রতিদিনের ব্যায়াম, খাওয়া-দাওয়া ও ঘুমের কোনো অনিয়ম করা যাবে না।

মনে রাখতে হবে ডায়াবেটিস রোগী হয়ে যাওয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করতে প্রি ডায়াবেটিস হচ্ছে উপযুক্ত সময়। যেহেতু প্রি ডায়াবেটিসের কোন নির্দিষ্ট লক্ষণ নেই তাই পরিবারে ডায়াবেটিস ইতিহাস থাকলে অবশ্যই নিজেকে পর্যবেক্ষণের মধ্যে রাখতে হবে। ডায়াবেটিসের ঝুঁকি রয়েছে কিনা তা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে দেখতে হবে এবং প্রি ডায়াবেটিক শনাক্ত হলে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থেকে চিকিৎসা নিতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ও নিয়মতান্ত্রিক জীবন যাপনের মাধ্যমে প্রি ডায়াবেটিস স্টেজ সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

ছবিঃ সাটারস্টক।

The post প্রি ডায়াবেটিস এর লক্ষণ এবং ঝুঁকি কমানোর উপায় কী হতে পারে? appeared first on Shajgoj.



from Shajgoj https://ift.tt/MQ7LPSR
Apsara Hossain

Comments

Popular posts from this blog

স্ট্রেসের কারণে একনে বা প্রিম্যাচিউর এজিং সাইনস দেখা দিচ্ছে না তো?

আপনি যখন এই লেখাটি পড়ছেন তখন আমি বুঝতেই পারছি আপনার হাতে টেকনোলজির সুবিধা রয়েছে। যার কারণে আপনি এখন চাইলেই যে কোনো ভিডিও দেখতে পারেন, যে কোনো তথ্য সম্পর্কে জানতে ইন্টারনেটে সার্চ করতে পারেন। জীবন আগের চেয়ে এখন অনেক সহজ। তারপরও কিন্তু আমরা সবাই কমবেশি স্ট্রেসের মধ্য দিয়ে যাই। আর এই স্ট্রেস মানসিকভাবে আমাদের যতটা অসুস্থ করে দিচ্ছে, ঠিক ততটাই এফেক্ট ফেলছে আমাদের স্কিনের উপর। যেমন- স্ট্রেসের কারণে একনে বা প্রিম্যাচিউর এজিং সাইনস দেখা দিচ্ছে, সেই সাথে হচ্ছে ত্বকের নানা সমস্যা। স্ট্রেস কতভাবে স্কিনের উপর প্রভাব ফেলে এবং কীভাবে স্ট্রেস কমিয়ে আনা যায় তা নিয়েই আলোচনা করবো আজ। স্ট্রেস কেন হয়? বিভিন্নভাবে স্ট্রেস হতে পারে। যেমন- এনভায়রনমেন্টাল বা টেম্পারেচার চেঞ্জ (এক্সটার্নাল ফ্যাক্টর)। ধরুন আপনি অনেকটা সময় ঠান্ডা রুমে ছিলেন। হুট করে যখন গরম পরিবেশে চলে আসলেন তখন শরীরে একটা স্ট্রেস হয়। আবার আর্থিক অবস্থা, লেখাপড়া, পারিবারিক সমস্যা ইত্যাদির কারণে সাইকোলজিক্যাল স্ট্রেস দেখা দেয়। স্ট্রেস এমন একটি বিষয় যেটার সাথেও আমরা থাকতে পারি না, যেটা ছাড়াও আমাদের থাকা সম্ভব নয়। সময়ের সাথে সাথে আমরা বেশ আধু

কীভাবে পারফেক্টলি ক্যামেরা বন্দী করা যায় সুন্দর মুহূর্তগুলো?

একটা সময় ছিল, যখন ছবি তোলা বা কারো কাছে ক্যামেরা থাকা যেন বড়সড় ব্যাপার। স্টুডিওতে যেয়ে ছবি তুলতে হতো বা কোনো কিছুর ছবি, ভিডিও এত সহজ ছিল না। অনেকদিন অপেক্ষা করে হাতে ছবি পাওয়া যেতো এবং সেটা অ্যালবামে যত্নের সাথে সংরক্ষণ করা হতো। আর এখন ছবি তোলা অনেক সহজ। বাজারের বিভিন্ন মডেলের ক্যামেরা বা হাই মেগাপিক্সেল সম্পন্ন ফোন সবার হাতে হাতে। আমরা এখন চাইলেই আমাদের সুন্দর সময়গুলোর বা শখের কাজ কিংবা ঘুরতে যেয়ে মনোমুগ্ধকর প্রকৃতির ছবি, ভিডিও ক্যামেরা বন্দী করতে পারি। এখন কীভাবে পারফেক্টলি ক্যামেরা বন্দী করা যায় সুন্দর মুহূর্তগুলো তা নিয়েই টুকিটাকি টিপস শেয়ার করবো আপনাদের সাথে। ক্যামেরা নিয়ে কিছু বেসিক ধারণা যেকোনো ডিভাইস ব্যবহার করার পূর্বে তার সম্পর্কে ধারণা নেওয়া জরুরী। অনেক সময় দেখা যায় একটা ডিভাইস সম্পর্কে ঠিকভাবে না জানার কারণে ছবি তুলতে গিয়ে আমরা অনেক অপশন মিস করে ফেলি। ফলস্বরূপ ছবি সুন্দর হয় না। এই জন্য ম্যানুয়ালটায় একবার চোখ বুলিয়ে নিতে পারেন। তবে ম্যানুয়াল পড়াটা অনেকের কাছে বিরক্তিকর লাগে। তাই বিভিন্ন ফিচার নিয়ে যদি বারবার প্র্যাকটিস করা যায় তাহলে ফটোগ্রাফি বিষয়টা সহজে আয়ত্তে আসে। এখন

Dr. Fariah Sharmeen - Woman Oncology Specialist

Dr. Fariah Sharmeen Specialty - Associate Consultant, Oncology Degree - MBBS, FCPS (Radiotherapy) Chamber: SQUARE Hospitals Ltd. Dhaka Address: 18/F Bir Uttam Qazi Nuruzzaman Sarak, West Panthapath, Dhaka - 1205, Bangladesh Call For Appointment 10616 Call Now About: Dr. Fariah Sharmeen successfully completed her MBBS from Cumilla Medical College, and subsequently completed a one-year internship at BIRDEM Hospital, Dhaka. After completing of the internship, she started her post-graduate training in Medical Oncology at the National Institute of Cancer Research & Hospital. She started her fellowship in Radiotherapy in 2010. She completed 4 years of training at the National Institute of Cancer Research & Hospital on External Beam Radiotherapy Planning and Brachytherapy. She achieved FCPS in Radiotherapy from the Bangladesh College of Physicians & Surgeons (BCPS) in 2015. She has obtained several hands-on pieces of training on Head - Neck, Lung, Genitourina