‘কতকিছুই তো ব্যবহার করছি! তবুও চুল পড়া কমছে না!’ ‘এত খুশকি! কীভাবে যে এগুলো যাবে!’ কি? সমস্যাগুলো কি খুব পরিচিত লাগছে? না বুঝে প্রোডাক্ট ইউজ করে চুলের ক্ষতি তো হচ্ছেই, সেই সাথে এগুলোর সমাধান খুঁজতে খুঁজতে হয়রান! চুলের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে খুব সহজ একটি সমাধান হতে পারে ক্যাস্টর অয়েল। তবে অনেকেই জানেন না কীভাবে এই অয়েল চুলের জন্য গেইম চেঞ্জার হয়ে উঠতে পারে। চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক, চুলের জন্য ক্যাস্টর অয়েল কেন ও কীভাবে ব্যবহার করবেন সে সম্পর্কে।
ক্যাস্টর অয়েল কী?
কীভাবে ক্যাস্টর অয়েল চুলের জন্য বেনিফিট দেয় সেটা জানার আগে এই অয়েল সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে নেয়া যাক। প্রাচীন সময় থেকে প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে চুলের যত্ন নেয়া হতো। ঠিক এমনই একটি উপাদান ক্যাস্টর সীড। হাজার বছর আগে মিশরীয়রা ক্যাস্টর সীডের জাদুকরী গুণ সম্পর্কে জানতে পারে। Castorbean Plant থেকে এই সীড পাওয়া যায়। এই সীড থেকেই তৈরি হয় ক্যাস্টর অয়েল। স্ক্যাল্পের ব্লাড ফ্লো বাড়াতে, হেলদি হেয়ার প্রোমোট করতে, চুলের গোড়া মজবুত করতে, খুশকি সমস্যার সমাধানে, চুল পড়া কমানোসহ অনেক হেয়ার প্রবলেমের সল্যুশন করে বলে চুলের জন্য ক্যাস্টর অয়েলকে গেইম চেঞ্জার বলা হয়।
চুলের জন্য ক্যাস্টর অয়েল কী কী বেনিফিট দেয়?
ক্যাস্টর অয়েলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই, Ricinoleic Acid, ওমেগা-৩, ৬ ও ৯ রয়েছে। এই উপাদানগুলো চুলের জন্য বেশ উপকারী। স্ক্যাল্পের পিএইচ লেভেল এবং ন্যাচারাল অয়েল ব্যালেন্স করতে এই অয়েল খুবই হেল্পফুল। চলুন চুলের জন্য ক্যাস্টর অয়েল এর বেনিফিটগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক-
১) ড্যানড্রাফ প্রবলেম রিডিউস করে
ড্রাই স্ক্যাল্পে ড্যানড্রাফ বা খুশকির সমস্যা বেশি হয়। তাই স্ক্যাল্প হাইড্রেটেড রাখার জন্য ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। স্ক্যাল্প ময়েশ্চারাইজড থাকলে ফ্লেকিং ও ইচিনেসের সমস্যাও কমে যাবে। তাই ড্যানড্রাফ থেকে স্ক্যাল্পও থাকবে সুরক্ষিত।
২) হেয়ার লস প্রিভেন্ট করে
স্ক্যাল্পে ক্যাস্টর অয়েল অ্যাপ্লাই করলে ব্লাড সার্কুলেশন বাড়ে, যা হেয়ার নারিশমেন্টের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যার কারণে চুল হয়ে ওঠে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল। এতে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি, অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি ফাঙ্গাল ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট প্রোপার্টিজ স্ক্যাল্প ইনফ্ল্যামেশন ও ইনফেকশন কমায়, যার কারণে চুল পড়াও কমে। এতে থাকা ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড চুল পড়া কমিয়ে হেয়ার গ্রোথ প্রোমোট করে।
৩) চুলের আগা ফাটা কমায়
চুলের আগা ফেটে যাচ্ছে? তাহলে ক্যাস্টর অয়েল অবশ্যই হেয়ার কেয়ার রুটিনে অ্যাড করুন! কারণ এই তেলের ব্যবহার হেয়ার ফলিকলকে সফট রাখবে এবং ড্যামেজ হেয়ার রিপেয়ার করবে। আর তাই স্প্লিট এন্ডের প্রবলেম কমে চুল হয়ে উঠবে সফট।
৪) স্ক্যাল্প ইনফেকশন প্রিভেন্ট করে
নানা কারণে আমাদের স্ক্যাল্পে ইচিং, রেডনেস বা র্যাশ হতে পারে। ক্যাস্টর অয়েলে থাকা অ্যান্টি ফাঙ্গাল ও অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল প্রোপার্টিজ এ সকল ইনফেকশন থেকে স্ক্যাল্পকে সুরক্ষিত রাখে। কথায় বলে, ‘Prevention is better than cure’। তাই আপনিও নিশ্চয়ই ইনফেকশন হওয়ার অপেক্ষাতে থাকবেন না? এজন্য আগে থেকেই ক্যাস্টর অয়েল হেয়ার কেয়ার রুটিনে অ্যাড করে নিন, স্ক্যাল্প রাখুন সুরক্ষিত।
৫) চুল পাকা রোধ করে
প্রিম্যাচিউর হেয়ার গ্রেয়িং দেখা দিচ্ছে? এই প্রবলেমের সল্যুশনেও ক্যাস্টর অয়েল খুব ভালো কাজ করে। এতে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড অকালে চুল পাকা রোধ করতে সাহায্য করে।
যেভাবে ব্যবহার করবেন
ক্যাস্টর অয়েল বেশ থিক ও স্টিকি হওয়ায় সরাসরি চুলে অ্যাপ্লাই করা কিছুটা ডিফিকাল্ট। তাই একে বিভিন্ন ক্যারিয়ার অয়েল যেমন- কোকোনাট অয়েল, আমন্ড অয়েল, অলিভ অয়েল বা জোজোবা অয়েলের সাথে মিক্সড করে অ্যাপ্লাই করা ভালো। সব ধরনের চুলেই এই অয়েল অ্যাপ্লাই করা যাবে, তবে ড্রাই, রাফ ও ফ্রিজি হেয়ারের জন্য এটি এক রকম ব্লেসিং! সপ্তাহে ১ দিন চুলের যত্নে এই তেল ইউজ করতে পারেন। চলুন কনসার্ন অনুযায়ী কয়েকটি DIY ক্যাস্টর অয়েল প্যাক সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক-
ক্যাস্টর ও আমন্ড অয়েল হেয়ার মাস্ক
হেয়ার ড্যামেজ রিপেয়ার করে চুলে নারিশমেন্ট ফিরিয়ে আনতে এই অয়েল বেশ কার্যকর। ২ চা চামচ আমন্ড অয়েলের সাথে ১ চা চামচ ক্যাস্টর অয়েল (চুলের লেন্থ অনুযায়ী পরিমাণ কমবেশি হবে) ভালোভাবে মিশিয়ে চুলে অ্যাপ্লাই করে নিন। ১ ঘন্টা পর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নিন। সেই সাথে কন্ডিশনার অ্যাপ্লাই করতে ভুলবেন না যেন!
ক্যাস্টর অয়েল ও অ্যালোভেরা হেয়ার মাস্ক
চুলে নারিশমেন্ট প্রোভাইড করতে এবং হেলদি স্ক্যাল্প পেতে এই মাস্কটি বেশ কার্যকর। এই মাস্ক ব্যবহারে চুল হয়ে ওঠে শাইনি ও সিল্কি। ৩ চা চামচ অ্যালোভেরা জেলের সাথে ১ চা চামচ ক্যাস্টর অয়েল ভালোভাবে মিক্স করে নিন। স্ক্যাল্পে অ্যাপ্লাই করে ৩০-৪৫ মিনিট অপেক্ষা করে চুল ধুয়ে ফেলুন।
ক্যাস্টর ও কোকোনাট অয়েল হেয়ার মাস্ক
যারা চুল ঘন করতে চান তাদের জন্য এই মাস্কটি খুবই বেনিফিসিয়াল। ২ চা চামচ কোকোনাট অয়েলের সাথে ১ চা চামচ ক্যাস্টর অয়েল ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। স্ক্যাল্পে অ্যাপ্লাই করে ৩০-৪৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। এবার রেগুলার শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নিন।
চুলের জন্য ক্যাস্টর অয়েল কতটা উপকারী সেটা অনেকেই জানেন না। যার কারণে কোন প্রবলেমের সল্যুশনে এই অয়েল কীভাবে ব্যবহার করা উচিত সেটা সম্পর্কেও কনফিউশন থেকে যায়। আশা করি আজকের আর্টিকেল থেকে এই কনফিউশন কিছুটা হলেও ক্লিয়ার হবে। অথেনটিক স্কিন কেয়ার, হেয়ার কেয়ার ও মেকআপ প্রোডাক্টস কিনতে পারেন সাজগোজ থেকে। সাজগোজের চারটি ফিজিক্যাল শপ রয়েছে। শপগুলো যমুনা ফিউচার পার্ক, সীমান্ত সম্ভার, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার এবং উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে) এ অবস্থিত। এই শপগুলোতে ঘুরে নিজের পছন্দমতো অথবা অনলাইনে শপ.সাজগোজ.কম থেকে কিনতে পারেন আপনার দরকারি প্রোডাক্টগুলো।
ছবিঃ সাজগোজ, সাটারস্টক
The post চুলের জন্য ক্যাস্টর অয়েল কি আসলেই গেইম চেঞ্জার হিসেবে কাজ করে? appeared first on Shajgoj.
from Shajgoj https://ift.tt/iP60reB
Arfatun Nabila
Comments
Post a Comment