Skip to main content

হেলদি লাইফস্টাইল বলতে ঠিক কী বোঝানো হয়?

ভালো থাকতে চাইলে হেলদি লাইফস্টাইল মেনটেইন করুন- এই কথাটি শোনেননি এমন মানুষ কিন্তু খুবই কম। কিন্তু আমরা কি সত্যিই জানি যে একটি হেলদি লাইফস্টাইল বলতে আসলে কী বোঝায়? বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO ) এর মতে, সুস্থ থাকা মানে হলো “সম্পূর্ণ শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিকভাবে সুস্থতা” এবং এটি শুধুমাত্র রোগ বা দুর্বলতার অনুপস্থিতি নয়। অর্থাৎ হেলদি লাইফস্টাইল সম্পর্কে কথা বলতে হলে আমাদের কিছু বিষয় নিয়ে আগে জানতে হবে, যার মধ্যে রয়েছে খাদ্য, শারীরিক ব্যায়াম, প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্য সেবা, পরিবেশের সাথে সম্পর্ক, সামাজিক কার্যকলাপ ইত্যাদি। আজকের ফিচার এই হেলদি লাইফস্টাইলের এ টু জেড নিয়ে।

হেলদি লাইফস্টাইল এর উপাদান কী কী?

হেলদি লাইফস্টাইল রাতারাতি অর্জিত হয় না, কিন্তু আমাদের এই লাইফস্টাইল মেনটেইন করতে কনসিসটেন্ট হতে হবে। চলুন জেনে নেওয়া যাক এই লাইফস্টাইলের কিছু উপাদান সম্পর্কে।

শারীরিক ব্যায়াম

বিশেষজ্ঞদের মতে, আপনার প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট ব্যায়াম করা উচিত। যাদের পক্ষে জিমে যাওয়া সম্ভব না, তাদের জন্য দ্রুত গতিতে হাঁটা খুব ভালো ব্যায়াম। এটি অতিরিক্ত ক্যালরি বার্ন করার পাশাপাশি পেশি ও হাড়কে শক্তিশালী করতেও সাহায্য করে। এমনকি নিয়মিত ব্যায়াম করলে তা উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল ও রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতেও সহায়তা করে। এছাড়াও এটি স্ট্রেস লেভেল কমাতে অবদান রাখে এবং ভালো ঘুম হতে সহায়তা করে।

হেলদি লাইফস্টাইল বজায় রাখতে সুষম খাদ্য গ্রহণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ

সুষম খাদ্য

হেলদি লাইফস্টাইল বজায় রাখতে সুষম খাদ্য গ্রহণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রেগুলার ডায়েটে খাবারের রেশিও ঠিক রাখার জন্য যে খাবার প্লেটকে বোঝানো হয় তাকে মাই প্লেট বলে। খাবারের ক্ষেত্রে আমাদের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত শরীরের পুষ্টির চাহিদা বজায় রাখা এবং আমাদের সারাদিনের জন্য পর্যাপ্ত শক্তি অর্জন করা।

মাই প্লেটকে আনুমানিক ৩০% শস্য, ৪০% শাকসবজি, ১০ % ফল এবং ২০% প্রোটিন এই চারটি বিভাগে বিভক্ত করা হয়েছে, যার সাথে ছোট দইয়ের কাপ বা দুধের গ্লাস যোগ করা যেতে পারে। এই রেশিওতে খাবার খেলে পুষ্টির চাহিদা যেমন পূরণ হবে, তেমনি কাজ করার সময় এনার্জিও কমবে না।

সোশ্যাল লাইফ

আপনার সোশ্যাল লাইফ বা সামাজিক জীবন আসলে আপনার স্বাস্থ্যের একটি মৌলিক দিক। সামাজিক বিচ্ছিন্নতা শারীরিক অক্ষমতা, ডিমেনশিয়া সহ বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে। অন্যদের সাথে হাসিখুশি থাকা এবং নিজেকে ভালো রাখার উপায় আপনাকেই খুঁজে বের করতে হবে। জীবনে যত ব্যস্ততাই থাকুক না কেন, চেষ্টা করুন নিজের আপনজনদের সাথে সময় কাটাতে। এতে করে মানসিক শান্তি বজায় থাকবে, যা আপনাকে সার্বিকভাবে সুস্থ রাখতেও বহুগুণে সহায়ক হবে।

মানসিক ভারসাম্য

মানসিক ভারসাম্য কথাটা শুনলেই অনেকে মনে করেন বোধহয় কোনো রোগের কথা বলছি। আসলে এটি শুধুমাত্র মানসিক রোগের অস্তিত্বকেই বোঝায় না, বরং মানসিক সুস্থতার অবস্থাকেও নির্দেশ করে। সামাজিক সম্পর্কগুলো ভালো রাখার পাশাপাশি দৈনন্দিন জীবনের ব্যক্তিগত ও পেশাগত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার জন্য ভাল মানসিক স্বাস্থ্য বজায় রাখা খুবই প্রয়োজন। যদি আপনার দিনের বড় একটা সময় স্ট্রেস, অ্যাংজাইটি বা ক্লান্তিতে কেটে যায়, তাহলে তা মানসিক অবস্থা ভালো না থাকা নির্দেশ করে।

অবসর সময় উপভোগ করতে শিখুন

অবসর সময় উপভোগ করা

বেঁচে থাকার জন্য কাজ করার পরিবর্তে কাজ করার জন্য বেঁচে থাকা মানুষের সংখ্যা কিন্তু অনেক। হতে পারে আপনি তাদের মধ্যে একজন! অবসর সময় উপভোগ করা কিন্তু হেলদি লাইফস্টাইল এর একটা পার্ট। তাই আপনার অবসর সময় উপভোগ করুন। মনে রাখবেন, যথাযথ বিশ্রাম নেওয়াই আপনাকে এগিয়ে যাওয়ার এনার্জি দিবে।

স্বাস্থ্যকর কনজুগাল লাইফ বজায় রাখা

স্বাস্থ্যকর কনজুগাল লাইফ আপনার কার্ডিওভাসকুলার ও মেন্টাল হেলথ ভালো রাখতে সাহায্য করে। তবে গনোরিয়া ও সিফিলিসের মতো যৌন সংক্রামিত রোগ থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য, আপনার সর্বদা নিরাপদ যৌন অভ্যাস করা উচিত।

ভালো ঘুম নিশ্চিত করুন

ভালো থাকতে হলে পর্যাপ্ত ঘুমানো প্রয়োজন। এটি আপনাকে বিশ্রাম করতে এবং পরের দিনের জন্য এনার্জেটিক থাকতে সহায়তা করবে। অনিদ্রা উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ কিংবা বিভিন্ন মানসিক রোগের কারণ, তাই ভালো ঘুম নিশ্চিত করুন। চেষ্টা করুন কমপক্ষে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমাতে।

হেলদি লাইস্টাইল কেন গুরুত্বপূর্ণ

হেলদি লাইফস্টাইলের গুরুত্ব

চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক আমাদের সবার জন্য হেলদি লাইফস্টাইল মেনটেইন করা কেন এত গুরুত্বপূর্ণ। যদি আপনি স্বাস্থ্যসম্মত ভাবে জীবনযাপন করেন, তাহলে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসের মতো কঠিন রোগগুলো থেকে অনেকটা দূরে থাকতে পারবেন। সেই সাথে প্রতিদিনের কাজে এনার্জি পাবেন, সহজে ক্লান্ত হবেন না এবং দেখবেন নিজের প্রোডাক্টিভিটিও বাড়বে।

এর পাশাপাশি যদি স্বল্পমেয়াদে বা অদূর ভবিষ্যতে আপনার লক্ষ্য গর্ভবতী হওয়া হয়, তবে আপনাকে অবশ্যই একটি স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করতে হবে। মহিলাদের জন্য এই লাইফস্টাইল ডিম্বস্ফোটন ও জরায়ুর স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে সাহায্য করতে পারে। এই দু’টি বিষয়ই গর্ভধারণের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। পুরুষদের ক্ষেত্রে একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা তাদের শুক্রাণুর গুণমান বাড়াতে সাহায্য করবে।

গর্ভাবস্থার আগে, চলাকালীন ও পরে এসব স্বাস্থ্যকর অভ্যাস চালিয়ে যাওয়া উচিত। এতে মা ও বাচ্চা সবাই সুস্থ থাকবে। ঠিক এইভাবে, আপনার শিশুর সঠিক বিকাশের জন্য যদি এই স্বাস্থ্যকর অভ্যাসগুলো অল্প বয়স থেকেই শুরু করা হয়, তাহলে এগুলো মেনটেইন করাও একদমই কঠিন হবে না। অতএব, আমাদের সবার উচিত নিজের, পরিবারের ও সমাজের সবার ভালোর জন্য সবসময় হেলদি লাইফস্টাইল মেনটেইন করা।

ছবিঃ সাটারস্টক

The post হেলদি লাইফস্টাইল বলতে ঠিক কী বোঝানো হয়? appeared first on Shajgoj.



from Shajgoj https://ift.tt/DGwmtHZ
Sumaiya Rahman

Comments

Popular posts from this blog

রেগুলার ব্রা vs পুশ-আপ ব্রা | সঠিক ইনার ওয়্যার কীভাবে সিলেক্ট করবেন?

রেগুলার ব্রা আর পুশ-আপ ব্রা, এই দু’টার মধ্যে আসলে পার্থক্য কী আর কখন কোনটা ইউজ করতে হবে, এই বিষয়গুলো আমাদের অনেকেরই অজানা। আমাদের অ্যাকটিভিটি আর আউটফিটের সাথে ইনার ওয়্যারেও ভ্যারিয়েশন আসে। যেমন সকালে ঘুম থেকে উঠে ওয়ার্ক আউট করছি, এরপর ভার্সিটি বা অফিসে যাচ্ছি, সন্ধ্যায় পার্টি অ্যাটেন্ড করছি। সব সময় কি আমরা সেইম ব্রা পরি? না তো! শাড়ি পরলে এক ধরনের ব্রা পরি, জিমে গেলে অন্য ধরনের ব্রা পরি, বাসায় থাকলে আবার আরেক রকম! কখন কোন ব্রা পরা উচিত বা কোন ড্রেসের সাথে কোনটা মানাবে এই বিষয়গুলো নিয়ে অনেকেরই কনফিউশন আছে। এই বিষয়গুলো এখনও অনেকের কাছেই ট্যাবু। দিন বদলাচ্ছে, এই সামাজিক ট্যাবু থেকে বেরিয়ে আসতে হবে সবাইকে। লঞ্জেরি মেয়েদের জন্য বেসিক একটি জিনিস। তাই লঞ্জেরির ক্যাটাগরিটা আমাদের জেনে রাখা উচিত। পুশ-আপ ব্রা কেন ইউজ করে, এটাই এখনও অনেক মেয়েরা জানে না! রেগুলার ব্রা এর সাথে সাথে নিজের কালেকশনে পুশ-আপ ব্রা কেন রাখা উচিত, সেটা কিন্তু অনেকে বুঝতে পারে না। চলুন এই কনফিউশনগুলো আজ দূর করা যাক। রেগুলার ব্রা vs পুশ-আপ ব্রা    বেসিক রেগুলার ব্রা-এর ক্ষেত্রে ফেব্রিক ম্যাটেরিয়াল ও কমফোর্টের বিষ...

বিবি ক্রিম vs সিসি ক্রিম | স্কিন টাইপ অনুযায়ী কোনটি আপনার জন্য স্যুইটেবল?

ন্যাচারাল মেকআপ লুকের জন্য এখন বিবি ক্রিম ও সিসি ক্রিম বেশ জনপ্রিয়। পার্টি মেকআপ বা ফুল কভারেজ মেকআপের ক্ষেত্রে ফাউন্ডেশন ইউজ করা হয়। কিন্তু যারা রেগুলার হালকা মেকআপ করে বাইরে বের হন, তাদের জন্য বেস্ট অপশন হচ্ছে BB বা CC ক্রিম । কিন্তু আমরা অনেকেই বুঝতে পারি না যে স্কিন টাইপ ও কনসার্ন অনুযায়ী কীভাবে রাইট প্রোডাক্টটি সিলেক্ট করতে হবে। এই দু’টি মেকআপ প্রোডাক্টের বেনিফিট বা কার্যকারিতা নিয়ে আজকের ফিচার। এগুলোর মধ্যে বেসিক ডিফারেন্সটা আসলে কোথায়, সেটাও জানা হয়ে যাবে। বিবি ক্রিম BB (Beauty Balm, Blemish Balm) ক্রিম স্কিনকে ইভেন টোনড করে এবং ব্লেমিশ হাইড করে ফ্ললেস লুক দেয় নিমিষেই। এতে স্কিন ময়েশ্চারাইজিং ও হাইড্রেটিং এলিমেন্টস থাকে, যার কারণে ড্রাই বা নরমাল স্কিনের জন্য এটি একদম পারফেক্ট। এর টেক্সচার ফাউন্ডেশনের থেকে লাইট, তাই কভারেজটাও হয় একদম ন্যাচারাল। মানে একদমই হেভি ফিল হয় না, আর স্কিনটাও পিকচার পারফেক্ট দেখায়। অনেক বিবি ক্রিমে সান প্রোটেকশন ফ্যাক্টর বা SPF থাকে। সিসি ক্রিম CC (Color Corrector, Complexion Corrector) ক্রিমের ফর্মুলা লাইট ওয়েট ও লং লাস্টিং। ম্যাট ফর্মুলার হওয়াতে অয়েল...

লো পোরোসিটি চুল | কীভাবে চিনবেন এবং সঠিক যত্ন নিবেন?

একরাশ সুন্দর ও ঝলমলে চুল কে না চায়? কিন্তু অনেক সময় সঠিক যত্নের অভাবে সুন্দর চুলগুলো দিন দিন নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ে। চুলের যত্নের ক্ষেত্রে আমাদের সবচেয়ে সবচেয়ে বড় ভুল হলো পোরোসিটি না বুঝে হেয়ার কেয়ার করা। এতে করে চুল আরো ড্যামেজ হওয়ার চান্স থাকে। আজকের ফিচারটি মূলত লো পোরোসিটি হেয়ার কেয়ার নিয়ে। লো পোরোসিটি চুল কীভাবে বুঝবো, কীভাবে যত্ন নিতে হবে, কী ব্যবহার করা যাবে ও যাবেনা ইত্যাদি বিস্তারিত জানবো আজকের ফিচারে। লো পোরোসিটি বলতে কী বোঝানো হয়? পোরোসিটি শব্দের বাংলা অর্থ হচ্ছে ছিদ্র। ত্বকে যেমন অসংখ্য পোর বা ছিদ্র থাকে, চুলের ক্ষেত্রেও কিন্তু তাই রয়েছে। অর্থাৎ প্রতিটি চুলে অসংখ্য ছিদ্র বিদ্যমান, যার মাধ্যমে চুলে আর্দ্রতা প্রবেশ করে এবং চুল আর্দ্রতা ধরে রাখার চেষ্টা করে। একেই হেয়ার পোরোসিটি বলে। পোরোসিটি ৩ রকম, হাই, মিডিয়াম ও লো। এই হেয়ার পোরোসিটির মাত্রা প্রত্যেক মানুষের ক্ষেত্রে আলাদা হয়ে থাকে। লো পোরোসিটির চুলগুলো কম ছিদ্র সম্পন্ন হয়ে থাকে। লো পোরোসিটি চুলের কিউটিকল লেয়ার খুব শক্ত ভাবে সংযুক্ত থাকে। যার ফলে এ ধরনের চুল আর্দ্রতা সহজে গ্রহণ করতে পারেনা, তবে একবার আর্দ্রতা গ্রহণ করলে এ ধরনের...