Skip to main content

পাইলস বা অর্শ্বরোগ কেন হয়? জেনে নিন এর প্রতিকার

মলদ্বারের নানা রকম রোগের মধ্যে একটি বহুল পরিচিত রোগ পাইলস। এটি একটি অত্যন্ত অস্বস্তিকর ও কষ্টদায়ক রোগ। পাইলস বা অর্শ্বরোগ কে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় “হেমোরয়েড” (Hemorrhoids) বলা হয়। এ রোগে মলদ্বারের নিচের দিকের রক্তনালীগুলো ফুলে উঠে স্ফীত হয়ে যায় এবং পরবর্তীতে মলদ্বারের আবরণ বা ঝিল্লীসহ নিচের দিকে নেমে আসে। যার ফলে মলত্যাগের সময় অস্বস্তি, চুলকানি, ব্যথা ও রক্তনালী ফেটে যেয়ে রক্তপাতের কারণ হতে পারে। যাদের বয়স ৫০ বছরের বেশি তাদের মধ্যে এই রোগটি বেশি দেখা যায়। পাইলস বা অর্শ্বরোগ নিয়ে আজ আমরা বিশদে জানবো।

পাইলসের প্রকারভেদ

পাইলস প্রধানত দুই ধরনের-

অভ্যন্তরীন পাইলস বা অর্শ্বরোগ

প্রচলিত অর্থে পাইলস বলতে অভ্যন্তরীণ পাইলসকেই বোঝায়। এটি মলদ্বারের ভেতরের দিক থেকে শুরু হয়। এই ধরনের পাইলসের প্রধান উপসর্গ হল মলত্যাগের সময় মলদ্বার দিয়ে রক্তপাত ও মলদ্বার বের হয়ে আসা। এই ধরনের পাইলসে সাধারণত ব্যাথা হয়না। যদি ভেতরের পাইলস মলদ্বার দিয়ে বাইরে চলে আসে এবং ভেতরে ঢুকানো সম্ভব না হয় বা ইনফেকশনের মতো কোনও জটিলতা তৈরি হয়, তাহলে ব্যথা হতে পারে। তীব্রতার উপর ভিত্তি করে এদের গ্রেড I থেকে গ্রেড IV পর্যন্ত ভাগ করা হয়েছে।

  • গ্রেড I- মলদ্বারের ভেতরের আস্তরণে ছোট ফোলাভাব যা দেখা বা অনুভব করা যায় না।
  • গ্রেড II- এটি আকারে একটু বড় হয়ে থাকে যা মলত্যাগের সময় বাইরে বের হয়ে আসে আবার নিজে থেকেই ভেতরে চলে যায়।
  • গ্রেড III- এ ক্ষেত্রে মলত্যাগের সময় আবরণী ঝিল্লী মাংসপিন্ডের মত বাইরে বের হয়ে আসে এবং একে হাত দিয়ে ঠেলে ভেতরে ঢুকিয়ে দিতে হয়।
  • গ্রেড IV- এ ক্ষেত্রে মলদ্বার বাইরে বের হয়ে আসে এবং একে ঠেলে ভেতরে ঢুকিয়ে দেয়া যায় না। এক্ষেত্রে শল্যচিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে।

বাহ্যিক পাইলস 

এ ছাড়া মলদ্বারের মুখে ও বাইরে এক ধরনের পাইলস হয়ে থাকে যাকে বাহ্যিক পাইলস বলে। এটিতে সাধারণত ব্যাথা হয়। মলদ্বারের মুখে ছোট শক্ত মাংসপিণ্ডের মতো কিছু অনুভূত হয়। কখনো কখনো এটি ফেটে রক্তপাত হতে পারে।

লক্ষণ

  • মলদ্বার দিয়ে উজ্জ্বল লাল রঙের রক্তপড়া (মলত্যাগের সময় বা মলত্যাগ ছাড়াও)
  • পায়ুপথের ফোলা ভাব এবং মিউকাস নিঃসরনের কারণে মলদ্বারের চারপাশের ত্বকে চুলকানি ও জ্বালা পোড়া হতে পারে
  • মলদ্বারে ব্যাথা ও অস্বস্তি হতে পারে
  • মলদ্বারের চারপাশে ফোলা ভাব থাকতে পারে
  • মলদ্বারের কাছে ছোট পিন্ড বা মাংসের চাকার মত লাগতে পারে

পাইলস নির্ণয়ের পদ্ধতি

পাইলস/হেমোরয়েড সাধারণত শারীরিক পরীক্ষার মাধ্যমে নির্ণয় করা হয়। ডিজিটাল রেক্টাল এক্সামিনেশন (DRE) এর মাধ্যমে চিকিৎসকরা মলদ্বারের ভেতরে পর্যবেক্ষণ করে হেমোরয়েডের ধরন নির্ণয় করে থাকেন।

কী কারণে পাইলস হয়ে থাকে?

মলদ্বারের নিচের অংশে অতিরিক্ত চাপের কারণে রক্তবাহী শিরায় চাপ পড়ে এবং এর ফলে শিরা ফুলে যেতে পারে। পরবর্তিতে মলত্যাগের সময় শিরা ফেটে রক্তপাত হতে পারে। এর কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে,

  • মলত্যাগের সময় অতিরিক্ত চাপ দেয়া
  • দীর্ঘদিন কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগা
  • বেশি সময় টয়লেটে বসে থাকা
  • আঁশযুক্ত খাবার কম খাওয়া
  • পানি কম পান করা
  • অতিরিক্ত ওজন, যা পায়ুপথের আশেপাশের শিরায় চাপ ফেলতে পারে
  • গর্ভাবস্থা
  • ভারী মালপত্র বহন করা
  • বার্ধক্য
  • দীর্ঘস্থায়ী ডায়রিয়া

এ সমস্ত কারণে মলদ্বারের শিরার সহন ক্ষমতা হ্রাস পায়। এর ফলে শিরা প্রসারিত হয় ও শিরার প্রাচীর পাতলা হয়ে যায় এবং মলত্যাগের সময় শিরা ফেটে রক্তপাত হয়।

চিকিৎসা

১) ঘরোয়া চিকিৎসাঃ ফাইবার জাতীয় খাবার যেমন ফলমূল, শাকসবজি বেশি বেশি করে খেতে হবে যাতে মল নরম হয় এবং মলত্যাগ সহজ হয়। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন ২৫-৩০ গ্রাম ফাইবার বা আঁশ জাতীয় খাবার গ্রহণ করা প্রয়োজন। নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে। পানি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে, এবং পাইলসের ঝুঁকি কমায়। নিয়মিত ব্যায়াম করলে শিরার উপর চাপ কম পড়ে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সাহায্য করে। এছাড়াও দিনে ২-৩ বার ১০-১৫ মিনিটের জন্য উষ্ণ গরম পানিতে বসলে কিছুটা উপশম হয়।

২) ঔষধের মাধ্যমেঃ হাইড্রোকর্টিসন জাতীয় মলম,ক্রিম বা সাপোজিটরি ব্যবহার করে সাময়িক ভাবে ব্যথা, চুলকানি এবং ফোলা ভাবের উপশম হতে পারে। এছাড়াও মুখে খাবার ঔষধ ব্যবহার করেও কিছুটা আরাম পাওয়া যেতে পারে। তবে এ সবই সাময়িক উপশমের উপায়, দীর্ঘমেয়াদি সমাধান নয়।

৩) শল্যচিকিৎসাঃ অপারেশনের মাধ্যমে পাইলস বা অর্শ্বরোগ এর চিকিৎসার বেশ কিছু পদ্ধতি রয়েছে যেমনঃ

রাবার ব্যান্ড লাইগেশন- এই পদ্ধতিতে অভ্যন্তরীণ পাইলসের গোড়ায় একটি ছোট্ট রাবার ব্যান্ড স্থাপন করা হয়, যার ফলে এতে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায় এবং এটি সঙ্কুচিত হয়ে পড়ে যায়।

স্ক্লেরোথেরাপি- এই পদ্ধতিতে হেমোরয়েডকে সঙ্কুচিত করার জন্য এক প্রকার রাসায়নিক দ্রবণ ইনজেকশন দেয়া হয়।

লেজার কোয়াগুলেশন- লেজার রশ্মির মাধ্যমে হেমোরয়েড এর টিস্যু পুড়িয়ে দেয়া হয়।

হেমোরইডেক্টমি- এ পদ্ধতিতে অপারেশনের মাধ্যমে সাধারণত বড় হেমোরয়েড টিস্যু অপসারণ করা হয়।

স্ট্যাপল্ড হেমোরয়েডোপেক্সি বা লঙ্গো (Longo) – এ পদ্ধতিতে একটি বিশেষ স্ট্যাপলিং ডিভাইস ব্যবহার করা হয় যার মাধ্যমে হেমোরয়েডের টিস্যু অপসারণ এবং নিচে নেমে আসা টিস্যু কে পুনরায় প্রতিস্থাপন করা যায়।

পাইলস বা অর্শ্বরোগ এর জটিলতা

এই সমস্যা প্রাণনাশকারি নয় তবে সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করলে নানান রকম জটিলতা দেখা দিতে পারে। তার মধ্যে রক্তশূন্যতা ও ইনফেকশন অন্যতম।

পাইলস বা অর্শ্বরোগ বা হেমোরয়েডের সমস্যা খুবই সাধারণ হলেও ব্যথা ও অস্বস্তির জন্য কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। জীবন যাত্রার মান পরিবর্তন, ঘরোয়া প্রতিকার ও সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে এ সমস্যা চিরতরে নির্মূল করা যায়। তবে পাইলসের লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে কারণ অনেকসময় রক্তপাতের কারণ পাইলস ছাড়াও অন্য গুরুতর রোগও হতে পারে। তাই এসব লক্ষণের কোনটি দেখা দিলে সংকোচ না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

ছবি- সাটারস্টক

The post পাইলস বা অর্শ্বরোগ কেন হয়? জেনে নিন এর প্রতিকার appeared first on Shajgoj.



from Shajgoj https://ift.tt/EDC7oW8
Munia

Comments

Popular posts from this blog

Dr. Fariah Sharmeen - Woman Oncology Specialist

Dr. Fariah Sharmeen Specialty - Associate Consultant, Oncology Degree - MBBS, FCPS (Radiotherapy) Chamber: SQUARE Hospitals Ltd. Dhaka Address: 18/F Bir Uttam Qazi Nuruzzaman Sarak, West Panthapath, Dhaka - 1205, Bangladesh Call For Appointment 10616 Call Now About: Dr. Fariah Sharmeen successfully completed her MBBS from Cumilla Medical College, and subsequently completed a one-year internship at BIRDEM Hospital, Dhaka. After completing of the internship, she started her post-graduate training in Medical Oncology at the National Institute of Cancer Research & Hospital. She started her fellowship in Radiotherapy in 2010. She completed 4 years of training at the National Institute of Cancer Research & Hospital on External Beam Radiotherapy Planning and Brachytherapy. She achieved FCPS in Radiotherapy from the Bangladesh College of Physicians & Surgeons (BCPS) in 2015. She has obtained several hands-on pieces of training on Head - Neck, Lung, Genitourina...

রেগুলার ব্রা vs পুশ-আপ ব্রা | সঠিক ইনার ওয়্যার কীভাবে সিলেক্ট করবেন?

রেগুলার ব্রা আর পুশ-আপ ব্রা, এই দু’টার মধ্যে আসলে পার্থক্য কী আর কখন কোনটা ইউজ করতে হবে, এই বিষয়গুলো আমাদের অনেকেরই অজানা। আমাদের অ্যাকটিভিটি আর আউটফিটের সাথে ইনার ওয়্যারেও ভ্যারিয়েশন আসে। যেমন সকালে ঘুম থেকে উঠে ওয়ার্ক আউট করছি, এরপর ভার্সিটি বা অফিসে যাচ্ছি, সন্ধ্যায় পার্টি অ্যাটেন্ড করছি। সব সময় কি আমরা সেইম ব্রা পরি? না তো! শাড়ি পরলে এক ধরনের ব্রা পরি, জিমে গেলে অন্য ধরনের ব্রা পরি, বাসায় থাকলে আবার আরেক রকম! কখন কোন ব্রা পরা উচিত বা কোন ড্রেসের সাথে কোনটা মানাবে এই বিষয়গুলো নিয়ে অনেকেরই কনফিউশন আছে। এই বিষয়গুলো এখনও অনেকের কাছেই ট্যাবু। দিন বদলাচ্ছে, এই সামাজিক ট্যাবু থেকে বেরিয়ে আসতে হবে সবাইকে। লঞ্জেরি মেয়েদের জন্য বেসিক একটি জিনিস। তাই লঞ্জেরির ক্যাটাগরিটা আমাদের জেনে রাখা উচিত। পুশ-আপ ব্রা কেন ইউজ করে, এটাই এখনও অনেক মেয়েরা জানে না! রেগুলার ব্রা এর সাথে সাথে নিজের কালেকশনে পুশ-আপ ব্রা কেন রাখা উচিত, সেটা কিন্তু অনেকে বুঝতে পারে না। চলুন এই কনফিউশনগুলো আজ দূর করা যাক। রেগুলার ব্রা vs পুশ-আপ ব্রা    বেসিক রেগুলার ব্রা-এর ক্ষেত্রে ফেব্রিক ম্যাটেরিয়াল ও কমফোর্টের বিষ...

বিবি ক্রিম vs সিসি ক্রিম | স্কিন টাইপ অনুযায়ী কোনটি আপনার জন্য স্যুইটেবল?

ন্যাচারাল মেকআপ লুকের জন্য এখন বিবি ক্রিম ও সিসি ক্রিম বেশ জনপ্রিয়। পার্টি মেকআপ বা ফুল কভারেজ মেকআপের ক্ষেত্রে ফাউন্ডেশন ইউজ করা হয়। কিন্তু যারা রেগুলার হালকা মেকআপ করে বাইরে বের হন, তাদের জন্য বেস্ট অপশন হচ্ছে BB বা CC ক্রিম । কিন্তু আমরা অনেকেই বুঝতে পারি না যে স্কিন টাইপ ও কনসার্ন অনুযায়ী কীভাবে রাইট প্রোডাক্টটি সিলেক্ট করতে হবে। এই দু’টি মেকআপ প্রোডাক্টের বেনিফিট বা কার্যকারিতা নিয়ে আজকের ফিচার। এগুলোর মধ্যে বেসিক ডিফারেন্সটা আসলে কোথায়, সেটাও জানা হয়ে যাবে। বিবি ক্রিম BB (Beauty Balm, Blemish Balm) ক্রিম স্কিনকে ইভেন টোনড করে এবং ব্লেমিশ হাইড করে ফ্ললেস লুক দেয় নিমিষেই। এতে স্কিন ময়েশ্চারাইজিং ও হাইড্রেটিং এলিমেন্টস থাকে, যার কারণে ড্রাই বা নরমাল স্কিনের জন্য এটি একদম পারফেক্ট। এর টেক্সচার ফাউন্ডেশনের থেকে লাইট, তাই কভারেজটাও হয় একদম ন্যাচারাল। মানে একদমই হেভি ফিল হয় না, আর স্কিনটাও পিকচার পারফেক্ট দেখায়। অনেক বিবি ক্রিমে সান প্রোটেকশন ফ্যাক্টর বা SPF থাকে। সিসি ক্রিম CC (Color Corrector, Complexion Corrector) ক্রিমের ফর্মুলা লাইট ওয়েট ও লং লাস্টিং। ম্যাট ফর্মুলার হওয়াতে অয়েল...