Skip to main content

দইয়ের পুষ্টিগুণ | প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় কেন রাখবেন এই সুপারফুড?

ভারতীয় উপমহাদেশে দইয়ের সাথে পরিচিত নয় এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর! ধর্মের রীতি-আচার হোক বা মেহমানের আগমন, দই আমাদের পাতে থাকা চাই-ই চাই! পোলাও, রোস্ট, রেজালা খাওয়ার পরে পাতে একটু দই না থাকলে কি চলে! এই দই নিয়ে আজকে এত কথা কেন? আমরা অনেকেই কিন্তু জানি না দইয়ের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে। এক কাপ দুধ নাকি এক বাটি দই, কোনটা বেশি উপকারি? জানেন কি, বেশ কিছু খাবারকে দেশি সুপারফুড বলা হয়; দই তার মধ্যে অন্যতম। চলুন একটু দেখে আসি কেন প্রতিদিনের ডায়েটে দই রাখাটা আপনার ত্বক ও স্বাস্থ্যের জন্য অনেক বেশি দরকারী!

ছোট্ট করে জেনে নেই এর ইতিহাস  

ধারণা করা হয়, প্রথম দই তৈরি হয়েছিলো রোদে থাকা দুধ থেকে ফার্মেন্টেড হয়ে। পরে অবশ্য মানুষ শিখে নিয়েছিলো কীভাবে ঘরে দই বানাতে হয়। ঐতিহাসিকদের মতে ইরান অথবা ভারতবর্ষ থেকেই দই জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং এর প্রচলন হয় অন্যান্য এলাকাতেও। ১৯১৯ সালে প্রথম বাণিজ্যিকভাবে দই উৎপাদন শুরু হয়, এর আগের ইতিহাস সবই মা-ঠাকুমাদের হেঁশেলের! এখন শুধুমাত্র গরু বা মহিষের দুধ থেকেই নয় বরং যারা নিরামিষভোজী তাদের জন্য সয়া, আমন্ড, কাজু সহ আরো অনেক বিকল্প থেকেও দই উৎপাদিত হচ্ছে!

দইয়ের পুষ্টিগুণ

কোনো খাবারে যখন পুষ্টিগুণ বেশ ভরপুর থাকে এবং সেটা সহজপাচ্য হয়, তখন সেটাকে আমরা সুপারফুডের কাতারে আনতে পারি। দইয়ের মধ্যেও এমন কিছু চমৎকার গুণ আছে যা এর প্রশংসা করতে আমাদেরকে বারবার বাধ্য করে! চলুন জেনে নেই দইয়ের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে।

দইয়ের পুষ্টিগুণ

১) অ্যাকটিভ ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি

দুধ থেকে দই হওয়ার জন্য যে অতি ক্ষুদ্র ব্যাকটেরিয়া দায়ী তার নাম হলো ল্যাকটোব্যাসিলাস। এই ব্যাকটেরিয়া আমাদের গাট হেলথ বা অন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো। অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো থাকা মানেই হজম ঠিকমতো হওয়া আর হজম ঠিক হলে যে খাওয়ার আনন্দই শুধু বাড়ে সেটা নয় বরং শরীরে পুষ্টিগুণ শোষণও হয় বেশি বেশি। প্রতি গ্রাম দইয়ের মধ্যে প্রায় ১০০ মিলিয়ন অ্যাকটিভ ল্যাকটোব্যাসিলাস থাকে।

২) অন্ত্রের রোগ কমাতে কার্যকর

কোলন ক্যান্সারের নাম নিশ্চয়ই শুনেছেন। রেগুলার ডায়েটে দই রাখলে সেটা আপনার শরীরে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমিয়ে দিতে পারে। এছাড়াও যেসব প্রদাহজনিত রোগ হয়ে থাকে (যেমন অ্যাসিডিটি) সেগুলো কমাতেও বেশ কার্যকরী দই। এমনকি যাদের ল্যাকটোজ ইন্টলারেন্স আছে তাদের ক্ষেত্রেও দই খাওয়া ইন্টলারেন্স কমানোর জন্য সহায়ক হতে পারে বলে প্রকাশিত হয়েছে বেশ কিছু জার্নালে। তবে অনেক ক্ষেত্রে চিকিৎসক রোগীর শারীরিক কন্ডিশন বিবেচনা করে ডেইরি প্রোডাক্টস খেতে মানা করেন, সেক্ষেত্রে কিন্তু দই খাওয়াতে নিষেধাজ্ঞা আছে।

৩) ক্যালসিয়ামে ভরপুর

হরলিক্সের টিভি কমার্শিয়াল থেকে তো এতদিনে আমাদের মুখস্থ হয়ে গেছে যে দুধে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি থাকে! দইতেও ভিটামিন ডি-এর কমতি নেই। ভিটামিন ডি ভরপুর থাকায় আমাদের হাড় ও দাঁতের জন্য দই বেশ ভালো সাপোর্ট সিস্টেম হিসেবে কাজ করে। তবে ক্যালসিয়াম শুধু যে হাড় ও দাঁতের জন্য সুপারস্টার তা কিন্তু না, বরং আমাদের হৃদযন্ত্র আর স্নায়ুতন্ত্রের জন্যও ক্যালসিয়াম খুবই দরকারী একটি উপাদান। প্রতিদিন আপনার যে পরিমাণ ক্যালসিয়াম প্রয়োজন তার প্রায় ৫০% ই থাকে মাত্র এক কাপ দইয়ের মধ্যে।

৪) ভিটামিন বি ১২-এর উৎস

‘আমেরিকান ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ’ এর মতে প্রতিদিন আমাদের যে পরিমাণ ভিটামিন বি ১২ দরকার হয় তার প্রায় ২৫% ই এক কাপ দইয়ের মধ্যে থাকে। ভিটামিন বি ১২ আমাদের স্বাস্থ্য ও ত্বক দু’য়ের জন্যই বেশ উপকারী। কার্ডিওভাস্কুলার ডিজিজ কমাতে এবং ডিমেনশিয়া রোধ করতে এটি সক্রিয় ভূমিকা রাখে। একইসাথে এটি বেশ ভালো এনার্জি বুস্টার, তাই সকালের নাস্তায় দই রাখলে সারাদিন এনার্জিতে ভরপুর থাকাটা গ্যারান্টেড ধরে নিতে পারেন! এছাড়াও ড্যামেজড স্কিন ব্যারিয়ার রিপেয়ারে ভিটামিন বি ১২ খুবই কার্যকর।

৫) অ্যান্টি অক্সিডেন্টের ভালো উৎস 

দইয়ের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্টস থাকে যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ভালো তো বটেই, বয়সের সাথে সাথে আমাদের ত্বকে যে বলিরেখা দেখা দেয় সেটা রোধ করতেও বেশ কাজে দেয়। তাই বয়সের ছাপ কমাতে প্রতিদিন এক বাটি দই ডায়েটে যোগ করে নিন। সেই সাথে পর্যাপ্ত ঘুমও কিন্তু দরকার, তাই এদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।

টকদই নাকি মিষ্টি দই?

এখন তো বিভিন্ন ফ্লেবারের দই কিনতে পাওয়া যায়। একটু ক্রিমি ও রিচ টেক্সচারের দই খেতে চাইলে গ্রিক ইয়োগার্ট কিনতে পারেন। দইকে মিষ্টি করার জন্য চিনি, গুড়, কর্ন সিরাপ বা অন্যান্য কৃত্রিম সুইটেনার ব্যবহার করা হয়। আপনি যদি ওজন কমানোর জন্য বা শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য দই খান, তাহলে এসব ছাড়া বেসিক টকদই কেনাই ভালো। ঘরেও টকদই বানানো যায় খুব সহজেই। টকদই এর সাথে বিভিন্ন রকম ফল, বাদাম, ওটস এগুলো মিক্স করে হেলদি ও টেস্টি ব্রেকফাস্ট রেডি করে নিতে পারেন।

এক কাপ দুধ নাকি এক বাটি দই?

দুধ আর দই দু’টোই আমাদের শরীরের জন্য অনেক বেশি উপকারী। হজমের সমস্যা না থাকলে রেগুলার দুধ ও দই খাওয়া যেতে পারে। উপকারিতার তালিকাটা কিছু জায়গাতে মিললেও দুই উপাদান তাদের নিজেদের জায়গায় স্বতন্ত্রও বটে। তবে দইয়ের উপকারিতা বোঝানোর জন্য আমরা কিছু পার্থক্য তুলে ধরার চেষ্টা করছি এখানে।

  • লাইভ অ্যাকটিভ ব্যাকটেরিয়া দইয়ে পাওয়া যায়, কিন্তু দুধের মধ্যে এটি উপস্থিত থাকে না
  • এক গ্লাস দইয়ের মধ্যে প্রোটিনের পরিমাণ ৮ গ্রাম, যেখানে এক কাপ দইয়ের মধ্যে প্রোটিন থাকে ১৪ গ্রাম
  • দুধে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ ২৭৬ মিলিগ্রাম, যেখানে সমপরিমাণ দইয়ের মধ্যে ক্যালসিয়াম থাকে ৪৮৮ মিলিগ্রাম
  • ভিটামিন বি ১২ দুধে আছে প্রায় ১.৫ মিলিগ্রাম, তবে দইয়ের মধ্যে এর পরিমাণ ১.১ মিলিগ্রাম

প্রতিদিন সকালের নাস্তায় এক বাটি দই বদলে দিতে পারে আপনার শরীর ও রোগ বালাইয়ের সমীকরণ। তাই একটু ভেবে চিন্তে নির্বাচন করা খাবার হতে পারে আপনার জন্য ‘লাইফ চেঞ্জার’! দইয়ের পুষ্টিগুণ নিয়ে আজ আমরা অনেক তথ্যই জানলাম। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় কেন রাখবেন এই সুপারফুড সেটাও জানা হলো। আজ এই পর্যন্তই, সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন।

 

ছবি- সাটারস্টক

The post দইয়ের পুষ্টিগুণ | প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় কেন রাখবেন এই সুপারফুড? appeared first on Shajgoj.



from Shajgoj https://ift.tt/IPO6evt
Munia

Comments

Popular posts from this blog

Dr. Fariah Sharmeen - Woman Oncology Specialist

Dr. Fariah Sharmeen Specialty - Associate Consultant, Oncology Degree - MBBS, FCPS (Radiotherapy) Chamber: SQUARE Hospitals Ltd. Dhaka Address: 18/F Bir Uttam Qazi Nuruzzaman Sarak, West Panthapath, Dhaka - 1205, Bangladesh Call For Appointment 10616 Call Now About: Dr. Fariah Sharmeen successfully completed her MBBS from Cumilla Medical College, and subsequently completed a one-year internship at BIRDEM Hospital, Dhaka. After completing of the internship, she started her post-graduate training in Medical Oncology at the National Institute of Cancer Research & Hospital. She started her fellowship in Radiotherapy in 2010. She completed 4 years of training at the National Institute of Cancer Research & Hospital on External Beam Radiotherapy Planning and Brachytherapy. She achieved FCPS in Radiotherapy from the Bangladesh College of Physicians & Surgeons (BCPS) in 2015. She has obtained several hands-on pieces of training on Head - Neck, Lung, Genitourina

হেভি ব্রেস্ট এর জন্য পিওর কটন ফেব্রিকের কমফোর্টেবল ব্রা খুঁজছেন?

বডি শেইপ ও বয়স অনুযায়ী ইনার ওয়্যারে যে ভ্যারিয়েশন আসে, সেটা আমরা অনেকেই জানি না! টিনেজে ডেভেলপিং ব্রেস্ট এর জন্য এক ধরনের ব্রা, বয়স্ক নারীদের জন্য এক ধরনের ব্রা, নতুন মায়েদের জন্য আরেক ধরনের ব্রা। শারীরিক গঠন বা ব্রেস্ট শেইপ অনুযায়ী ইনার ওয়্যার সিলেকশন খুবই জরুরি! মধ্যবয়সী বা বয়স্ক নারীদের জন্য স্যুইটেবল লঞ্জেরির রিভিউ জানাবো আজকের ফিচারে। হেভি ব্রেস্ট এর জন্য পিওর কটন ফেব্রিকের কমফোর্টেবল ব্রা যারা খুঁজছেন, তাদের জন্য রিভিউটি হেল্পফুল হবে আশা করি। হেভি ব্রেস্ট এর জন্য কেমন ব্রা বেছে নিতে হবে? ব্রেস্টকে প্রোপারলি সাপোর্ট দেয়, এনাফ কভারেজ পাওয়া যায় এবং প্রশস্ত ব্যান্ড থাকে, এমন ব্রা আপনাকে চুজ করতে হবে। বয়সের সাথে সাথে শারীরিক গঠনেও বেশ পরিবর্তন আসে। বাল্কি ফিগার বা কার্ভি বডির জন্য পারফেক্ট ব্রা সিলেক্ট করাটা একটু ডিফিকাল্ট মনে হয়। চিন্তা নেই, আজ এমনই একটি ব্রা সম্পর্কে জানাবো। মধ্যবয়সী ও বয়স্ক নারীদের জন্য স্যুইটেবল ব্রা আমাদের বাসায় মা, দাদি বা বয়স্ক নারী সদস্য যারা আছেন, তাদের কমফোর্টের বিষয় নিয়ে আমরা কখনো ভেবেছি কি? আরামের বিষয়টিকেই এই বয়সে বেশি প্রাধান্য দিতে হবে। এই বয়সে হে

রিবন্ডিং নাকি কেরাটিন ট্রিটমেন্ট, কোনটি আপনার জন্য পারফেক্ট?

কোনো অকেশন বা ইভেন্টে যাওয়ার জন্য নিজের পছন্দের আউটফিট পরে, সুন্দরভাবে সেজেগুজে যদি দেখতে পান, চুল একদম ফ্রিজি হয়ে আছে, চুলে কোনো শাইন নেই, সিল্কি ভাবও নেই তখন মনটাই খারাপ হয়ে যায়, তাইনা? সত্যি বলতে চুল রাফ ও আনম্যানেজেবল হয়ে থাকলে স্টাইলিংয়ের ক্ষেত্রে বেশ স্ট্রাগল করতে হয়। দেখা যায়, চুল ছেড়েও রাখা যায় না, আবার শখ করে কোনো হেয়ারস্টাইল করলেও দেখতে ভালো লাগেনা। রিবন্ডিং ও কেরাটিন ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে খুব সহজেই সিল্কি, স্ট্রেইট এবং হেলদি লুকিং চুল পাওয়া পসিবল। তবে অনেকেই এই দু’টো ট্রিটমেন্টের পার্থক্য বুঝতে পারেন না, যার ফলে ডিসিশন নিতে পারেন না যে কোনটি তাদের চুলের জন্য বেশি স্যুইটেবল হবে। আপনাদের সব কনফিউশন ক্লিয়ার করতে আজকের ফিচারে থাকছে রিবন্ডিং নাকি কেরাটিন কোন ট্রিটমেন্টটি আপনার জন্য ভালো হবে তা নিয়ে বিস্তারিত। রিবন্ডিং ও কেরাটিন ট্রিটমেন্ট কি সেইম অনেকেই মনে করেন, রিবন্ডিং ও কেরাটিন ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে যেহেতু স্ট্রেইট, স্মুথ ও ম্যানেজেবল হেয়ার পাওয়া যায়, তাই এগুলোর মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য নেই। এটি একটি বড় মিসকনসেপশন। এই দু’টো ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে একই রকম আউটপুট আসে ঠিকই, কিন্তু