Skip to main content

জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস এ খাদ্যাভ্যাস ও লাইফস্টাইল পরিবর্তন কতটা জরুরি?

সাধারণত ডায়াবেটিস বলতে আমরা বুঝি রক্তে গ্লুকোজের আধিক্য। গর্ভকালীন সময়ে মায়ের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হলে তাকে জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস বা গর্ভকালীন ডায়াবেটিস (Gestational Diabetes Mellitus/GDM) বলা হয়ে থাকে। সাধারণত প্রেগনেন্সিতে হরমোনের পরিবর্তনের কারণে শরীরে ইন্সুলিন ঠিকভাবে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়। গর্ভকালীন ডায়াবেটিস সাধারণত সন্তান জন্মদানের পরই সেরে যায়। তবে কারো কারো ক্ষেত্রে পরবর্তীতে টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে এবং কোনও কোনও ক্ষেত্রে গর্ভের শিশুও ডায়াবেটিস আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। তাই এসময় সঠিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা ভীষণ জরুরি।

একজন নারী মা হওয়ার সময় অনেক রকমের জটিলতার মধ্য দিয়ে যায়। তবে এসময়ে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস বা GDM হলে পুরো প্রেগনেন্সিতে একটু বেশিই সচেতন থাকতে হয়। পাশাপাশি লাইফস্টাইল মডিফিকেশন ও খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনও এক্ষেত্রে একান্ত আবশ্যক।

জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস এর কিছু কমন লক্ষণ

(১) বারবার প্রস্রাবের প্রয়োজন হওয়া, বিশেষ করে রাতে

(২) ঘন ঘন ইউরিন ইনফেকশন দেখা দেওয়া

(৩) অতিরিক্ত পিপাসা পাওয়া

(৪) অতিরিক্ত ক্লান্তিবোধ হওয়া

(৫) বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া

(৬) ক্ষুধা বেড়ে যাওয়া

কোনও কোনও ক্ষেত্রে মায়ের ওজন কমে যেতে পারে। তবে গর্ভাবস্থায় অন্য অনেক কারণেই ওজন কমতে পারে তাই ওজন কমে গেলেই ডায়াবেটিস হয়েছে এমন ভাবা যাবে না। আমাদের মনে রাখতে হবে সবার ক্ষেত্রে জেস্টেশনাল ডায়াবেটিসের লক্ষণ এক নাও থাকতে পারে, কাজেই উপরের লক্ষণগুলো থাকলেই GDM হয়েছে এমনটা ধরে নেওয়া যাবে না। সঠিক ডায়াগনোসিসের মাধ্যমেই জানা যাবে যে সত্যিই GDM হয়েছে কিনা।

প্রেগনেন্সিতে ডায়াবেটিস পরীক্ষা করার পদ্ধতি 

জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস নির্ণয়ের জন্য সাধারণত Oral Glucose Tolerance Test করা হয়। গর্ভাবস্থায় ২৪-২৮ সপ্তাহে এই পরীক্ষা করা হলেও যেসব মায়েরা উচ্চ ঝুঁকিতে থাকেন তাদের ক্ষেত্রে এই পরীক্ষাটি আগে করা হয়।

এক্ষেত্রে খালি পেটে রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা ৬.১ মিলিমোল/লিটার (১১০মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার) বা তার চেয়ে বেশি অথবা ৭৫ গ্রাম গ্লুকোজ খাওয়ার ২ ঘণ্টা পরে ৭.৮ মিলিমোল/লিটার (১৪০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার) বা তার চেয়ে বেশি হলে তাকে GDM ধরা হয়।

জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস (GDM) হলে খাদ্যাভ্যাস যেমন হওয়া উচিত

গর্ভাবস্থায় সকলেরই সঠিক পরিমাণে সুষম খাদ্য গ্রহণ করা উচিত। গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে রোগীকে অবশ্যই একটি নির্দিষ্ট খাদ্য তালিকা মেনে চলতে হবে।

১) যতটা সম্ভব পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খেতে হবে, মুখে যা ভালো লাগবে তাই অনেক পরিমাণে খেয়ে ফেলবো এমনটা একদম করা যাবে না।

২) এ সময়ের খাদ্য তালিকা এমন হওয়া উচিত যাতে সঠিক পরিমাণে আমিষ, চর্বি, শর্করা এবং সব ধরনের প্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থ আর ভিটামিনের চাহিদা পূরণ হবে।

৩) গ্লুকোজ লেভেলকে ঠিক রাখতে সময় মেনে খাবার খেতে হবে। সকালের নাস্তা অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে এবং কোনো বেলার খাবার স্কিপ করা যাবে না, অল্প অল্প করে বারবার খেতে হবে।

৪) অতিরিক্ত ফ্যাট জাতীয় খাবার, ফাস্টফুড, ডুবো তেলে ভাজা খাবার, রিচ ফুড খাওয়া অবশ্যই পরিহার করতে হবে।

৫) নির্দিষ্ট পরিমাণে ফল ও সবজি খাদ্য তালিকায় যোগ করুন, প্রতিবেলার খাবারের সঙ্গে সালাদ রাখার চেষ্টা করুন।

৬) সরাসরি চিনি বা অতিরিক্ত মিষ্টি খাবার খাদ্যতালিকায় রাখবেন না। চর্বি ছাড়া মাছ, ডিম, মুরগির বুকের মাংস খেতে পারেন। লাল মাংস এড়িয়ে চলুন।

৭) নিয়মিত লো-ফ্যাট দুধ ও টক দই খেতে পারেন। খাবারে তেলের ব্যবহার কমাতে হবে, সম্ভব হলে রাইস ব্র্যান, সানফ্লাওয়ার বা অলিভ অয়েল ব্যবহার করুন।

৮) সাদা চিনি ও সাদা আটা ডায়েটে না রেখে পরিমিত পরিমাণে খেজুর, লাল আটা, ওটস খাদ্য তালিকায় যোগ করুন।

৯) সুগার ক্রেভিং হলে বিস্কুট, কেক, চকলেট, আইসক্রিম এর পরিবর্তে মিষ্টি ফল খেতে পারেন।

১০) চেষ্টা করতে হবে প্রতিদিন একই সময়ে খাবার খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। একসাথে অনেক খাবার না খেয়ে খাবারগুলো ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে নিতে হবে, ক্যালরি ঠিক রেখে ৩ বেলা প্রধান খাবার, ১/২ বেলা হালকা নাস্তা খেতে হবে।

১১) সকালের খাবারে লো গ্লাইসেমিক খাবারগুলো রাখতে হবে। যেকোনো বেলার খাবারে অর্ধেক শাক-সবজি, বাকি অর্ধেক প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট রাখবেন। প্রতিদিন ২ থেকে ৩ লিটার পানি পান করার চেষ্টা করবেন।

লাইফস্টাইলে যেমন পরিবর্তন জরুরি

জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস (GDM) হলে লাইফস্টাইলেও কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা প্রয়োজন, যেন গ্লুকোজ লেভেল নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং মা ও শিশু দুজনেই থাকে সুস্থ।

প্রতিবেলা খাবার খাওয়ার কিছুক্ষণ পরে ৫-১০ মিনিট হালকা হাঁটাহাঁটি করার চেষ্টা করুন। যদি অন্য কোনও কমপ্লিকেশন না থাকে তাহলে কিন্তু প্রেগনেন্সিতেও হালকা ধরনের ব্যায়াম, হাঁটা চলা, কিছু যোগব্যায়াম করা যায়। প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিটের ব্যায়াম রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। তবে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে আলোচনা করে তারপর ব্যায়াম করুন।

অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি GDM এর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এতে গর্ভের শিশুরও ভবিষ্যতে অতিরিক্ত ওজন বা টাইপ ২ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি থাকে। মায়ের হৃদরোগের ঝুঁকিও বৃদ্ধি পায়। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

স্ট্রেস ম্যানেজমেন্টের দিকে মনোযোগী হতে হবে। অতিরিক্ত মানসিক ছাপ GDM নিয়ন্ত্রণে সমস্যা তৈরি করে। তাই মনের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে হবে। মেডিটেশন এক্ষেত্রে উপকারী ভূমিকা পালন করে। প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমাতে হবে। ঘুমের ঘাটতি হলে ইন্সুলিনের কার্যক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে যা GDM এর ক্ষেত্রে আরও ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

শেষকথা

GDM বা গর্ভকালীন ডায়াবেটিস দেখা দিলে অবশ্যই একজন গাইনী ডক্টর এর পরামর্শে থেকে নিজের ও গর্ভের শিশুর অবস্থা পরীক্ষা করানো উচিত। এছাড়া পুষ্টিবিদের পরামর্শমতো গর্ভাবস্থার পুরো সময় জুড়ে সঠিক নিয়ম ও ক্যালরি মেনে খাবার খেতে হবে। অর্থাৎ সঠিক খাদ্যতালিকা অনুসরণ করা একান্ত আবশ্যক। গর্ভাবস্থায় নিয়মিতভাবে ফিজিক্যাল কন্ডিশন বুঝে হাঁটাহাটি বা হালকা ব্যায়াম করতে হবে, তবে অবশ্যই আপনার ডক্টর, এক্সপার্ট ও পুষ্টিবিদের পরামর্শ অনুযায়ী। কোনো অবস্থাতেই এক্সপার্ট এর পরামর্শ ছাড়া ভারি কোনও ব্যায়াম যাবে না।

সঠিকভাবে নিয়ম মেনে খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রা নিয়ন্ত্রণ করলে জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস হলেও মা ও শিশুর সুস্থতা নিশ্চিত করা সম্ভব। আজ এ পর্যন্তই। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।

লিখেছেন- সাদিয়া ইসরাত স্মৃতি, পুষ্টিবিদ, সিরাজুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হসপিটাল

ছবি- সাটারস্টক

The post জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস এ খাদ্যাভ্যাস ও লাইফস্টাইল পরিবর্তন কতটা জরুরি? appeared first on Shajgoj.



from Shajgoj https://ift.tt/nuOtmRT
Munia

Comments

Popular posts from this blog

রেগুলার ব্রা vs পুশ-আপ ব্রা | সঠিক ইনার ওয়্যার কীভাবে সিলেক্ট করবেন?

রেগুলার ব্রা আর পুশ-আপ ব্রা, এই দু’টার মধ্যে আসলে পার্থক্য কী আর কখন কোনটা ইউজ করতে হবে, এই বিষয়গুলো আমাদের অনেকেরই অজানা। আমাদের অ্যাকটিভিটি আর আউটফিটের সাথে ইনার ওয়্যারেও ভ্যারিয়েশন আসে। যেমন সকালে ঘুম থেকে উঠে ওয়ার্ক আউট করছি, এরপর ভার্সিটি বা অফিসে যাচ্ছি, সন্ধ্যায় পার্টি অ্যাটেন্ড করছি। সব সময় কি আমরা সেইম ব্রা পরি? না তো! শাড়ি পরলে এক ধরনের ব্রা পরি, জিমে গেলে অন্য ধরনের ব্রা পরি, বাসায় থাকলে আবার আরেক রকম! কখন কোন ব্রা পরা উচিত বা কোন ড্রেসের সাথে কোনটা মানাবে এই বিষয়গুলো নিয়ে অনেকেরই কনফিউশন আছে। এই বিষয়গুলো এখনও অনেকের কাছেই ট্যাবু। দিন বদলাচ্ছে, এই সামাজিক ট্যাবু থেকে বেরিয়ে আসতে হবে সবাইকে। লঞ্জেরি মেয়েদের জন্য বেসিক একটি জিনিস। তাই লঞ্জেরির ক্যাটাগরিটা আমাদের জেনে রাখা উচিত। পুশ-আপ ব্রা কেন ইউজ করে, এটাই এখনও অনেক মেয়েরা জানে না! রেগুলার ব্রা এর সাথে সাথে নিজের কালেকশনে পুশ-আপ ব্রা কেন রাখা উচিত, সেটা কিন্তু অনেকে বুঝতে পারে না। চলুন এই কনফিউশনগুলো আজ দূর করা যাক। রেগুলার ব্রা vs পুশ-আপ ব্রা    বেসিক রেগুলার ব্রা-এর ক্ষেত্রে ফেব্রিক ম্যাটেরিয়াল ও কমফোর্টের বিষ...

বিবি ক্রিম vs সিসি ক্রিম | স্কিন টাইপ অনুযায়ী কোনটি আপনার জন্য স্যুইটেবল?

ন্যাচারাল মেকআপ লুকের জন্য এখন বিবি ক্রিম ও সিসি ক্রিম বেশ জনপ্রিয়। পার্টি মেকআপ বা ফুল কভারেজ মেকআপের ক্ষেত্রে ফাউন্ডেশন ইউজ করা হয়। কিন্তু যারা রেগুলার হালকা মেকআপ করে বাইরে বের হন, তাদের জন্য বেস্ট অপশন হচ্ছে BB বা CC ক্রিম । কিন্তু আমরা অনেকেই বুঝতে পারি না যে স্কিন টাইপ ও কনসার্ন অনুযায়ী কীভাবে রাইট প্রোডাক্টটি সিলেক্ট করতে হবে। এই দু’টি মেকআপ প্রোডাক্টের বেনিফিট বা কার্যকারিতা নিয়ে আজকের ফিচার। এগুলোর মধ্যে বেসিক ডিফারেন্সটা আসলে কোথায়, সেটাও জানা হয়ে যাবে। বিবি ক্রিম BB (Beauty Balm, Blemish Balm) ক্রিম স্কিনকে ইভেন টোনড করে এবং ব্লেমিশ হাইড করে ফ্ললেস লুক দেয় নিমিষেই। এতে স্কিন ময়েশ্চারাইজিং ও হাইড্রেটিং এলিমেন্টস থাকে, যার কারণে ড্রাই বা নরমাল স্কিনের জন্য এটি একদম পারফেক্ট। এর টেক্সচার ফাউন্ডেশনের থেকে লাইট, তাই কভারেজটাও হয় একদম ন্যাচারাল। মানে একদমই হেভি ফিল হয় না, আর স্কিনটাও পিকচার পারফেক্ট দেখায়। অনেক বিবি ক্রিমে সান প্রোটেকশন ফ্যাক্টর বা SPF থাকে। সিসি ক্রিম CC (Color Corrector, Complexion Corrector) ক্রিমের ফর্মুলা লাইট ওয়েট ও লং লাস্টিং। ম্যাট ফর্মুলার হওয়াতে অয়েল...

Uttara Lake View Specialized Hospital

Uttara Lake View Specialized Hospital Address: Address: House#34, Road# 5A/10B, Sector#11, Uttara, Dhaka, 1230 Phone:  01813-904080 Available Services: 24 hours emergency service Self-contained ICU NICU HDU Cabin General Ward Corona Unit Chamber of Specialist Doctors. Also, all units are open including any complex operation. from Specialist Doctor List https://ift.tt/GFQ56KdRb via IFTTT