Skip to main content

সেকেন্ডারি ট্রমাটিক স্ট্রেস | নেতিবাচক খবর যখন দুশ্চিন্তার কারণ

সেকেন্ডারি ট্রমাটিক স্ট্রেস সম্পর্কে শুনেছেন কখনো? আজকের পৃথিবীতে একবার খবরের কাগজের দিকে তাকালেই চোখে পড়ে—গাজায় বোমা হামলা, ইউক্রেনে যুদ্ধ, আফ্রিকায় সহিংসতা, দেশে খুন, ধর্ষণ, দুর্যোগ, শিশু নির্যাতন- একটার পর একটা খারাপ খবর। এগুলো হয়তো আমাদের জীবনে সরাসরি ঘটছে না, কিন্তু মনের ওপর একটা চাপ, অস্বস্তি, এমনকি ভয় তৈরি করে। এই অবস্থা থেকে অনেকেই ভেতরে ভেতরে তীব্র মানসিক যন্ত্রণায় ভোগেন—যাকে বলা হয় সেকেন্ডারি ট্রমাটিক স্ট্রেস।

সাধারণত যেকোনও নেতিবাচক খবর- হোক সেটি পত্রিকা, টিভি বা সোশ্যাল মিডিয়া থেকে জানা, কিংবা পরিচিত অপরিচিত কারও দুঃখ দুর্দশার খবর জেনে সেটি নিজের জীবনের সাথে মেলাতে শুরু করেন তখনই এই সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।

চলুন, সহজভাবে বুঝে নিই এই বিষয়টি, আর জেনে নিই কীভাবে নিজেকে ভালো রাখা যায়।

সেকেন্ডারি ট্রমাটিক স্ট্রেস আসলে কী?

যখন আপনি কারো কষ্টের কথা শুনে বা দেখে নিজে কষ্ট পান, আতঙ্কিত হন, তখন সেটি আপনার উপর মানসিক প্রভাব ফেলে। এ কারণে আপনার মধ্যেও ট্রমার মতো লক্ষণ দেখা দিতে পারে।

যেমন প্রতিদিন যুদ্ধের ছবি দেখে মনে হতে পারে, “আমার দেশেও যদি এমন হয়?” অথবা শিশু নির্যাতনের খবর শুনে আপনার নিজের সন্তানকে নিয়ে ভয় পেতে পারেন।

সেকেন্ডারি ট্রমাটিক স্ট্রেস যাদের মধ্যে বেশি দেখা যায়

অতিরিক্ত নেতিবাচক খবর শুনলে যে কারও মধ্যেই এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে কারও কারও মধ্যে সেকেন্ডারি ট্রমাটিক স্ট্রেস দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

১) আগে কোনো দুর্ঘটনা বা ট্রমার শিকার হয়েছেন যারা

২) শিক্ষক, ডাক্তার, সাংবাদিক বা মানসিক স্বাস্থ্যকর্মীরা, যাঁরা নিয়মিত এসব ঘটনা শোনেন

৩) আইনজীবী যারা নির্যাতনের মামলায় কাজ করেন

৪) সহিংসতা বা যুদ্ধপীড়িতদের সাথে কাজ করা যেকোনো পেশাজীবী

সেকেন্ডারি ট্রমাটিক স্ট্রেসের লক্ষণ

১) মন খারাপ থাকে, কিছুতেই ভালো লাগে না

২) আবেগের ওঠা নামা

৩) রাতে ঘুমাতে সমস্যা হয়

৪) বারবার সেই ঘটনার কথা মনে পড়া

৫) সবসময় অসহায় মনে হয় নিজেকে

এছাড়াও কর্মক্ষমতা হ্রাস পাওয়া, অতিরিক্ত সংবেদনশীল হয়ে যাওয়া, সবসময় দুশ্চিন্তায় ভুগতে থাকার মতো লক্ষণও থাকতে পারে। সহজ ভাষায় যুদ্ধ বা সহিংসতার ভিডিও দেখার পর রাতে বারবার সে ছবি মনে পড়া, খাওয়াদাওয়া বা কাজে মন না বসা—এসবই লক্ষণ।

কীভাবে নিজেকে ভালো রাখবেন?

১. খবর দেখায় সীমা টানুনঃ প্রতিদিন আধাঘণ্টার বেশি সময় না। বারবার একই খারাপ খবর দেখা থেকে বিরত থাকুন।

২. “নিউজ ডিটক্স” করুনঃ কিছুদিনের জন্য খবর দেখা একদম বন্ধ করুন। বই পড়ুন, প্রকৃতিতে হাঁটুন, প্রিয় গান শুনুন।

৩. অনুভূতিগুলোকে স্বীকার করুনঃ নিজেকে বলুন—“হ্যাঁ, আমি ভীত/কষ্টে আছি।” এটি লুকানোর কিছু নয়।

৪. নিজের পরিবার-বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানঃ কাজ শেষে একটু হাসি, গল্প, আড্ডা মানসিক শান্তি দেয়।

৫. নীরব না থেকে প্রতিবাদে যুক্ত থাকুনঃ যুদ্ধ বা সহিংসতার প্রতিবাদ করতে পারেন পোস্ট লিখে, সচেতনতা বাড়িয়ে, কিংবা দান করে।

৬. প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিনঃ এই অনুভূতি যদি আপনার কাজে বা ঘুমে প্রভাব ফেলে, মানসিক চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন।

মনে রাখবেন—আপনি একা নন

আজকের দুনিয়ায় প্রায় সবাই কমবেশি এই মানসিক চাপে ভুগছেন। এটি দুর্বলতা নয়, বরং মানবিকতার পরিচয়। খারাপ কিছু দেখলে কষ্ট পাওয়া আমাদের হৃদয়ের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। কিন্তু নিজের যত্ন না নিলে আপনি ভেঙে পড়তে পারেন। এই পৃথিবীতে যুদ্ধ চলছে, মানুষ কাঁদছে, নিষ্পাপ শিশুরা হারাচ্ছে তাদের পরিবার—এসব দেখে চোখ ভিজে ওঠা অর্থ আপনি একজন মানবিক অনুভূতি সম্বলিত মানুষ। কিন্তু আপনি যদি ভেতর থেকে ভেঙে পড়েন, তাহলে কাউকে সাহায্য করাও সম্ভব হবে না। সবসময় যে কোনও নেতিবাচক খবর শুনে নিজের সাথে মেলাতে যাবেন না, মনে রাখবেন আপনি একজন ভিন্ন মানুষ, আপনার পরিস্থিতি আলাদা। জরুরি নয় যে একই ঘটনা আপনার জীবনেও ঘটবে।

বৈশ্বিক বিষয়গুলো নিয়ে জ্ঞান রাখতে খবর তো দেখতেই হবে। কিন্তু খবর দেখুন সচেতনভাবে, নয়নে জল আসলে আসুক, কিন্তু নিজের মনকে ভালো রাখার চেষ্টাটা করুন। আপনি ভালো থাকলে, আপনার আশেপাশের মানুষগুলোও একটু ভালো থাকবে। আপনার সুস্থ মনই একদিন শান্তির পৃথিবী গড়ার অন্যতম হাতিয়ার হতে পারে।

ছবি- সাটারস্টক

The post সেকেন্ডারি ট্রমাটিক স্ট্রেস | নেতিবাচক খবর যখন দুশ্চিন্তার কারণ appeared first on Shajgoj.



from Shajgoj https://ift.tt/7sqx3nl
Jannatul Kawser

Comments

Popular posts from this blog

রেগুলার ব্রা vs পুশ-আপ ব্রা | সঠিক ইনার ওয়্যার কীভাবে সিলেক্ট করবেন?

রেগুলার ব্রা আর পুশ-আপ ব্রা, এই দু’টার মধ্যে আসলে পার্থক্য কী আর কখন কোনটা ইউজ করতে হবে, এই বিষয়গুলো আমাদের অনেকেরই অজানা। আমাদের অ্যাকটিভিটি আর আউটফিটের সাথে ইনার ওয়্যারেও ভ্যারিয়েশন আসে। যেমন সকালে ঘুম থেকে উঠে ওয়ার্ক আউট করছি, এরপর ভার্সিটি বা অফিসে যাচ্ছি, সন্ধ্যায় পার্টি অ্যাটেন্ড করছি। সব সময় কি আমরা সেইম ব্রা পরি? না তো! শাড়ি পরলে এক ধরনের ব্রা পরি, জিমে গেলে অন্য ধরনের ব্রা পরি, বাসায় থাকলে আবার আরেক রকম! কখন কোন ব্রা পরা উচিত বা কোন ড্রেসের সাথে কোনটা মানাবে এই বিষয়গুলো নিয়ে অনেকেরই কনফিউশন আছে। এই বিষয়গুলো এখনও অনেকের কাছেই ট্যাবু। দিন বদলাচ্ছে, এই সামাজিক ট্যাবু থেকে বেরিয়ে আসতে হবে সবাইকে। লঞ্জেরি মেয়েদের জন্য বেসিক একটি জিনিস। তাই লঞ্জেরির ক্যাটাগরিটা আমাদের জেনে রাখা উচিত। পুশ-আপ ব্রা কেন ইউজ করে, এটাই এখনও অনেক মেয়েরা জানে না! রেগুলার ব্রা এর সাথে সাথে নিজের কালেকশনে পুশ-আপ ব্রা কেন রাখা উচিত, সেটা কিন্তু অনেকে বুঝতে পারে না। চলুন এই কনফিউশনগুলো আজ দূর করা যাক। রেগুলার ব্রা vs পুশ-আপ ব্রা    বেসিক রেগুলার ব্রা-এর ক্ষেত্রে ফেব্রিক ম্যাটেরিয়াল ও কমফোর্টের বিষ...

বিবি ক্রিম vs সিসি ক্রিম | স্কিন টাইপ অনুযায়ী কোনটি আপনার জন্য স্যুইটেবল?

ন্যাচারাল মেকআপ লুকের জন্য এখন বিবি ক্রিম ও সিসি ক্রিম বেশ জনপ্রিয়। পার্টি মেকআপ বা ফুল কভারেজ মেকআপের ক্ষেত্রে ফাউন্ডেশন ইউজ করা হয়। কিন্তু যারা রেগুলার হালকা মেকআপ করে বাইরে বের হন, তাদের জন্য বেস্ট অপশন হচ্ছে BB বা CC ক্রিম । কিন্তু আমরা অনেকেই বুঝতে পারি না যে স্কিন টাইপ ও কনসার্ন অনুযায়ী কীভাবে রাইট প্রোডাক্টটি সিলেক্ট করতে হবে। এই দু’টি মেকআপ প্রোডাক্টের বেনিফিট বা কার্যকারিতা নিয়ে আজকের ফিচার। এগুলোর মধ্যে বেসিক ডিফারেন্সটা আসলে কোথায়, সেটাও জানা হয়ে যাবে। বিবি ক্রিম BB (Beauty Balm, Blemish Balm) ক্রিম স্কিনকে ইভেন টোনড করে এবং ব্লেমিশ হাইড করে ফ্ললেস লুক দেয় নিমিষেই। এতে স্কিন ময়েশ্চারাইজিং ও হাইড্রেটিং এলিমেন্টস থাকে, যার কারণে ড্রাই বা নরমাল স্কিনের জন্য এটি একদম পারফেক্ট। এর টেক্সচার ফাউন্ডেশনের থেকে লাইট, তাই কভারেজটাও হয় একদম ন্যাচারাল। মানে একদমই হেভি ফিল হয় না, আর স্কিনটাও পিকচার পারফেক্ট দেখায়। অনেক বিবি ক্রিমে সান প্রোটেকশন ফ্যাক্টর বা SPF থাকে। সিসি ক্রিম CC (Color Corrector, Complexion Corrector) ক্রিমের ফর্মুলা লাইট ওয়েট ও লং লাস্টিং। ম্যাট ফর্মুলার হওয়াতে অয়েল...

লো পোরোসিটি চুল | কীভাবে চিনবেন এবং সঠিক যত্ন নিবেন?

একরাশ সুন্দর ও ঝলমলে চুল কে না চায়? কিন্তু অনেক সময় সঠিক যত্নের অভাবে সুন্দর চুলগুলো দিন দিন নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ে। চুলের যত্নের ক্ষেত্রে আমাদের সবচেয়ে সবচেয়ে বড় ভুল হলো পোরোসিটি না বুঝে হেয়ার কেয়ার করা। এতে করে চুল আরো ড্যামেজ হওয়ার চান্স থাকে। আজকের ফিচারটি মূলত লো পোরোসিটি হেয়ার কেয়ার নিয়ে। লো পোরোসিটি চুল কীভাবে বুঝবো, কীভাবে যত্ন নিতে হবে, কী ব্যবহার করা যাবে ও যাবেনা ইত্যাদি বিস্তারিত জানবো আজকের ফিচারে। লো পোরোসিটি বলতে কী বোঝানো হয়? পোরোসিটি শব্দের বাংলা অর্থ হচ্ছে ছিদ্র। ত্বকে যেমন অসংখ্য পোর বা ছিদ্র থাকে, চুলের ক্ষেত্রেও কিন্তু তাই রয়েছে। অর্থাৎ প্রতিটি চুলে অসংখ্য ছিদ্র বিদ্যমান, যার মাধ্যমে চুলে আর্দ্রতা প্রবেশ করে এবং চুল আর্দ্রতা ধরে রাখার চেষ্টা করে। একেই হেয়ার পোরোসিটি বলে। পোরোসিটি ৩ রকম, হাই, মিডিয়াম ও লো। এই হেয়ার পোরোসিটির মাত্রা প্রত্যেক মানুষের ক্ষেত্রে আলাদা হয়ে থাকে। লো পোরোসিটির চুলগুলো কম ছিদ্র সম্পন্ন হয়ে থাকে। লো পোরোসিটি চুলের কিউটিকল লেয়ার খুব শক্ত ভাবে সংযুক্ত থাকে। যার ফলে এ ধরনের চুল আর্দ্রতা সহজে গ্রহণ করতে পারেনা, তবে একবার আর্দ্রতা গ্রহণ করলে এ ধরনের...