Skip to main content

ট্রান্স ফ্যাট যুক্ত খাবার না বুঝে খেয়ে নিজের ক্ষতি করছেন না তো?

আমাদের মধ্যে অনেকেই ফ্যাট বা চর্বি জাতীয় খাবার বেশ পছন্দ করেন। এ ধরনের খাবার শরীরের উপকারের থেকে অপকারই করে বেশি, কারণ আমরা তা নিয়ম মেনে পরিমিতভাবে গ্রহণ করিনা। চর্বি বা ফ্যাটের কয়েক ধরনের প্রকারভেদ আছে,যার মধ্যে ট্রান্স ফ্যাট একটি। এটি সাধারণত প্রকৃতিতে পাওয়া যায় না তাই কৃত্রিমভাবে তৈরি করা হয়। আজকের ফিচারে থাকছে ট্রান্স ফ্যাট কী এবং এটির ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে বিস্তারিত।

ট্রান্স ফ্যাট বলতে কী বোঝায়?

ট্রান্স ফ্যাট হলো ট্রান্স আইসোমার ফ্যাটি অ্যাসিড সহ এক ধরনের অসম্পৃক্ত চর্বি। শরীরের জন্য উপকারী চর্বির তুলনায় এই অসম্পৃক্ত চর্বি অনেক বেশি ক্ষতিকর। উদ্ভিজ্জ তেলের সাথে কৃত্রিম ভাবে হাইড্রোজেন যুক্ত করে বাণিজ্যিকভাবে এই ফ্যাট তৈরি করা হয়। তাই এর নাম ট্রান্সফর্মড ফ্যাট বা পরিবর্তিত চর্বি। এর ভিতরে হাইড্রোকার্বনের ডাবল বন্ড থাকে, যার ফলে এই তেল ঘরের তাপমাত্রায় শক্ত হয়ে যায় এবং হজমের সময় সহজে ভাঙতে পারেনা। ফলে তা রক্তে রয়ে যায়। শুধু তাই নয়, এই ফ্যাট যুক্ত খাবার দেহের অভ্যন্তরে ভালো কোলস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে খারাপ কোলস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।

কৃত্রিম ভাবে বানানো এই তেল দামে সস্তা এবং সহজে নষ্ট হয়না। তাই এটি দিয়ে তৈরি খাবার বেশি সময় ধরে সংরক্ষণ করা যায়। বেশিরভাগ রেস্টুরেন্ট ফ্রাইড ফুডের জন্য তাদের ডিপ ফ্রায়ারে এই আংশিকভাবে হাইড্রোজেনেটেড উদ্ভিজ্জ তেল ব্যবহার করে, কারণ এটি অন্যান্য তেলের মতো প্রায়ই পরিবর্তন করতে হয় না। যেহেতু বাইরের ভাজাপোড়া খাবার কম-বেশি সবাই খেয়ে থাকেন, তাই দেখা যায় ট্রান্স ফ্যাট ইনটেকের পরিমাণ যত দিন যায় তত বাড়তে থাকে।

ট্রান্স ফ্যাট কোথায় পাওয়া যায়?

ট্রান্স ফ্যাট কোথায় পাওয়া যায়?

চলুন জেনে নেওয়া যাক ট্রান্স ফ্যাটের মূল উৎসগুলো কী কী-

  • হাইড্রোজেনেটেড ভেজিটেবল অয়েল, যেমন- পাম অয়েল, ডালডা।
  • প্রক্রিয়াজাত খাবার যেমন বেকড কুকিজ, মাইক্রোওয়েভ করা পপকর্ন, ফাস্ট ফুড ইত্যাদি।
  • বিভিন্ন রকম প্রি প্যাকড ফুড যেমন ফ্রোজেন ফুড, রেডি টু ইট ফুড।

ট্রান্স ফ্যাট কেন স্বাস্থ্যের জন্য এত ক্ষতিকর?

ট্রান্স ফ্যাট আছে এমন খাবার খেলে নানান রকম স্বাস্থ্য ঝুঁকির সম্ভাবনা থাকে, যেমন-

ডায়াবেটিস

কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে ট্রান্স ফ্যাট দেহে তৈরি হওয়া ইনসুলিন এর কাজ করার ক্ষমতা কমিয়ে দেয়, যা টাইপ-২ ডায়াবেটিস এর ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

ট্রান্স ফ্যাট হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায়

কার্ডিও ভাস্কুলার ডিজিজ

এই ফ্যাট রক্তের এলডিএল বা খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায় এবং এইচডিএল বা ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। এই ভারসাম্যহীনতা উল্লেখযোগ্য ভাবে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়, যা বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর প্রধান কারণ।

স্থুলতা বৃদ্ধি

এই ফ্যাট আছে এমন খাবার উচ্চ মাত্রায় ক্যালরিযুক্ত এবং কম পুষ্টিগুণ সম্পন্ন হয়ে থাকে। তাই এই উপাদানযুক্ত খাবার বেশি খেলে স্থুলতা দেখা দেয়।

ইনফ্ল্যামেশন বা প্রদাহ

এই ফ্যাট রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমায়, যার ফলে দেহে নানান রকম প্রদাহের সৃষ্টি হয়।

গর্ভাবস্থায় জটিলতা

অতিরিক্ত ট্রান্স ফ্যাট গ্রহণের ফলে গর্ভধারণ করার ক্ষেত্রে নানান রকম জটিলতার সৃষ্টি হয়। যেমনঃ বন্ধ্যাত্ব, কম ওজনের বাচ্চা জন্মগ্রহণ, সময়ের আগেই শিশুর জন্ম ইত্যাদি জটিলতা।

ট্রান্স ফ্যাটের বিকল্প

ট্রান্স ফ্যাটের কি কোনো বিকল্প আছে?

এতক্ষণে সবাই নিশ্চয়ই বুঝে গিয়েছেন যদি নিয়মিতভাবে ট্রান্স ফ্যাটযুক্ত খাবার খাওয়া হয়, তাহলে স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করা কোনোভাবেই সম্ভব না। তাই সুস্থ থাকতে বিকল্প হিসেবে যা খেতে পারেন-

মনো আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট

অলিভ অয়েল, সরিষার তেল, কুমড়োর বীজ, অ্যাভোকাডো, কাজু ও চিনা বাদামে মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট পাওয়া যায়, যা রক্তের খারাপ চর্বি কমাতে সাহায্য করে এবং হৃদরোগের জন্যও খুবই উপকারী।

পলি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট

এই উপকারী ফ্যাটের মধ্যে রয়েছে ওমেগা-৩ ও ওমেগা-৬ ফ্যাটি এসিড, যা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা ও কোষের বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। স্যালমন মাছ, টুনা মাছ, তিশি বীজ, ভুট্টার তেল, আখরোট, সয়াবিন, চিয়া সিড ইত্যাদি ওমেগা-৩ ও ওমেগা-৬ ফ্যাটি এসিড যুক্ত খাবার।

স্যাচুরেটেড বা সম্পৃক্ত ফ্যাট

নারকেল তেল ও দুগ্ধজাত দ্রব্যে যে সমস্ত স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে তা পরিমিত আকারে ব্যবহার করলে ট্রান্স ফ্যাটের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।

রান্নায় ব্যবহার করতে পারেন অলিভ অয়েল

প্রাকৃতিক তেল

প্রকৃতি থেকে সরাসরি যে তেল পাওয়া যায় যেমন, সরিষার তেল, অলিভ অয়েল, সূর্যমূখীর তেল, তিলের তেল ইত্যাদি রান্না বা বেকিং এর জন্য ট্রান্সফ্যাটের ভালো বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে অনেক স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ রান্নার পাশাপাশি সালাদ ড্রেসিংয়েও এই তেল ব্যবহার করেন। আমাদের দেশে প্রাপ্ত প্রাকৃতিক তেলগুলোর মধ্যে সবচাইতে সহজলভ্য হলো সরিষার তেল। সরিষার তেল দেহ থেকে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে, যা হার্টের রোগীদের জন্য অত্যন্ত উপকারী।

তাজা খাবার

প্রক্রিয়াজাত বাজারজাত খাবারের পরিবর্তে তাজা ফলমূল, শাকসবজি, শস্যজাতীয় খাবার, চর্বিহীন প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর চর্বিজাত খাবার ইত্যাদি প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় বেশি পরিমাণে রাখা যেতে পারে, যা ট্রান্স ফ্যাট গ্রহণ কমাতে এবং একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।

পরিশেষে বলা যায়, ট্রান্স ফ্যাট গ্রহণ স্বাস্থ্যের জন্য অতি মাত্রায় ক্ষতিকর। তাই সবার মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রচারণার মাধ্যমে ট্রান্স ফ্যাটের ক্ষতিকর দিকগুলো জনসম্মুখে তুলে ধরতে হবে। সু-স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় যতটা সম্ভব প্রক্রিয়াজাত খাবার বর্জন করে তাজা খাবার রাখতে হবে। তাহলেই দেখবেন সুস্থ থাকতে পারবেন।

ছবিঃ সাটারস্টক

 

The post ট্রান্স ফ্যাট যুক্ত খাবার না বুঝে খেয়ে নিজের ক্ষতি করছেন না তো? appeared first on Shajgoj.



from Shajgoj https://ift.tt/LSMiWpY
Sumaiya Rahman

Comments

Popular posts from this blog

রেগুলার ব্রা vs পুশ-আপ ব্রা | সঠিক ইনার ওয়্যার কীভাবে সিলেক্ট করবেন?

রেগুলার ব্রা আর পুশ-আপ ব্রা, এই দু’টার মধ্যে আসলে পার্থক্য কী আর কখন কোনটা ইউজ করতে হবে, এই বিষয়গুলো আমাদের অনেকেরই অজানা। আমাদের অ্যাকটিভিটি আর আউটফিটের সাথে ইনার ওয়্যারেও ভ্যারিয়েশন আসে। যেমন সকালে ঘুম থেকে উঠে ওয়ার্ক আউট করছি, এরপর ভার্সিটি বা অফিসে যাচ্ছি, সন্ধ্যায় পার্টি অ্যাটেন্ড করছি। সব সময় কি আমরা সেইম ব্রা পরি? না তো! শাড়ি পরলে এক ধরনের ব্রা পরি, জিমে গেলে অন্য ধরনের ব্রা পরি, বাসায় থাকলে আবার আরেক রকম! কখন কোন ব্রা পরা উচিত বা কোন ড্রেসের সাথে কোনটা মানাবে এই বিষয়গুলো নিয়ে অনেকেরই কনফিউশন আছে। এই বিষয়গুলো এখনও অনেকের কাছেই ট্যাবু। দিন বদলাচ্ছে, এই সামাজিক ট্যাবু থেকে বেরিয়ে আসতে হবে সবাইকে। লঞ্জেরি মেয়েদের জন্য বেসিক একটি জিনিস। তাই লঞ্জেরির ক্যাটাগরিটা আমাদের জেনে রাখা উচিত। পুশ-আপ ব্রা কেন ইউজ করে, এটাই এখনও অনেক মেয়েরা জানে না! রেগুলার ব্রা এর সাথে সাথে নিজের কালেকশনে পুশ-আপ ব্রা কেন রাখা উচিত, সেটা কিন্তু অনেকে বুঝতে পারে না। চলুন এই কনফিউশনগুলো আজ দূর করা যাক। রেগুলার ব্রা vs পুশ-আপ ব্রা    বেসিক রেগুলার ব্রা-এর ক্ষেত্রে ফেব্রিক ম্যাটেরিয়াল ও কমফোর্টের বিষ...

বিবি ক্রিম vs সিসি ক্রিম | স্কিন টাইপ অনুযায়ী কোনটি আপনার জন্য স্যুইটেবল?

ন্যাচারাল মেকআপ লুকের জন্য এখন বিবি ক্রিম ও সিসি ক্রিম বেশ জনপ্রিয়। পার্টি মেকআপ বা ফুল কভারেজ মেকআপের ক্ষেত্রে ফাউন্ডেশন ইউজ করা হয়। কিন্তু যারা রেগুলার হালকা মেকআপ করে বাইরে বের হন, তাদের জন্য বেস্ট অপশন হচ্ছে BB বা CC ক্রিম । কিন্তু আমরা অনেকেই বুঝতে পারি না যে স্কিন টাইপ ও কনসার্ন অনুযায়ী কীভাবে রাইট প্রোডাক্টটি সিলেক্ট করতে হবে। এই দু’টি মেকআপ প্রোডাক্টের বেনিফিট বা কার্যকারিতা নিয়ে আজকের ফিচার। এগুলোর মধ্যে বেসিক ডিফারেন্সটা আসলে কোথায়, সেটাও জানা হয়ে যাবে। বিবি ক্রিম BB (Beauty Balm, Blemish Balm) ক্রিম স্কিনকে ইভেন টোনড করে এবং ব্লেমিশ হাইড করে ফ্ললেস লুক দেয় নিমিষেই। এতে স্কিন ময়েশ্চারাইজিং ও হাইড্রেটিং এলিমেন্টস থাকে, যার কারণে ড্রাই বা নরমাল স্কিনের জন্য এটি একদম পারফেক্ট। এর টেক্সচার ফাউন্ডেশনের থেকে লাইট, তাই কভারেজটাও হয় একদম ন্যাচারাল। মানে একদমই হেভি ফিল হয় না, আর স্কিনটাও পিকচার পারফেক্ট দেখায়। অনেক বিবি ক্রিমে সান প্রোটেকশন ফ্যাক্টর বা SPF থাকে। সিসি ক্রিম CC (Color Corrector, Complexion Corrector) ক্রিমের ফর্মুলা লাইট ওয়েট ও লং লাস্টিং। ম্যাট ফর্মুলার হওয়াতে অয়েল...

Uttara Lake View Specialized Hospital

Uttara Lake View Specialized Hospital Address: Address: House#34, Road# 5A/10B, Sector#11, Uttara, Dhaka, 1230 Phone:  01813-904080 Available Services: 24 hours emergency service Self-contained ICU NICU HDU Cabin General Ward Corona Unit Chamber of Specialist Doctors. Also, all units are open including any complex operation. from Specialist Doctor List https://ift.tt/GFQ56KdRb via IFTTT