Skip to main content

সন্তানকে কৃতজ্ঞতা ও সদয়তা কীভাবে শেখাবেন?

সন্তানের মধ্যে ছোটবেলা থেকেই কৃতজ্ঞতা ও সদয়তার গুণাবলি গড়ে তোলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি তাদের সহানুভূতিশীল ও মানবিক করে তোলে। যখন শিশুরা ছোটবেলা থেকেই কৃতজ্ঞতা ও সদয়তার শিক্ষা পায়, তখন তাদের মধ্যে ইতিবাচক মনোভাব গড়ে ওঠে এবং পরিপূর্ণ ব্যক্তিত্বের বিকাশ সম্ভব হয়। সন্তানের জীবনদৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে পিতা-মাতা হিসেবে আপনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন। শিশুদের মধ্যে কৃতজ্ঞতা ও সদয়তার অভ্যাস গড়ে তোলা শুধুমাত্র সামাজিক সৌজন্যতা নয়, বরং এটি তাদের ব্যক্তিত্বকে সমৃদ্ধ করে, সম্পর্কগুলোর প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে শেখায় এবং জীবনকে আরও সুন্দর করে তোলে। ভালো মূল্যবোধ ও মানবিক গুণাবলি শেখানোর মাধ্যমে তাদের সঠিক পথে পরিচালিত করা সম্ভব। আজ আমরা এমন কিছু কার্যকরী উপায় জানবো, যার মাধ্যমে আপনি সন্তানকে কৃতজ্ঞতা ও সদয়তা শেখাতে পারেন—

সন্তানকে কৃতজ্ঞতা ও সদয়তা শেখাতে পারেন যেভাবে

১. নিজেই হোন রোল মডেল

সন্তানরা আপনার কাছ থেকেই শেখে এবং তারা খুব সহজেই আপনার আচরণ অনুকরণ করে। তাই আপনাকে সঠিক রোল মডেল হতে হবে। আপনি যদি অন্যদের সাহায্যের জন্য ‘ধন্যবাদ’ বলেন বা অন্যদের কষ্টের মূল্যায়ন করেন, তাহলে আপনার সন্তানও এটি শিখবে। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনি কাউকে সাহায্য করেন বা দান করেন, তাহলে আপনার সন্তান এই আচরণগুলো অনুকরণ করবে। এটি তাদের মধ্যে সহানুভূতি ও সদয়তা তৈরি করবে।

২. সহানুভূতি জাগিয়ে তুলুন

আপনার সন্তানের মধ্যে সহানুভূতির বীজ বুনতে হবে। এর মানে হল যে, যখন কেউ কষ্টে থাকে, তখন আপনার সন্তানকে বুঝিয়ে দিন সেই ব্যক্তির অনুভূতি কী হতে পারে। আপনি তাদের প্রশ্ন করতে পারেন, যেমন, “কীভাবে আমরা তাকে ভালো অনুভব করাতে পারি?” অথবা “তারা কেন দুঃখিত, তুমি জানো?” এটি তাদের অন্যদের দুঃখ বুঝতে এবং সহানুভূতি প্রদর্শন করতে শেখাবে।

৩. প্রতিদিন কৃতজ্ঞতা প্রকাশের অভ্যাস গড়ে তোলা

আপনার পরিবারে প্রতিদিন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। যেমন, প্রতিদিন রাতে বা ডিনারের সময় আপনি তিনটি বিষয় বলুন, যেগুলোর জন্য আপনি কৃতজ্ঞ। এটি আপনার সন্তানদের শেখাবে কীভাবে ছোট ছোট জিনিসের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকতে হয়। একটি মজাদার উপায় হতে পারে একটি জার তৈরি করা, যেখানে আপনি ও আপনার সন্তান একে অপরকে কৃতজ্ঞতা জানানোর জন্য ছোট ছোট টুকরো কাগজে লিখে রাখতে পারেন। এভাবে তারা শিখবে কৃতজ্ঞ থাকার আনন্দ।

৪. বই ও গল্পের মাধ্যমে শেখানো

সন্তানদের জন্য কৃতজ্ঞতা এবং সদয়তা শেখানোর একটি মজার উপায় হলো বই পড়া বা গল্প শোনা। কৃতজ্ঞতা ও সদয়তার ওপর ভিত্তি করে লেখা গল্পগুলি পড়লে তারা এই গুণাবলি সম্পর্কে ভালো ধারণা পাবে। একাধিক বই রয়েছে যা শিশুদের ভালো দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করতে সহায়ক। সেগুলো পড়লে তারা তাদের বাস্তব জীবনে এই গুণাবলীর ব্যবহার করতে পারবে।

৫. সদয়তার উদযাপন করা

যখন আপনার সন্তান সদয় ও সহানুভূতিশীল কাজ করে, তখন তাদের উৎসাহিত করুন এবং পুরস্কৃত করুন। এটি তাদের মধ্যে সদয়তা আরও গভীরভাবে গেঁথে দেবে। উদাহরণস্বরূপ, যদি তারা অন্য কোনো শিশুর সাহায্য করে, তাদের প্রশংসা করুন এবং তাদের মনে করিয়ে দিন যে এটি একটি ভালো কাজ ছিল। এইভাবে তারা আরও বেশি সদয় ও কৃতজ্ঞ হওয়া রপ্ত করবে।

৬. পরিবারের মধ্যে সহযোগী পরিবেশ তৈরি করা

আপনার পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সহযোগিতা ও সহানুভূতির পরিবেশ তৈরি করুন। উদাহরণস্বরূপ, বাড়ির কাজ ভাগ করে নিন, সবাই একে অপরকে সাহায্য করুন। এটি আপনার সন্তানের মধ্যে সহানুভূতি ও কৃতজ্ঞতা তৈরি করতে সহায়ক হবে। যখন তারা দেখে যে পরিবারে বড়োরা সবাই একে অপরকে সাহায্য করছে, তখন তারাও শিখবে কিভাবে সদয় ও সহানুভূতিশীল হতে হয়।

৭. সামাজিক কাজের মাধ্যমে শেখানো

সন্তানদের সামাজিক কাজের মধ্যে অংশগ্রহণ করাতে পারেন। যেমন, তারা যদি কোনো অনুদানে যুক্ত হয় বা স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজে অংশ গ্রহণ করে বা অন্যদের সাহায্য করে, সেটা তাদের মধ্যে সদয়তার গুণ তৈরি করতে সহায়ক হবে। তারা জানবে যে সমাজের অন্যদের সাহায্য করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।

৮. শেখানোর সময় ধৈর্য ধরুন

কৃতজ্ঞতা ও সদয়তা এমন গুণাবলি যা সময় নিয়ে শিখতে হয়। আপনার সন্তানদের এই গুণ গুলোর গুরুত্ব বোঝাতে ধৈর্য ধরে কাজ করুন। তাদের শেখাতে সময় দিন এবং প্রতিদিন ছোট ছোট পদক্ষেপে এগিয়ে চলুন।

কৃতজ্ঞতা ও সদয়তা শেখানো আপনার সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই গুণাবলি তাদের জীবনে একজন পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করবে। সন্তানের মধ্যে কৃতজ্ঞতা ও সদয়তার গুণাবলি গড়ে তোলা শুধু তাদের ব্যক্তিগত উন্নতির জন্যই নয়, বরং এটি সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। প্রতিদিন ছোট ছোট অভ্যাসের মাধ্যমে গড়ে ওঠা এই মূল্যবোধ ভবিষ্যতে তাদের একজন দায়িত্বশীল, মানবিক ও সহমর্মী মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে। তাই, আজ থেকেই সন্তানকে ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার শিক্ষায় গড়ে তুলুন, যাতে তারা বড় হয়ে আলোকিত ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে যেতে পারে।

The post সন্তানকে কৃতজ্ঞতা ও সদয়তা কীভাবে শেখাবেন? appeared first on Shajgoj.



from Shajgoj https://ift.tt/71NwjpV
Jannatul Kawser

Comments

Popular posts from this blog

রেগুলার ব্রা vs পুশ-আপ ব্রা | সঠিক ইনার ওয়্যার কীভাবে সিলেক্ট করবেন?

রেগুলার ব্রা আর পুশ-আপ ব্রা, এই দু’টার মধ্যে আসলে পার্থক্য কী আর কখন কোনটা ইউজ করতে হবে, এই বিষয়গুলো আমাদের অনেকেরই অজানা। আমাদের অ্যাকটিভিটি আর আউটফিটের সাথে ইনার ওয়্যারেও ভ্যারিয়েশন আসে। যেমন সকালে ঘুম থেকে উঠে ওয়ার্ক আউট করছি, এরপর ভার্সিটি বা অফিসে যাচ্ছি, সন্ধ্যায় পার্টি অ্যাটেন্ড করছি। সব সময় কি আমরা সেইম ব্রা পরি? না তো! শাড়ি পরলে এক ধরনের ব্রা পরি, জিমে গেলে অন্য ধরনের ব্রা পরি, বাসায় থাকলে আবার আরেক রকম! কখন কোন ব্রা পরা উচিত বা কোন ড্রেসের সাথে কোনটা মানাবে এই বিষয়গুলো নিয়ে অনেকেরই কনফিউশন আছে। এই বিষয়গুলো এখনও অনেকের কাছেই ট্যাবু। দিন বদলাচ্ছে, এই সামাজিক ট্যাবু থেকে বেরিয়ে আসতে হবে সবাইকে। লঞ্জেরি মেয়েদের জন্য বেসিক একটি জিনিস। তাই লঞ্জেরির ক্যাটাগরিটা আমাদের জেনে রাখা উচিত। পুশ-আপ ব্রা কেন ইউজ করে, এটাই এখনও অনেক মেয়েরা জানে না! রেগুলার ব্রা এর সাথে সাথে নিজের কালেকশনে পুশ-আপ ব্রা কেন রাখা উচিত, সেটা কিন্তু অনেকে বুঝতে পারে না। চলুন এই কনফিউশনগুলো আজ দূর করা যাক। রেগুলার ব্রা vs পুশ-আপ ব্রা    বেসিক রেগুলার ব্রা-এর ক্ষেত্রে ফেব্রিক ম্যাটেরিয়াল ও কমফোর্টের বিষ...

বিবি ক্রিম vs সিসি ক্রিম | স্কিন টাইপ অনুযায়ী কোনটি আপনার জন্য স্যুইটেবল?

ন্যাচারাল মেকআপ লুকের জন্য এখন বিবি ক্রিম ও সিসি ক্রিম বেশ জনপ্রিয়। পার্টি মেকআপ বা ফুল কভারেজ মেকআপের ক্ষেত্রে ফাউন্ডেশন ইউজ করা হয়। কিন্তু যারা রেগুলার হালকা মেকআপ করে বাইরে বের হন, তাদের জন্য বেস্ট অপশন হচ্ছে BB বা CC ক্রিম । কিন্তু আমরা অনেকেই বুঝতে পারি না যে স্কিন টাইপ ও কনসার্ন অনুযায়ী কীভাবে রাইট প্রোডাক্টটি সিলেক্ট করতে হবে। এই দু’টি মেকআপ প্রোডাক্টের বেনিফিট বা কার্যকারিতা নিয়ে আজকের ফিচার। এগুলোর মধ্যে বেসিক ডিফারেন্সটা আসলে কোথায়, সেটাও জানা হয়ে যাবে। বিবি ক্রিম BB (Beauty Balm, Blemish Balm) ক্রিম স্কিনকে ইভেন টোনড করে এবং ব্লেমিশ হাইড করে ফ্ললেস লুক দেয় নিমিষেই। এতে স্কিন ময়েশ্চারাইজিং ও হাইড্রেটিং এলিমেন্টস থাকে, যার কারণে ড্রাই বা নরমাল স্কিনের জন্য এটি একদম পারফেক্ট। এর টেক্সচার ফাউন্ডেশনের থেকে লাইট, তাই কভারেজটাও হয় একদম ন্যাচারাল। মানে একদমই হেভি ফিল হয় না, আর স্কিনটাও পিকচার পারফেক্ট দেখায়। অনেক বিবি ক্রিমে সান প্রোটেকশন ফ্যাক্টর বা SPF থাকে। সিসি ক্রিম CC (Color Corrector, Complexion Corrector) ক্রিমের ফর্মুলা লাইট ওয়েট ও লং লাস্টিং। ম্যাট ফর্মুলার হওয়াতে অয়েল...

লো পোরোসিটি চুল | কীভাবে চিনবেন এবং সঠিক যত্ন নিবেন?

একরাশ সুন্দর ও ঝলমলে চুল কে না চায়? কিন্তু অনেক সময় সঠিক যত্নের অভাবে সুন্দর চুলগুলো দিন দিন নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ে। চুলের যত্নের ক্ষেত্রে আমাদের সবচেয়ে সবচেয়ে বড় ভুল হলো পোরোসিটি না বুঝে হেয়ার কেয়ার করা। এতে করে চুল আরো ড্যামেজ হওয়ার চান্স থাকে। আজকের ফিচারটি মূলত লো পোরোসিটি হেয়ার কেয়ার নিয়ে। লো পোরোসিটি চুল কীভাবে বুঝবো, কীভাবে যত্ন নিতে হবে, কী ব্যবহার করা যাবে ও যাবেনা ইত্যাদি বিস্তারিত জানবো আজকের ফিচারে। লো পোরোসিটি বলতে কী বোঝানো হয়? পোরোসিটি শব্দের বাংলা অর্থ হচ্ছে ছিদ্র। ত্বকে যেমন অসংখ্য পোর বা ছিদ্র থাকে, চুলের ক্ষেত্রেও কিন্তু তাই রয়েছে। অর্থাৎ প্রতিটি চুলে অসংখ্য ছিদ্র বিদ্যমান, যার মাধ্যমে চুলে আর্দ্রতা প্রবেশ করে এবং চুল আর্দ্রতা ধরে রাখার চেষ্টা করে। একেই হেয়ার পোরোসিটি বলে। পোরোসিটি ৩ রকম, হাই, মিডিয়াম ও লো। এই হেয়ার পোরোসিটির মাত্রা প্রত্যেক মানুষের ক্ষেত্রে আলাদা হয়ে থাকে। লো পোরোসিটির চুলগুলো কম ছিদ্র সম্পন্ন হয়ে থাকে। লো পোরোসিটি চুলের কিউটিকল লেয়ার খুব শক্ত ভাবে সংযুক্ত থাকে। যার ফলে এ ধরনের চুল আর্দ্রতা সহজে গ্রহণ করতে পারেনা, তবে একবার আর্দ্রতা গ্রহণ করলে এ ধরনের...