সুন্দর, মসৃণ ত্বকে স্ট্রেচ মার্কস দেখতে কি ভালো লাগে? লাগে না অবশ্যই! কিন্তু সমস্যাটা এখানেই, আমরা না চাইলেও প্রেগনেন্সিতে বা ওজন বেড়ে গেলে স্ট্রেচ মার্কস ঠিকই তার চিহ্ন রেখে যায় আমাদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে। এর থেকে কি আদৌ মুক্তি পাওয়া সম্ভব? পেলে সেটা কীভাবে? স্ট্রেচ মার্কস বা ফাটা দাগ পুরোপুরি রিমুভ করা আসলেই সম্ভব কিনা সেটা অনেকেরই প্রশ্ন! এই প্রশ্নের উত্তর আজকে জানার চেষ্টা করবো আমরা।
স্ট্রেচ মার্কস কী?
সমস্যা সমাধানের প্রথম ধাপই হলো সমস্যাকে চিনে নেওয়া। তো চলুন, সমাধান জানার আগে স্ট্রেচ মার্কসকে কী সেটা একটু চিনে নিই! স্ট্রেচ মার্কস হলো কোলাজেন বা ইলাস্টিসিটি কমে যাওয়ার জন্য ত্বকে তৈরি হওয়া এক ধরনের দাগ। সাধারণত আমাদের ত্বক যখন উপরের লেয়ারে প্রসারিত হয় (প্রেগনেন্সি বা ওজন বেড়ে যাওয়ার সময়ে) তখন একটা সময় এটার ইলাস্টিসিটি কমে যায় আর ত্বক ফেটে যেতে থাকে এবং সেই ফাটা দাগকেই আমরা স্টেচ মার্কস বলে থাকি। স্ট্রেচ মার্কসের বিভিন্ন ধরন আছে।
একটি Striae rubrae, আরেকটি Striae albae। Striae rubrae কিছুটা লাল বা গোলাপি রঙের ফাটা ফাটা দাগের মতো হয়ে থাকে। প্রথমদিকে যখন ত্বক ফেটে যাওয়া শুরু করে তখন এই অবস্থা থাকে। Striae albae অপেক্ষাকৃত দেরিতে দেখা যায়, এটি সাধারণত সাদা রঙের হয়ে থাকে। খেয়াল করলে দেখবেন অনেকের বাহু, পেটের নিচ সাইডে সাদা সাদা ফাটা দাগ থাকে। আর Striae Gravidarum দেখা যায় প্রেগনেন্সিতে।
কেন হয়?
আরো হাজারটা সমস্যার মতো এই স্ট্রেচ মার্কসের পিছনেও কিন্তু আছে হরমোনের বেশ কিছু কারসাজি। প্রথমে সেটা নিয়েই বরং আলাপ করি। প্রথমেই আমরা জেনেছি স্ট্রেচ মার্কস হয় স্কিনের স্ট্রেচিং হলে বা স্থিতিস্থাপকতা কমে গেলে। এখন এই কারণটাকে ট্রিগার করতে পারে আরো বেশ কিছু ফ্যাক্টর। যেমন- আপনার জেনেটিক বৈশিষ্ট্য কেমন, আপনি ত্বকের উপর স্ট্রেস কেমন দিচ্ছেন, সাথে সাথে আপনার শরীরে কর্টিসল হরমোনের পরিমাণ। আমাদের ত্বককে মসৃণ রাখতে সাহায্য করে ত্বকের গাঠনিক উপাদানে থাকা কোলাজেন ফাইবার। অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি থেকে আসা কর্টিসল হরমোন এই ফাইবারকে ঢিলা বা লুজ করে দেয়, ফলে ত্বকের এই টানটান ভাব কমে যেতে থাকে।
এছাড়াও আরো কতগুলো ফ্যাক্টর আছে স্ট্রেচ মার্কসের, যেমন-
- মেয়েদের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি বেশি
- পরিবারের কারো আগে থেকেই যদি স্ট্রেচ মার্কস থাকে তাহলে
- প্রেগনেন্সিতে বা পোস্ট প্রেগনেন্সিতে
- হঠাৎ করেই ওজন বেড়ে গেলে বা কমিয়ে ফেললে
- কর্টিকোস্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ খেলে
- ব্রেস্ট এনলার্জমেন্ট সার্জারি করালে
- কুশিং সিনড্রোম বা মারফান সিনড্রোম থাকলে
স্ট্রেচ মার্কস বা ফাটা দাগ পুরোপুরি রিমুভ করা যায় কি?
এই হিলিং প্রসেসটা সময়সাপেক্ষ, কারণ স্ট্রেচ মার্কস তৈরি হতেও তো সময় লাগে। তাই হুট করেই কোনো ওষুধ বা টোটকায় একবারে সেরে যাবে না। যেকোনো দাগের মতোই অল্প সময়ে স্ট্রেচ মার্কস বা ফাটা দাগ পুরোপুরি রিমুভ করা যায় না। তবে বেশ কিছু ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে সেগুলো কম চোখে পড়ে এরকম একটা স্টেজে আনা যায়। মানে এই দাগ কিছুটা ফেইড করা সম্ভব! চলুন একটু দেখে আসি সেগুলো কী কী।
১) স্ট্রেচ মার্কস ক্রিম, লোশন, জেল
যখন থেকে ত্বকে স্ট্রেচ মার্কস বা ফাটা দাগ এর উপস্থিতি দেখা দিতে শুরু করে তখন থেকেই যদি ঠিকঠাকভাবে ক্রিম/লোশন/জেল (যেটা আপনার ত্বকের জন্য উপযোগী) ব্যবহার করা শুরু করেন, তাহলে ব্যবহারের কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই দাগ কিছুটা কমে যেতে শুরু করবে। তবে অবশ্যই নির্দেশনা অনুযায়ী এবং সময় নিয়ে জেন্টলি ম্যাসাজ করতে হবে।
২) হায়ালুরোনিক অ্যাসিড
স্কিনকেয়ার রুটিনে এই উপাদানটি কিন্তু দারুণ কার্যকরী! ফেইসে বা নেক এরিয়াতে আর্লি স্ট্রেচ মার্কসের ক্ষেত্রে যদি অ্যাপ্লাই করা যায় তাহলে হায়ালুরোনিক অ্যাসিড বেশ ভালো কাজে দেয় এবং দাগ অনেকটাই কম চোখে পড়ে।
৩) ট্রেটিনোইন (Tretinoin)
এটি একটি রেটিনয়েড, আর্লি স্টেজ থেকে অ্যাপ্লাই করলে স্ট্রেচ মার্কস প্রিভেন্ট করা যায়। একটি গবেষণা থেকে দেখা যায়, যারা প্রায় ২৪ সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন রাতে একবার করে ট্রেটিনোইন ব্যবহার করেছে তারা দাগ কমানোর ক্ষেত্রে বেশ ভালো ফলাফল পেয়েছে।
৪) অলিভ অয়েল ও আরগান অয়েল
বেবি ডেলিভারির পরে পেট, তলপেট, ব্রেস্ট এরিয়ার স্টেচ মার্কস দূর করতে অলিভ অয়েলের সাথে কয়েক ফোঁটা আরগান অয়েল মিক্স করে ম্যাসাজ করুন। আরগান অয়েলের ময়েশ্চারাইজিং প্রোপারটিজ স্কিনের ড্রাইনেস কমিয়ে আনে। আর অলিভ অয়েলের সাথে যখন এটি মিক্স করে বডিতে অ্যাপ্লাই করা হয়, সেটা স্ট্রেচ মার্কস দূর করতে বেশ ভালো কাজ করে।
এছাড়াও বায়ো অয়েল, আমন্ড অয়েল, কোকোয়া বাটার ব্যবহার করে অনেকের ক্ষেত্রে বেশ উপকার হয়।
ডার্মাটোলজিস্ট দেখালে কি ভালো ফল পাওয়া যাবে?
ডার্মাটোলজিস্ট দেখালে আপনি হয়তো বেটার ট্রিটমেন্ট পাবেন কিন্তু স্ট্রেচ মার্কস জিনিসটাই নাছোড়বান্দা, একবার স্থায়ী হয়ে গেলে সেটা পুরোপুরি দূর করা সময়সাপেক্ষ! ডার্মাটোলজিস্টরা স্ট্রেচ মার্কসের ট্রিটমেন্টে কিছু অ্যাডভান্স টেকনোলজি ব্যবহার করেন যাতে দাগ পুরোপুরি দূর করা যায় কিছু সেশনের মাধ্যমে-
- কেমিক্যাল পিল
- লেজার থেরাপি
- মাইক্রোডার্মাব্রেশন
- রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি
- কসমেটিকস সার্জারি
অ্যাডভান্স ট্রিটমেন্ট ছাড়া রাতারাতি স্ট্রেচ মার্কস বা ফাটা দাগ একেবারেই নাই হয়ে যাবে, এমনটা সম্ভব না। বডি এরিয়া প্রোপারলি ময়েশ্চারাইজড রাখুন, স্ট্রেচ মার্কস কমানোর জন্য স্পেশাল যে ক্রিম বা অয়েল পাওয়া যায় সেগুলো ব্যবহার করুন। আর সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে নিজের বডি নিয়ে কনফিডেন্ট থাকুন।
অনলাইনে অথেনটিক বিউটি প্রোডাক্ট কিনতে পারেন শপ.সাজগোজ.কম থেকে অথবা সাজগোজের ৪টি শপ- যমুনা ফিউচার পার্ক, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার, উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে) ও সীমান্ত সম্ভার থেকেও বেছে নিতে পারেন আপনার পছন্দের প্রোডাক্টটি।
ছবি- সাজগোজ, সাটারস্টক
The post স্ট্রেচ মার্কস বা ফাটা দাগ পুরোপুরি দূর করা কি আসলেই সম্ভব? appeared first on Shajgoj.
from Shajgoj https://ift.tt/H9Yl5vV
Munia
Comments
Post a Comment