Skip to main content

আর্লি প্রেগনেন্সিতে মিসক্যারেজ বা বার বার গর্ভপাত হওয়ার কারণ কী?

কিছুদিন আগেও বাংলাদেশে গর্ভপাত ও শিশুর অকালমৃত্যু ছিল প্রায়ই স্বাভাবিক ঘটনা। চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির ফলে তা অনেকটা কমে এসেছে। তারপরও এখন গ্রামাঞ্চলের পাশাপাশি শহরেও মিসক্যারেজ বা গর্ভপাতের ঘটনা ঘটছে। অল্প বয়সেই গর্ভধারণের ফলে কিংবা বেশি দেরি করে বেবি কনসিভের জন্য রিস্ক বেড়ে যাচ্ছে। আর্লি প্রেগনেন্সিতে মিসক্যারেজ বা বার বার গর্ভপাত হওয়ার কারণ, মোলার প্রেগনেন্সি আর এক্টোপিক প্রেগনেন্সি নিয়ে আজ আমরা জানবো।

বাংলাদেশের এখনও অনেক মেয়েই কিংবা পরিবারের অন্য সদস্যরা এই বিষয়টি সম্পর্কে তেমনভাবে জানেন না। মিসক্যারেজ বা গর্ভপাত সম্পর্কে বেসিক নলেজ থাকা জরুরি। মিসক্যারেজ হলো গর্ভকালীন সময়ে ২০তম সপ্তাহের আগে একটি ভ্রূণের স্বতঃস্ফূর্ত মৃত্যু। ২০তম সপ্তাহের পরে গর্ভকালীন অবস্থায় বাচ্চার মৃত্যু হলে সেটাকে ‘মৃতপ্রসব’ বলা হয়ে থাকে। চিকিৎসাবিদ্যা বা অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে মিসক্যারেজ বা গর্ভপাত একটি স্বাভাবিক ঘটনা, আমাদের আশেপাশে অনেকেই এই ভয়ংকর অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যায়।

আর্লি প্রেগনেন্সিতে মিসক্যারেজ কেন হয়?

আর্লি প্রেগনেন্সিতে মিসক্যারেজ

অনেকেরই দেখা যায় কনসিভ করার কিছু সপ্তাহ পর ভ্রুণ সার্ভাইভ করে না, গর্ভপাত হয়ে যায় বা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে ক্লিয়ার করে ফেলতে হয়। লুপাস (Lupus anticoagulant), অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম, হাই রিস্ক প্রেগনেন্সি থাকলে বারবার দৈহিক মিলন এসব কারণে যেকোনো সময় গর্ভপাত হতে পারে। আর্লি প্রেগনেন্সিতে মিসক্যারেজ এর কারণ নিয়ে নানা ধরনের মতবিরোধ আছে, সব ক্ষেত্রে কারণ স্পেসিফিকভাবে নির্ণয় করা যায় না। তবুও কিছু কমন ফ্যাক্টর এর সাথে জড়িত। যেমন-

  • মায়ের অপর্যাপ্ত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
  • মায়ের ইউটেরাস ও সারভিক্সে আগে থেকে কোনো সমস্যা থাকলে
  • রক্তে চিনির পরিমাণ বেড়ে গেলে (আনকন্ট্রোলড ডায়াবেটিস ম্যালাইটাস)
  • হাইপোথাইরয়েডিজম বা থাইরয়েড ডিজিজ
  • কমন কিছু রিস্ক ফ্যাক্টর যেমন- অতিরিক্ত ওজন, স্মোকিং এর অভ্যাস, বেশি বয়স ইত্যাদি

অনেক সময় কিছু ওষুধও গর্ভপাতের কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে, যেমন- এনএসএআইডি, মিথোট্রিকজেট। এছাড়া ইনফেকশন বা বিভিন্ন ধরনের জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হলেও আর্লি প্রেগনেন্সিতে মিসক্যারেজ হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে ডিম্বাণু নিষিক্ত হলেও ভ্রুণ বা ফিটাস গঠিত হয় না, অনেক সময় আবার ভ্রূণের হার্টবিট স্টপ হয়ে যায়। মূলত জেনেটিক্যাল প্রবলেম থাকলে আর ভ্রুণের বিকাশ সময় অনুযায়ী ঠিকমতো না হলে সেই প্রেগনেন্সি কন্টিনিউ হয় না। অনেক ক্ষেত্রে কারণটাও আইডেন্টিফাই করা যায় না।

চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক এক্টোপিক প্রেগনেন্সি কী

এক্টোপিক প্রেগনেন্সি

এক্টোপিক প্রেগনেন্সি বলতে মূলত আমরা বুঝি জরায়ুর বাইরে গর্ভধারণ। এক্ষেত্রে নিষিক্ত ডিম্বাণু জরায়ুর বাইরে যেকোনো জায়গায় স্থাপিত হয়ে থাকে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ফেলোপিয়ান টিউবে, আবার কখনও ডিম্বাশয়ে হয়ে থাকে, কিন্তু এই প্রেগনেন্সি যত দ্রুত সম্ভব টার্মিনেট করে ফেলা উচিত। এক্টোপিক প্রেগনেন্সি নরমাল কোনো প্রেগনেন্সি নয় এবং এতে কিন্তু সেই নারীর জীবন সংশয়ও হতে পারে। ফেলোপিয়ান টিউব ফেটে যেতে পারে, ইন্টারনাল ব্লিডিং হতে পারে, এছাড়াও আরও অনেক সমস্যা হতে পারে।

এখন জেনে নিই মোলার প্রেগনেন্সি কী

মোলার প্রেগনেন্সি, যা সাধারণত হাইডাটিডিফর্ম মোল নামেও পরিচিত। এটি গর্ভাবস্থার এমন একটি বিরল জটিলতা যা ট্রফোব্লাস্টের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণে হয়ে থাকে এবং তা দেখতে একগুচ্ছ আঙ্গুরের মতো। এই ধরনের কোষগুলো সাধারণত প্লাসেন্টায় বিকাশিত হয়ে থাকে। মনে হতেই পারে, এক্টোপিক প্রেগনেন্সি বা মোলার প্রেগনেন্সি বা মিসক্যারেজ একই জিনিস, কিন্তু আসলে তা নয়। সবগুলোই চিকিৎসাবিদ্যায় ভিন্ন ভিন্ন টার্ম এবং সম্পূর্ণ আলাদা জিনিস।

অল্প বয়সে গর্ভধারণ কতটা ঝুঁকিপূর্ণ? 

এখনও বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে বেশিরভাগ মেয়েকেই খুবই অল্প বয়সে বা ১৮ বছর বয়সের আগেই বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়, আর খুব তাড়াতাড়ি তারা মা-ও হচ্ছে। অল্প বয়সে গর্ভধারণ করার ফলস্বরূপ মিসক্যারেজ বা গর্ভপাতের কারণ হিসেবে যে বিষয়টিকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয় তা হলো দুর্বল সার্ভিক্যাল টিস্যু (ইনকম্পিটেন্ট বা অক্ষম সার্ভিক্স)। আবার বেশি বয়সে বাচ্চা নিতে গেলেও ঝুঁকি বেড়ে যায়। পূর্বে মিসক্যারেজ এর হিস্ট্রি থাকলে অবশ্যই নেক্সট প্রেগনেন্সিতে বা বেবি নেওয়ার প্ল্যান করলে ডাক্তারের নিবিড় তত্ত্বাবধানে থাকুন।

মিসক্যারেজ এর লক্ষণ

অনেক ক্ষেত্রে ব্লিডিং বা ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ হয়, অনেকের তলপেটে ব্যথা হয়। আবার অনেকের কোনো লক্ষণ থাকে না, আল্ট্রাসনোগ্রাফিতে বোঝা যায় যে ভ্রূণের হার্টবিট নেই। এরপর ডাক্তারের পরামর্শে ডিএনসি করতে হয় বা মেডিসিনের মাধ্যমে সেটা ক্লিয়ার করে ফেলতে হয়। তবে বার বার গর্ভপাত হলে যে আবার আপনি হেলদি বেবি জন্ম দিতে পারবেন না, এমনটা একদমই ভাববেন না। মিসক্যারেজ এর পরেও আবার কনসিভ করে সুস্থভাবে সন্তানের মা হয়েছেন, এমন নারীর সংখ্যা কম নয়।

আর্লি প্রেগনেন্সিতে মিসক্যারেজ হলেও ভেঙে না পড়ে একজন বিশেষজ্ঞ গাইনি ডাক্তারের আন্ডারে ট্রিটমেন্টে থাকুন। এই সময় পরিবারের অন্য সদস্যদেরও তাকে সাপোর্ট দিতে হবে। প্রতিটা মেয়েরই সুন্দর করে বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে। অপরিপক্ক বয়সে বিয়ে বা গর্ভধারণ যাতে কোনো মেয়ের অকাল মৃত্যুর কারণ হয়ে না দাঁড়ায়, সেটা খেয়াল রাখতে হবে আমাদের সবাইকে। আজ এই পর্যন্তই, ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।

 

ছবি- সাটারস্টক

The post আর্লি প্রেগনেন্সিতে মিসক্যারেজ বা বার বার গর্ভপাত হওয়ার কারণ কী? appeared first on Shajgoj.



from Shajgoj https://ift.tt/74yuewD
Munia

Comments

Popular posts from this blog

রেগুলার ব্রা vs পুশ-আপ ব্রা | সঠিক ইনার ওয়্যার কীভাবে সিলেক্ট করবেন?

রেগুলার ব্রা আর পুশ-আপ ব্রা, এই দু’টার মধ্যে আসলে পার্থক্য কী আর কখন কোনটা ইউজ করতে হবে, এই বিষয়গুলো আমাদের অনেকেরই অজানা। আমাদের অ্যাকটিভিটি আর আউটফিটের সাথে ইনার ওয়্যারেও ভ্যারিয়েশন আসে। যেমন সকালে ঘুম থেকে উঠে ওয়ার্ক আউট করছি, এরপর ভার্সিটি বা অফিসে যাচ্ছি, সন্ধ্যায় পার্টি অ্যাটেন্ড করছি। সব সময় কি আমরা সেইম ব্রা পরি? না তো! শাড়ি পরলে এক ধরনের ব্রা পরি, জিমে গেলে অন্য ধরনের ব্রা পরি, বাসায় থাকলে আবার আরেক রকম! কখন কোন ব্রা পরা উচিত বা কোন ড্রেসের সাথে কোনটা মানাবে এই বিষয়গুলো নিয়ে অনেকেরই কনফিউশন আছে। এই বিষয়গুলো এখনও অনেকের কাছেই ট্যাবু। দিন বদলাচ্ছে, এই সামাজিক ট্যাবু থেকে বেরিয়ে আসতে হবে সবাইকে। লঞ্জেরি মেয়েদের জন্য বেসিক একটি জিনিস। তাই লঞ্জেরির ক্যাটাগরিটা আমাদের জেনে রাখা উচিত। পুশ-আপ ব্রা কেন ইউজ করে, এটাই এখনও অনেক মেয়েরা জানে না! রেগুলার ব্রা এর সাথে সাথে নিজের কালেকশনে পুশ-আপ ব্রা কেন রাখা উচিত, সেটা কিন্তু অনেকে বুঝতে পারে না। চলুন এই কনফিউশনগুলো আজ দূর করা যাক। রেগুলার ব্রা vs পুশ-আপ ব্রা    বেসিক রেগুলার ব্রা-এর ক্ষেত্রে ফেব্রিক ম্যাটেরিয়াল ও কমফোর্টের বিষ...

বিবি ক্রিম vs সিসি ক্রিম | স্কিন টাইপ অনুযায়ী কোনটি আপনার জন্য স্যুইটেবল?

ন্যাচারাল মেকআপ লুকের জন্য এখন বিবি ক্রিম ও সিসি ক্রিম বেশ জনপ্রিয়। পার্টি মেকআপ বা ফুল কভারেজ মেকআপের ক্ষেত্রে ফাউন্ডেশন ইউজ করা হয়। কিন্তু যারা রেগুলার হালকা মেকআপ করে বাইরে বের হন, তাদের জন্য বেস্ট অপশন হচ্ছে BB বা CC ক্রিম । কিন্তু আমরা অনেকেই বুঝতে পারি না যে স্কিন টাইপ ও কনসার্ন অনুযায়ী কীভাবে রাইট প্রোডাক্টটি সিলেক্ট করতে হবে। এই দু’টি মেকআপ প্রোডাক্টের বেনিফিট বা কার্যকারিতা নিয়ে আজকের ফিচার। এগুলোর মধ্যে বেসিক ডিফারেন্সটা আসলে কোথায়, সেটাও জানা হয়ে যাবে। বিবি ক্রিম BB (Beauty Balm, Blemish Balm) ক্রিম স্কিনকে ইভেন টোনড করে এবং ব্লেমিশ হাইড করে ফ্ললেস লুক দেয় নিমিষেই। এতে স্কিন ময়েশ্চারাইজিং ও হাইড্রেটিং এলিমেন্টস থাকে, যার কারণে ড্রাই বা নরমাল স্কিনের জন্য এটি একদম পারফেক্ট। এর টেক্সচার ফাউন্ডেশনের থেকে লাইট, তাই কভারেজটাও হয় একদম ন্যাচারাল। মানে একদমই হেভি ফিল হয় না, আর স্কিনটাও পিকচার পারফেক্ট দেখায়। অনেক বিবি ক্রিমে সান প্রোটেকশন ফ্যাক্টর বা SPF থাকে। সিসি ক্রিম CC (Color Corrector, Complexion Corrector) ক্রিমের ফর্মুলা লাইট ওয়েট ও লং লাস্টিং। ম্যাট ফর্মুলার হওয়াতে অয়েল...

লো পোরোসিটি চুল | কীভাবে চিনবেন এবং সঠিক যত্ন নিবেন?

একরাশ সুন্দর ও ঝলমলে চুল কে না চায়? কিন্তু অনেক সময় সঠিক যত্নের অভাবে সুন্দর চুলগুলো দিন দিন নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ে। চুলের যত্নের ক্ষেত্রে আমাদের সবচেয়ে সবচেয়ে বড় ভুল হলো পোরোসিটি না বুঝে হেয়ার কেয়ার করা। এতে করে চুল আরো ড্যামেজ হওয়ার চান্স থাকে। আজকের ফিচারটি মূলত লো পোরোসিটি হেয়ার কেয়ার নিয়ে। লো পোরোসিটি চুল কীভাবে বুঝবো, কীভাবে যত্ন নিতে হবে, কী ব্যবহার করা যাবে ও যাবেনা ইত্যাদি বিস্তারিত জানবো আজকের ফিচারে। লো পোরোসিটি বলতে কী বোঝানো হয়? পোরোসিটি শব্দের বাংলা অর্থ হচ্ছে ছিদ্র। ত্বকে যেমন অসংখ্য পোর বা ছিদ্র থাকে, চুলের ক্ষেত্রেও কিন্তু তাই রয়েছে। অর্থাৎ প্রতিটি চুলে অসংখ্য ছিদ্র বিদ্যমান, যার মাধ্যমে চুলে আর্দ্রতা প্রবেশ করে এবং চুল আর্দ্রতা ধরে রাখার চেষ্টা করে। একেই হেয়ার পোরোসিটি বলে। পোরোসিটি ৩ রকম, হাই, মিডিয়াম ও লো। এই হেয়ার পোরোসিটির মাত্রা প্রত্যেক মানুষের ক্ষেত্রে আলাদা হয়ে থাকে। লো পোরোসিটির চুলগুলো কম ছিদ্র সম্পন্ন হয়ে থাকে। লো পোরোসিটি চুলের কিউটিকল লেয়ার খুব শক্ত ভাবে সংযুক্ত থাকে। যার ফলে এ ধরনের চুল আর্দ্রতা সহজে গ্রহণ করতে পারেনা, তবে একবার আর্দ্রতা গ্রহণ করলে এ ধরনের...