Skip to main content

অতিরিক্ত গরমে সুস্থ থাকতে এড়িয়ে চলুন এই ভুলগুলো

আমাদের দেশে বেশিরভাগ সময়ে গরম আবহাওয়া বিরাজ করছে। বাতাসের আর্দ্রতাও কমে গেছে। তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। অতিরিক্ত গরমে অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা যেমন ভাইরাসজনিত জ্বর, সর্দি-কাশি, জন্ডিস, শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি ইত্যাদি বেড়ে যেতে পারে। তবে কারো কারো ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি বেশি বলে তাদের বেলায় সতর্কতামূলক পদক্ষেপও বেশি নিতে হয়। অতিরিক্ত গরমে সুস্থ থাকতে এড়িয়ে চলুন এই ভুলগুলো!

সবচেয়ে ঝুঁকিতে যারা

  • শিশু (৫ বছরের নিচে বয়স) এরা সাধারণত নিজের শারীরিক অসুবিধার কথা বলতে পারে না
  • বয়স্ক ব্যক্তি (৬৫ বছর বা তার বেশি)
  • মানসিক রোগী বা প্রতিবন্ধী ব্যক্তি
  • শ্রমজীবী ব্যক্তি, যেমন রিকশাচালক, কৃষক, নির্মাণশ্রমিক
  • যাদের ওজন অতিরিক্ত বেশি
  • যারা শারীরিকভাবে অসুস্থ, বিশেষ করে যাদের হৃদরোগ বা উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিডনি রোগ ইত্যাদি আছে
  • প্রেগনেন্ট
  • মদ্যপানকারীরাও ঝুঁকিতে থাকেন, কারণ মদ্যপানের কারণে শরীরের তাপমাত্রা রেগুলেশনের ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়

অতিরিক্ত গরমের যে ধরনের অসুস্থতা হতে পারে

১) অতিরিক্ত ঘামের কারণে শরীর থেকে লবণ ও পানি বের হয়ে শরীরের ইলেক্ট্রোলাইট ইমব্যালেন্স হয়ে যেতে পারে।

২) অতিরিক্ত গরমে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায়। তাপদাহ, ডায়রিয়া দু’য়ে মিলে রোগী মৃত্যুঝুঁকিতে পড়তে পারেন।

৩) স্কিন শুষ্ক হয়ে যায়, সেই সাথে চামড়ার তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা পরিবর্তিত হয়ে বিভিন্ন চর্মরোগ হতে পারে।

৪) ক্লান্তিবোধ হয়। অতিরিক্ত গরমে বেশিক্ষণ থাকলে হিটস্ট্রোক হয়ে মৃত্যু ঝুঁকিও দেখা দিতে পারে।

হিট স্ট্রোকের লক্ষণগুলো কী?

  • বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া
  • শরীরের তাপমাত্রা অত্যধিক বেড়ে যাওয়া। ১০৪° ডিগ্রি ফারেনহাইট বা তার বেশি তাপমাত্রা হিট স্ট্রোকের লক্ষণ
  • প্রস্রাব কমে যাওয়া বা জ্বালাপোড়া করা
  • শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হয়ে যেতে পারে
  • হার্ট রেট বৃদ্ধি পেতে পারে
  • ঘামতে ঘামতে এক পর্যায়ে ঘাম থেমে যেয়ে ত্বক গরম ও লালচে হয়ে যাওয়া
  • মাথাব্যথা, মাথা ঝিমঝিম, অস্বাভাবিক আচরণ
  • হঠাৎ খিঁচুনি, অজ্ঞান হয়ে পড়া ইত্যাদি সবই হিটস্ট্রোকের লক্ষণ

হিট স্ট্রোক হলে করণীয়

রোগীকে দ্রুত শীতল স্থানে নিয়ে বাতাস করুন অথবা ফ্যানের নিচে রাখুন। শরীরে অতিরিক্ত কাপড় চোপড় থাকলে তা খুলে ফেলুন। শরীরে ঠাণ্ডা পানি ছিটিয়ে দিন, কাপড়ে বরফ মুড়িয়ে শরীর মুছে দেয়া যেতে পারে। ভেজা কাপড় দিয়ে ঘাড়, বগল মুছে দিন। শরবত পান করতে দিন। রোগী জ্ঞান হারিয়ে ফেললে দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে নিন।

কোন ভুলগুলো এড়িয়ে চলতে হবে

  • প্রচণ্ড গরমের মধ্যে দুপুরের দিকে যথাসম্ভব বাইরে বের হওয়া থেকে বিরত থাকুন, সরাসরি রোদ এড়িয়ে চলুন
  • বাইরে বের হলে ছাতা, টুপি/ক্যাপ, সানগ্লাস অনেকেই ব্যবহার করেন না; এগুলো সব সময় ক্যারি করুন সাথে
  • কালো বা ডীপ কালারের সিন্থেটিক ফেব্রিক এড়িয়ে চলে হালকা কালারের ঢিলেঢালা সুতির জামা পড়ুন
  • যতটা পানি শরীর থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে, তা পূরণ হওয়া চাই। পর্যাপ্ত লিকুইড ইনটেক করেন না অনেকেই, যার কারণে ডিহাইড্রেটেড হয়ে যায় শরীর
  • সহজে হজম হয় এমন খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন এবং বাসি, খোলা, তেলে ভাজা খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন
  • বাইরে থেকে এসেই ফ্রিজ থেকে বের করে ঠাণ্ডা পানি পান করবেন না, তীব্র গরমের মধ্যে খুব ঠান্ডা কিছু খাওয়া ঠিক নয়
  • দিনের বেলায় একটানা শারীরিক পরিশ্রম করা থেকে বিরত থাকুন, শরীরের সহ্য ক্ষমতার অতিরিক্ত পরিশ্রম করা যাবে না
  • সম্ভব হলে একাধিকবার পানির ঝাপটা দিন, গোসল করুন
  • ইউরিনের কালারের দিকে নজর রাখুন, হলুদ হলে অবশ্যই পানি পানের পরিমাণ বৃদ্ধি করুন
  • ঘরের পরিবেশ যেন অতিরিক্ত গরম বা ভ্যাপসা না হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন, ঘরে কিংবা কর্মস্থলে পর্যাপ্ত বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখুন

তাপদাহ থেকে বাঁচতে যা যা করণীয়

১) প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি ও তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে। ফলের রস, ডাবের পানি, পরিমিত পরিমাণে স্যালাইন খাওয়া যেতে পারে।

২) ডায়রিয়া হলে ঘন ঘন খাবার স্যালাইন ও অন্যান্য তরল খাবার খাওয়ান। ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশুকে মায়ের দুধ সহ অন্যান্য স্বাভাবিক খাবার বারে বারে খেতে দিন।

৩) শিশু ও বয়স্কদের প্রতি আলাদা নজর রাখতে হবে। তীব্র গরমে প্রয়োজন না হলে শিশুদের ঘরের বাইরে বের করবেন না।

৪) বেশিক্ষণ ধরে সূর্যের কড়া তাপে থাকা যাবে না। বাইরে যদি যেতেই হয়, সকাল সকাল কাজ সেরে নিন। সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন, এতে ত্বক সুরক্ষিত থাকবে।

৫) নিজেদের পাশাপাশি আপনার পোষা প্রাণী আর আশেপাশের প্রাণীদের দিকেও একটু নজর দিতে হবে। এই গরমে তাদেরও প্রাণ ওষ্ঠাগত। নিজের আশেপাশে তৃষ্ণার্ত কোনো প্রাণী দেখলে তাকে একটু পানি খাবার ব্যবস্থা করে দিন। বারান্দা বা ছাদে পানি রাখুন পাখিদের জন্য।

আজ এই পর্যন্তই। বেশি অসুস্থবোধ করলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। এই সাবধানতাগুলো মেনে চললে এবং হাইড্রেটেড থাকার ব্যবস্থা করলে নিজে ও প্রিয়জনকে চরম তাপদাহের হাত থেকে নিরাপদ রাখা যাবে। মনে রাখতে হবে, এই গরমে নিরাপদ থাকার জন্য প্রয়োজন সতর্কতা, প্রস্তুতি ও পরিবর্তিত অবস্থার সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার ইচ্ছা।

ছবি- সাটারস্টক, সাজগোজ

 

The post অতিরিক্ত গরমে সুস্থ থাকতে এড়িয়ে চলুন এই ভুলগুলো appeared first on Shajgoj.



from Shajgoj https://ift.tt/4WRXLYP
Munia

Comments

Popular posts from this blog

রেগুলার ব্রা vs পুশ-আপ ব্রা | সঠিক ইনার ওয়্যার কীভাবে সিলেক্ট করবেন?

রেগুলার ব্রা আর পুশ-আপ ব্রা, এই দু’টার মধ্যে আসলে পার্থক্য কী আর কখন কোনটা ইউজ করতে হবে, এই বিষয়গুলো আমাদের অনেকেরই অজানা। আমাদের অ্যাকটিভিটি আর আউটফিটের সাথে ইনার ওয়্যারেও ভ্যারিয়েশন আসে। যেমন সকালে ঘুম থেকে উঠে ওয়ার্ক আউট করছি, এরপর ভার্সিটি বা অফিসে যাচ্ছি, সন্ধ্যায় পার্টি অ্যাটেন্ড করছি। সব সময় কি আমরা সেইম ব্রা পরি? না তো! শাড়ি পরলে এক ধরনের ব্রা পরি, জিমে গেলে অন্য ধরনের ব্রা পরি, বাসায় থাকলে আবার আরেক রকম! কখন কোন ব্রা পরা উচিত বা কোন ড্রেসের সাথে কোনটা মানাবে এই বিষয়গুলো নিয়ে অনেকেরই কনফিউশন আছে। এই বিষয়গুলো এখনও অনেকের কাছেই ট্যাবু। দিন বদলাচ্ছে, এই সামাজিক ট্যাবু থেকে বেরিয়ে আসতে হবে সবাইকে। লঞ্জেরি মেয়েদের জন্য বেসিক একটি জিনিস। তাই লঞ্জেরির ক্যাটাগরিটা আমাদের জেনে রাখা উচিত। পুশ-আপ ব্রা কেন ইউজ করে, এটাই এখনও অনেক মেয়েরা জানে না! রেগুলার ব্রা এর সাথে সাথে নিজের কালেকশনে পুশ-আপ ব্রা কেন রাখা উচিত, সেটা কিন্তু অনেকে বুঝতে পারে না। চলুন এই কনফিউশনগুলো আজ দূর করা যাক। রেগুলার ব্রা vs পুশ-আপ ব্রা    বেসিক রেগুলার ব্রা-এর ক্ষেত্রে ফেব্রিক ম্যাটেরিয়াল ও কমফোর্টের বিষ...

বিবি ক্রিম vs সিসি ক্রিম | স্কিন টাইপ অনুযায়ী কোনটি আপনার জন্য স্যুইটেবল?

ন্যাচারাল মেকআপ লুকের জন্য এখন বিবি ক্রিম ও সিসি ক্রিম বেশ জনপ্রিয়। পার্টি মেকআপ বা ফুল কভারেজ মেকআপের ক্ষেত্রে ফাউন্ডেশন ইউজ করা হয়। কিন্তু যারা রেগুলার হালকা মেকআপ করে বাইরে বের হন, তাদের জন্য বেস্ট অপশন হচ্ছে BB বা CC ক্রিম । কিন্তু আমরা অনেকেই বুঝতে পারি না যে স্কিন টাইপ ও কনসার্ন অনুযায়ী কীভাবে রাইট প্রোডাক্টটি সিলেক্ট করতে হবে। এই দু’টি মেকআপ প্রোডাক্টের বেনিফিট বা কার্যকারিতা নিয়ে আজকের ফিচার। এগুলোর মধ্যে বেসিক ডিফারেন্সটা আসলে কোথায়, সেটাও জানা হয়ে যাবে। বিবি ক্রিম BB (Beauty Balm, Blemish Balm) ক্রিম স্কিনকে ইভেন টোনড করে এবং ব্লেমিশ হাইড করে ফ্ললেস লুক দেয় নিমিষেই। এতে স্কিন ময়েশ্চারাইজিং ও হাইড্রেটিং এলিমেন্টস থাকে, যার কারণে ড্রাই বা নরমাল স্কিনের জন্য এটি একদম পারফেক্ট। এর টেক্সচার ফাউন্ডেশনের থেকে লাইট, তাই কভারেজটাও হয় একদম ন্যাচারাল। মানে একদমই হেভি ফিল হয় না, আর স্কিনটাও পিকচার পারফেক্ট দেখায়। অনেক বিবি ক্রিমে সান প্রোটেকশন ফ্যাক্টর বা SPF থাকে। সিসি ক্রিম CC (Color Corrector, Complexion Corrector) ক্রিমের ফর্মুলা লাইট ওয়েট ও লং লাস্টিং। ম্যাট ফর্মুলার হওয়াতে অয়েল...

লো পোরোসিটি চুল | কীভাবে চিনবেন এবং সঠিক যত্ন নিবেন?

একরাশ সুন্দর ও ঝলমলে চুল কে না চায়? কিন্তু অনেক সময় সঠিক যত্নের অভাবে সুন্দর চুলগুলো দিন দিন নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ে। চুলের যত্নের ক্ষেত্রে আমাদের সবচেয়ে সবচেয়ে বড় ভুল হলো পোরোসিটি না বুঝে হেয়ার কেয়ার করা। এতে করে চুল আরো ড্যামেজ হওয়ার চান্স থাকে। আজকের ফিচারটি মূলত লো পোরোসিটি হেয়ার কেয়ার নিয়ে। লো পোরোসিটি চুল কীভাবে বুঝবো, কীভাবে যত্ন নিতে হবে, কী ব্যবহার করা যাবে ও যাবেনা ইত্যাদি বিস্তারিত জানবো আজকের ফিচারে। লো পোরোসিটি বলতে কী বোঝানো হয়? পোরোসিটি শব্দের বাংলা অর্থ হচ্ছে ছিদ্র। ত্বকে যেমন অসংখ্য পোর বা ছিদ্র থাকে, চুলের ক্ষেত্রেও কিন্তু তাই রয়েছে। অর্থাৎ প্রতিটি চুলে অসংখ্য ছিদ্র বিদ্যমান, যার মাধ্যমে চুলে আর্দ্রতা প্রবেশ করে এবং চুল আর্দ্রতা ধরে রাখার চেষ্টা করে। একেই হেয়ার পোরোসিটি বলে। পোরোসিটি ৩ রকম, হাই, মিডিয়াম ও লো। এই হেয়ার পোরোসিটির মাত্রা প্রত্যেক মানুষের ক্ষেত্রে আলাদা হয়ে থাকে। লো পোরোসিটির চুলগুলো কম ছিদ্র সম্পন্ন হয়ে থাকে। লো পোরোসিটি চুলের কিউটিকল লেয়ার খুব শক্ত ভাবে সংযুক্ত থাকে। যার ফলে এ ধরনের চুল আর্দ্রতা সহজে গ্রহণ করতে পারেনা, তবে একবার আর্দ্রতা গ্রহণ করলে এ ধরনের...