২৮ বছর বয়সী সানজানা কিছুদিন ধরেই খেয়াল করছেন তার চেহারার লাবণ্য অনেকটাই কমে গিয়েছে। সেই সাথে হাইপারপিগমেন্টেশন, রিংকেলসও দেখা যাচ্ছে ফেইসে। শুরুতে কিছুটা মন খারাপ হলেও সিদ্ধান্ত নিলেন অ্যান্টি এজিং স্কিনকেয়ার শুরু করার। কিন্তু কীভাবে শুরু করবেন বুঝতে পারছিলেন না। সানজানার মতো এমন কনফিউশন অনেকেরই রয়েছে। সময়মতো স্কিনকেয়ার শুরু করা হয় না বলে স্কিনে অল্প বয়সেই দেখা দেয় এজিং সাইনস। অথচ অল্প কিছু স্টেপ ফলো করলেই এই সমস্যা অনেকটাই কমে আসবে। আজকের আর্টিকেলে জানাবো বিগেইনাররা অ্যান্টি এজিং স্কিনকেয়ার কীভাবে শুরু করবেন সে বিষয়ে।
এজিং সাইনস কোনগুলো?
বয়সের সাথে সাথে এজিং সাইনস দেখা দিবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু অনেকের স্কিনে প্রিম্যাচিউর এজিং সাইনস দেখা দিতে পারে। এই সাইনগুলো রোধ করতে পারলে এজিং প্রসেস অনেকটাই ডিলে হবে। চলুন জেনে নেই এজিং সাইনগুলো সম্পর্কে-
- স্কিনে রিংকেল বা বলিরেখা দেখা দিলে
- স্কিনের গ্লো হারিয়ে গেলে
- স্কিন অতিরিক্ত ড্রাই হয়ে গেলে
- হাইপারপিগমেন্টেশন ও ডার্ক স্পট দেখা দিলে
- স্কিন টেক্সচারে পরিবর্তন হলে
- পোরস ভিজিবল হলে
কোন কারণে এজিং সাইনস দেখা দেয়?
- অতিরিক্ত সূর্যের সংস্পর্শ
- ধূমপান
- স্ট্রেস
- অপর্যাপ্ত ঘুম
- অতিরিক্ত ঠান্ডা আবহাওয়ায় থাকা
- সঠিকভাবে স্কিনের যত্ন না নেওয়া ইত্যাদি
বিগেইনাররা অ্যান্টি এজিং স্কিনকেয়ার কবে থেকে শুরু করবেন?
এজিং সাইনস দেখা দেয়ার আগে আমরা কয়জন সচেতন থাকি নিজেদের স্কিন নিয়ে? ভাবি, বয়স হলে তো স্কিনে রিংকেলস পড়বেই। অনেক অ্যান্টি এজিং ক্রিম আছে এসব সাইনস রিমুভ করার জন্য। রিংকেলস দেখা দিলে তখনই না হয় ক্রিম ইউজ করা শুরু করবো! এ ধারণাগুলোর কারণেই আসলে স্কিনের পিগমেন্টেশন, রিংকেলস, ফাইন লাইনস সহজে রিমুভ হয় না। তাই সময় থাকতেই সচেতন হওয়া জরুরি।
আমাদের স্কিনের টেক্সচার ধরে রাখে কোলাজেন। এছাড়া ত্বকে বলিরেখা পড়া রোধ করতে, চুল ও নখকে মজবুত করতে হেল্প করে এই কোলাজেন। ২০ বছরের পর থেকে এর প্রোডাকশন কমে যায়। কারও ক্ষেত্রে এই সময় কম বা বেশি হতে পারে। তাই ২২-২৫ বছর বয়সের মধ্যে অ্যান্টি এজিং প্রোডাক্টগুলো স্কিন কেয়ার রুটিনে অ্যাড করে ফেলা উচিত। অনেকে বলেন অ্যান্টি এজিং স্কিন কেয়ার রুটিন শুরু করা উচিত ৩০-৪০ বছর বয়সে। কিন্তু এ বয়সে শুরু করলে ভালো ফলাফল নাও পেতে পারেন। তাই যত দ্রুত শুরু করা যাবে, ততই স্কিনের জন্য সুফল মিলবে।
এজিং সাইনস প্রতিরোধের প্রথম ধাপ
এজিং সাইনস একবার দেখা দেয়া শুরু করলে দূর করা কঠিন। ভালো হয়, যদি প্রথম থেকেই প্রতিরোধ করা যায়। এজিং সাইনস প্রতিরোধের প্রথম ধাপ হিসাবে সানস্ক্রিন ব্যবহার করা শুরু করুন। সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মির হাত থেকে বাঁচার জন্য প্রতিদিন সানস্ক্রিন ইউজ করা উচিত। স্কিন টাইপ বুঝে সানস্ক্রিন অ্যাপ্লাই করুন। চেষ্টা করবেন SPF 30 বা SPF 50 যুক্ত সানস্ক্রিন কিনতে। এতে লম্বা সময় পর্যন্ত স্কিন প্রোটেকশন পাবে। ও হ্যাঁ, সানস্ক্রিন রি অ্যাপ্লাই করতে ভুলবেন না কিন্তু!
বিগেইনারদের জন্য অ্যান্টি এজিং স্কিন কেয়ার রুটিন
অনেকেই ভাবেন অ্যান্টি এজিং স্কিনকেয়ার শুরু করবেন, কিন্তু কোন প্রসেস থেকে শুরু করবেন বুঝতে পারেন না। একদম যারা বিগেইনার তারা অ্যান্টি এজিং স্কিনকেয়ার রুটিনে এই ধাপগুলো ফলো করতে পারেন।
১) ক্লেনজিং
স্কিন কেয়ারের প্রথম ধাপ ক্লেনজিং। আমাদের স্কিনে জমে থাকা ঘাম কিংবা ডার্ট রিমুভ করার জন্য অবশ্যই ভালো মানের ক্লেনজার ইউজ করতে হবে। সকালে বাইরে যাওয়ার আগে সানস্ক্রিন বা মেকআপ অ্যাপ্লাই করা হয়। রাতে ঘুমানোর আগে এগুলো স্কিন থেকে প্রোপারলি ক্লিন না করলে পোরস ক্লগ হয়ে যেতে পারে। এছাড়া অল্প সময়ে স্কিনে এজিং সাইনস যেন না দেখা যায়, সেজন্য প্রোপার ওয়েতে ক্লেনজিং শেষে বাকি ধাপগুলোও শুরু করতে হবে।
ক্লেনজার বাছাই করার সময় খেয়াল রাখুন সেগুলোতে অ্যান্টি এজিং ইনগ্রেডিয়েন্টস যেমন- গ্রিন টি, অ্যালোভেরা, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই-সহ অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান, হায়ালুরোনিক অ্যাসিড, গ্লিসারিন, নিয়াসিনামাইড ইত্যাদি আছে কিনা। এই উপাদানগুলো এজিং সাইনস কমিয়ে ত্বককে সুরক্ষা দেয়। সাধারণত আমরা সবাই স্কিনের ধরন অনুযায়ী ক্লেনজার ইউজ করি। যদি আপনার স্কিন কেয়ার রুটিনে অয়েল বেইজড ক্লেনজার থাকে, তাহলে এর পর অবশ্যই ফোম বা জেল বেইজড ক্লেনজার ইউজ করতে হবে। অর্থাৎ ডাবল ক্লেনজিং মেথড ফলো করতে হবে।
২) টোনিং
স্কিন কেয়ার রুটিনে টোনিং বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ। অন্যান্য স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট যেন স্কিনে ভালোভাবে অ্যাবজর্ব হতে পারে সেজন্য স্কিনকে প্রিপেয়ার্ড করে টোনার। টোনিং এর কারণে স্কিনের আরও যে বেনিফিট হয়-
- পিএইচ লেভেল ব্যালেন্স করে
- স্কিনের ব্যারিয়ার ও টেক্সচার ঠিক রাখে
- রাফনেস রিপেয়ার করে এবং স্কিনের ইলাস্টিসিটি ধরে রাখে
- পোরস টাইট করে এবং ইমপিওরিটিস দূর করে
যে বিগেইনাররা অ্যান্টি এজিং স্কিনকেয়ার রুটিনে টোনার অ্যাড করতে চাচ্ছেন তাদের জন্য আমি কিছু প্রোডাক্ট সাজেস্ট করছি-
- সব ধরনের স্কিনের জন্য- Rajkonna All Purpose Toner, Boots Essentials Cucumber Facial Toner
- ড্রাই স্কিনের জন্য- Coxir Ultra Hyaluronic Toner
- অয়েলি ও একনে প্রন স্কিনের জন্য- Skinpro Acne Clearing Toner
৩) সিরাম অ্যাপ্লাই
বাজারে বিভিন্ন ধরনের সিরাম পাওয়া যায়, এর মধ্যে এজিং প্রতিরোধকারী কিছু সিরাম রয়েছে। এই সিরামগুলো নিয়মিত ব্যবহার করা উচিত। যারা অ্যান্টি এজিং স্কিনকেয়ার শুরু করতে চাচ্ছেন তাদের জন্য যে ইনগ্রেডিয়েন্টযুক্ত সিরাম সেইফ হবে-
ভিটামিন সি
অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ভিটামিন সি এজিং সাইনস কমাতে বেশ হেল্পফুল। এই উপাদানটি স্কিনের ভেতর থেকে কাজ করে স্কিনে হেলদি গ্লো দেয়, ত্বক সতেজ রাখে, স্কিনের রেডনেস কমায় এবং ইভেনটোনড স্কিন পেতে হেল্প করে। স্কিনে মেলানিন প্রোডাকশন বেড়ে গেলে সানস্পট, এজিং স্পট, মেছতার মতো সমস্যা দেখা যায়। আবার একনে সেরে গেলেও দাগ রয়ে যায়। ভিটামিন সি এসব সমস্যা সমাধানে কাজ করে দ্রুত।
রেটিনয়েড
এজিং রোধ করতে অনেক বেশি কার্যকর রেটিনয়েড। এটি স্কিনের কোলাজেন বৃদ্ধি করে এবং স্কিনের রিংকেলস কমায়। তবে অনেকের রেটিনয়েড ব্যবহারে স্কিনে জ্বালাপোড়া দেখা দেয়। তাই রেটিনয়েড ব্যবহার করার আগে ভালো করে লেবেল পড়ে নিবেন এবং ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই প্যাচ টেস্ট করে নিবেন।
ব্যবহারের নিয়ম-
রেটিনয়েড প্রতিদিন ব্যবহার না করে, ধীরে ধীরে এর ডোজ বাড়াতে পারেন। যেমন- প্রথম সপ্তাহে একবার, দ্বিতীয় সপ্তাহে দুইবার, তৃতীয় সপ্তাহে তিনবার। এভাবে ধীরে ধীরে রেটিনয়েডের ডোজ বাড়াতে পারেন। এতে আস্তে আস্তে আপনার স্কিন এই সিরামে অভ্যস্ত হয়ে পড়বে। ভালো ফলাফলের জন্য রেটিনয়েড রাতে ব্যবহার করা উচিত। পরের দিন সূর্যের আলোয় যাওয়ার আগে অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে।
৪) ময়েশ্চারাইজিং
অ্যান্টি এজিং স্কিনকেয়ার রুটিনে ময়েশ্চারাইজিং স্টেপটিকে একদম অবহেলা করলে চলবে না। বয়সের সাথে সাথে আমাদের স্কিনের ন্যাচারাল সিবাম প্রোডাকশন কমে যায়। যার কারণে স্কিন ড্রাই হতে থাকে। প্রোপার হাইড্রেশনের অভাবে স্কিনে দেখা দেয় ফাইন লাইনস, রিংকেলস, ডার্ক প্যাচসহ নানা সমস্যা। এ প্রবলেমগুলো কমিয়ে স্কিনকে হাইড্রেটেড ও রেডিয়েন্ট রাখতে ইউজ করতে হবে কোলাজেন ও ইলাস্টিন সমৃদ্ধ ময়েশ্চারাইজার।
আরও কিছু টিপস
১। চোখের নিচে যেন ডার্ক সার্কেল, রিংকেলস না পড়ে সেজন্য অ্যান্টি এজিং আই ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন।
২। দিনের বেলায় বাইরে যাওয়ার সময় অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।
৩। বেশি করে পানি পান করুন।
৪। স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন।
৫। সপ্তাহে এক দুইবার ফেইসপ্যাক, মাস্ক ব্যবহার করুন।
অ্যান্টি এজিং স্কিনকেয়ারের প্রতিটি ধাপ মেনে চলা অনেক বেশি ঝামেলার মনে হলে প্রথমে যে কোনো একটি ধাপ দিয়ে শুরু করতে পারেন। ধীরে ধীরে চেষ্টা করুন সবগুলো স্টেপ স্কিনকেয়ার রুটিনে অ্যাড করতে। মনে রাখবেন, রেগুলার স্কিনকেয়ার করলে আজ থেকে ৮-১০ বছর পরও আপনার স্কিন ইয়াংগার লুকিং ও হেলদি থাকবে। স্কিন, হেয়ার ও মেকআপের যে কোনো অথেনটিক প্রোডাক্ট কিনতে পারেন শপ.সাজগোজ.কম অথবা সাজগোজের চারটি ফিজিক্যাল শপ- যমুনা ফিউচার পার্ক, সীমান্ত সম্ভার, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার এবং উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে) থেকে।
ছবিঃ সাজগোজ
The post বিগেইনাররা অ্যান্টি এজিং স্কিনকেয়ার কীভাবে শুরু করবেন? appeared first on Shajgoj.
from Shajgoj https://ift.tt/BYhHcAd
Arfatun Nabila
Comments
Post a Comment