Skip to main content

আর্ম ফ্যাট নিয়ে আর নয় বিড়ম্বনা

কোনো দাওয়াতের আগে মনে হলো ছোট হাতার ব্লাউজ দিয়ে শাড়ি পরবেন, অথবা দোকানে গিয়ে ছোট হাতার কোন জামা দেখে খুব পছন্দ হয়ে গেলো বা হয়তো গরমের দিনে একটু ছোট হাতার জামা পরতে মন চাইলো। কিন্তু হাতের দিকে নজর যেতেই দেখতে পেলেন বাহুতে মেদ জমে আছে! আর তাতেই নিজের পছন্দের জামা পরার ইচ্ছা আর কনফিডেন্স দু’টোই চলে গেলো। কি? সিচুয়েশনটা পরিচিত লাগছে তাই না? এমন হলে একটা প্রশ্নই মাথায় আসে, “তাহলে কি আর কখনোই ছোট হাতার জামা পরা হবে না? বাহুর মেদ কি কোনোভাবেই সরানো যাবেনা?” অবশ্যই যাবে! কেন, কীভাবে বাহুতে মেদ জমে, কী কী করলে জমে থাকা মেদ শরীর থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারবেন সেসব নিয়েই আমাদের আজকের ফিচার।

আর্ম ফ্যাট বা বাহুর মেদ আসলে কী?

আর্ম ফ্যাট হচ্ছে মূলত আপনার বাহুর উপরের দিকের নিচের অংশে জমে থাকা মেদ এবং এই মেদ বাড়তে বাড়তে সেখানে ঝুলে যাওয়া স্কিন। এই মেদ থাকার কারণে হাতের শেইপ অসামঞ্জস্যকর হয়ে যায়। হাত নড়াচড়া করার সময় এই এক্সট্রা অংশটুকুও নড়াচড়া করে, যেটা বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। এর থেকেও বড় সমস্যা হলো অনেক সময় দেখা যায় আপনার লাইফস্টাইল, খাওয়াদাওয়া সব ঠিক থাকার পরেও এই আর্ম ফ্যাট শরীর থেকে চলে যায় না। সেজন্য জানতে হবে আর্ম ফ্যাট আসলে কীভাবে তৈরি হয়। তাহলে শরীর থেকে একে ঝেড়ে ফেলাটা অনেকাংশে সহজ হয়ে যায়।

আর্ম ফ্যাট কীভাবে তৈরি হয়

আর্ম ফ্যাট কীভাবে তৈরি হয়?

আর্ম ফ্যাট জমার একটা বড় কারণ বয়স বৃদ্ধি। আমাদের বয়স যত বাড়তে থাকে, শরীরের টেস্টোস্টেরন হরমোন তত কমে আসতে শুরু করে। সেই সাথে যদি আপনার লাইফস্টাইলে ফিজিক্যাল অ্যাকটিভিটি কমে যায়, তখনই হাতে মেদ জমা শুরু হয়। ফিজিক্যাল অ্যাকটিভিটি বলতে এখানে হাতের মাসলে চাপ পড়ে এমন কাজের কথা বলা হয়েছে।

সারাদিন অফিসে খাটাখাটনি করা বা ঘরের সমস্ত কাজ সামলানো যথেষ্ট পরিশ্রমের ও ক্লান্তিকর ব্যাপার হলেও এই কাজগুলোতে আপনার হাতের মাসলে তেমন কোন চাপ আসলে পড়েনা। এছাড়াও অবেসিটি থাকলে, হুট করে অনেক ওজন কমিয়ে ফেললে অথবা হরমোনাল ইমব্যালান্স থাকলেও কিন্তু হাতের মেদ জমতে পারে।

আর্ম ফ্যাট কমাতে কী কী করবেন?

১। ক্যালরি কাউন্ট করে খাবার খান

বাহুতে জমে থাকা মেদ কমাতে প্রথমেই যেটা করবেন তা হলো ক্যালরি কাউন্ট করে খাবার খাবেন। শরীর থেকে প্রতি ৩৫০০ ক্যালরি ঝরাতে পারলে প্রায় এক পাউন্ডের মত ওজন কমে। শুনতে কঠিন লাগলেও প্রতিদিনের খাবার তালিকা থেকে ৫০০ ক্যালরি কমাতে পারলে , সেই সাথে এক্সারসাইজ করলে এক সপ্তাহে এক পাউন্ড ওজনও কমিয়ে ফেলা সম্ভব। ওভারওল ওজন কমে আসলে হাতের মেদও ধীরে ধীরে কমে আসবে।

খাবার থেকে চিনি ও অতিরিক্ত লবন বাদ দিতে পারলে ওজন দ্রুত কমে আসে

২। চিনি ও লবন কে না বলুন

খাবার থেকে চিনি ও অতিরিক্ত লবন বাদ দিতে পারলে ওজন দ্রুত কমে আসে। সেই সাথে চেহারা ও শরীরেও চোখে পড়ার মতো পরিবর্তন দেখা যায়। মুখ সহ সারা শরীরে যে ফোলা ভাব থাকে তা দ্রুত কমে আসে। চা, কফি, কোল্ড ড্রিঙ্কস, জাঙ্ক ফুডে প্রচুর পরিমানে চিনি ও লবন থাকে। তাই এগুলো বাদ দেওয়ার পাশাপাশি বাসার খাবারে চিনি ও লবণের মাত্রা কমিয়ে আনতে হবে।

৩। ব্রেকফাস্ট স্কিপ করা যাবে না

ওজন কমানোর জন্য শুরুতেই অনেকে সকালের খাওয়া বাদ দিয়ে একবারে দুপুরে অনেক বেশি পরিমাণে খেয়ে ফেলেন। এটা একদম করা যাবে না। বরং প্রতিবেলার ডায়েট যেন ব্যালেন্সড হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

৪। বেশি পরিমাণে পানি পান করুন

হালকা খিদে ভাব হলেই খেতে বসে যাবেন না। আগে এক গ্লাস পানি পান করে নিন। এতে করে পেটে খিদের ভাব অনেকটা কমে আসবে এবং খেতে বসলে ক্যালরি ইনটেক কম হবে।

৫। রিফাইন্ড কার্বস কমাতে হবে

প্রতিদিনের খাবার এর তালিকা থেকে রিফাইন্ড কার্বস যেমন সাদা ভাত, সারা আটার রুটি, সাদা পাউরুটি, সাদা চিনি ইত্যাদি বাদ দিতে হবে। এর বদলে লাল চালের ভাত, লাল আটার রুটি, ব্রাউন সুগার বা গুড় এগুলো খেতে পারেন। রিফাইন্ড কার্বস শরীরের টেস্টোস্টেরনের হার কমিয়ে দেয়। তাই এগুলো না খাওয়াই ভালো।

আর্ম ফ্যাট কমাতে এক্সারসাইজ আছে যেগুলো নিয়মিত করতে হবে

কী কী এক্সারসাইজ করবেন?

বাহুর শেপ সুন্দর করতে শুধু মেদ কমানোই যথেষ্ট না। এই এরিয়ার জন্য টার্গেট করে কিছু এক্সারসাইজ আছে সেগুলোও নিয়মিত করতে হবে, তাহলে ঝুলে যাওয়া চামড়া টানটান হয়ে আর্ম সুন্দর একটা শেপে আসবে। এগুলো করার জন্য জিমের যাওয়ার দরকার নেই, বাড়িতেই করতে পারেন এসব এক্সারসাইজ

১। ডাম্বেল লিফট

এই এক্সারসাইজের জন্য একটা দুই থেকে তিন কেজি ওজনের ডাম্বেল। না থাকলে পানির বোতল দিয়েও করতে পারেন। ডাম্বেলটি দুই হাত দিয়ে ধরে মাথার উপরে নিন। এরপরে আস্তে আস্তে মাথার পিছন দিকে ঘাড় পর্যন্ত নামিয়ে আনুন। এসময় তাড়াহুড়া করবেন না। ২০ টা সেট তিনবার করে করবেন।

২। ট্রাইসেপ ডিপ

মাটি থেকে দুই ফিট উঁচু এমন একটি চেয়ার নিন। খেয়াল রাখবেন চেয়ার যেন পিছলে না যায়। এবার মাটিতে এমনভাবে বসুন যাতে চেয়ার পিছনে থাকে। এবারে হাত পিছনে নিয়ে চেয়ারে রাখুন যাতে দুই হাতের মধ্যে শুধু শোল্ডার লেন্থ এর দূরত্ব থাকে। এ সময় হাত বেন্ড করার অবস্থায় থাকবে। এরপরে হাতের ওপর ভর দিয়ে হাত সোজা করে উঠে বসার চেষ্টা করবেন। কিন্তু এখানে বসা যাবেনা, পাঁচ থেকে দশ সেকেন্ড অপেক্ষা করে আবার আস্তে আস্তে আগের পজিশনে ফেরত আসুন। এভাবে ২০ বার করে তিনটি সেট করুন।

আর্ম ফ্যাট কমানোর এক্সারসাইজ

৩। বাইসেপ কার্লস

হাতের শেইপ সুন্দর করার জন্য এটা খুব চমৎকার কাজ করে। দুই হাতে ডাম্বেল নিন। এ সময় সোজা হয়ে দাঁড়াবেন, দুই পায়ের মাঝে কাঁধের দূরত্ব পরিমান ফাঁকা থাকবে। হাত দুটো শরীরের সাথে প্রায় লেগে থাকবে। এবারে ডাম্বেল দুটো আস্তে আস্তে হাত ভাঁজ করে আপনার কাঁধ বরাবর নিয়ে আসুন। এভাবে ২০ বার করে মোট চার সেট করবেন।

৪। প্ল্যাঙ্ক

প্ল্যাঙ্ক এমন এক এক্সারসাইজ যেটার উপকারিতার অভাব নেই। হাতের চারপাশের মেদ কমাতেও এটা দারুণভাবে কার্যকর। প্ল্যাঙ্ক করার সময় প্রথমে ৩০ সেকেন্ড, তারপরে ৪০ সেকেন্ড, এভাবে বাড়িয়ে বাড়িয়ে এক থেকে দুই মিনিট করার চেষ্টা করুন। হাতের শেইপে লক্ষণীয় পরিবর্তন আসবে দ্রুতই।

শরীরের অন্যান্য অংশের তুলনায় হাতে আর্ম ফ্যাট সরানো এবং শেইপ সুন্দর করা কিছুটা কষ্টকর এবং সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। শুধু এক্সারসাইজ বা শুধু ডায়েটে এটা সম্ভব না। তাই এই দুয়ের সমন্বয় করে লাইফস্টাইলে পরিবর্তন আনা খুব গুরুত্বপূর্ণ ,তাহলেই কেবলমাত্র ভালো ফল পাওয়া সম্ভব।

ছবিঃ সাটারস্টক

The post আর্ম ফ্যাট নিয়ে আর নয় বিড়ম্বনা appeared first on Shajgoj.



from Shajgoj https://ift.tt/uLngJ6Y
Sumaiya Rahman

Comments

Popular posts from this blog

Dr. Fariah Sharmeen - Woman Oncology Specialist

Dr. Fariah Sharmeen Specialty - Associate Consultant, Oncology Degree - MBBS, FCPS (Radiotherapy) Chamber: SQUARE Hospitals Ltd. Dhaka Address: 18/F Bir Uttam Qazi Nuruzzaman Sarak, West Panthapath, Dhaka - 1205, Bangladesh Call For Appointment 10616 Call Now About: Dr. Fariah Sharmeen successfully completed her MBBS from Cumilla Medical College, and subsequently completed a one-year internship at BIRDEM Hospital, Dhaka. After completing of the internship, she started her post-graduate training in Medical Oncology at the National Institute of Cancer Research & Hospital. She started her fellowship in Radiotherapy in 2010. She completed 4 years of training at the National Institute of Cancer Research & Hospital on External Beam Radiotherapy Planning and Brachytherapy. She achieved FCPS in Radiotherapy from the Bangladesh College of Physicians & Surgeons (BCPS) in 2015. She has obtained several hands-on pieces of training on Head - Neck, Lung, Genitourina...

রেগুলার ব্রা vs পুশ-আপ ব্রা | সঠিক ইনার ওয়্যার কীভাবে সিলেক্ট করবেন?

রেগুলার ব্রা আর পুশ-আপ ব্রা, এই দু’টার মধ্যে আসলে পার্থক্য কী আর কখন কোনটা ইউজ করতে হবে, এই বিষয়গুলো আমাদের অনেকেরই অজানা। আমাদের অ্যাকটিভিটি আর আউটফিটের সাথে ইনার ওয়্যারেও ভ্যারিয়েশন আসে। যেমন সকালে ঘুম থেকে উঠে ওয়ার্ক আউট করছি, এরপর ভার্সিটি বা অফিসে যাচ্ছি, সন্ধ্যায় পার্টি অ্যাটেন্ড করছি। সব সময় কি আমরা সেইম ব্রা পরি? না তো! শাড়ি পরলে এক ধরনের ব্রা পরি, জিমে গেলে অন্য ধরনের ব্রা পরি, বাসায় থাকলে আবার আরেক রকম! কখন কোন ব্রা পরা উচিত বা কোন ড্রেসের সাথে কোনটা মানাবে এই বিষয়গুলো নিয়ে অনেকেরই কনফিউশন আছে। এই বিষয়গুলো এখনও অনেকের কাছেই ট্যাবু। দিন বদলাচ্ছে, এই সামাজিক ট্যাবু থেকে বেরিয়ে আসতে হবে সবাইকে। লঞ্জেরি মেয়েদের জন্য বেসিক একটি জিনিস। তাই লঞ্জেরির ক্যাটাগরিটা আমাদের জেনে রাখা উচিত। পুশ-আপ ব্রা কেন ইউজ করে, এটাই এখনও অনেক মেয়েরা জানে না! রেগুলার ব্রা এর সাথে সাথে নিজের কালেকশনে পুশ-আপ ব্রা কেন রাখা উচিত, সেটা কিন্তু অনেকে বুঝতে পারে না। চলুন এই কনফিউশনগুলো আজ দূর করা যাক। রেগুলার ব্রা vs পুশ-আপ ব্রা    বেসিক রেগুলার ব্রা-এর ক্ষেত্রে ফেব্রিক ম্যাটেরিয়াল ও কমফোর্টের বিষ...

লো পোরোসিটি চুল | কীভাবে চিনবেন এবং সঠিক যত্ন নিবেন?

একরাশ সুন্দর ও ঝলমলে চুল কে না চায়? কিন্তু অনেক সময় সঠিক যত্নের অভাবে সুন্দর চুলগুলো দিন দিন নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ে। চুলের যত্নের ক্ষেত্রে আমাদের সবচেয়ে সবচেয়ে বড় ভুল হলো পোরোসিটি না বুঝে হেয়ার কেয়ার করা। এতে করে চুল আরো ড্যামেজ হওয়ার চান্স থাকে। আজকের ফিচারটি মূলত লো পোরোসিটি হেয়ার কেয়ার নিয়ে। লো পোরোসিটি চুল কীভাবে বুঝবো, কীভাবে যত্ন নিতে হবে, কী ব্যবহার করা যাবে ও যাবেনা ইত্যাদি বিস্তারিত জানবো আজকের ফিচারে। লো পোরোসিটি বলতে কী বোঝানো হয়? পোরোসিটি শব্দের বাংলা অর্থ হচ্ছে ছিদ্র। ত্বকে যেমন অসংখ্য পোর বা ছিদ্র থাকে, চুলের ক্ষেত্রেও কিন্তু তাই রয়েছে। অর্থাৎ প্রতিটি চুলে অসংখ্য ছিদ্র বিদ্যমান, যার মাধ্যমে চুলে আর্দ্রতা প্রবেশ করে এবং চুল আর্দ্রতা ধরে রাখার চেষ্টা করে। একেই হেয়ার পোরোসিটি বলে। পোরোসিটি ৩ রকম, হাই, মিডিয়াম ও লো। এই হেয়ার পোরোসিটির মাত্রা প্রত্যেক মানুষের ক্ষেত্রে আলাদা হয়ে থাকে। লো পোরোসিটির চুলগুলো কম ছিদ্র সম্পন্ন হয়ে থাকে। লো পোরোসিটি চুলের কিউটিকল লেয়ার খুব শক্ত ভাবে সংযুক্ত থাকে। যার ফলে এ ধরনের চুল আর্দ্রতা সহজে গ্রহণ করতে পারেনা, তবে একবার আর্দ্রতা গ্রহণ করলে এ ধরনের...