আমরা অনেকেই হার্নিয়ার নাম শুনেছি, কিন্তু এই রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত জানা নেই অনেকেরই। যখন কোন অঙ্গ বা তার কোন অংশ তাকে আবৃত করে রাখা পেশী বা আবরণ ভেদ করে বাইরে বের হয়ে আসে, তখন সেই পরিস্থিতিকে হার্নিয়া বলে। এটি শরীরের যেকোনো অংশে হতে পারে, তবে সাধারণত পেট বা কুচকিতে বেশি হতে দেখা যায়। হার্নিয়া হলে সেই স্থানে চামড়ার নিচে ফোলা ভাব দেখা যায়। শরীরে অবস্থানের উপর নির্ভর করে হার্নিয়ার নামকরণ করা হয়ে থাকে। হার্নিয়ার লক্ষণ কী এবং কাদের এই রোগ হতে পারে, চলুন বিস্তারিত জানা যাক…..
হার্নিয়ার রকমভেদ
১) ইংগুইনাল হার্নিয়া
যত ধরনের হার্নিয়া হয়ে থাকে তার মধ্যে প্রায় ৭০% ভাগই ইংগুইনাল হার্নিয়া। যখন অন্ত্র ও অন্ত্রের আবরণী ঝিল্লী বা পর্দার কোনো অংশ পেটের পেশীর কোনো দুর্বল অংশ ভেদ করে ইংগুইনাল ক্যানাল বা কুঁচকির কাছে চলে আসে, তখন তাকে ইংগুইনাল হার্নিয়া বলে। এই হার্নিয়া সাধারণত পুরুষদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।
২) হায়াটাল হার্নিয়া
পাকস্থলির কোনো অংশ যদি ডায়াফ্রাম (যে পর্দা দ্বারা বুকের ভেতরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পেটের ভেতরের অঙ্গ থেকে আলাদা থাকে) ভেদ করে বুকের ভেতরে চলে আসে, তখন তাকে হায়াটাল হার্নিয়া বলে।
৩) আম্বিলিকাল হার্নিয়া
এক্ষেত্রে অন্ত্রের কোনো অংশ পেটের পেশী ভেদ করে নাভির কাছে চামড়ার নিচে চলে আসে। শিশুদের ক্ষেত্রে এই হার্নিয়া বেশি দেখা যায়, যা সাধারণত ২ থেকে ৪ বছর বয়সের মধ্যে ঠিক হয়ে যায়। তবে এ সময়ের মধ্যে ঠিক না হলে অপারেশন লাগতে পারে।
৪) ভেন্ট্রাল হার্নিয়া
পেটের সামনের দিকের দুর্বল পেশির মাঝে ফাঁকা স্থান দিয়ে কোনো টিস্যু বা অন্ত্রের কোনো অংশ চলে আসলে তাকে ভেন্ট্রাল হার্নিয়া বলে।
৫) ইনসিশনাল হার্নিয়া
এ ধরনের হার্নিয়া সাধারণত পূর্বে কোনো অপারেশন হয়ে থাকলে সেই অপারেশনের জায়গায় হতে পারে।
৬) কনজেনিটাল ডায়াফ্রাগমেটিক হার্নিয়া
এটি একটি মারত্মক জন্মগত ত্রুটি। ভ্রূণের বিকাশের সময় ডায়াফ্রাম বা মধ্যচ্ছদা পর্দা ঠিকমত বন্ধ না হওয়ার ফলে পেটের গঠন হতে থাকা অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বুকের ভেতর চলে আসে।
হার্নিয়ার লক্ষণ ও উপসর্গ
সকল প্রকার হার্নিয়ার মধ্যে ইংগুইনাল হার্নিয়ার হার সবচাইতে বেশি, তাই এর লক্ষণ ও উপসর্গগুলো সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।
১) কুঁচকির কাছে স্ফীত অংশ দেখা যায়, যা কাশি দিলে, ঝুঁকে কোনো কাজ করলে বা ভারী বস্তু তুলতে নিলে বেশি স্ফীত হয়ে ওঠে।
২) ঝুঁকে কোনো কাজ করতে গেলে বা কাশি দিলে কুঁচকির কাছে ব্যথা ও অস্বস্তি হতে পারে।
৩) কুঁচকিতে দুর্বলতা বা চাপ অনুভূত হওয়া।
৪) অন্ত্রের কোনো অংশ নিচে নামতে নামতে অণ্ডকোষ পর্যন্ত নেমে আসতে পারে, সেক্ষেত্রে অন্ডকোষে ব্যথা ও ফোলাভাব থাকতে পারে।
কারণ কী?
দুর্বল পেশী, পেশীতে অতিরিক্ত টানটান অবস্থা হলে সাধারণত হার্নিয়া হতে দেখা যায়, তবে
- বয়সের কারণে পেশীর দুর্বলতা
- দীর্ঘদিনের হাঁচি বা কাশি, যার কারণে পেটের মাংশ পেশীতে টান লাগা
- মলত্যাগ বা প্রস্রাবের সময় পেটে অতিরিক্ত চাপ দেয়া
- নিয়মিত ভারী জিনিস উঠানো
- গর্ভাবস্থা, স্থূলতা
- আগে পেটের কোনো সার্জারি হয়ে থাকলে সেই কাটাস্থান ঠিক মতো জোড়া না লাগলে
- কাটার স্থানের পেশী দুর্বল হয়ে গেলে
ঝুঁকি কাদের বেশি?
হার্নিয়া যেকোনো বয়সে নারী-পুরুষ যে কারো হতে পারে। তবে কিছু কিছু কারণ ঝুঁকি বাড়াতে পারে, যেমন-
- শারীরিক গঠনগত ভিন্নতার কারণে মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের ইংগুইনাল হার্নিয়ার ঝুঁকি বেশি।
- বয়সের সাথে সাথে হার্নিয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
- বংশগতভাবে পরিবারে কারো হার্নিয়া থাকলে পরবর্তী প্রজন্মের হার্নিয়ার ঝুঁকি থাকতে পারে।
- দীর্ঘমেয়াদী কাশি, নিয়মিতভাবে কন্সটিপেশন বা এই জাতীয় রোগ থেকে থাকলে পেটের পেশীতে অতিরিক্ত চাপ পড়ে, ফলে হার্নিয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
- অতিরিক্ত ওজনের ফলে পেটের পেশীতে টান পড়ে, যার ফলে স্থুল ব্যক্তিদের হার্নিয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।
- পেশাগত কারণে প্রতিনিয়ত ভারী বস্তু ওঠানামা করতে হয়, এমন ব্যক্তিদের হার্নিয়ার ঝুঁকি থাকে।
- ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে সময়ের আগে জন্ম নেয়া বাচ্চাদের গঠনগত ত্রুটির কারণে জন্মগত হার্নিয়া হতে পারে।
ট্রিটমেন্ট
হার্নিয়ার চিকিৎসা নির্ভর করে এর অবস্থান, ধরন, তীব্রতা ও রোগীর শারীরিক অবস্থার উপর ভিত্তি করে। চিকিৎসার কিছু কিছু অপশন হতে পারে,
১) ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করা- কিছু ক্ষেত্রে হার্নিয়া ছোট থাকলে এবং কোনো লক্ষণ ও উপসর্গ প্রকাশ না করলে চিকিৎসক ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করার পরামর্শ দিতে পারেন। পরিস্থিতি বুঝে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হয়।
২) জীবন যাত্রায় পরিবর্তন- ভারী বস্তু উত্তোলন এড়িয়ে চলা, সঠিক ওজন বজায় রাখা, দীর্ঘমেয়াদি কাশি বা এ জাতীয় রোগের জন্য সঠিক সময়ে চিকিৎসা করা- এগুলোর মাধ্যমে হার্নিয়ার উপসর্গ নিয়ন্ত্রণে রাখা যেতে পারে।
৩) অপারেশন- বেশিরভাগ হার্নিয়া তীব্র আকার ধারণ করলে অপারেশন করা ছাড়া উপায় থাকে না। অপারেশন না করলে স্থানচ্যুত অঙ্গ প্রত্যঙ্গে পচন ধরে প্রাণনাশক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। অপারেশনের মাধ্যমে পেশী ভেদ করে বেরিয়ে আসা অঙ্গ বা তন্ত্রের অংশকে পূর্বের স্থানে দিয়ে দুর্বল পেশী বা টিস্যু প্রাচীর মেরামত করা হয়।
পরিবারে কারও হার্নিয়া থাকলে অথবা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থাকলে হার্নিয়ার সমস্যায় ভুগতে হতে পারে। তাই সচেতন হোন, সঠিক সময়ে চিকিৎসা নিন।
ছবি- সাটারস্টক
The post হার্নিয়ার লক্ষণ কী এবং এই রোগের ঝুঁকি কাদের বেশি থাকে? appeared first on Shajgoj.
from Shajgoj https://ift.tt/Uh6cjib
Munia
Comments
Post a Comment