Skip to main content

ফুড পয়জনিং বা ঘন ঘন পেট খারাপ হলে কী করবেন?

আমরা অনেকেই মনে করি বমি হলে বা পেট ব্যথা করলেই ফুড পয়জনিং হয়েছে। আসলে বিষয়টি এমন নয়। পেট ব্যথার অন্য কোনো কারণও থাকতে পারে। ফুড পয়জনিং মূলত দূষিত খাবার গ্রহণের কারণে হয়ে থাকে। সাধারণত রাস্তা বা হোটেলের বাসি-পচা খাবার, অস্বাস্থ্যকর ও জীবাণুযুক্ত খাবার, নষ্ট হয়ে যাওয়া ফলমূল ইত্যাদি খেলে ফুড পয়জনিং হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আর কোন কোন কারণে ফুড পয়জনিং হয় এবং প্রতিরোধের উপায় কী, চলুন জেনে নেই।

ফুড পয়জনিং এর লক্ষণ

দূষিত খাবার খাওয়ার কিছুক্ষণ পর থেকে শুরু করে কয়েক ঘন্টার মধ্যে এই খাদ্যজনিত অসুস্থতার লক্ষণ দেখা দেয়। দূষণ এর উৎস ভেদে ফুড পয়জনিং এর লক্ষণ বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। তবে কিছু লক্ষণ প্রতি ক্ষেত্রে প্রায় একই থাকে।

  • বমি বমি ভাব ও অস্বস্তি লাগা
  • বার বার বমি হওয়া
  • পানিযুক্ত পাতলা পায়খানা বা পায়খানার সাথে রক্ত যাওয়া
  • পেট কামড়ানো বা পেটে ব্যথা
  • জ্বর জ্বর ভাব

ফুড পয়জনিং

কারণ ও উৎস

সংক্রামক জীবাণু যেকোনো সময় খাদ্যকে দূষিত করতে পারে। খাদ্য প্রস্তুত করা, সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ যেকোনো স্টেজে ক্রস কন্টামিনেশন (Cross Contamination) হতে পারে। এক উৎস থেকে অন্য উৎসে জীবাণু ছড়ানোকে ক্রস কন্টামিনেশন বলে। খাবার যদি ভুলভাবে প্রসেস করা হয় বা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রান্না করা হয় তবে বাড়িতেও কিন্তু এই দূষণ হতে পারে। বিশেষ করে কাঁচা বা রেডি টু কুক খাবার যেমন বিভিন্ন রকম সালাদ, ফলমূল ঠিকমতো না ধুয়ে অথবা মাংস উচ্চ তাপে রান্না না করে খেলে ক্ষতিকারক জীবাণুগুলো ধ্বংস হয় না এবং খাবারে বিষক্রিয়া ঘটায়।

বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বা পরজীবী এজেন্ট খাদ্যে সরাসরি বিষক্রিয়া সৃষ্টি করে। এগুলোর থেকে যেকোনো একটি এজেন্ট আপনার খাবারে থাকলে আপনিও আক্রান্ত হতে পারেন। যেমন-

ক্যাম্পাইলোব্যাক্টার (Campylobacter)

এটি সাধারণত পাকস্থলীতে পাওয়া যায়। এটি শরীরে প্রবেশ করার ২-৫ দিনের মধ্যেই লক্ষণ প্রকাশ করে। এর উৎস কাঁচা মাংস ও পোলট্রি ফিড। মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণ এর সময় যদি প্রাণীর মল সেই মাংসের সংস্পর্শে আসে তাহলে এই ব্যাকটেরিয়া দিয়ে দূষিত হয়। এছাড়াও অপাস্তুরিত দুধ বা দুধ জাতীয় পদার্থ এবং দূষিত পানির মাধ্যমেও এই ব্যাকটেরিয়া ছড়ায়।

ক্লোস্ট্রিডিয়াম বোটুলিনাম (Clostridium Botulinum)

এই ব্যাকটেরিয়া দিয়ে আক্রান্তের ১২-৭২ ঘন্টার মধ্যে লক্ষণ প্রকাশ পায়। টিনজাত খাবার বা প্রসেসড ফুড, অ্যালুমিনিয়াম ফয়েলে সেদ্ধ করা আলু, আধা সেদ্ধ বা লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করা কাঁচা মাছ, উষ্ণ তাপমাত্রায় সংরক্ষিত খাদ্য ইত্যাদিতে এই ব্যাকটেরিয়া গ্রো করে।

টিনজাত খাবার বা প্রসেসড ফুড

ই-কোলাই (Escherichia Coli)

মল দ্বারা দূষিত গরুর মাংস, কম তাপে রান্না করা গরুর মাংস, অপাস্তুরিত দুধ, কাঁচা সবজি, দূষিত পানি ইত্যাদিতে ই-কোলাই থাকে। ই-কোলাই শরীরে প্রবেশের ১-৭ দিনের মধ্যে লক্ষণ প্রকাশ করে থাকে। এর ফলে ডায়রিয়ার সাথে রক্তও যেতে পারে।

হেপাটাইটিস এ

হেপাটাইটিস এ হলো একমাত্র সাধারণ খাদ্যবাহিত রোগ যা ভ্যাকসিন দ্বারা প্রতিরোধ করা যায়। এটি পাঁচটি হেপাটাইটিস ভাইরাসের একটি যা লিভারকে সংক্রমিত করে। এটি লিভার ফেইলিউর এবং মৃত্যুর কারণ হতে পারে। এটি একটি ছোঁয়াচে রোগ যা মল-মূত্রের মাধ্যমে ছড়ায়।

এছাড়াও Rotavirus, Salmonella, Shigella ইত্যাদি দিয়েও ফুড পয়জনিং হয়। মূলত কাঁচা মাংস, ডিমের কুসুম, ডেট এক্সপায়ার্ড ব্রেড ও বেকারি আইটেমস, অল্প তাপে সেদ্ধ বা রান্না খাবারে এসব জীবাণু থাকে। খাবার প্রস্তুতকারীর অপরিচ্ছন্ন হাত, ছুরি, থালা বাসনের মাধ্যমেও জীবাণু ট্রান্সফার হয়ে শরীরে প্রবেশ করে।

ডেট এক্সপায়ার্ড ব্রেড

কাদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি বেশি থাকে?

নরমালি ফুড পয়জনিং হলে ১/২ দিনের মধ্যেই ঠিক হয়ে যায়, কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটি ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কারা কারা ঝুঁকিতে আছে, চলুন দেখে নেই-

১) প্রবীণ ব্যক্তি

বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে থাকে। সংক্রামক জীবাণুর বিরুদ্ধে দ্রুত ও কার্যকরভাবে শরীরের রোগ প্রতিরোধ সিস্টেম কাজ করতে পারে না, তাই রোগের মাত্রা ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।

২) গর্ভবতী নারী

গর্ভাবস্থায় শরীরের মেটাবলিজমে ও সার্কুলেশনে অনেক রকম পরিবর্তন আসে। সে সময় ফুড পয়জনিং এ আক্রান্ত হলে গর্ভাবস্থা ঝুঁকির মুখে পড়ে। অনেক সময় শরীরে পানিশূন্যতা বা ডিহাইড্রেশন দেখা দেয় যা গর্ভস্থ শিশুর জন্য ক্ষতিকর।

৩) ছোট শিশু

শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা পুরোপুরি ডেভেলপ হয় না, তাই ফুড পয়জনিং এর প্রভাব ক্ষতিকর হতে পারে। আর ছোট্ট শিশুদের এমনিতেই সব কিছু মুখে দেওয়ার টেন্ডেন্সি থাকে। আবার সব খাবার শিশুদের হজমও হয় না। এসব কারণে বাচ্চাদের ঘন ঘন পেটের সমস্যা দেখা দেয়।

ফুড পয়জনিং

এছাড়া দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি যেমন- ডায়াবেটিস, এইডস, লিভার ডিজিজ বা ক্যান্সার এর রোগী যার কেমোথেরাপি চলছে, এদের জন্য ফুড পয়জনিং অনেক সময় ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

ফুড পয়জনিং প্রতিরোধের উপায়

  • খাবার তৈরির আগে এবং খাবার খাওয়ার আগে ভালোভাবে হাত, বাসন ধুতে হবে
  • কাঁচা শাকসবজি, ফলমূল অবশ্যই ভালোভাবে ধুয়ে খেতে হবে
  • সঠিক তাপমাত্রায় খাবার রান্না করতে হবে
  • রান্না করা খাবার ভালোভাবে সেদ্ধ হয়েছে কিনা তা খেয়াল করে দেখতে হবে
  • খাবার ফ্রিজে সঠিক নিয়মে সংরক্ষণ করতে হবে
  • ফ্রিজে কাঁচা মাছ-মাংস এবং রান্না করা খাবার এক সাথে পাশাপাশি রাখা যাবে না
  • রান্না করা খাবার ঢেকে রাখতে হবে যাতে মাছি না বসে
  • কোনো খাবার নষ্ট হয়ে গেছে বা গন্ধ বের হচ্ছে এমন হলে সেটা সাথে সাথে ফেলে দিতে হবে
  • রাস্তার পাশের অস্বাস্থ্যকর খাবার এড়িয়ে চলুন
  • পানি ভালোভাবে ফুটিয়ে বা ফিল্টার করে পান করুন
  • বাইরে থেকে এসে হ্যান্ড ওয়াশ দিয়ে ভালোভাবে হাত পরিষ্কার করুন

ফুড পয়জনিং রোধে নিজের সচেতনতাই সবচেয়ে বেশি জরুরি। আক্রান্ত হলে ডাবের পানি, স্যালাইন ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে। অবস্থা বেশি খারাপ হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। ঘন ঘন পেট খারাপ হলে বাইরের তেলে ভাজা অস্বাস্থ্যকর খাবার, জুস এগুলো এড়িয়ে চলুন। কিছু রোগীর বেলায় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সচেতন হোন, সুস্থ থাকুন।

 

ছবি- সাটারস্টক

The post ফুড পয়জনিং বা ঘন ঘন পেট খারাপ হলে কী করবেন? appeared first on Shajgoj.



from Shajgoj https://ift.tt/QU9ORJr
Munia

Comments

Popular posts from this blog

রেগুলার ব্রা vs পুশ-আপ ব্রা | সঠিক ইনার ওয়্যার কীভাবে সিলেক্ট করবেন?

রেগুলার ব্রা আর পুশ-আপ ব্রা, এই দু’টার মধ্যে আসলে পার্থক্য কী আর কখন কোনটা ইউজ করতে হবে, এই বিষয়গুলো আমাদের অনেকেরই অজানা। আমাদের অ্যাকটিভিটি আর আউটফিটের সাথে ইনার ওয়্যারেও ভ্যারিয়েশন আসে। যেমন সকালে ঘুম থেকে উঠে ওয়ার্ক আউট করছি, এরপর ভার্সিটি বা অফিসে যাচ্ছি, সন্ধ্যায় পার্টি অ্যাটেন্ড করছি। সব সময় কি আমরা সেইম ব্রা পরি? না তো! শাড়ি পরলে এক ধরনের ব্রা পরি, জিমে গেলে অন্য ধরনের ব্রা পরি, বাসায় থাকলে আবার আরেক রকম! কখন কোন ব্রা পরা উচিত বা কোন ড্রেসের সাথে কোনটা মানাবে এই বিষয়গুলো নিয়ে অনেকেরই কনফিউশন আছে। এই বিষয়গুলো এখনও অনেকের কাছেই ট্যাবু। দিন বদলাচ্ছে, এই সামাজিক ট্যাবু থেকে বেরিয়ে আসতে হবে সবাইকে। লঞ্জেরি মেয়েদের জন্য বেসিক একটি জিনিস। তাই লঞ্জেরির ক্যাটাগরিটা আমাদের জেনে রাখা উচিত। পুশ-আপ ব্রা কেন ইউজ করে, এটাই এখনও অনেক মেয়েরা জানে না! রেগুলার ব্রা এর সাথে সাথে নিজের কালেকশনে পুশ-আপ ব্রা কেন রাখা উচিত, সেটা কিন্তু অনেকে বুঝতে পারে না। চলুন এই কনফিউশনগুলো আজ দূর করা যাক। রেগুলার ব্রা vs পুশ-আপ ব্রা    বেসিক রেগুলার ব্রা-এর ক্ষেত্রে ফেব্রিক ম্যাটেরিয়াল ও কমফোর্টের বিষ...

বিবি ক্রিম vs সিসি ক্রিম | স্কিন টাইপ অনুযায়ী কোনটি আপনার জন্য স্যুইটেবল?

ন্যাচারাল মেকআপ লুকের জন্য এখন বিবি ক্রিম ও সিসি ক্রিম বেশ জনপ্রিয়। পার্টি মেকআপ বা ফুল কভারেজ মেকআপের ক্ষেত্রে ফাউন্ডেশন ইউজ করা হয়। কিন্তু যারা রেগুলার হালকা মেকআপ করে বাইরে বের হন, তাদের জন্য বেস্ট অপশন হচ্ছে BB বা CC ক্রিম । কিন্তু আমরা অনেকেই বুঝতে পারি না যে স্কিন টাইপ ও কনসার্ন অনুযায়ী কীভাবে রাইট প্রোডাক্টটি সিলেক্ট করতে হবে। এই দু’টি মেকআপ প্রোডাক্টের বেনিফিট বা কার্যকারিতা নিয়ে আজকের ফিচার। এগুলোর মধ্যে বেসিক ডিফারেন্সটা আসলে কোথায়, সেটাও জানা হয়ে যাবে। বিবি ক্রিম BB (Beauty Balm, Blemish Balm) ক্রিম স্কিনকে ইভেন টোনড করে এবং ব্লেমিশ হাইড করে ফ্ললেস লুক দেয় নিমিষেই। এতে স্কিন ময়েশ্চারাইজিং ও হাইড্রেটিং এলিমেন্টস থাকে, যার কারণে ড্রাই বা নরমাল স্কিনের জন্য এটি একদম পারফেক্ট। এর টেক্সচার ফাউন্ডেশনের থেকে লাইট, তাই কভারেজটাও হয় একদম ন্যাচারাল। মানে একদমই হেভি ফিল হয় না, আর স্কিনটাও পিকচার পারফেক্ট দেখায়। অনেক বিবি ক্রিমে সান প্রোটেকশন ফ্যাক্টর বা SPF থাকে। সিসি ক্রিম CC (Color Corrector, Complexion Corrector) ক্রিমের ফর্মুলা লাইট ওয়েট ও লং লাস্টিং। ম্যাট ফর্মুলার হওয়াতে অয়েল...

লো পোরোসিটি চুল | কীভাবে চিনবেন এবং সঠিক যত্ন নিবেন?

একরাশ সুন্দর ও ঝলমলে চুল কে না চায়? কিন্তু অনেক সময় সঠিক যত্নের অভাবে সুন্দর চুলগুলো দিন দিন নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ে। চুলের যত্নের ক্ষেত্রে আমাদের সবচেয়ে সবচেয়ে বড় ভুল হলো পোরোসিটি না বুঝে হেয়ার কেয়ার করা। এতে করে চুল আরো ড্যামেজ হওয়ার চান্স থাকে। আজকের ফিচারটি মূলত লো পোরোসিটি হেয়ার কেয়ার নিয়ে। লো পোরোসিটি চুল কীভাবে বুঝবো, কীভাবে যত্ন নিতে হবে, কী ব্যবহার করা যাবে ও যাবেনা ইত্যাদি বিস্তারিত জানবো আজকের ফিচারে। লো পোরোসিটি বলতে কী বোঝানো হয়? পোরোসিটি শব্দের বাংলা অর্থ হচ্ছে ছিদ্র। ত্বকে যেমন অসংখ্য পোর বা ছিদ্র থাকে, চুলের ক্ষেত্রেও কিন্তু তাই রয়েছে। অর্থাৎ প্রতিটি চুলে অসংখ্য ছিদ্র বিদ্যমান, যার মাধ্যমে চুলে আর্দ্রতা প্রবেশ করে এবং চুল আর্দ্রতা ধরে রাখার চেষ্টা করে। একেই হেয়ার পোরোসিটি বলে। পোরোসিটি ৩ রকম, হাই, মিডিয়াম ও লো। এই হেয়ার পোরোসিটির মাত্রা প্রত্যেক মানুষের ক্ষেত্রে আলাদা হয়ে থাকে। লো পোরোসিটির চুলগুলো কম ছিদ্র সম্পন্ন হয়ে থাকে। লো পোরোসিটি চুলের কিউটিকল লেয়ার খুব শক্ত ভাবে সংযুক্ত থাকে। যার ফলে এ ধরনের চুল আর্দ্রতা সহজে গ্রহণ করতে পারেনা, তবে একবার আর্দ্রতা গ্রহণ করলে এ ধরনের...