Skip to main content

ব্রেইন টিউমার | মস্তিষ্কের জটিল এই রোগ সম্পর্কে কতটুকু জানেন?

ব্রেইন টিউমার হলো একটি জটিল শারীরিক অবস্থা, যা ব্রেইনের সেলের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণে হয়ে থাকে। এই অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্রেইনের যে কোনো অংশে হতে পারে, অথবা ব্রেইনের কাছাকাছি কোনো কোষেও হতে পারে। কাছাকাছি অবস্থানের মধ্যে রয়েছে স্নায়ু, পিটুইটারি গ্রন্থি, পিনিয়াল গ্রন্থি এবং মস্তিষ্কের পৃষ্ঠকে আবৃত করে এমন ঝিল্লি বা পর্দাতেও হতে পারে। চলুন এই বিষয়ে আজ বিস্তারিত জেনে নেই।

ব্রেইন টিউমার কত ধরনের হয়? 

অনেক ধরনের ব্রেইন টিউমার হতে পারে। সাধারণত টিউমার তৈরির কোষগুলোর উপর ভিত্তি করে এর ধরন নির্ধারণ করা হয়। যেমন-

১) বিনাইন টিউমার বা ক্যান্সার নয় এমন টিউমার – এই টিউমারগুলো সাধারণত খুব ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায় এবং ব্রেইন টিস্যুতে চাপ সৃষ্টি করে। ফলে এদের লক্ষণও খুব ধীরে প্রকাশ পায়। যেমন- পিটুইটারি অ্যাডেনোমা।

২) ম্যালিগন্যান্ট টিউমার বা ক্যান্সার জাতীয় টিউমার – এই টিউমারগুলো খুব দ্রুত ছড়িয়ে যায় এবং ক্যান্সার কোষ ব্রেইনের সুস্থ টিস্যু আক্রমণ করে ধ্বংস করতে পারে। যেমন-  মেডুলোব্লাস্টোমা।

ব্রেইন টিউমার

ম্যালিগন্যান্ট বা ক্যান্সারজাতীয় টিউমার আবার দুই ধরনের। সেগুলো হচ্ছে-

১) প্রাইমারি বা প্রাথমিক ম্যালিগন্যান্ট – এটি মস্তিষ্কের মধ্য থেকে উৎপত্তি হয়ে থাকে। এরকম কিছু কমন প্রাইমারি টিউমার হলো গ্লিওমা, মেনিনজিওমা (মস্তিষ্ককে আবরণকারী পর্দার টিউমার), স্কোয়ানোমা ইত্যাদি। এরা প্রাথমিকভাবে বিনাইন হলেও কিছু ক্ষেত্রে ক্যান্সারে রূপ নিতে পারে।

২) সেকেন্ডারি বা মেটাস্টেটিক টিউমার – এটি শরীরের অন্য জায়গায় উৎপন্ন হয়ে পুরো ব্রেইনে ছড়িয়ে পড়ে। যেকোনো ক্যান্সার মস্তিষ্কে ছড়িয়ে পড়তে পারে, তবে সবথেকে কমনগুলোর মধ্যে রয়েছে- স্তন ক্যান্সার, মলাশয়ের ক্যান্সার, কিডনি ক্যান্সার, ফুসফুসের ক্যান্সার, মেলানোমা বা স্কিন ক্যান্সার ইত্যাদি।

লক্ষণ ও উপসর্গসমূহ

মস্তিষ্কের টিউমারের লক্ষণ ও উপসর্গগুলো তাদের আকার, অবস্থান ও বৃদ্ধির হারের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে, যাকে টিউমার গ্রেডও বলা যায়। সাধারণ লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে-

  • প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে ক্রমাগত ও ক্রমবর্ধমান মাথাব্যথা বা মাথায় চাপ পড়তে পারে, যা সকালের দিকে বেশি খারাপ হয়।
  • অতিমাত্রায় মাথাব্যথার সাথে বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
  • চোখের সমস্যা, যেমন- ঝাপসা দৃষ্টি, দ্বিগুণ দেখা বা ধীরে ধীরে দৃষ্টিশক্তি হারানো।
  • স্নায়ুবিক ঘাটতি দেখা দিতে পারে। যেমন – অঙ্গপ্রত্যঙ্গে দুর্বলতা বা অসাড়তা, হাঁটাচলায় ভারসাম্যের সমস্যা, অসংলগ্ন কথাবার্তা, শ্রবণের সমস্যা ইত্যাদি সমস্যা মস্তিষ্কের টিস্যুতে টিউমারের প্রভাবে ঘটতে পারে।
  • জ্ঞান, স্মৃতিশক্তি, একাগ্রতা, মেজাজের পরিবর্তন, ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন ঘটতে পারে। কথা ও কাজে সমন্বয়ের অভাব দেখা দিতে পারে।
  • পূর্বের কোনো কারণ ছাড়াই হঠাৎ খিঁচুনি হতে পারে।
  • পিটুইটারি গ্ল্যান্ডের টিউমারের কারণে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়। যার ফলে ওজন বৃদ্ধি, ক্লান্তি, অনিয়মিত মাসিক এবং অস্বাভাবিক শারীরিক বৃদ্ধির মতো লক্ষণ দেখা দেয়।

ব্রেইন টিউমার

কারণ ও ঝুঁকিসমূহ

১) মানবশরীরে কিছু জিন আছে, যা টিউমার হওয়ার প্রক্রিয়াকে প্রতিরোধ করে। এদের বলে টিউমার সাপ্রেসর জিন। কোনো কারণে টিউমার সাপ্রেসর জিন যদি যথাযথ কাজ না করে, তাহলে ব্রেইন টিউমার হয়ে থাকে।

২) ব্রেইন টিউমার যে কোনো বয়সে হতে পারে। তবে এগুলো প্রায়শই বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে দেখা যায়।

৩) যে কারো ব্রেইন টিউমার হতে পারে। কিন্তু কিছু ধরনের ব্রেইন টিউমার নির্দিষ্ট বর্ণের মানুষের মধ্যে বেশি দেখা যায়। যেমন- শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে গ্লিওমা বেশি দেখা যায়। কালো মানুষের মধ্যে মেনিনজিওমা বেশি দেখা যায়।

৪) বংশগতভাবেও ব্রেইন টিউমার হওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে।

৫) যারা শক্তিশালী ধরনের রেডিয়েশনের সংস্পর্শে থাকেন বা কাজ করেন, তাদের মস্তিষ্কের টিউমার হওয়ার ঝুঁকি বেশি। এই শক্তিশালী রেডিয়েশনকে আয়নাইজিং রেডিয়েশন বলে। যেমন- রেডিয়েশন থেরাপি, পারমাণবিক বোমার রেডিয়েশন ইত্যাদি। রেডিয়েশন শরীরের কোষে ডিএনএতে পরিবর্তন ঘটায়। ডিএনএ পরিবর্তনের ফলে টিউমারও ক্যান্সারে রূপান্তরিত হতে পারে।

টিউমার সাপ্রেসর জিন

কীভাবে রোগটি নির্ণয় করা যায়? 

ব্রেইন টিউমার নির্ণয়ের জন্য রোগীর রোগের লক্ষণ যাচাইয়ের পাশাপাশি পারিবারিক ইতিহাস, বিভিন্ন রকম স্নায়ুবিক পরীক্ষা, ইমেজিং পরীক্ষা যেমন- এম আর আই, সিটি স্ক্যান ইত্যাদিসহ বায়োপসি করা হয়ে থাকে।

চিকিৎসা

টিউমারটি ক্যান্সার কিনা তার উপর ভিত্তি করে ব্রেইন টিউমারের চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ভর করে। এছাড়াও টিউমারের ধরন, আকার, গ্রেড এবং অবস্থানের উপরও নির্ভর করে। টিউমারের ধরন বুঝে সার্জারি, রেডিয়েশন থেরাপি, রেডিও সার্জারি, কেমোথেরাপি, টার্গেট থেরাপি ইত্যাদি পদ্ধতিতে চিকিৎসা শুরু করা হয়। অনেক সময় টিউমারের সাইজ ছোট হলে, ক্যান্সার না হলে এবং উপসর্গ সৃষ্টি না করলে তখনই চিকিৎসার প্রয়োজন নাও হতে পারে। তবে নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে, চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলতে হবে।

ব্রেইন টিউমার একটি জটিল ও চ্যালেঞ্জিং রোগ। প্রাথমিক সনাক্তকরণ, সঠিক রোগ নির্ণয় এবং উপযুক্ত চিকিৎসার মাধ্যমে এর থেকে পরিত্রাণ সম্ভব। সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন।

 

ছবিঃ সাটারস্টক

The post ব্রেইন টিউমার | মস্তিষ্কের জটিল এই রোগ সম্পর্কে কতটুকু জানেন? appeared first on Shajgoj.



from Shajgoj https://ift.tt/g1Lj9UG
Arfatun Nabila

Comments

Popular posts from this blog

রেগুলার ব্রা vs পুশ-আপ ব্রা | সঠিক ইনার ওয়্যার কীভাবে সিলেক্ট করবেন?

রেগুলার ব্রা আর পুশ-আপ ব্রা, এই দু’টার মধ্যে আসলে পার্থক্য কী আর কখন কোনটা ইউজ করতে হবে, এই বিষয়গুলো আমাদের অনেকেরই অজানা। আমাদের অ্যাকটিভিটি আর আউটফিটের সাথে ইনার ওয়্যারেও ভ্যারিয়েশন আসে। যেমন সকালে ঘুম থেকে উঠে ওয়ার্ক আউট করছি, এরপর ভার্সিটি বা অফিসে যাচ্ছি, সন্ধ্যায় পার্টি অ্যাটেন্ড করছি। সব সময় কি আমরা সেইম ব্রা পরি? না তো! শাড়ি পরলে এক ধরনের ব্রা পরি, জিমে গেলে অন্য ধরনের ব্রা পরি, বাসায় থাকলে আবার আরেক রকম! কখন কোন ব্রা পরা উচিত বা কোন ড্রেসের সাথে কোনটা মানাবে এই বিষয়গুলো নিয়ে অনেকেরই কনফিউশন আছে। এই বিষয়গুলো এখনও অনেকের কাছেই ট্যাবু। দিন বদলাচ্ছে, এই সামাজিক ট্যাবু থেকে বেরিয়ে আসতে হবে সবাইকে। লঞ্জেরি মেয়েদের জন্য বেসিক একটি জিনিস। তাই লঞ্জেরির ক্যাটাগরিটা আমাদের জেনে রাখা উচিত। পুশ-আপ ব্রা কেন ইউজ করে, এটাই এখনও অনেক মেয়েরা জানে না! রেগুলার ব্রা এর সাথে সাথে নিজের কালেকশনে পুশ-আপ ব্রা কেন রাখা উচিত, সেটা কিন্তু অনেকে বুঝতে পারে না। চলুন এই কনফিউশনগুলো আজ দূর করা যাক। রেগুলার ব্রা vs পুশ-আপ ব্রা    বেসিক রেগুলার ব্রা-এর ক্ষেত্রে ফেব্রিক ম্যাটেরিয়াল ও কমফোর্টের বিষ...

বিবি ক্রিম vs সিসি ক্রিম | স্কিন টাইপ অনুযায়ী কোনটি আপনার জন্য স্যুইটেবল?

ন্যাচারাল মেকআপ লুকের জন্য এখন বিবি ক্রিম ও সিসি ক্রিম বেশ জনপ্রিয়। পার্টি মেকআপ বা ফুল কভারেজ মেকআপের ক্ষেত্রে ফাউন্ডেশন ইউজ করা হয়। কিন্তু যারা রেগুলার হালকা মেকআপ করে বাইরে বের হন, তাদের জন্য বেস্ট অপশন হচ্ছে BB বা CC ক্রিম । কিন্তু আমরা অনেকেই বুঝতে পারি না যে স্কিন টাইপ ও কনসার্ন অনুযায়ী কীভাবে রাইট প্রোডাক্টটি সিলেক্ট করতে হবে। এই দু’টি মেকআপ প্রোডাক্টের বেনিফিট বা কার্যকারিতা নিয়ে আজকের ফিচার। এগুলোর মধ্যে বেসিক ডিফারেন্সটা আসলে কোথায়, সেটাও জানা হয়ে যাবে। বিবি ক্রিম BB (Beauty Balm, Blemish Balm) ক্রিম স্কিনকে ইভেন টোনড করে এবং ব্লেমিশ হাইড করে ফ্ললেস লুক দেয় নিমিষেই। এতে স্কিন ময়েশ্চারাইজিং ও হাইড্রেটিং এলিমেন্টস থাকে, যার কারণে ড্রাই বা নরমাল স্কিনের জন্য এটি একদম পারফেক্ট। এর টেক্সচার ফাউন্ডেশনের থেকে লাইট, তাই কভারেজটাও হয় একদম ন্যাচারাল। মানে একদমই হেভি ফিল হয় না, আর স্কিনটাও পিকচার পারফেক্ট দেখায়। অনেক বিবি ক্রিমে সান প্রোটেকশন ফ্যাক্টর বা SPF থাকে। সিসি ক্রিম CC (Color Corrector, Complexion Corrector) ক্রিমের ফর্মুলা লাইট ওয়েট ও লং লাস্টিং। ম্যাট ফর্মুলার হওয়াতে অয়েল...

Uttara Lake View Specialized Hospital

Uttara Lake View Specialized Hospital Address: Address: House#34, Road# 5A/10B, Sector#11, Uttara, Dhaka, 1230 Phone:  01813-904080 Available Services: 24 hours emergency service Self-contained ICU NICU HDU Cabin General Ward Corona Unit Chamber of Specialist Doctors. Also, all units are open including any complex operation. from Specialist Doctor List https://ift.tt/GFQ56KdRb via IFTTT