Skip to main content

কাঁধ নাড়াতে অসহ্য ব্যথা! ফ্রোজেন শোল্ডার রোগে ভুগছেন না তো?

রওশন আরা বেশ কিছুদিন ধরে কাঁধের ব্যথায় ভুগছেন। ব্যথার মেডিসিন খেয়েছেন, এতে ব্যথা কিছুটা কমে বটে কিন্তু পুরোপুরি সেরে যায় না। হাত নাড়াতে গেলেই ব্যথা চরমে ওঠে, মনে হয় ব্যথায় দম আটকে আসবে। এক কথায়, কাঁধ নাড়াতে অসহ্য ব্যথা হয়। চিকিৎসক বলেছেন এই রোগের নাম ফ্রোজেন শোল্ডার। কিন্তু এই রোগটি কেন হয় আর কোন বয়সীরা এই সমস্যায় ভোগেন? এর কি কোনো চিকিৎসা বা প্রতিরোধ করার উপায় আছে? ফ্রোজেন শোল্ডার নিয়ে এমন বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর চলুন জেনে নেই ফিজিওথেরাপি কনসালট্যান্ট এর কাছ থেকে।

ফ্রোজেন শোল্ডার কী?

শোল্ডার ফ্রোজেন হয়ে যাওয়া এমন একটি রোগ, যেটা শোল্ডার জয়েন্টের ব্যথা এবং জয়েন্ট নড়াচড়া করার সীমাবদ্ধতার সৃষ্টি করে। প্রাথমিক অবস্থায় ব্যথা অল্প থাকে, ধীরে ধীরে ব্যথা বাড়ে এবং জয়েন্টের মুভমেন্ট করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। এক কথায়, কাঁধ নাড়াতে অসহ্য ব্যথা হয়। একে সহজ ভাষায় বলা যায়, হাতের সাথে ঘাড়ের জয়েন্ট শক্ত হয়ে যাওয়া। এটি শোল্ডার জয়েন্টের প্রদাহজনিত রোগ। এ ক্ষেত্রে জয়েন্টের মধ্যকার সাইনোভিয়াল ফ্লুইড নামক এক ধরনের তরল পদার্থ কমে যেতে থাকে। ফলে শোল্ডার জয়েন্ট ধীরে ধীরে শক্ত হয়ে যেতে থাকে। ফ্রোজেন শোল্ডারকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় ‘শোল্ডার অ্যাডহেসিভ ক্যাপসুলাইটিস’ বলা হয়।

ফ্রোজেন শোল্ডার

কাদের হয়?

১। এই রোগটি সাধারণত ৪০-৬০ বছর বয়সে হয়ে থাকে।

২। পুরুষের চেয়ে নারীরা এই রোগে বেশি ভোগেন।

৩। কিছু কিছু রোগ (যেমনঃ স্ট্রোক, সার্জারি) অথবা শোল্ডার জয়েন্টে আঘাত পেলে এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

কাঁধ নাড়াতে অসহ্য ব্যথা বা ফ্রোজেন শোল্ডার কেন হয়?

এই রোগের প্রধান কারণ এখন পর্যন্ত জানা যায়নি। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। যেমন- হাতের জয়েন্টে আঘাত পেলে, কোনো কারণে জয়েন্ট অনেকদিন না নাড়ানোর কারণে জয়েন্ট শক্ত হয়ে গেলে এ রোগ দেখা দেয়। এছাড়া দেহে কিছু কিছু রোগের অবস্থানের কারণে ফ্রোজেন শোল্ডার হতে পারে। যেমন- ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের মাঝে শতকরা ১০-২০ জন এই রোগে ভোগেন। অন্যান্য রোগের মধ্যে হৃদরোগ, থাইরয়েড, পারকিনসন এবং হাতের অপারেশন হয়ে যাওয়ার পর রোগীদেরও আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

চিকিৎসকেরা মনে করেন দীর্ঘদিন কাজ না করলে একসময় কাঁধের অস্থিসন্ধি অর্থাৎ জয়েন্টে জড়তার কারণে ফ্রোজেন শোল্ডার হতে পারে। এছাড়াও কাঁধের অস্থিসন্ধিতে প্রচণ্ড চাপ পড়লে এ রোগ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই কখনোই খুব বেশি ভারী জিনিস তোলা ঠিক নয়। কাঁধ প্রচণ্ড মোচড় খায়, এমনভাবে কাঁধ নাড়িয়ে কোনো কাজ করা উচিত নয়। যদি আগে কখনো কাঁধে চোট পেয়ে থাকেন কিন্তু সঠিক চিকিৎসা করানো হয়নি, এমন হলেও ফ্রোজেন শোল্ডারের সমস্যা হতে পারে। এছাড়া কাজের চাপ, ঘুমের অভাব, শরীরচর্চা না করা এগুলোর কোনো একটি কারণেও রোগী এই ব্যথায় ভুগতে পারেন।

ঘাড় নাড়াতে অসহ্য ব্যথা

উপসর্গ

  • হাতের সাথের ঘাড়ের জয়েন্টে ব্যথা
  • জয়েন্ট শক্ত হয়ে যাওয়া
  • জয়েন্ট নাড়ানোর ক্ষমতা কমে যাওয়া
  • আক্রান্ত পাশে শুতে না পারা
  • হাতে দুর্বলতা চলে আসা ইত্যাদি

চিকিৎসা ও ফিজিওথেরাপি 

ফ্রোজেন শোল্ডার রোগীর কাছে ব্যথা প্রধান সমস্যা মনে হলেও, তার আসল সমস্যা হলো জয়েন্ট শক্ত হয়ে যাওয়া। রোগী যত ব্যথার ভয় করে হাত নাড়ানো বন্ধ রাখবে, তার জয়েন্ট তত বেশি শক্ত হয়ে যাবে। তাই রোগীকে বোঝাতে হবে, ব্যথার ঔষধের চেয়ে হাত নাড়ানোর চিকিৎসা করা বেশি জরুরি। এ ক্ষেত্রে রোগীর ব্যথা নিয়ন্ত্রণে রেখে হাত নাড়ানোর ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার একমাত্র চিকিৎসা পদ্ধতি হলো সঠিক ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা।

ফিজিওথেরাপিস্ট রোগীর রোগ বর্ণনা, ফিজিক্যাল টেস্ট, ফিজিওথেরাপিউটিক স্পেশাল টেস্ট এবং রেডিওলজিক্যাল টেস্ট এর মাধ্যমে রোগীর জয়েন্টের সমস্যাসমূহ নির্ণয় করে থাকেন। এরপর রোগীর সমস্যা অনুযায়ী চিকিৎসার পরিকল্পনা বা ট্রিটমেন্ট প্ল্যান করে এবং সেই প্ল্যান অনুযায়ী নিচের পদ্ধতিতে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা প্রদান করেন।

  • ম্যানুয়াল থেরাপি, মোবিলাইজেশন, মুভমেন্ট উইথ মোবিলাইজেশন, থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ ইত্যাদি
  • ইলেকট্রোথেরাপি বা অত্যাধুনিক মেশিনের সাহায্যে চিকিৎসা যেমন – আইআরআর, ইউএসটি ইত্যাদি

রোগীর জয়েন্টের সমস্যা দূর করে হাত নাড়ানোর ক্ষমতা ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার ভূমিকা অপরিসীম। ফ্রোজেন শোল্ডার ভালো হতে এক বছর বা তার বেশি সময় লাগতে পারে। যদি চিকিৎসায় কাজ না হয় তাহলে কখনো কখনো সার্জারি করার প্রয়োজন হয়।

কাঁধে ব্যথা হলে ফিজিওথেরাপিস্ট এর কাছে যাওয়া জরুরি

প্রতিরোধ করার উপায় কী?

কাঁধে আঘাত বা অপারেশনের পরে হালকা ব্যায়াম ও স্ট্রেচিংয়ের মাধ্যমে ফ্রোজেন শোল্ডার প্রতিরোধ করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে ধৈর্য্য ধরতে হবে এবং চিকিৎসকের উপদেশ মেনে চলতে হবে। মনে রাখতে হবে, সঠিক নিয়মে ব্যায়াম করলে সময়ের সাথে সাথে ফ্রোজেন শোল্ডার ভালো হতে থাকে। ফ্রোজেন শোল্ডারের সমস্যা যেন না হয় সেজন্য আগে থেকেই প্রতিরোধ করা জরুরি। কাঁধে কোনো কারণে চোট পেলে অবশ্যই সঠিক চিকিৎসা করাতে হবে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। এছাড়া নিয়মিত ব্যায়াম করলেও উপকার মিলবে।

কাঁধ নাড়াতে অসহ্য ব্যথা হলে আমাদের ঘাবড়ে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। তবে ভয় না পেয়ে এ সমস্যা দেখা দিলে অপেক্ষা না করে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। নিয়মিত ওষুধ সেবন ও ব্যায়াম করলে সমস্যা অনেকটাই কমে আসে। সেই সাথে পালন করতে হবে হেলদি লাইফস্টাইলও। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।

SHOP AT SHAJGOJ

     

    ছবিঃ সাজগোজ, সাটারস্টক

    The post কাঁধ নাড়াতে অসহ্য ব্যথা! ফ্রোজেন শোল্ডার রোগে ভুগছেন না তো? appeared first on Shajgoj.



    from Shajgoj https://ift.tt/gJ5lHz1
    Arfatun Nabila

    Comments

    Popular posts from this blog

    Dr. Fariah Sharmeen - Woman Oncology Specialist

    Dr. Fariah Sharmeen Specialty - Associate Consultant, Oncology Degree - MBBS, FCPS (Radiotherapy) Chamber: SQUARE Hospitals Ltd. Dhaka Address: 18/F Bir Uttam Qazi Nuruzzaman Sarak, West Panthapath, Dhaka - 1205, Bangladesh Call For Appointment 10616 Call Now About: Dr. Fariah Sharmeen successfully completed her MBBS from Cumilla Medical College, and subsequently completed a one-year internship at BIRDEM Hospital, Dhaka. After completing of the internship, she started her post-graduate training in Medical Oncology at the National Institute of Cancer Research & Hospital. She started her fellowship in Radiotherapy in 2010. She completed 4 years of training at the National Institute of Cancer Research & Hospital on External Beam Radiotherapy Planning and Brachytherapy. She achieved FCPS in Radiotherapy from the Bangladesh College of Physicians & Surgeons (BCPS) in 2015. She has obtained several hands-on pieces of training on Head - Neck, Lung, Genitourina...

    রেগুলার ব্রা vs পুশ-আপ ব্রা | সঠিক ইনার ওয়্যার কীভাবে সিলেক্ট করবেন?

    রেগুলার ব্রা আর পুশ-আপ ব্রা, এই দু’টার মধ্যে আসলে পার্থক্য কী আর কখন কোনটা ইউজ করতে হবে, এই বিষয়গুলো আমাদের অনেকেরই অজানা। আমাদের অ্যাকটিভিটি আর আউটফিটের সাথে ইনার ওয়্যারেও ভ্যারিয়েশন আসে। যেমন সকালে ঘুম থেকে উঠে ওয়ার্ক আউট করছি, এরপর ভার্সিটি বা অফিসে যাচ্ছি, সন্ধ্যায় পার্টি অ্যাটেন্ড করছি। সব সময় কি আমরা সেইম ব্রা পরি? না তো! শাড়ি পরলে এক ধরনের ব্রা পরি, জিমে গেলে অন্য ধরনের ব্রা পরি, বাসায় থাকলে আবার আরেক রকম! কখন কোন ব্রা পরা উচিত বা কোন ড্রেসের সাথে কোনটা মানাবে এই বিষয়গুলো নিয়ে অনেকেরই কনফিউশন আছে। এই বিষয়গুলো এখনও অনেকের কাছেই ট্যাবু। দিন বদলাচ্ছে, এই সামাজিক ট্যাবু থেকে বেরিয়ে আসতে হবে সবাইকে। লঞ্জেরি মেয়েদের জন্য বেসিক একটি জিনিস। তাই লঞ্জেরির ক্যাটাগরিটা আমাদের জেনে রাখা উচিত। পুশ-আপ ব্রা কেন ইউজ করে, এটাই এখনও অনেক মেয়েরা জানে না! রেগুলার ব্রা এর সাথে সাথে নিজের কালেকশনে পুশ-আপ ব্রা কেন রাখা উচিত, সেটা কিন্তু অনেকে বুঝতে পারে না। চলুন এই কনফিউশনগুলো আজ দূর করা যাক। রেগুলার ব্রা vs পুশ-আপ ব্রা    বেসিক রেগুলার ব্রা-এর ক্ষেত্রে ফেব্রিক ম্যাটেরিয়াল ও কমফোর্টের বিষ...

    লো পোরোসিটি চুল | কীভাবে চিনবেন এবং সঠিক যত্ন নিবেন?

    একরাশ সুন্দর ও ঝলমলে চুল কে না চায়? কিন্তু অনেক সময় সঠিক যত্নের অভাবে সুন্দর চুলগুলো দিন দিন নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ে। চুলের যত্নের ক্ষেত্রে আমাদের সবচেয়ে সবচেয়ে বড় ভুল হলো পোরোসিটি না বুঝে হেয়ার কেয়ার করা। এতে করে চুল আরো ড্যামেজ হওয়ার চান্স থাকে। আজকের ফিচারটি মূলত লো পোরোসিটি হেয়ার কেয়ার নিয়ে। লো পোরোসিটি চুল কীভাবে বুঝবো, কীভাবে যত্ন নিতে হবে, কী ব্যবহার করা যাবে ও যাবেনা ইত্যাদি বিস্তারিত জানবো আজকের ফিচারে। লো পোরোসিটি বলতে কী বোঝানো হয়? পোরোসিটি শব্দের বাংলা অর্থ হচ্ছে ছিদ্র। ত্বকে যেমন অসংখ্য পোর বা ছিদ্র থাকে, চুলের ক্ষেত্রেও কিন্তু তাই রয়েছে। অর্থাৎ প্রতিটি চুলে অসংখ্য ছিদ্র বিদ্যমান, যার মাধ্যমে চুলে আর্দ্রতা প্রবেশ করে এবং চুল আর্দ্রতা ধরে রাখার চেষ্টা করে। একেই হেয়ার পোরোসিটি বলে। পোরোসিটি ৩ রকম, হাই, মিডিয়াম ও লো। এই হেয়ার পোরোসিটির মাত্রা প্রত্যেক মানুষের ক্ষেত্রে আলাদা হয়ে থাকে। লো পোরোসিটির চুলগুলো কম ছিদ্র সম্পন্ন হয়ে থাকে। লো পোরোসিটি চুলের কিউটিকল লেয়ার খুব শক্ত ভাবে সংযুক্ত থাকে। যার ফলে এ ধরনের চুল আর্দ্রতা সহজে গ্রহণ করতে পারেনা, তবে একবার আর্দ্রতা গ্রহণ করলে এ ধরনের...