Skip to main content

৬-১২ মাস বয়সী শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশের ধাপ

শিশু মানেই সুন্দর, শিশু মানেই পবিত্র। জন্মের পর সব মা–বাবারই আগ্রহ থাকে শিশু কবে হামাগুড়ি দিবে, কবে উঠে বসবে, কখন হাঁটা শিখবে, কবে কথা বলা শিখবে। এগুলো শিশুর শারীরিক বিকাশ। এই শারীরিক পরিবর্তনের পাশাপাশি বয়স অনুযায়ী তার মানসিক বিকাশও ঘটে। এভাবে ধাপে ধাপে বেড়ে ওঠাকেই শিশুর পরিপূর্ণ বিকাশ বলা হয়। তবে এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে সব শিশুর গ্রোথ সেইমভাবে হয় না। তবে বেশিরভাগ শিশু নির্দিষ্ট বয়সে নির্দিষ্ট মাইলফলক ছুঁয়ে ফেলে। চলুন জেনে নেই ৬-১২ মাস বয়সী শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশের মাইলস্টোন সম্পর্কে।

ডেভেলপমেন্টাল মাইলস্টোন কী?  

ডেভেলপমেন্টাল মাইলস্টোন হলো বয়স অনুযায়ী শিশুর যেভাবে বেড়ে ওঠার কথা (শারীরিক ও মানসিকভাবে), সেই দক্ষতাগুলো ঐ বয়সের মধ্যেই অর্জন করা। শিশুর বিকাশ একটি চলমান প্রসেস। বিকাশের স্তর বা মাইলস্টোন অনুযায়ী শিশু একেকটা বয়সে একেকটা কাজ করবে। আর এটা থেকেই বোঝা যাবে যে শিশু স্বাভাবিক ও সঠিকভাবে বেড়ে উঠছে। যেমন- একটি শিশুর ওজন জন্মের পর ৫ থেকে ৬ মাসের মধ্যে দ্বিগুণ হবে এবং তার প্রথম জন্মদিনে তিনগুণ হবে। এটা হচ্ছে বাচ্চার ওয়েট গেইনের মাইলস্টোন। শিশুর ১ মাস থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সের জন্য এমন নির্দিষ্ট কিছু মাইলফলক আছে।

শিশুর স্বাভাবিক বিকাশে বিলম্ব হচ্ছে কিনা, তা কীভাবে বুঝবেন?

শিশুর বিকাশ বলতে বোঝায় কীভাবে একটি শিশু বড় হওয়ার সাথে সাথে সক্ষমতা অর্জন করে। এখানে শুধুমাত্র শিশুর ওজনে বা আকারে বড় হওয়াকেই বোঝায় না। যখন আমরা স্বাভাবিক বিকাশের কথা বলি, তখন শারীরিক ও মানসিক উভয় দিকই খেয়াল করবো। সব শিশুর বিকাশ একই গতিতে হবে এমনটি কিন্তু নয়, একটু এদিক সেদিক হতে পারে।

১-২ মাস বয়সী শিশুদের বিকাশ  

এক মাসের বেবি

  • হাত মুখের কাছে আনা
  • ৮ থেকে ১২ ইঞ্চি দূরের বস্তুগুলোতে ফোকাস করা
  • হঠাৎ আওয়াজে চমকে যাওয়া
  • চোখের দৃষ্টি কোনো জিনিসের উপর স্থির করে রাখা
  • হাত-পা সমানভাবে নাড়ানো
  • মাথা একদিকে ফিরিয়ে চিত হয়ে শোয়া

৬-১২ মাস বয়সী শিশুদের বিকাশ

৬ মাসে শিশুর ডেভেলপমেন্ট

১) উপুড় হওয়া ও সাপোর্ট দিয়ে বসা

এই বয়সে শিশুরা চিত থেকে উপুড় বা উপুড় থেকে চিত হতে পারে। পেছনে সাপোর্ট বা ঠেকা দিয়ে অল্প সময়ের জন্য বসতে পারে। কিছু বাচ্চা সাপোর্ট ছাড়াও বসতে পারবে, তবে এতে ৯ মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। তাই না বসতে পারলেও চিন্তার কিছু নেই।

২) পায়ের উপর ভর নিতে পারা 

এই বয়সের শিশুকে উঁচু করে ধরলে পায়ে কিছু ভার নিতে পারে। সে তার নাগালের বাইরের জিনিস পেতে চাইবে, কোনো কিছু ধরে দাঁড়াতে চাইবে।

৩) কিছু অনুভূতি প্রকাশ করা

বিভিন্ন শব্দ করে সে তার খুশি বা কষ্ট প্রকাশ করবে। আবার রেগেও যেতে পারে! হাত উঁচু করে কোলে উঠতে চাইবে। নিজের নাম বুঝতে পারবে, কেউ তার নাম ধরে ডাকলে সেদিকে তাকাবে। ওহ, আহ বা বিভিন্ন ধরনের সাউন্ড (বাবলিং) করতে পারবে।

৪) হাতের জিনিস মুখে দেওয়া

৬-১২ মাস বয়সী শিশুদের বিকাশ

এই বয়সের বাচ্চারা হাতের জিনিস মুখে দিবে, এক হাত থেকে অন্য হাতে নিবে। নতুন জিনিসে কৌতুহল দেখাবে এবং হাতে ধরেই আগে মুখে দেওয়ার চেষ্টা করবে।

৫) পরিচিতজনের চিনতে পারা

মা-বাবা বা পরিবারের অন্যান্যদের সে চিনতে শিখে। বাইরের লোক বা অপরিচিতদের দেখলে ভয় পাবে এবং কান্নাও করতে পারে। সাধারণত এই বয়সে বাচ্চারা কোনো কমান্ড বা নির্দেশ বুঝে না, তবে আপনি তার সাথে খেললে বা ছড়া শোনালে সে হাসবে।

৯ মাসে শিশুর ডেভেলপমেন্ট

১) সাপোর্ট ছাড়াই বসতে পারা

সাধারণত ৯ মাসের মধ্যেই শিশুরা একা একা বসতে শিখে যায় এবং বিছানায় রোলিং করতে পারে। শোয়া থেকে বসার অবস্থানে যেতে পারাটাও এই বয়সের মাইলস্টোন।

২) হামাগুড়ি দেওয়া

এই বয়সে বাচ্চারা হামাগুড়ি দেওয়া এবং কোনো কিছু ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে শিখে। তবে অনেক বাচ্চারা হামাগুড়ি দেয় না, একবারে হাঁটা শিখে ফেলে। একেক বাচ্চার ডেভেলপমেন্ট একেকভাবে হয়।

৩) হাত দিয়ে ইশারা করা

এই বয়সের বাচ্চারা হাত দিয়ে ইশারা করতে পারে। তর্জনী ও বুড়া আঙুল দিয়ে কোনো জিনিস আঁকড়ে ধরতে পারে। খেলনা এক হাত থেকে আরেক হাতে নেয়। কালারফুল জিনিস হাত বাড়িয়ে ধরতে চায়।

৪) ছোট্ট ছোট্ট শব্দ বলা শুরু করা

মা, বাবা, মামা, দাদা এই ধরনের ছোট পরিপূর্ণ শব্দ বলা শুরু করবে বা বলার চেষ্টা করবে।

১২ মাসে শিশুর ডেভেলপমেন্ট

১) হাঁটতে শেখা

কোনো কিছু না ধরে কয়েক সেকেন্ড দাঁড়াতে পারবে। সাধারণত এই বয়সের শিশুরা হাত ধরে হাঁটতে পারে, অনেক বাচ্চারা হাঁটা শিখেও যায়। তবে না হাঁটলে চিন্তার কিছু নেই। ১৫ মাসের মধ্যে বাচ্চারা ভালোভাবে হাঁটা শিখে যায়।

২) নির্দেশ বুঝতে পারা 

এই বয়সে বাচ্চারা সাধারণ নির্দেশগুলো বুঝতে শিখে যায়। কোনো শব্দ বললে সেটা সে অনুকরণ করতে চাইবে। কোন জিনিস দিয়ে কী করে, সেটাও বুঝে যায়। যেমন- স্পুন দিয়ে খাবার খাওয়া, ফিডারে দুধ খাওয়া, চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ানো, এই ছোট খাটো বিষয়গুলো বুঝতে পারে। সে তার নিজস্ব এক্সপ্রেশনও দিতে পারবে।

১ বছর বয়সী বাচ্চা

৩) মাথা নাড়িয়ে ‘না’ বলা 

১ বছর বয়সী বাচ্চারা মাথা নাড়িয়ে ‘না’ বলা শিখে যায়, হাত দিয়ে টাটা দেয়। এই সময়ে হাতে বেশ দক্ষতা আসে। সে একা একা কোনো পাত্রে জিনিস রাখতে ও বের করতে পারবে।

এছাড়াও এক বছরে বাচ্চাদের কয়েকটা দাঁত উঠে যায় বা দাঁত ওঠা শুরু হয়। এই সময়ে তার সব বিষয়েই অনেক কৌতুহল থাকে। নতুন কিছু দেখলে হাত ও পা ব্যবহার করে সেটার দিকে আগাতে চায়। অনেক বেবিরা এই বয়সে কয়েকটি অর্থপূর্ণ শব্দ বলা শিখে যায়।

তো এই ছিলো ৬-১২ মাস বয়সী শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশের ধাপ। তবে যারা প্রিম্যাচিউর বেবি তাদের ক্ষেত্রে এই মাইলস্টোনগুলো ছুঁতে একটু ডিলে হতে পারে। অথবা জেনেটিক্যাল ইস্যু, অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে বাচ্চাদের এই ডেভেলপমেন্ট স্টেজে একটু লেইট হতে পারে। যেমন অনেক স্বাভাবিক বাচ্চাও ১৬ মাসে পরিপূর্ণভাবে হাঁটা শিখে। তবে যদি আপনার বাচ্চার আচরণে অস্বাভাবিক কিছু দেখেন বা বয়স অনুযায়ী কোনো মাইলফলকে সে না পৌঁছে, তাহলে দেরি না করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

 

ছবি- সাজগোজ, সাটারস্টক

The post ৬-১২ মাস বয়সী শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশের ধাপ appeared first on Shajgoj.



from Shajgoj https://ift.tt/6x8j0lz
Munia

Comments

Popular posts from this blog

রেগুলার ব্রা vs পুশ-আপ ব্রা | সঠিক ইনার ওয়্যার কীভাবে সিলেক্ট করবেন?

রেগুলার ব্রা আর পুশ-আপ ব্রা, এই দু’টার মধ্যে আসলে পার্থক্য কী আর কখন কোনটা ইউজ করতে হবে, এই বিষয়গুলো আমাদের অনেকেরই অজানা। আমাদের অ্যাকটিভিটি আর আউটফিটের সাথে ইনার ওয়্যারেও ভ্যারিয়েশন আসে। যেমন সকালে ঘুম থেকে উঠে ওয়ার্ক আউট করছি, এরপর ভার্সিটি বা অফিসে যাচ্ছি, সন্ধ্যায় পার্টি অ্যাটেন্ড করছি। সব সময় কি আমরা সেইম ব্রা পরি? না তো! শাড়ি পরলে এক ধরনের ব্রা পরি, জিমে গেলে অন্য ধরনের ব্রা পরি, বাসায় থাকলে আবার আরেক রকম! কখন কোন ব্রা পরা উচিত বা কোন ড্রেসের সাথে কোনটা মানাবে এই বিষয়গুলো নিয়ে অনেকেরই কনফিউশন আছে। এই বিষয়গুলো এখনও অনেকের কাছেই ট্যাবু। দিন বদলাচ্ছে, এই সামাজিক ট্যাবু থেকে বেরিয়ে আসতে হবে সবাইকে। লঞ্জেরি মেয়েদের জন্য বেসিক একটি জিনিস। তাই লঞ্জেরির ক্যাটাগরিটা আমাদের জেনে রাখা উচিত। পুশ-আপ ব্রা কেন ইউজ করে, এটাই এখনও অনেক মেয়েরা জানে না! রেগুলার ব্রা এর সাথে সাথে নিজের কালেকশনে পুশ-আপ ব্রা কেন রাখা উচিত, সেটা কিন্তু অনেকে বুঝতে পারে না। চলুন এই কনফিউশনগুলো আজ দূর করা যাক। রেগুলার ব্রা vs পুশ-আপ ব্রা    বেসিক রেগুলার ব্রা-এর ক্ষেত্রে ফেব্রিক ম্যাটেরিয়াল ও কমফোর্টের বিষ...

বিবি ক্রিম vs সিসি ক্রিম | স্কিন টাইপ অনুযায়ী কোনটি আপনার জন্য স্যুইটেবল?

ন্যাচারাল মেকআপ লুকের জন্য এখন বিবি ক্রিম ও সিসি ক্রিম বেশ জনপ্রিয়। পার্টি মেকআপ বা ফুল কভারেজ মেকআপের ক্ষেত্রে ফাউন্ডেশন ইউজ করা হয়। কিন্তু যারা রেগুলার হালকা মেকআপ করে বাইরে বের হন, তাদের জন্য বেস্ট অপশন হচ্ছে BB বা CC ক্রিম । কিন্তু আমরা অনেকেই বুঝতে পারি না যে স্কিন টাইপ ও কনসার্ন অনুযায়ী কীভাবে রাইট প্রোডাক্টটি সিলেক্ট করতে হবে। এই দু’টি মেকআপ প্রোডাক্টের বেনিফিট বা কার্যকারিতা নিয়ে আজকের ফিচার। এগুলোর মধ্যে বেসিক ডিফারেন্সটা আসলে কোথায়, সেটাও জানা হয়ে যাবে। বিবি ক্রিম BB (Beauty Balm, Blemish Balm) ক্রিম স্কিনকে ইভেন টোনড করে এবং ব্লেমিশ হাইড করে ফ্ললেস লুক দেয় নিমিষেই। এতে স্কিন ময়েশ্চারাইজিং ও হাইড্রেটিং এলিমেন্টস থাকে, যার কারণে ড্রাই বা নরমাল স্কিনের জন্য এটি একদম পারফেক্ট। এর টেক্সচার ফাউন্ডেশনের থেকে লাইট, তাই কভারেজটাও হয় একদম ন্যাচারাল। মানে একদমই হেভি ফিল হয় না, আর স্কিনটাও পিকচার পারফেক্ট দেখায়। অনেক বিবি ক্রিমে সান প্রোটেকশন ফ্যাক্টর বা SPF থাকে। সিসি ক্রিম CC (Color Corrector, Complexion Corrector) ক্রিমের ফর্মুলা লাইট ওয়েট ও লং লাস্টিং। ম্যাট ফর্মুলার হওয়াতে অয়েল...

লো পোরোসিটি চুল | কীভাবে চিনবেন এবং সঠিক যত্ন নিবেন?

একরাশ সুন্দর ও ঝলমলে চুল কে না চায়? কিন্তু অনেক সময় সঠিক যত্নের অভাবে সুন্দর চুলগুলো দিন দিন নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ে। চুলের যত্নের ক্ষেত্রে আমাদের সবচেয়ে সবচেয়ে বড় ভুল হলো পোরোসিটি না বুঝে হেয়ার কেয়ার করা। এতে করে চুল আরো ড্যামেজ হওয়ার চান্স থাকে। আজকের ফিচারটি মূলত লো পোরোসিটি হেয়ার কেয়ার নিয়ে। লো পোরোসিটি চুল কীভাবে বুঝবো, কীভাবে যত্ন নিতে হবে, কী ব্যবহার করা যাবে ও যাবেনা ইত্যাদি বিস্তারিত জানবো আজকের ফিচারে। লো পোরোসিটি বলতে কী বোঝানো হয়? পোরোসিটি শব্দের বাংলা অর্থ হচ্ছে ছিদ্র। ত্বকে যেমন অসংখ্য পোর বা ছিদ্র থাকে, চুলের ক্ষেত্রেও কিন্তু তাই রয়েছে। অর্থাৎ প্রতিটি চুলে অসংখ্য ছিদ্র বিদ্যমান, যার মাধ্যমে চুলে আর্দ্রতা প্রবেশ করে এবং চুল আর্দ্রতা ধরে রাখার চেষ্টা করে। একেই হেয়ার পোরোসিটি বলে। পোরোসিটি ৩ রকম, হাই, মিডিয়াম ও লো। এই হেয়ার পোরোসিটির মাত্রা প্রত্যেক মানুষের ক্ষেত্রে আলাদা হয়ে থাকে। লো পোরোসিটির চুলগুলো কম ছিদ্র সম্পন্ন হয়ে থাকে। লো পোরোসিটি চুলের কিউটিকল লেয়ার খুব শক্ত ভাবে সংযুক্ত থাকে। যার ফলে এ ধরনের চুল আর্দ্রতা সহজে গ্রহণ করতে পারেনা, তবে একবার আর্দ্রতা গ্রহণ করলে এ ধরনের...