Skip to main content

মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি হলে যে প্রাথমিক লক্ষণগুলো দেখা দেয়

মানসিক স্বাস্থ্য আমাদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কিন্তু অনেক সময়ই দেখা যায় শারীরিক স্বাস্থ্যের মতো আমরা মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে খুব একটা সচেতন থাকি না। এ কারণে মানসিক সমস্যাগুলো গুরুতর হয়ে পড়ে। মানসিক সমস্যা গুলোর কিছু প্রাথমিক লক্ষণ থাকে। এই প্রাথমিক লক্ষণগুলি চিহ্নিত করা গেলে চিকিৎসার প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু করা যেতে পারে। মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি হলে যে সাধারণ লক্ষণগুলো দেখা যায় তা নিয়েই আজ আমরা জানবো।

মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি হলে কীভাবে বুঝবেন?

১. আবেগের অস্থিরতা

কারও আবেগে অস্বাভাবিক পরিবর্তন দেখা দিলে, যেমন হঠাৎ করে খুব বেশি খুশি বা খুব দুঃখিত হওয়া, এটি মানসিক স্বাস্থ্য অবনতির ইঙ্গিত হতে পারে। যদি একজন ব্যক্তি খুব দ্রুত মেজাজ পরিবর্তন করে, তাহলে এটি উদ্বেগজনক। এটি বাইপোলার ডিজঅর্ডারের লক্ষণ হতে পারে।

২. বিরামহীন দুঃখ বা হতাশা

দীর্ঘ সময় ধরে বিষণ্ণতা বা দুঃখের অনুভূতি, যা স্বাভাবিক দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় বাধা সৃষ্টি করে, এটি মানসিক অবনতির লক্ষণ হতে পারে। যদি ব্যক্তি নিজের মধ্যে আগের মতো আনন্দ বা উৎসাহ অনুভব না করেন, তবে এটি গুরুতর বিষয়। জীবন নিয়ে সবসময় নেতিবাচক ধারণা পোষণ করা, হতাশ থাকা এগুলো ডিপ্রেশনের লক্ষণ হতে পারে।

৩. অতিরিক্ত উদ্বেগ বা শঙ্কা

অতিরিক্ত চিন্তা, ভয় বা অযৌক্তিক শঙ্কা অনুভব করা মানসিক অবনতির লক্ষণ। ছোট ছোট বিষয়ে অত্যধিক উদ্বিগ্ন হয়ে পড়া স্বাভাবিক আচরণ নয়। অনেক সময় দেখা যায় ব্যক্তি উদ্বিগ্ন হয়ে স্বাভাবিক কাজকর্ম সহজে করতে পারছেন না। এই অবস্থা হলে অবশ্যই মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে।

৪. সামাজিক সম্পর্ক থেকে বিচ্ছিন্নতা

যদি কেউ পরিবার, বন্ধু বা কাছের সম্পর্কগুলো থেকে হঠাৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, এটি মানসিক অবনতি নির্দেশ করতে পারে। আগের শখ বা আগ্রহে অনীহা, বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করা, ধীরে ধীরে সবকিছু থেকে নিজেকে গুটিয়ে ফেলা- এসব লক্ষণও দেখা যেতে পারে।

৫. মনোযোগের অভাব

ডিপ্রেশন, ADHD-র মতো সমস্যার অন্যতম একটি লক্ষণ হল মনোযোগের অভাব। চিন্তাভাবনা বা কাজের প্রতি মনোযোগের অভাব, ধীরে ধীরে জিনিস ভুলে যাওয়া বা কাজে মনোযোগ ধরে রাখতে না পারা কিন্তু মানসিক সমস্যার লক্ষণ। এটি ব্যক্তির কাজের দক্ষতা ও দৈনন্দিন কার্যকলাপকে প্রভাবিত করতে পারে।

৬. দৈনন্দিন চাপের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে সমস্যা

যদি কেউ দৈনন্দিন সমস্যা বা স্বাভাবিক চাপ মোকাবিলা করতে না পারে এবং এটি তার শারীরিক বা মানসিক অবস্থা খারাপ করতে শুরু করে, তাহলে এটি মানসিক অসুস্থতার লক্ষণ হতে পারে। এই অবস্থায়, কাজ বা ব্যক্তিগত জীবনে বাড়তে থাকে এবং সামঞ্জস্য বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়ে।

৭. অস্বাভাবিক চিন্তা বা বিশ্বাস

যদি কেউ অযৌক্তিক বা অস্বাভাবিক চিন্তা বা বিশ্বাস করতে শুরু করে, যেমন নিজেকে বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন মনে করা, তবে এটি মানসিক রোগের একটি সংকেত হতে পারে। এমন চিন্তাভাবনা মানসিক অসুস্থতার দিকে ইঙ্গিত করতে পারে, যেমন অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস বা বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্নতা।

৮. অতিরিক্ত রাগ বা আক্রমণাত্মক আচরণ

অতিরিক্ত রাগ বা আক্রমণাত্মক মনোভাব নিজের ও অন্যের জন্য সমস্যা তৈরি করতে পারে। কেউ যদি হঠাৎ অল্পতেই অতিরিক্ত রেগে যায়, বা রেগে গিয়ে মারমুখী হয়ে ওঠে সেটি কিন্তু কোনও জটিল মানসিক রোগের লক্ষণ হতে পারে। এক্ষেত্রে চিকিৎসা প্রয়োজন।

৯. শক্তির অভাব বা ক্লান্তি

যদি কেউ সবসময় ক্লান্ত বা শক্তিহীন অনুভব করে, এমনকি কোনও কাজ করার ইচ্ছাও না থাকে, তবে এটি মানসিক অবনতির একটি বড় লক্ষণ। দীর্ঘ সময় ধরে এমন অনুভূতি থাকা ব্যক্তির দৈনন্দিন জীবনকে প্রভাবিত করে।

১০. ঘুমের সমস্যা

মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি হলে অনেকেরই ঘুমের সমস্যা দেখা দেয়। যেমন, কেউ অতিরিক্ত ঘুমায় বা কেউ একদমই ঘুমাতে পারেন না। ঘুমের সমস্যা শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যকে গুরুতরভাবে প্রভাবিত করতে পারে।

১১. খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন

ঘুমের মতো মানসিক সমস্যা দেখা দিলে খাওয়ার অভ্যাসেও পরিবর্তন আসতে পারে। যেমন অতিরিক্ত খাওয়া বা খাওয়া কমে যাওয়া, এটি মানসিক সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। এই পরিবর্তনগুলো শারীরিক স্বাস্থ্যের উপরেও বিরূপ প্রভাব ফেলে।

১৪. আত্মহত্যার চিন্তা

যদি কেউ আত্মহত্যার চিন্তা করে বা আত্মহত্যার চেষ্টা করতে চায়, তবে এটি খুব গুরুতর একটি সংকেত এবং তাৎক্ষণিক চিকিৎসা প্রয়োজন। এমন ব্যক্তির জন্য অবিলম্বে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের সাহায্য প্রয়োজন।

যদি এই লক্ষণগুলোর মধ্যে একাধিক লক্ষণ কারো মধ্যে দেখা যায় এবং তা যদি ব্যক্তির দৈনন্দিন কার্যক্রমে প্রভাব ফেলে, তবে তাকে দ্রুত একজন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিত। প্রাথমিক স্তরে এই লক্ষণগুলি চিহ্নিত করা এবং সময়মতো চিকিৎসা গ্রহণ মানসিক সমস্যা থেকে মুক্তির পথ খুলে দিতে পারে।

ছবি- সাটারস্টক

The post মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি হলে যে প্রাথমিক লক্ষণগুলো দেখা দেয় appeared first on Shajgoj.



from Shajgoj https://ift.tt/jLU14v5
Jannatul Kawser

Comments

Popular posts from this blog

রেগুলার ব্রা vs পুশ-আপ ব্রা | সঠিক ইনার ওয়্যার কীভাবে সিলেক্ট করবেন?

রেগুলার ব্রা আর পুশ-আপ ব্রা, এই দু’টার মধ্যে আসলে পার্থক্য কী আর কখন কোনটা ইউজ করতে হবে, এই বিষয়গুলো আমাদের অনেকেরই অজানা। আমাদের অ্যাকটিভিটি আর আউটফিটের সাথে ইনার ওয়্যারেও ভ্যারিয়েশন আসে। যেমন সকালে ঘুম থেকে উঠে ওয়ার্ক আউট করছি, এরপর ভার্সিটি বা অফিসে যাচ্ছি, সন্ধ্যায় পার্টি অ্যাটেন্ড করছি। সব সময় কি আমরা সেইম ব্রা পরি? না তো! শাড়ি পরলে এক ধরনের ব্রা পরি, জিমে গেলে অন্য ধরনের ব্রা পরি, বাসায় থাকলে আবার আরেক রকম! কখন কোন ব্রা পরা উচিত বা কোন ড্রেসের সাথে কোনটা মানাবে এই বিষয়গুলো নিয়ে অনেকেরই কনফিউশন আছে। এই বিষয়গুলো এখনও অনেকের কাছেই ট্যাবু। দিন বদলাচ্ছে, এই সামাজিক ট্যাবু থেকে বেরিয়ে আসতে হবে সবাইকে। লঞ্জেরি মেয়েদের জন্য বেসিক একটি জিনিস। তাই লঞ্জেরির ক্যাটাগরিটা আমাদের জেনে রাখা উচিত। পুশ-আপ ব্রা কেন ইউজ করে, এটাই এখনও অনেক মেয়েরা জানে না! রেগুলার ব্রা এর সাথে সাথে নিজের কালেকশনে পুশ-আপ ব্রা কেন রাখা উচিত, সেটা কিন্তু অনেকে বুঝতে পারে না। চলুন এই কনফিউশনগুলো আজ দূর করা যাক। রেগুলার ব্রা vs পুশ-আপ ব্রা    বেসিক রেগুলার ব্রা-এর ক্ষেত্রে ফেব্রিক ম্যাটেরিয়াল ও কমফোর্টের বিষ...

বিবি ক্রিম vs সিসি ক্রিম | স্কিন টাইপ অনুযায়ী কোনটি আপনার জন্য স্যুইটেবল?

ন্যাচারাল মেকআপ লুকের জন্য এখন বিবি ক্রিম ও সিসি ক্রিম বেশ জনপ্রিয়। পার্টি মেকআপ বা ফুল কভারেজ মেকআপের ক্ষেত্রে ফাউন্ডেশন ইউজ করা হয়। কিন্তু যারা রেগুলার হালকা মেকআপ করে বাইরে বের হন, তাদের জন্য বেস্ট অপশন হচ্ছে BB বা CC ক্রিম । কিন্তু আমরা অনেকেই বুঝতে পারি না যে স্কিন টাইপ ও কনসার্ন অনুযায়ী কীভাবে রাইট প্রোডাক্টটি সিলেক্ট করতে হবে। এই দু’টি মেকআপ প্রোডাক্টের বেনিফিট বা কার্যকারিতা নিয়ে আজকের ফিচার। এগুলোর মধ্যে বেসিক ডিফারেন্সটা আসলে কোথায়, সেটাও জানা হয়ে যাবে। বিবি ক্রিম BB (Beauty Balm, Blemish Balm) ক্রিম স্কিনকে ইভেন টোনড করে এবং ব্লেমিশ হাইড করে ফ্ললেস লুক দেয় নিমিষেই। এতে স্কিন ময়েশ্চারাইজিং ও হাইড্রেটিং এলিমেন্টস থাকে, যার কারণে ড্রাই বা নরমাল স্কিনের জন্য এটি একদম পারফেক্ট। এর টেক্সচার ফাউন্ডেশনের থেকে লাইট, তাই কভারেজটাও হয় একদম ন্যাচারাল। মানে একদমই হেভি ফিল হয় না, আর স্কিনটাও পিকচার পারফেক্ট দেখায়। অনেক বিবি ক্রিমে সান প্রোটেকশন ফ্যাক্টর বা SPF থাকে। সিসি ক্রিম CC (Color Corrector, Complexion Corrector) ক্রিমের ফর্মুলা লাইট ওয়েট ও লং লাস্টিং। ম্যাট ফর্মুলার হওয়াতে অয়েল...

লো পোরোসিটি চুল | কীভাবে চিনবেন এবং সঠিক যত্ন নিবেন?

একরাশ সুন্দর ও ঝলমলে চুল কে না চায়? কিন্তু অনেক সময় সঠিক যত্নের অভাবে সুন্দর চুলগুলো দিন দিন নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ে। চুলের যত্নের ক্ষেত্রে আমাদের সবচেয়ে সবচেয়ে বড় ভুল হলো পোরোসিটি না বুঝে হেয়ার কেয়ার করা। এতে করে চুল আরো ড্যামেজ হওয়ার চান্স থাকে। আজকের ফিচারটি মূলত লো পোরোসিটি হেয়ার কেয়ার নিয়ে। লো পোরোসিটি চুল কীভাবে বুঝবো, কীভাবে যত্ন নিতে হবে, কী ব্যবহার করা যাবে ও যাবেনা ইত্যাদি বিস্তারিত জানবো আজকের ফিচারে। লো পোরোসিটি বলতে কী বোঝানো হয়? পোরোসিটি শব্দের বাংলা অর্থ হচ্ছে ছিদ্র। ত্বকে যেমন অসংখ্য পোর বা ছিদ্র থাকে, চুলের ক্ষেত্রেও কিন্তু তাই রয়েছে। অর্থাৎ প্রতিটি চুলে অসংখ্য ছিদ্র বিদ্যমান, যার মাধ্যমে চুলে আর্দ্রতা প্রবেশ করে এবং চুল আর্দ্রতা ধরে রাখার চেষ্টা করে। একেই হেয়ার পোরোসিটি বলে। পোরোসিটি ৩ রকম, হাই, মিডিয়াম ও লো। এই হেয়ার পোরোসিটির মাত্রা প্রত্যেক মানুষের ক্ষেত্রে আলাদা হয়ে থাকে। লো পোরোসিটির চুলগুলো কম ছিদ্র সম্পন্ন হয়ে থাকে। লো পোরোসিটি চুলের কিউটিকল লেয়ার খুব শক্ত ভাবে সংযুক্ত থাকে। যার ফলে এ ধরনের চুল আর্দ্রতা সহজে গ্রহণ করতে পারেনা, তবে একবার আর্দ্রতা গ্রহণ করলে এ ধরনের...