ফ্রিজ! চলার পথে সাংসারিক জীবনে এক আরাধ্য বস্তু। বাস্তবতা, আবহাওয়া সব মিলিয়ে সময়টাই এখন এমন, অনেকেরই সদ্য শুরু করা সংসারে অর্থ জমানো শুরু হয় ফ্রিজকে কেন্দ্র করে। কিছুদিন আগেও আমাদের দেশে ফ্রিজ ছিল বিলাসদ্রব্যের সমান। কিন্তু দিন বদলেছে। আজকাল সুন্দর একটা ফ্রিজ ছাড়া যেনো ঘরের সৌন্দর্যটাই মলিন হয়ে আসে। তবে ফ্রিজ মানেই যে যথেচ্ছ ব্যবহার তা নয়। ঘরের আর সব জিনিসের মতো করেই, ফ্রিজেরও দরকার যত্ন আর উপযুক্ত ব্যবহার। অগোছালো ফ্রিজ কীভাবে গুছিয়ে রাখা যায় তা নিয়ে অনেকেই ভাবনায় পড়েন। কোন শেলফে কোন জিনিস রাখবেন, বক্স বা কন্টেইনার কোনটি ব্যবহার করবেন, ফ্রিজ মানেই এমন অনেকগুলো ছোটখাটো হিসেব। এসব টুকিটাকি বিষয় মাথায় রাখলেই ফ্রিজ গুছিয়ে রাখা মোটেই জটিল মনে হবে না।
অগোছালো ফ্রিজ গুছিয়ে রাখার সহজ কিছু টিপস ও ট্রিকস
১) সঠিক জায়গায় থাকুক সঠিক জিনিস
ফ্রিজ কেনার সময় এর সাথে কিছু ক্যাটালগও দেয়া হয়। তবে সত্যি বলতে সেসব কাগজ নিয়ে আমাদের আগ্রহ বা সময় দুটোই কিছুটা কম থাকে। যার কারণে ফ্রিজ সম্পর্কে দরকারী অনেক তথ্যও জানা হয়ে ওঠে না। অথচ ফ্রিজ ব্যবহার করার শুরুতেই এসব তথ্য জানা জরুরি। যেমন- একেবারেই টপ শেলফ বা দরজার দিকটা ফ্রিজের সবচেয়ে উষ্ণ অংশ। মাঝের বা নিচের শেলফটা অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা। আর সবশেষে থাকা বক্সটা ফ্রিজের সবচেয়ে শীতল অংশ।
এ কারণে মশলা, দুগ্ধজাতীয় যে কোনো জিনিস, ডিম, সেইসাথে বাটার, জেলি কিংবা মধুর মতো খাবার উপরের শেলফে বা দরজার কাছে রাখুন। ফ্রিজের সবচেয়ে নিচের অংশের বক্সটি ব্যবহার করা হয় সবজি জাতীয় পচনশীল খাবারগুলো সংরক্ষণের জন্য। তাই এ ধরনের খাবারগুলো নিচের অংশেই রাখুন। সাধারণ এই বিষয়গুলো মেনে চললে ফ্রিজ গুছিয়ে রাখা বা ব্যবহার করা অনেকখানি সহজ হবে আপনার জন্য। সেইসাথে খাবার ভালো থাকবে বেশিদিন, সেদিক থেকে বাজার খরচেও হবে কিছু সাশ্রয়।
২) প্যাকেটের বদলে কন্টেইনার ব্যবহার
বাজার থেকে ফল কিনে আনার পর আমরা প্রায়ই দুটো কাজ করি। প্রথমত, সরাসরি কাগজের প্যাকেটসহ ফ্রিজে ঢুকিয়ে রাখি। দ্বিতীয়ত, খোলা অবস্থায় রেখে দেই। অনেকে পলিথিনসহ ফ্রিজের ভেতর সব রেখে দেন। এই কাজগুলোর কোনোটাই করা উচিত নয়। ফল, মিষ্টি, ডিম এসব সংরক্ষণ করার সবচেয়ে ভালো উপায় কন্টেইনার বা বক্স ব্যবহার করা। এক্ষেত্রে সাদা বা স্বচ্ছ বক্স ব্যবহার করতে পারেন। এতে ফ্রিজে থাকা বিভিন্ন রঙের জিনিস সহজেই চোখে পড়বে। আর ফ্রিজের ভেতরের জিনিস খুঁজে পাওয়াও সহজ হবে। বিভিন্ন সস বা মেয়োনেজ সংরক্ষণে স্বচ্ছ বোতল ব্যবহার করতে পারেন। তাহলে কোন বোতলে কী রাখা আছে সহজেই চোখে পড়বে।
৩) কন্টেইনারের গায়ে নাম লেখা
স্বচ্ছ কন্টেইনার জোগাড় করার পর সেগুলোতে নাম লিখে রাখতে পারেন। এর জন্য সহজ উপায় হচ্ছে স্টিকার ব্যবহার করা। অনেকেই পার্মানেন্ট মার্কার ব্যবহার করেন। তবে তা সময়ের সাথে সাথে মলিন হয়ে আসে। এতে ফ্রিজের ভেতরে কোন কন্টেইনারে কী রাখা আছে তা নিয়ে কনফিউশন হতে পারে। তাই কন্টেইনারের গায়ে কাগজে নাম লিখে রাখুন। এতে ফ্রিজের কোথায় কী আছে, তা সহজে যেমন খুঁজে পাওয়া যাবে, তেমনি ফ্রিজটাও থাকবে গোছানো।
৪) রঙিন ও পচনশীলন খাবার সামনে রাখুন
ফ্রিজ খোলার পর এলোমেলো দেখলে কিন্তু আপনারও ভালো লাগবে না। তাই ফ্রিজের ভেতরটা সাজাতে পারেন রঙিনভাবে। একেক ফল ও সবজির রঙ একেকরকম হয়। সেগুলো সামনের দিকে রাখলে কালারফুল লাগবে আর দেখতেও ভালো লাগবে। তাছাড়া ‘চোখের আড়াল তো মনের আড়াল’ এ কথা তো আমরা সবাই জানি। তাই পচনশীল খাবারগুলো সামনে রাখলে কত দ্রুত সেগুলো শেষ করতে হবে সেটারও একটা হিসেব থাকবে।
৫) ফল ও সবজির আলাদা শেলফ
সবজি আর ফলের জন্য আলাদা কন্টেইনার না নিয়ে শেলফ আলাদা করে নিন। নিচের শেলফ যেহেতু সবজির জন্য বরাদ্দ তাই এর ঠিক উপরের তাকেই যাবতীয় ফল-ফলাদি রাখতে পারেন। ঘরে ছোট সদস্য থাকলে তাদেরকেও এসব বিষয়ে অভ্যস্ত করে নিন। এতে দরকার হলে তারা নিজেরাই ফ্রিজ খুলে ফল বেছে নিতে পারবে। কোন জিনিস কোথায় রাখা উচিত সেটাও ছোটদের শিখিয়ে দিতে পারেন। এতে ফ্রিজ ব্যবহারেও তারা যত্নশীল হতে শিখবে।
৬) নিয়মিত কন্টেইনার পরিষ্কার করুন
কন্টেইনার খালি হয়ে গেলে একবার পুরো কন্টেইনার ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিন। স্বচ্ছ কন্টেইনারে ফাটল ধরলে কিংবা দাগ বসে গেলে সেটা ফেলে না দিয়ে যতদিন সম্ভব ব্যবহার করুন। তাছাড়া কন্টেইনার ক্লিন না করলে দুর্গন্ধ হতে পারে। যার কারণে ফ্রিজ খুললে নাকে লাগতে পারে বাজে গন্ধ। তাই নিয়মিত কন্টেইনার পরিষ্কার করুন।
আরও কিছু টিপস
১) ফ্রিজের তাকগুলোতে প্লাস্টিকের ম্যাট বিছিয়ে রাখলে কোনো খাবারের দাগ পড়ে তাক নষ্ট হবে না। কিছুদিন পরপর ম্যাট ধুয়ে নিলে সহজেই ফ্রিজ পরিষ্কার রাখা যাবে।
২) প্রতি মাসে অন্তত একবার ফ্রিজ পরিষ্কার করুন। প্রতিদিন চেষ্টা করুন একবার হলেও ফ্রিজের বাইরের অংশ মুছে নিতে। নইলে ধুলো জমে পরে পরিষ্কার করা কঠিন হয়ে যাবে।
৩) আম, কলা, লিচু জাতীয় ফলগুলো বেশিদিন সংরক্ষণ করতে চাইলে পত্রিকা দিয়ে মুড়ে রাখুন।
৪) ফ্রিজের দরজার তাকে ভারী পানির বোতল রাখবেন না। এতে দরজা নাজুক হয়ে পড়তে পারে।
ফ্রিজ মানেই এলোমেলোভাবে সব জিনিস রাখা নয়। কোন খাবার কোথায় রাখা উচিত সেটা সঠিকভাবে না জানা থাকলে খাবারও দ্রুত নষ্ট হয়ে যাবে। এতে ফ্রিজে দুর্গন্ধ হতে পারে। তাই ফ্রিজ ভালো রাখতে এর ভেতরে খাবার কীভাবে রাখছেন সেদিকে খেয়াল রাখাও জরুরি। এতে অগোছালো ফ্রিজ গুছিয়ে রাখাও হবে, কোন জিনিস কোথায় রাখা হয়েছে তা নিয়েও ভাবতে হবে না।
ছবিঃ সাটারস্টক
The post অগোছালো ফ্রিজ গুছিয়ে রাখতে চান? ফলো করুন ৭টি টিপস ও ট্রিকস! appeared first on Shajgoj.
from Shajgoj https://ift.tt/9FW5y4Z
Arfatun Nabila
Comments
Post a Comment