Skip to main content

হীরার শ্রেষ্ঠ প্রতিদ্বন্দ্বী ‘মোইসানাইট’ | আধুনিক গহনার নতুন ট্রেন্ড

বিশ্বজুড়েই রত্নের প্রতি মানুষের আকর্ষণ চিরকালীন। রত্নের জগতে মহামূল্যবান রত্ন হল হীরা। তবে ভাবুন তো, এমন একটি রত্ন, যা সৌন্দর্যের দিক থেকে হীরার মতোই মুগ্ধকর, তবু হীরার থেকে অনেক সস্তা। সেই রত্নই হলো মোইসানাইট। হীরার শ্রেষ্ঠ প্রতিদ্বন্দ্বী বলা যায় একে। বছরের পর বছর ধরে হীরার জনপ্রিয়তা থাকলেও, সম্প্রতি মোইসানাইট হীরার বিকল্প হিসেবে নজর কেড়েছে। নজরকাড়া সৌন্দর্য এবং সাশ্রয়ী মূল্যের জন্য রত্নের জগতে এক নতুন নক্ষত্র হিসেবে নিজের আলো ছড়াচ্ছে মোইসানাইট।

মোইসানাইট আসলে কী?

মোইসানাইটের গল্প শুরু হয় মহাকাশে। এটি মূলত সিলিকন কার্বাইডের একটি রত্ন। ১৮৯৩ সালে বিজ্ঞানী হেনরি মোইসান একটি উল্কাপিণ্ডের টুকরো থেকে এই রত্ন আবিষ্কার করেন। উল্কাপিণ্ড থেকে আসা বলে এটি যেন স্বর্গীয় বৈভবে ভরা। যদিও বর্তমানে এটি ল্যাবে তৈরি হয়, তবে তাতে তার উজ্জ্বলতা একটুও মলিন হয়নি, বরং হয়েছে প্রায় নিখুঁত গুণমানের।

হীরার শ্রেষ্ঠ প্রতিদ্বন্দ্বী মোইসানাইট, কিন্তু কেন?

মোইসানাইট ও হীরা—দুই রত্নই সৌন্দর্যের প্রতীক। তবে মোইসানাইটের আলাদা বৈশিষ্ট্য তাকে করে তুলেছে বিশেষ।

মোইসানাইটের অতুলনীয় ঝলক তাকে হীরার থেকেও বিশেষ করে তুলেছে, যা আজকের প্রজন্মের মনের খুব কাছের। এর প্রতিফলন ক্ষমতা হীরার থেকে বেশি হওয়ায় এটি হীরার চেয়েও বেশি উজ্জ্বল ও ঝলমলে। অথচ দামে এটি হীরার তুলনায় খুবই সস্তা। হীরার চেয়ে প্রায় ৭০% কম দামেই মোইসানাইট পাওয়া যায়।

গহনায় মোইসানাইটের আধিপত্য

গহনায় মোইসানাইটের ব্যবহার যেন এক শিল্প। এনগেজমেন্ট রিং থেকে শুরু করে রেড কার্পেটের ঝলমলে নেকলেস অথবা ব্রেসলেট– মোইসানাইট এখন সর্বত্র। তার উজ্জ্বলতা যেন একসঙ্গে আভিজাত্য ও আধুনিকতার সংমিশ্রণ ঘটায়। বিশ্বের বিখ্যাত সব গহনার ব্র্যান্ড যেমন Charles & Clovard, Brilliant Earth, Clean Origin, Vrai প্রভৃতি মোইসানাইটকে তাদের ডিজাইনের অন্তর্ভুক্ত করেছে। পরিবেশবান্ধব এই রত্নের সৌন্দর্য ও মানের প্রতি আস্থা রেখে গহনায় ব্যাপকভাবে এর সংযোজন ক্রেতারাও গ্রহণ করেছেন ইতিবাচক ভাবেই।

সেলিব্রিটিদের পছন্দের তালিকায় মোইসানাইট

বিশ্ব ফ্যাশনে সেলিব্রিটিরাই চিরকাল ট্রেন্ড সেট করেন। সম্প্রতি, মোইসানাইট সেই ট্রেন্ডের কেন্দ্রে এসেছে। কান উৎসব ২০২৪-এ, এমা চেম্বারলিন তার গলায় পরেছিলেন মোইসানাইটের নেকলেস, যা ক্যামেরার ফ্ল্যাশে যেন রাতের আকাশের তারার মতো ঝলমল করছিল। মেট গালা ২০২৪-এ, লিলি রেইনহার্ট মোইসানাইট ঝুমকা দিয়ে রেড কার্পেটে যেন ছড়িয়েছিলেন এক নতুন আলো।

বলিউডের ফ্যাশন আইকন সোনম কাপুর সাম্প্রতিক এক ফটোশুটে মোইসানাইটের এনগেজমেন্ট রিং পরে আলোচনার ঝড় তুলেছেন। এছাড়াও হ্যারি পটার সিরিজের হারমাইয়নি গ্রেঞ্জার খ্যাত এমা ওয়াটসনের বাগদানের আংটিতেও শোভা পেয়েছে মোইসানাইট।

সাসটেইনেবল ফ্যাশনের যুগে মোইসানাইট

বর্তমান বিশ্বে ফ্যাশনের ধারণা বদলে যাচ্ছে। সৌন্দর্যের পাশাপাশি এখন মানুষ খুঁজছে এমন কিছু, যা পরিবেশবান্ধব ও টেকসই। হীরার শ্রেষ্ঠ প্রতিদ্বন্দ্বী মোইসানাইট ঠিক সেই চাহিদা পূরণ করে। এটি ল্যাবে তৈরি হওয়ায় প্রাকৃতিক সম্পদের উপর নির্ভরশীল নয়, ফলে খনি থেকে উত্তোলনের ক্ষতিকর প্রভাব এড়ানো যায়। মোইসানাইট তার উজ্জ্বল দীপ্তি এবং সাশ্রয়ী মূল্যের জন্য ক্রেতাদের কাছে একটি পরিবেশবান্ধব বিকল্প হিসেবে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। হীরার তুলনায় এর কার্বন ফুটপ্রিন্ট অনেক কম। এ কারণে এটি সাসটেইনেবল ফ্যাশনের প্রতীক হয়ে উঠেছে।

বিশ্বের নামকরা ব্র্যান্ড যেমন তাদের গহনার ডিজাইনে মোইসানাইট ব্যবহার করছে, তেমন সেলিব্রিটিরাও পরিবেশবান্ধব পছন্দকে গুরুত্ব দিয়ে এটি ব্যবহার করছেন। বিভিন্ন বড় বড় ইভেন্টে মোইসানাইটের ঝলক প্রমাণ করে যে এটি কেবল একটি রত্ন নয়, বরং একটি নতুন ধারার সূচনা। পরিবেশ সচেতন প্রজন্মের জন্য মোইসানাইট হলো টেকসই, ইকো-ফ্রেন্ডলি ফ্যাশনের এক উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ।

সাসটেইনেবল ফ্যাশনের এই যুগে গয়নার জগতে মোইসানাইট একটি উজ্জ্বল তারকা। এটি প্রতীকী করে পরিবর্তনের, সচেতনতার এবং ভবিষ্যতের উজ্জ্বলতার। মোইসানাইটের আবির্ভাবের সঙ্গে রত্নের জগতে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে। এটি শুধু একটি বিকল্প নয়, বরং একটি নতুন সম্ভাবনা, যেখানে সৌন্দর্য, মূল্য এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা সম্ভব।

লেখা- জান্নাতুল কাওসার
ছবি- সাটারস্টক, epicamlv.com

The post হীরার শ্রেষ্ঠ প্রতিদ্বন্দ্বী ‘মোইসানাইট’ | আধুনিক গহনার নতুন ট্রেন্ড appeared first on Shajgoj.



from Shajgoj https://ift.tt/rtEoK9S
Munia

Comments

Popular posts from this blog

রেগুলার ব্রা vs পুশ-আপ ব্রা | সঠিক ইনার ওয়্যার কীভাবে সিলেক্ট করবেন?

রেগুলার ব্রা আর পুশ-আপ ব্রা, এই দু’টার মধ্যে আসলে পার্থক্য কী আর কখন কোনটা ইউজ করতে হবে, এই বিষয়গুলো আমাদের অনেকেরই অজানা। আমাদের অ্যাকটিভিটি আর আউটফিটের সাথে ইনার ওয়্যারেও ভ্যারিয়েশন আসে। যেমন সকালে ঘুম থেকে উঠে ওয়ার্ক আউট করছি, এরপর ভার্সিটি বা অফিসে যাচ্ছি, সন্ধ্যায় পার্টি অ্যাটেন্ড করছি। সব সময় কি আমরা সেইম ব্রা পরি? না তো! শাড়ি পরলে এক ধরনের ব্রা পরি, জিমে গেলে অন্য ধরনের ব্রা পরি, বাসায় থাকলে আবার আরেক রকম! কখন কোন ব্রা পরা উচিত বা কোন ড্রেসের সাথে কোনটা মানাবে এই বিষয়গুলো নিয়ে অনেকেরই কনফিউশন আছে। এই বিষয়গুলো এখনও অনেকের কাছেই ট্যাবু। দিন বদলাচ্ছে, এই সামাজিক ট্যাবু থেকে বেরিয়ে আসতে হবে সবাইকে। লঞ্জেরি মেয়েদের জন্য বেসিক একটি জিনিস। তাই লঞ্জেরির ক্যাটাগরিটা আমাদের জেনে রাখা উচিত। পুশ-আপ ব্রা কেন ইউজ করে, এটাই এখনও অনেক মেয়েরা জানে না! রেগুলার ব্রা এর সাথে সাথে নিজের কালেকশনে পুশ-আপ ব্রা কেন রাখা উচিত, সেটা কিন্তু অনেকে বুঝতে পারে না। চলুন এই কনফিউশনগুলো আজ দূর করা যাক। রেগুলার ব্রা vs পুশ-আপ ব্রা    বেসিক রেগুলার ব্রা-এর ক্ষেত্রে ফেব্রিক ম্যাটেরিয়াল ও কমফোর্টের বিষ...

বিবি ক্রিম vs সিসি ক্রিম | স্কিন টাইপ অনুযায়ী কোনটি আপনার জন্য স্যুইটেবল?

ন্যাচারাল মেকআপ লুকের জন্য এখন বিবি ক্রিম ও সিসি ক্রিম বেশ জনপ্রিয়। পার্টি মেকআপ বা ফুল কভারেজ মেকআপের ক্ষেত্রে ফাউন্ডেশন ইউজ করা হয়। কিন্তু যারা রেগুলার হালকা মেকআপ করে বাইরে বের হন, তাদের জন্য বেস্ট অপশন হচ্ছে BB বা CC ক্রিম । কিন্তু আমরা অনেকেই বুঝতে পারি না যে স্কিন টাইপ ও কনসার্ন অনুযায়ী কীভাবে রাইট প্রোডাক্টটি সিলেক্ট করতে হবে। এই দু’টি মেকআপ প্রোডাক্টের বেনিফিট বা কার্যকারিতা নিয়ে আজকের ফিচার। এগুলোর মধ্যে বেসিক ডিফারেন্সটা আসলে কোথায়, সেটাও জানা হয়ে যাবে। বিবি ক্রিম BB (Beauty Balm, Blemish Balm) ক্রিম স্কিনকে ইভেন টোনড করে এবং ব্লেমিশ হাইড করে ফ্ললেস লুক দেয় নিমিষেই। এতে স্কিন ময়েশ্চারাইজিং ও হাইড্রেটিং এলিমেন্টস থাকে, যার কারণে ড্রাই বা নরমাল স্কিনের জন্য এটি একদম পারফেক্ট। এর টেক্সচার ফাউন্ডেশনের থেকে লাইট, তাই কভারেজটাও হয় একদম ন্যাচারাল। মানে একদমই হেভি ফিল হয় না, আর স্কিনটাও পিকচার পারফেক্ট দেখায়। অনেক বিবি ক্রিমে সান প্রোটেকশন ফ্যাক্টর বা SPF থাকে। সিসি ক্রিম CC (Color Corrector, Complexion Corrector) ক্রিমের ফর্মুলা লাইট ওয়েট ও লং লাস্টিং। ম্যাট ফর্মুলার হওয়াতে অয়েল...

লো পোরোসিটি চুল | কীভাবে চিনবেন এবং সঠিক যত্ন নিবেন?

একরাশ সুন্দর ও ঝলমলে চুল কে না চায়? কিন্তু অনেক সময় সঠিক যত্নের অভাবে সুন্দর চুলগুলো দিন দিন নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ে। চুলের যত্নের ক্ষেত্রে আমাদের সবচেয়ে সবচেয়ে বড় ভুল হলো পোরোসিটি না বুঝে হেয়ার কেয়ার করা। এতে করে চুল আরো ড্যামেজ হওয়ার চান্স থাকে। আজকের ফিচারটি মূলত লো পোরোসিটি হেয়ার কেয়ার নিয়ে। লো পোরোসিটি চুল কীভাবে বুঝবো, কীভাবে যত্ন নিতে হবে, কী ব্যবহার করা যাবে ও যাবেনা ইত্যাদি বিস্তারিত জানবো আজকের ফিচারে। লো পোরোসিটি বলতে কী বোঝানো হয়? পোরোসিটি শব্দের বাংলা অর্থ হচ্ছে ছিদ্র। ত্বকে যেমন অসংখ্য পোর বা ছিদ্র থাকে, চুলের ক্ষেত্রেও কিন্তু তাই রয়েছে। অর্থাৎ প্রতিটি চুলে অসংখ্য ছিদ্র বিদ্যমান, যার মাধ্যমে চুলে আর্দ্রতা প্রবেশ করে এবং চুল আর্দ্রতা ধরে রাখার চেষ্টা করে। একেই হেয়ার পোরোসিটি বলে। পোরোসিটি ৩ রকম, হাই, মিডিয়াম ও লো। এই হেয়ার পোরোসিটির মাত্রা প্রত্যেক মানুষের ক্ষেত্রে আলাদা হয়ে থাকে। লো পোরোসিটির চুলগুলো কম ছিদ্র সম্পন্ন হয়ে থাকে। লো পোরোসিটি চুলের কিউটিকল লেয়ার খুব শক্ত ভাবে সংযুক্ত থাকে। যার ফলে এ ধরনের চুল আর্দ্রতা সহজে গ্রহণ করতে পারেনা, তবে একবার আর্দ্রতা গ্রহণ করলে এ ধরনের...