Skip to main content

মানসিক চাপ কমাবে যে ৮টি যোগ ব্যায়াম

শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে অন্যান্য অনেক কিছুর পাশাপাশি যোগ ব্যায়াম হতে পারে কার্যকরী একটি উপায়। শুধুমাত্র শরীরের যত্ন নেয়া, ফ্লেক্সিবিলিটি বাড়ানো, ব্যথা কমানোই নয়, আমাদের দুশ্চিন্তা ও স্ট্রেস কমাতেও বেশ ভালো ভূমিকা রাখে যোগ ব্যায়াম। আজকের ফিচারে জানাবো আটটি বিশেষ যোগ ব্যায়াম আসন সম্পর্কে যেগুলো আপনাকে মানসিকভাবে ভালো থাকতে সহায়তা করবে।

আটটি যোগ ব্যায়াম আসন

যোগ ব্যায়াম করার সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে আপনি চাইলে বাড়িতে বা নিজের সুবিধাজনক যেকোনো জায়গায় বসে এগুলো করতে পারবেন। আবার এগুলো যেমন একা বসে করা যায়, তেমনি গ্রুপ করেও করতে পারবেন। চলুন তাহলে দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক সেই বিশেষ আটটি যোগ ব্যায়াম আসন সম্পর্কে।

১. উত্তানাসন (দাঁড়িয়ে সামনের দিকে বাঁক)

উত্তানাসন মস্তিষ্ককে শান্ত করে এবং কিডনি ও যকৃত উদ্দীপিত করে। সেই সাথে এটি পিঠ, হ্যামস্ট্রিং, এবং কাঁধকে প্রসারিত করে।

পদ্ধতি

১। তাড়াসন বা মাউন্টেন পোজে দাঁড়ান এবং হাতগুলো কোমরে রাখুন।

২। হাঁটু সামান্য বাঁকিয়ে ধীরে ধীরে ধড়কে পায়ের উপর ভাঁজ করুন,। এক্ষেত্রে কোমর থেকে নয়, বরং পিঠ থেকে ধড় ভাঁজ করুন।

৩। হাতগুলো মাটিতে বা পায়ের পাশে রাখুন।

৪। শ্বাস নিয়ে মেরুদণ্ড লম্বা করুন এবং নিঃশ্বাস ছাড়ুন। তারপর ধীরে ধীরে পায়ের দিকে ঝুঁকুন।

৫। গলা লম্বা করুন, মাথা নিচের দিকে প্রসারিত করে কাঁধগুলোকে নিচের দিকে টেনে কোমরের দিকে নিয়ে যান।

সতর্কতা: গর্ভাবস্থা, গ্লুকোমা, সায়াটিকা বা নিচের পিঠ, গোঁড়ালি, বা হাঁটুতে আঘাত থাকলে এই আসনটি এড়িয়ে চলুন।

মানসিক চাপ কমাতে যোগ ব্যায়াম

২. পশ্চিমোত্তানাসন (বসা অবস্থায় সামনের দিকে বাঁক)

পশ্চিমোত্তানাসন মানসিক চাপ কমায় এবং মন ভালো রাখতে সাহায্য করে। এটি পিঠ ও পায়ের পেশী প্রসারিত করে।

পদ্ধতি

১। দণ্ডাসন বা স্টাফ পোজে বসুন এবং পা সামনের দিকে সোজা করে রাখুন।

২। হাতগুলোকে পাশ থেকে উঠিয়ে মাথার উপরে প্রসারিত করুন।

৩। শ্বাস নিন এবং মেরুদণ্ড লম্বা করুন।

৪। নিঃশ্বাস ছাড়ুন এবং কোমর থেকে ধীরে ধীরে সামনের দিকে ঝুঁকুন।

৫। পা টানটান করে পায়ের গোড়ালি বা হাঁটু ধরে রাখুন।

টিপ: পিঠ সোজা রাখলে তা পুরো শ্বাস নিতে সাহায্য করবে।

৩. মার্জর্যাসন থেকে বিতিলাসন (বিড়াল-গরু আসন)

মার্জর্যাসন-বিতিলাসন মেরুদণ্ডকে সহজ করতে এবং মানসিক শান্তি আনতে সহায়ক।

পদ্ধতি

১।হাঁটু ও হাতে ভর দিয়ে মাটিতে বসুন এবং নিজের পিঠ সোজা রাখুন।

২। শ্বাস নিন, কোমর ও বুকে উত্তোলন করুন এবং মাথা তুলুন।

৩। নিঃশ্বাস ছাড়ুন, পিঠ গুটিয়ে উপরের দিকে তুলুন এবং মাথা নিচে নাভির দিকে নিয়ে আসুন।

৪। এভাবে ১০-২০ বার পুনরাবৃত্তি করুন।

টিপ: ঘাড়ে আঘাত থাকলে সাবধানে করুন।

সুখাসন

৪. সুখাসন (সহজ আসন)

সুখ আসন বলতে যেকোনো আরামদায়ক ক্রস-লেগ অবস্থানকে বোঝায়। আপনি আরাম পাওয়ার জন্য তোয়ালে বা বোলস্টার ব্যবহার করতে পারেন।

পদ্ধতি

১। নিতম্বের নিচে সাপোর্ট বা ভর দিয়ে বসুন, যাতে আপনার কোমর হাঁটুর চেয়ে উঁচুতে থাকে।

২। কাঁধ এবং মাথা সোজা রেখে ক্রস-লেগ অবস্থানে আরামদায়কভাবে বসুন।

৩। হাতগুলো থাই বা কোলে রাখুন।

৪। শ্বাস নিয়ে মেরুদণ্ড লম্বা করুন, নিঃশ্বাস ছাড়ুন এবং কোমর মাটিতে চেপে বসুন।

টিপ: এই আসনটি সাধারণত শ্বাসপ্রশ্বাস এবং ধ্যানের জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি হাঁটু, গোড়ালি প্রসারিত করে, পিঠকে শক্তিশালী করে এবং কোমরের টান কমায়।

৫. জনু শীর্ষাসন (মাথা থেকে হাঁটু সামনের দিকে বাঁক)

জনু শীর্ষাসন পিঠের অবস্থান উঁচু করে এবং মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।

পদ্ধতি

১। দণ্ডাসন বা স্টাফ পোজে বসুন এবং পা সামনে প্রসারিত করে পিঠ সোজা রাখুন।

২। ডান হাঁটু বাঁকিয়ে ডান পায়ের তলাটি বাম ঊরুর ভেতরে রাখুন।

৩। শ্বাস নিয়ে মেরুদণ্ড লম্বা করুন।

৪। নিঃশ্বাস ছেড়ে ডান হাতটি বাম উরুর বাইরের দিকে রাখুন এবং বাম হাতটি বাম কোমরের পেছনে রাখুন।

৫। কোমর থেকে ধীরে ধীরে সামনের দিকে ঝুঁকুন, বাম পায়ের দিকে হাত বাড়িয়ে ডান হাত দিয়ে বাম গোড়ালি ধরুন।

৬। শ্বাস নিয়ে বুক সামনে ঠেলুন এবং নিঃশ্বাস ছাড়লে পাঁজর বাম হাঁটুর দিকে ঘোরান।

৭। শ্বাস নিয়ে বুক তুলুন, পোজ থেকে বেরিয়ে আসুন এবং দণ্ডাসনে ফিরে আসুন। এবার অন্যদিকে একইভাবে করুন।

টিপ: হাঁটুর ব্যথা থাকলে বাঁকানো হাঁটু সোজা পায়ের কাছে রাখুন।

৬. সেতু বন্ধাসন (সেতু আসন)

সেতু বন্ধাসন পিঠ, কোমর ও উরুর পেশী শক্তিশালী করে।

পদ্ধতি

১। পিঠের উপর শুয়ে পড়ুন, হাঁটু বাঁকানো এবং পা ও পায়ের আঙ্গুলগুলো সমান্তরালভাবে কোমরের সাথে রাখুন। পা গুলোকে নিতম্বের কাছে রাখুন।

২। পায়ের সাহায্যে নিচের দিকে দৃঢ়ভাবে চাপ দিন। তারপর শ্বাস নিন এবং নিতম্ব উত্তোলন করুন (নাভির পরিবর্তে পেলভিক বোন থেকে তুলুন)।

৩। হাতগুলোকে পিঠের নিচে মাটিতে রাখুন এবং কলার বোন প্রশস্ত করুন। নিজের উরু শক্ত রাখুন এবং পায়ের গোড়ালি দিয়ে নিচে চাপ দিন। তারপর উরু ও নিতম্ব উঁচুতে তুলে রাখুন।

৪। নিঃশ্বাস ছেড়ে দিয়ে হাতগুলো ছেড়ে মাটিতে শিথিলভাবে বিশ্রাম নিন।

টিপ: দীর্ঘ সময় বসে থাকার পরে পিঠের ব্যথা উপশম করতে সাহায্য করে।

শবাসন যোগ ব্যায়াম এর একটি পরিচিত আসন

৭. শবাসন (মৃতদেহ আসন)

শবাসন পুরো শরীরকে শিথিল করে এবং মানসিক চাপ কমায়।

পদ্ধতি

১। পিঠের উপর শুয়ে পড়ুন। পা গুলোকে আলাদা রাখুন এবং মাটির উপর এমনভাবে রাখুন যাতে পা দু’টো দুই পাশে পড়ে যায়।

২। হাতগুলোকে শরীরের পাশে রাখুন এবং তালু উপরের দিকে রাখুন। আঙুলগুলো শিথিল রাখুন এবং স্বাভাবিকভাবে ভাঁজ হয়ে যেতে দিন।

৩। পুরো শরীর ও মুখ শিথিল করুন। এ সময় নিজের শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখুন।

৪। ৫-১০ মিনিট স্থির থাকুন এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের উপর মনোনিবেশ করুন।

৫। শ্বাস গভীর করুন এবং এসময় হাতের ও পায়ের আঙুল নাড়ান। সেই সাথে পুরো শরীর প্রসারিত করুন।

৬। হাঁটু বুকে টেনে নিয়ে একপাশে ঘুরুন। তারপর চোখ বন্ধ রেখে কিছু শ্বাস নিন এবং এই অবস্থানে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিন। তারপর ধীরে ধীরে বসার অবস্থানে আসুন।

টিপ: ঘুমানোর আগে এই আসনটি করলে ভালো ঘুম হয়।

৮. বালাসন (শিশু আসন)

বালাসন কোমর ও পিঠ প্রসারিত করতে সাহায্য করে এবং মানসিক শান্তি আনে।

পদ্ধতি

১। হাঁটু গেড়ে বসুন এবং কোমর থেকে ধীরে ধীরে সামনের দিকে ঝুঁকুন।

২। পেটকে উরুর উপর রাখুন এবং কপাল মাটিতে স্পর্শ করুন।

৩। চোখ, চোয়াল এবং কাঁধ শিথিল রাখুন।

৪। যতক্ষণ আপনি চান ততক্ষণ এই অবস্থায় থাকুন।

টিপ: ঘাড় সোজা রাখুন এবং প্রয়োজন হলে সাপোর্ট বা ভর ব্যবহার করুন।

আপনি এর মধ্যে প্রয়োজন বুঝে যেকোনো একটি বা চাইলে সবগুলোই করে দেখতে পারেন। নিজেকে শান্ত রাখা এবং শরীর ভালো রাখার জন্য এই পোজগুলো খুব কার্যকরী। যোগ ব্যায়াম করার সময় আপনার আসনগুলো সঠিকভাবে বেছে নিন এবং প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

লিখেছেনঃ মৌ মণি পুষ্প

ছবিঃ সাটারস্টক, The Wellness Corner

তথ্যসূত্রঃ ফেমিনা.ইন।

The post মানসিক চাপ কমাবে যে ৮টি যোগ ব্যায়াম appeared first on Shajgoj.



from Shajgoj https://ift.tt/l4pK0zX
Sumaiya Rahman

Comments

Popular posts from this blog

Dr. Fariah Sharmeen - Woman Oncology Specialist

Dr. Fariah Sharmeen Specialty - Associate Consultant, Oncology Degree - MBBS, FCPS (Radiotherapy) Chamber: SQUARE Hospitals Ltd. Dhaka Address: 18/F Bir Uttam Qazi Nuruzzaman Sarak, West Panthapath, Dhaka - 1205, Bangladesh Call For Appointment 10616 Call Now About: Dr. Fariah Sharmeen successfully completed her MBBS from Cumilla Medical College, and subsequently completed a one-year internship at BIRDEM Hospital, Dhaka. After completing of the internship, she started her post-graduate training in Medical Oncology at the National Institute of Cancer Research & Hospital. She started her fellowship in Radiotherapy in 2010. She completed 4 years of training at the National Institute of Cancer Research & Hospital on External Beam Radiotherapy Planning and Brachytherapy. She achieved FCPS in Radiotherapy from the Bangladesh College of Physicians & Surgeons (BCPS) in 2015. She has obtained several hands-on pieces of training on Head - Neck, Lung, Genitourina

হেভি ব্রেস্ট এর জন্য পিওর কটন ফেব্রিকের কমফোর্টেবল ব্রা খুঁজছেন?

বডি শেইপ ও বয়স অনুযায়ী ইনার ওয়্যারে যে ভ্যারিয়েশন আসে, সেটা আমরা অনেকেই জানি না! টিনেজে ডেভেলপিং ব্রেস্ট এর জন্য এক ধরনের ব্রা, বয়স্ক নারীদের জন্য এক ধরনের ব্রা, নতুন মায়েদের জন্য আরেক ধরনের ব্রা। শারীরিক গঠন বা ব্রেস্ট শেইপ অনুযায়ী ইনার ওয়্যার সিলেকশন খুবই জরুরি! মধ্যবয়সী বা বয়স্ক নারীদের জন্য স্যুইটেবল লঞ্জেরির রিভিউ জানাবো আজকের ফিচারে। হেভি ব্রেস্ট এর জন্য পিওর কটন ফেব্রিকের কমফোর্টেবল ব্রা যারা খুঁজছেন, তাদের জন্য রিভিউটি হেল্পফুল হবে আশা করি। হেভি ব্রেস্ট এর জন্য কেমন ব্রা বেছে নিতে হবে? ব্রেস্টকে প্রোপারলি সাপোর্ট দেয়, এনাফ কভারেজ পাওয়া যায় এবং প্রশস্ত ব্যান্ড থাকে, এমন ব্রা আপনাকে চুজ করতে হবে। বয়সের সাথে সাথে শারীরিক গঠনেও বেশ পরিবর্তন আসে। বাল্কি ফিগার বা কার্ভি বডির জন্য পারফেক্ট ব্রা সিলেক্ট করাটা একটু ডিফিকাল্ট মনে হয়। চিন্তা নেই, আজ এমনই একটি ব্রা সম্পর্কে জানাবো। মধ্যবয়সী ও বয়স্ক নারীদের জন্য স্যুইটেবল ব্রা আমাদের বাসায় মা, দাদি বা বয়স্ক নারী সদস্য যারা আছেন, তাদের কমফোর্টের বিষয় নিয়ে আমরা কখনো ভেবেছি কি? আরামের বিষয়টিকেই এই বয়সে বেশি প্রাধান্য দিতে হবে। এই বয়সে হে

রিবন্ডিং নাকি কেরাটিন ট্রিটমেন্ট, কোনটি আপনার জন্য পারফেক্ট?

কোনো অকেশন বা ইভেন্টে যাওয়ার জন্য নিজের পছন্দের আউটফিট পরে, সুন্দরভাবে সেজেগুজে যদি দেখতে পান, চুল একদম ফ্রিজি হয়ে আছে, চুলে কোনো শাইন নেই, সিল্কি ভাবও নেই তখন মনটাই খারাপ হয়ে যায়, তাইনা? সত্যি বলতে চুল রাফ ও আনম্যানেজেবল হয়ে থাকলে স্টাইলিংয়ের ক্ষেত্রে বেশ স্ট্রাগল করতে হয়। দেখা যায়, চুল ছেড়েও রাখা যায় না, আবার শখ করে কোনো হেয়ারস্টাইল করলেও দেখতে ভালো লাগেনা। রিবন্ডিং ও কেরাটিন ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে খুব সহজেই সিল্কি, স্ট্রেইট এবং হেলদি লুকিং চুল পাওয়া পসিবল। তবে অনেকেই এই দু’টো ট্রিটমেন্টের পার্থক্য বুঝতে পারেন না, যার ফলে ডিসিশন নিতে পারেন না যে কোনটি তাদের চুলের জন্য বেশি স্যুইটেবল হবে। আপনাদের সব কনফিউশন ক্লিয়ার করতে আজকের ফিচারে থাকছে রিবন্ডিং নাকি কেরাটিন কোন ট্রিটমেন্টটি আপনার জন্য ভালো হবে তা নিয়ে বিস্তারিত। রিবন্ডিং ও কেরাটিন ট্রিটমেন্ট কি সেইম অনেকেই মনে করেন, রিবন্ডিং ও কেরাটিন ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে যেহেতু স্ট্রেইট, স্মুথ ও ম্যানেজেবল হেয়ার পাওয়া যায়, তাই এগুলোর মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য নেই। এটি একটি বড় মিসকনসেপশন। এই দু’টো ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে একই রকম আউটপুট আসে ঠিকই, কিন্তু