Skip to main content

ঘুমের মধ্যে পায়ের মাংসপেশিতে খিঁচ বা টান পড়লে কী করবেন?

ইরার প্রায় রাতেই হঠাৎ তীব্র ব্যথায় ঘুম ভেংগে যায়। পায়ের মাংসপেশিতে প্রচণ্ড ব্যথা ও টেনে ধরার অনুভূতি হয়। পা নাড়ানোও তখন প্রায় অসম্ভব বোধ হয়। কিছুক্ষণ পর আস্তে আস্তে ব্যথা কমে আসে। ইরা ভেবেই পাচ্ছে না এমনটি হবার কারণ কী এবং এর পরিত্রাণই বা কী হতে পারে? ঘুমের মধ্যে পায়ের মাংসপেশিতে খিঁচ বা টান, এই সমস্যাটি কি আপনারও আছে?

ঘুমের মধ্যে পায়ের মাংসপেশিতে খিঁচ বা টান, যাকে আমরা “muscle cramp” বলে থাকি, এটি তেমন গুরুতর সমস্যা না হলেও একটি ভীতিকর শারীরিক যন্ত্রণার নাম। ঘুমের সময় হঠাৎ করে পায়ের পেশি শক্ত হয়ে যাওয়া এবং তীব্র ব্যথার অনুভূতির মধ্য দিয়ে এটি জানান দেয়। এই ব্যথা সাধারণত রাতের বেলা বেশি হয় এবং ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়।

কী ধরনের উপসর্গ থাকে?

ঘুমের মধ্যে পায়ের মাংসপেশিতে খিঁচ বা টান পড়ার কয়েকটি সাধারণ উপসর্গ রয়েছে:

হঠাৎ ব্যথা: হঠাৎ করে পায়ের নিচের অংশে বা পায়ের গোড়ালিতে তীব্র ব্যথার সৃষ্টি হয়।

পেশির শক্ত হওয়া: পেশির মধ্যে হঠাৎ শক্ত হয়ে যাওয়ার অনুভূতি হয়, বিশেষ করে কাফ মাসল (Calf muscle) বা থাইয়ের (Thigh) পেশিতে এই ব্যাথা হয়ে থাকে।

ক্ষণস্থায়ী ব্যথা: ব্যথা সাধারণত কয়েক সেকেন্ড থেকে কয়েক মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হয়ে থাকে।

ব্যথা পুনরায় ফিরে আসা: একবার খিঁচ/টান দূর হয়ে যাওয়ার পরেও কখনো কখনো ব্যথা আবার ফিরে আসতে পারে।

মাংসপেশির দৃশ্যমান সংকোচন: মাংসপেশিতে টান পড়ার সময় আক্রান্ত পেশি দৃশ্যত সংকুচিত হয়ে যেতে পারে, যা বাইরে থেকে দেখা যায়।

কী কারণে এই ব্যথা হয়?

ঘুমের মধ্যে পায়ের পেশিতে খিঁচ বা টান পড়ার সুনির্দিষ্ট কারণ এখনো জানা যায় নি, তবে কিছু কারণ এর মাঝে সনাক্ত করা হয়েছে। যেমন:

১। পানি ও ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্যহীনতা (Imbalance): শরীরে পানি ও ইলেকট্রোলাইট (যেমন: সোডিয়াম, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ও ম্যাগনেশিয়াম) এর অভাব পেশির খিঁচের কারণ হতে পারে। ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্যহীনতা স্নায়ু এবং পেশির কার্যক্রমে প্রভাব ফেলে।

২। শারীরিক ক্লান্তি: দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকা বা অতিরিক্ত ব্যায়াম মাংসপেশিতে ক্লান্তি সৃষ্টি করে, যা পরে ঘুমের ভেতর পায়ের মাংসপেশিতে টান পড়ার কারণ হতে পারে।

৩। নির্দিষ্ট মেডিসিনের প্রভাব: কিছু মেডিসিন, যেমন ডিউরেটিকস (যা মূত্রবর্ধক মেডিসিন হিসেবে ব্যবহৃত হয়) শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি এবং লবণ বের করে দেয়, ফলে ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়।

৪। গর্ভাবস্থা: গর্ভাবস্থার শেষ দিকে পেশির খিঁচ বা ক্র্যাম্প হওয়া খুবই সাধারণ ঘটনা। এই সময়ে শরীরের অতিরিক্ত ওজন বহন, হরমোনের পরিবর্তন এবং ইলেকট্রোলাইটের ঘাটতির কারণে এ সমস্যা দেখা দেয়।

৫। বয়স: বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে পেশিগুলি দূর্বল হয়ে পড়ে এবং খিঁচের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।

৬। অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন: পানি কম খাওয়া, অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস, এবং শরীরচর্চার অভাব এ ধরনের সমস্যাকে বাড়িয়ে তোলে।

৭। অত্যধিক ঠান্ডা বা গরম: পরিবেশের তাপমাত্রার পরিবর্তন বা সঠিক তাপমাত্রা বজায় না রাখা পেশির সংকোচন ও খিঁচের কারণ হতে পারে।

৮। আঘাত বা প্রদাহ: কোনো শারীরিক আঘাত বা প্রদাহের ফলে পেশির সঠিক কার্যক্রম বিঘ্নিত হতে পারে। তখন এই ধরনের ব্যথা/ টান হতে পারে।

৯। কিছু বিশেষ রোগঃ থাইরয়েড জনিত সমস্যা, অ্যানিমিয়া কিংবা ডায়াবেটিস থাকলে ঘন ঘন এই সমস্যা হতে পারে।

এই সমস্যার কোন চিকিৎসা আছে কি?

ঘুমের মধ্যে পায়ের পেশিতে খিঁচ হলে তৎক্ষণাৎ কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করলে ব্যথা ও অস্বস্তি থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে:

ম্যাসাজ করা: আক্রান্ত স্থানে হাত দিয়ে আস্তে আস্তে ম্যাসাজ করতে হবে। এটি পেশির সংকোচন দূর করতে সহায়তা করবে।

পা সোজা টান টান করা: পায়ের আঙ্গুলগুলোকে নিজের দিকে টেনে ধরে রাখতে চেষ্টা করুন। এটি পেশির খিঁচ কমিয়ে দিতে পারে।

গরম বা ঠান্ডা সেঁক: গরম বা ঠান্ডা সেঁক দিলে পেশির সংকোচন থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে।

পানি পান করা: যদি শরীরে পানি বা ইলেকট্রোলাইটের অভাবের কারণে খিঁচ হয়, তবে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা এবং ইলেকট্রোলাইটের ঘাটতি পূরণ করতে হবে।

এক্সারসাইজ করা: পেশির খিঁচ দূর করার জন্য সহজ কিছু এক্সারসাইজ করে দেখুন। এটি ব্যথা বা পেশির টান কমাতে সহায়তা করবে।

ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে কী করতে হবে?

ঘুমের মধ্যে পেশির খিঁচ থেকে মুক্তি পেতে কিছু নিয়ম মেনে চললে এ সমস্যা সহজেই প্রতিরোধ করা সম্ভব।

নিয়মিত পানি পান করা: শরীরের পানির ভারসাম্য বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দৈনিক পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করলে শরীরে ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় থাকে এবং পেশির খিঁচ প্রতিরোধ করা যায়।

পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ: সুষম খাদ্যগ্রহণ, বিশেষত পটাসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম এবং ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার, যেমন কলা, পালং শাক, বাদাম ইত্যাদি খেলে পেশির কার্যক্ষমতা উন্নত হয়।

এক্সারসাইজ: নিয়মিত পায়ের স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ করলে পেশির সঠিক প্রসারণ হয় এবং শক্তি বাড়ে। এটি পেশিকে ভালো রাখে এবং খিঁচ কমায়।

পর্যাপ্ত বিশ্রাম: শারীরিক ক্লান্তি ও অতিরিক্ত চাপ থেকে দূরে থাকতে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে।

সঠিক জুতার ব্যবহার: অস্বস্তিকর জুতা পায়ের উপর চাপ সৃষ্টি করে। সঠিক সাপোর্ট প্রদান করে এমন আরামদায়ক জুতা ব্যবহার করতে হবে।

ওষুধ সেবন: যদি কোনো নির্দিষ্ট ওষুধ পেশির খিঁচের কারণ হয়, তবে ডাক্তারের পরামর্শে সেই ওষুধ পরিবর্তন বা কমানো যেতে পারে।

মাল্টিভিটামিন সাপ্লিমেন্ট: পেশির কার্যক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত ভিটামিন ও মিনারেল সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা যেতে পারে, তবে এটি অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী করা উচিত।

ঘুমের মধ্যে পায়ের পেশিতে খিঁচ বা টান একটি সাধারণ সমস্যা। এটি তেমন গুরুতর না হলেও খুবই কষ্টকর। সঠিক প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। যথাযথ পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ, নিয়মিত এক্সারসাইজ করা, পর্যাপ্ত পানি পান করা এবং সঠিক জীবনযাপন প্রণালী অনুসরণ করলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

লেখা- মাহমুদা আক্তার রোজী
জেরিয়াট্রিক ফিজিওথেরাপিস্ট

ছবি- সাটারস্টক

The post ঘুমের মধ্যে পায়ের মাংসপেশিতে খিঁচ বা টান পড়লে কী করবেন? appeared first on Shajgoj.



from Shajgoj https://ift.tt/fPz7Twj
Munia

Comments

Popular posts from this blog

রেগুলার ব্রা vs পুশ-আপ ব্রা | সঠিক ইনার ওয়্যার কীভাবে সিলেক্ট করবেন?

রেগুলার ব্রা আর পুশ-আপ ব্রা, এই দু’টার মধ্যে আসলে পার্থক্য কী আর কখন কোনটা ইউজ করতে হবে, এই বিষয়গুলো আমাদের অনেকেরই অজানা। আমাদের অ্যাকটিভিটি আর আউটফিটের সাথে ইনার ওয়্যারেও ভ্যারিয়েশন আসে। যেমন সকালে ঘুম থেকে উঠে ওয়ার্ক আউট করছি, এরপর ভার্সিটি বা অফিসে যাচ্ছি, সন্ধ্যায় পার্টি অ্যাটেন্ড করছি। সব সময় কি আমরা সেইম ব্রা পরি? না তো! শাড়ি পরলে এক ধরনের ব্রা পরি, জিমে গেলে অন্য ধরনের ব্রা পরি, বাসায় থাকলে আবার আরেক রকম! কখন কোন ব্রা পরা উচিত বা কোন ড্রেসের সাথে কোনটা মানাবে এই বিষয়গুলো নিয়ে অনেকেরই কনফিউশন আছে। এই বিষয়গুলো এখনও অনেকের কাছেই ট্যাবু। দিন বদলাচ্ছে, এই সামাজিক ট্যাবু থেকে বেরিয়ে আসতে হবে সবাইকে। লঞ্জেরি মেয়েদের জন্য বেসিক একটি জিনিস। তাই লঞ্জেরির ক্যাটাগরিটা আমাদের জেনে রাখা উচিত। পুশ-আপ ব্রা কেন ইউজ করে, এটাই এখনও অনেক মেয়েরা জানে না! রেগুলার ব্রা এর সাথে সাথে নিজের কালেকশনে পুশ-আপ ব্রা কেন রাখা উচিত, সেটা কিন্তু অনেকে বুঝতে পারে না। চলুন এই কনফিউশনগুলো আজ দূর করা যাক। রেগুলার ব্রা vs পুশ-আপ ব্রা    বেসিক রেগুলার ব্রা-এর ক্ষেত্রে ফেব্রিক ম্যাটেরিয়াল ও কমফোর্টের বিষ...

বিবি ক্রিম vs সিসি ক্রিম | স্কিন টাইপ অনুযায়ী কোনটি আপনার জন্য স্যুইটেবল?

ন্যাচারাল মেকআপ লুকের জন্য এখন বিবি ক্রিম ও সিসি ক্রিম বেশ জনপ্রিয়। পার্টি মেকআপ বা ফুল কভারেজ মেকআপের ক্ষেত্রে ফাউন্ডেশন ইউজ করা হয়। কিন্তু যারা রেগুলার হালকা মেকআপ করে বাইরে বের হন, তাদের জন্য বেস্ট অপশন হচ্ছে BB বা CC ক্রিম । কিন্তু আমরা অনেকেই বুঝতে পারি না যে স্কিন টাইপ ও কনসার্ন অনুযায়ী কীভাবে রাইট প্রোডাক্টটি সিলেক্ট করতে হবে। এই দু’টি মেকআপ প্রোডাক্টের বেনিফিট বা কার্যকারিতা নিয়ে আজকের ফিচার। এগুলোর মধ্যে বেসিক ডিফারেন্সটা আসলে কোথায়, সেটাও জানা হয়ে যাবে। বিবি ক্রিম BB (Beauty Balm, Blemish Balm) ক্রিম স্কিনকে ইভেন টোনড করে এবং ব্লেমিশ হাইড করে ফ্ললেস লুক দেয় নিমিষেই। এতে স্কিন ময়েশ্চারাইজিং ও হাইড্রেটিং এলিমেন্টস থাকে, যার কারণে ড্রাই বা নরমাল স্কিনের জন্য এটি একদম পারফেক্ট। এর টেক্সচার ফাউন্ডেশনের থেকে লাইট, তাই কভারেজটাও হয় একদম ন্যাচারাল। মানে একদমই হেভি ফিল হয় না, আর স্কিনটাও পিকচার পারফেক্ট দেখায়। অনেক বিবি ক্রিমে সান প্রোটেকশন ফ্যাক্টর বা SPF থাকে। সিসি ক্রিম CC (Color Corrector, Complexion Corrector) ক্রিমের ফর্মুলা লাইট ওয়েট ও লং লাস্টিং। ম্যাট ফর্মুলার হওয়াতে অয়েল...

Uttara Lake View Specialized Hospital

Uttara Lake View Specialized Hospital Address: Address: House#34, Road# 5A/10B, Sector#11, Uttara, Dhaka, 1230 Phone:  01813-904080 Available Services: 24 hours emergency service Self-contained ICU NICU HDU Cabin General Ward Corona Unit Chamber of Specialist Doctors. Also, all units are open including any complex operation. from Specialist Doctor List https://ift.tt/GFQ56KdRb via IFTTT