Skip to main content

রান্নাঘর গোছানো ও দুর্গন্ধমুক্ত রাখতে কার্যকরী ৭টি টিপস

পুরো বাসা খুব সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে রেখেছেন, অথচ রান্নাঘরে ঢুকলেই দেখা যায় সব জিনিস এলোমেলো! বাসার সবচেয়ে ব্যস্ততম এই জায়গাটাই যদি পরিষ্কার না থাকে তাহলে কি কাজ করতে ভালো লাগবে, বলুন তো? সকালের চা বানানো থেকে শুরু করে রাতের খাবার তৈরি করা পর্যন্ত কতবার যে রান্নাঘরে যাওয়া হয় তার হিসেব নেই। তবু কোথায় যেন এই জায়গাটাই পরিষ্কার রাখার জন্য আগ্রহের কমতি দেখা যায়। আবার কীভাবে রান্নাঘর পরিষ্কার রাখা যায় সেই টিপসটাও অনেকের অজানা। আজকের লেখায় আমি জানাবো রান্নাঘর গোছানো ও দুর্গন্ধমুক্ত রাখার কয়েকটি টিপস সম্পর্কে।

রান্নাঘর গোছানো ও দুর্গন্ধমুক্ত রাখার টিপস 

১) সিঙ্ক ও বেসিন ঝকঝকে রাখুন

সারাদিনের বিভিন্ন ধোয়ামোছার পর সিঙ্ক কিংবা বেসিন জ্যাম হয়ে যেতে পারে। এতে দুর্গন্ধ ছড়ানোর সম্ভাবনা থাকে। কাজের শেষে তাই সম্ভব হলে সিঙ্কে গরম পানি ঢেলে দিন। খুব বেশি গরম পানি ব্যবহার করা উচিত নয়। এতে প্লাস্টিকের পাইপের ক্ষতি হতে পারে। তবে প্লাস্টিকের জন্য সহনীয় পর্যায় পর্যন্ত গরম পানি ব্যবহার করলে যে কোনো কারণে পাইপ জ্যাম হয়ে গেলে তা ঠিক হয়ে যাবে। সবশেষে লিকুইড সাবান কিংবা ভিনেগার পানিতে মিশিয়ে তা দিয়ে সিঙ্কের পুরোটা পরিষ্কার করে নিন। তেলতেলে ভাব কমানোর জন্য সিঙ্কের মধ্যে ভিনেগার ছড়িয়ে দিয়ে তাতে লেবুর রস ও কয়েক টুকরো লেবু রেখে দিন। ১০ মিনিট পর ঘষে ধুয়ে ফেলুন। এতে সিঙ্কের চকচকে ভাব ফিরে আসবে।

সিঙ্ক পরিষ্কার

২) রান্নাঘরের স্ল্যাব ক্লিন করুন

প্রতিদিন রান্না করার সময় মশলা বা তরকারি চুলায় ও স্ল্যাবে পড়তে পারে। এই দাগ একবার বসে গেলে ওঠানো খুব কষ্টকর। তাছাড়া স্ল্যাবও তেল চিটচিটে হয়ে যায়। তাই প্রতিবার রান্না শেষ করে চুলা ও স্ল্যাব ক্লিন করে নিন। ক্লিন করার জন্য গরম পানিতে বাসন পরিষ্কারের লিকুইড সাবান ও এক চামচ লবণ মিশিয়ে নিন। পানিতে কাপড় ভিজিয়ে চুলার আশেপাশে এবং স্ল্যাব পরিষ্কার করা হলে শুকনো আরেকটি কাপড় দিয়ে ভালোভাবে মুছে নিন।

৩) আঁশটে গন্ধ দূর করুন

মাছ কাটাকুটি করা হলে স্বাভাবিকভাবেই রান্নাঘরে কিছুটা আঁশটে গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে মাছের আঁশ আর অন্যান্য আবর্জনা আগে পলিথিনে ভরে মুখ বন্ধ করে তারপর ময়লার ঝুড়িতে রাখুন। মাছ কাটার সময় পুরাতন পত্রিকা বা পলিথিন বিছিয়ে রাখতে পারেন। এতে মেঝে নোংরা হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে। মাছ-মাংস কাটার পর যদি রান্নাঘরে গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে তবে পানিতে কিছুটা দারুচিনি রেখে ফুটিয়ে নিন। এতে ঘরের দুর্গন্ধ কমে আসবে। চাইলে এয়ার ফ্রেশনারও ব্যবহার করতে পারেন।

৪) ওভেন পরিষ্কার রাখুন

রান্নার ঝামেলা কমিয়ে আনার জন্য অনেকেই এখন মাইক্রোওয়েভ ব্যবহার করছেন। তবে ব্যবহার শেষে যদি ওভেন ভালোভাবে ক্লিন করা না হয়, তবে অল্প সময়েই ছড়িয়ে থাকা খাবার থেকে দুর্গন্ধ আসতে পারে। তাই ওভেনও নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে। এক বাটি পানিতে ভিনেগার কিংবা লেবুর রস মিশিয়ে তা ওভেনে এক মিনিট গরম করে নিন। এতে গরম পানির বাষ্প পুরো ওভেনে ছড়িয়ে পড়বে। পরে শুকনো কাপড় দিয়ে মুছে নিলেই ওভেন পরিষ্কার হয়ে যাবে।

রান্নাঘর গোছানো ও দুর্গন্ধমুক্ত রাখার উপায়

৫) রান্নাঘরের চকচকে ভাব ধরে রাখুন

রান্নাঘরে স্টেইনলেস স্টিলের সিঙ্ক পরিষ্কার করার পর কাপড়ে খানিকটা অলিভ অয়েল কিংবা কোকোনাট লাগিয়ে তা দিয়ে সিঙ্ক মুছে নিতে পারেন। রান্নাঘরের কোনো পাত্র চকচকে রাখতে চাইলেও এই পদ্ধতি ফলো করতে পারেন। কাঠের জিনিসের চকচকে ভাব ধরে রাখতে চাইলে কিছুটা লবণ ছিটিয়ে তাতে অল্প লেবুর রস দিয়ে হালকা ঘষে নিন। রান্নাঘরের প্রতিটি জিনিস যখন পরিষ্কার থাকবে তখন এমনিতেই চকচকে ভাব বজায় থাকবে।

৬) টাইলস পরিষ্কার করুন 

চুলার আশেপাশের দেয়ালে তেল চিটচিটে টাইলস পরিষ্কারের জন্য বেকিং সোডা ও লেবু বেশ কার্যকরী। বেকিং সোডার পেস্ট তৈরি করে তাতে লেবুর রস মিশিয়ে নিন। এরপর টাইলসে থাকা দাগের উপর পেস্টটি লাগিয়ে রাখুন। কিছুক্ষণ পর পরিষ্কার করে নিতে হবে। এতে করে টাইলসের তৈলাক্ত ভাব আর দাগ নিমিষেই দূর হয়ে যাবে।

৭) জমিয়ে রাখবেন না কোনোকিছুই

ভাজা পোড়ার পুরাতন তেল হোক কিংবা এঁটো থালাবাসন, রান্নাঘরের কোনো কাজই জমিয়ে রাখা উচিত নয়। চেষ্টা করুন, এঁটো থালাবাসন অন্তত খানিকটা পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে। পরে নিজের সুবিধামত সময়ে সাবান দিয়ে ধুয়ে নিন। এছাড়া প্রতিদিন ২০-২৫ মিনিট বরাদ্দ রাখুন সিঙ্ক ও চুলার আশেপাশের এরিয়া পরিষ্কারের জন্য। এসব স্থান ব্যবহার হয় বেশি, তাই খুব সহজে দাগ বসে যেতে পারে। তাই এই জায়গাগুলো প্রতিদিন ক্লিন করে নেয়াই ভালো।

কিচেন কেবিনেট কীভাবে পরিষ্কার রাখবেন?

রান্নাঘর গোছানো আর পরিষ্কার দেখতে কার ভালো লাগে না বলুন? এ জন্য যতটুকু সম্ভব কিচেন কেবিনেটসহ সবকিছু পরিষ্কার রাখতে হবে। কিচেন কেবিনেট হোক কিংবা সাধারণ তাক, প্রতিদিন একবার পরিষ্কার করার চেষ্টা করুন। যেসব স্থানে প্রতিদিন রান্নার উপকরণ রাখা হয় কিংবা যেসব কেবিনেট প্রতিদিনই খোলার প্রয়োজন পড়ে, সেসব নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। কিচেন কেবিনেট দীর্ঘদিন আবদ্ধ থাকলে তাতে তেলাপোকাসহ অন্যান্য যে কোনো পোকামাকড় বাসা বাঁধতে পারে। মাসে অন্তত দুইবার চেষ্টা করুন কেবিনেট ক্লিন করার।

রান্নাঘর গোছানো ও পরিষ্কার রাখতে কেবিনেট ক্লিন করা

কিচেন কেবিনেটে যদি রঙ করা থাকে, তবে সেখানকার দাগ পরিষ্কার করতে বেকিং সোডা সবচেয়ে কার্যকরী। একটি বাটিতে বেকিং সোডা আর পানি মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিন। এবার পেস্ট দাগের উপর রেখে সুতি কাপড় দিয়ে মুছে নিন। কাঠের কেবিনেটের জন্য যে সুতি কাপড় ব্যবহার করবেন খেয়াল রাখবেন সেটি যেন খুব ভেজা না হয়। এতে কাঠ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। কেবিনেটে যদি কাঁচ থাকে তাহলে সুতি কাপড়ে গ্লাস ক্লিনার নিয়ে ভেতরে ও বাইরে দুই দিক থেকেই ক্লিন করুন। কেবিনেট যেমন রান্নাঘরের শোভা বাড়ায়, তেমনই এটি ক্লিন না রাখলে দেখতেও ভালো লাগে না। তাই কাঠের বা কাঁচের কেবিনেট যাই হোক না কেন, নিয়মিত পরিষ্কার রাখা জরুরি।

এই তো জানিয়ে দিলাম রান্নাঘর গোছানো ও দুর্গন্ধমুক্ত রাখার কার্যকরী কয়েকটি টিপস সম্পর্কে। রান্নাঘর গোছানো থাকলে কাজ করতেও যেমন ভালো লাগে, তেমনই এটি স্বাস্থ্যকরও। তাই চেষ্টা করুন স্বাস্থ্যকর পরিবেশেই কাজ করতে। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।

 

ছবিঃ সাটারস্টক

The post রান্নাঘর গোছানো ও দুর্গন্ধমুক্ত রাখতে কার্যকরী ৭টি টিপস appeared first on Shajgoj.



from Shajgoj https://ift.tt/SbtcqoN
Arfatun Nabila

Comments

Popular posts from this blog

রেগুলার ব্রা vs পুশ-আপ ব্রা | সঠিক ইনার ওয়্যার কীভাবে সিলেক্ট করবেন?

রেগুলার ব্রা আর পুশ-আপ ব্রা, এই দু’টার মধ্যে আসলে পার্থক্য কী আর কখন কোনটা ইউজ করতে হবে, এই বিষয়গুলো আমাদের অনেকেরই অজানা। আমাদের অ্যাকটিভিটি আর আউটফিটের সাথে ইনার ওয়্যারেও ভ্যারিয়েশন আসে। যেমন সকালে ঘুম থেকে উঠে ওয়ার্ক আউট করছি, এরপর ভার্সিটি বা অফিসে যাচ্ছি, সন্ধ্যায় পার্টি অ্যাটেন্ড করছি। সব সময় কি আমরা সেইম ব্রা পরি? না তো! শাড়ি পরলে এক ধরনের ব্রা পরি, জিমে গেলে অন্য ধরনের ব্রা পরি, বাসায় থাকলে আবার আরেক রকম! কখন কোন ব্রা পরা উচিত বা কোন ড্রেসের সাথে কোনটা মানাবে এই বিষয়গুলো নিয়ে অনেকেরই কনফিউশন আছে। এই বিষয়গুলো এখনও অনেকের কাছেই ট্যাবু। দিন বদলাচ্ছে, এই সামাজিক ট্যাবু থেকে বেরিয়ে আসতে হবে সবাইকে। লঞ্জেরি মেয়েদের জন্য বেসিক একটি জিনিস। তাই লঞ্জেরির ক্যাটাগরিটা আমাদের জেনে রাখা উচিত। পুশ-আপ ব্রা কেন ইউজ করে, এটাই এখনও অনেক মেয়েরা জানে না! রেগুলার ব্রা এর সাথে সাথে নিজের কালেকশনে পুশ-আপ ব্রা কেন রাখা উচিত, সেটা কিন্তু অনেকে বুঝতে পারে না। চলুন এই কনফিউশনগুলো আজ দূর করা যাক। রেগুলার ব্রা vs পুশ-আপ ব্রা    বেসিক রেগুলার ব্রা-এর ক্ষেত্রে ফেব্রিক ম্যাটেরিয়াল ও কমফোর্টের বিষ...

বিবি ক্রিম vs সিসি ক্রিম | স্কিন টাইপ অনুযায়ী কোনটি আপনার জন্য স্যুইটেবল?

ন্যাচারাল মেকআপ লুকের জন্য এখন বিবি ক্রিম ও সিসি ক্রিম বেশ জনপ্রিয়। পার্টি মেকআপ বা ফুল কভারেজ মেকআপের ক্ষেত্রে ফাউন্ডেশন ইউজ করা হয়। কিন্তু যারা রেগুলার হালকা মেকআপ করে বাইরে বের হন, তাদের জন্য বেস্ট অপশন হচ্ছে BB বা CC ক্রিম । কিন্তু আমরা অনেকেই বুঝতে পারি না যে স্কিন টাইপ ও কনসার্ন অনুযায়ী কীভাবে রাইট প্রোডাক্টটি সিলেক্ট করতে হবে। এই দু’টি মেকআপ প্রোডাক্টের বেনিফিট বা কার্যকারিতা নিয়ে আজকের ফিচার। এগুলোর মধ্যে বেসিক ডিফারেন্সটা আসলে কোথায়, সেটাও জানা হয়ে যাবে। বিবি ক্রিম BB (Beauty Balm, Blemish Balm) ক্রিম স্কিনকে ইভেন টোনড করে এবং ব্লেমিশ হাইড করে ফ্ললেস লুক দেয় নিমিষেই। এতে স্কিন ময়েশ্চারাইজিং ও হাইড্রেটিং এলিমেন্টস থাকে, যার কারণে ড্রাই বা নরমাল স্কিনের জন্য এটি একদম পারফেক্ট। এর টেক্সচার ফাউন্ডেশনের থেকে লাইট, তাই কভারেজটাও হয় একদম ন্যাচারাল। মানে একদমই হেভি ফিল হয় না, আর স্কিনটাও পিকচার পারফেক্ট দেখায়। অনেক বিবি ক্রিমে সান প্রোটেকশন ফ্যাক্টর বা SPF থাকে। সিসি ক্রিম CC (Color Corrector, Complexion Corrector) ক্রিমের ফর্মুলা লাইট ওয়েট ও লং লাস্টিং। ম্যাট ফর্মুলার হওয়াতে অয়েল...

লো পোরোসিটি চুল | কীভাবে চিনবেন এবং সঠিক যত্ন নিবেন?

একরাশ সুন্দর ও ঝলমলে চুল কে না চায়? কিন্তু অনেক সময় সঠিক যত্নের অভাবে সুন্দর চুলগুলো দিন দিন নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ে। চুলের যত্নের ক্ষেত্রে আমাদের সবচেয়ে সবচেয়ে বড় ভুল হলো পোরোসিটি না বুঝে হেয়ার কেয়ার করা। এতে করে চুল আরো ড্যামেজ হওয়ার চান্স থাকে। আজকের ফিচারটি মূলত লো পোরোসিটি হেয়ার কেয়ার নিয়ে। লো পোরোসিটি চুল কীভাবে বুঝবো, কীভাবে যত্ন নিতে হবে, কী ব্যবহার করা যাবে ও যাবেনা ইত্যাদি বিস্তারিত জানবো আজকের ফিচারে। লো পোরোসিটি বলতে কী বোঝানো হয়? পোরোসিটি শব্দের বাংলা অর্থ হচ্ছে ছিদ্র। ত্বকে যেমন অসংখ্য পোর বা ছিদ্র থাকে, চুলের ক্ষেত্রেও কিন্তু তাই রয়েছে। অর্থাৎ প্রতিটি চুলে অসংখ্য ছিদ্র বিদ্যমান, যার মাধ্যমে চুলে আর্দ্রতা প্রবেশ করে এবং চুল আর্দ্রতা ধরে রাখার চেষ্টা করে। একেই হেয়ার পোরোসিটি বলে। পোরোসিটি ৩ রকম, হাই, মিডিয়াম ও লো। এই হেয়ার পোরোসিটির মাত্রা প্রত্যেক মানুষের ক্ষেত্রে আলাদা হয়ে থাকে। লো পোরোসিটির চুলগুলো কম ছিদ্র সম্পন্ন হয়ে থাকে। লো পোরোসিটি চুলের কিউটিকল লেয়ার খুব শক্ত ভাবে সংযুক্ত থাকে। যার ফলে এ ধরনের চুল আর্দ্রতা সহজে গ্রহণ করতে পারেনা, তবে একবার আর্দ্রতা গ্রহণ করলে এ ধরনের...