তিথির খুব কাছের বান্ধবী মিতু। ভার্সিটি বন্ধ হবার পরে দিনের মধ্যে বেশ কয়েকবার তাদের ফোনে কথা হয় । তিথির সাথে ফোনে কথা বলার পর প্রায়শই তার মন খারাপ হয়ে যায়। সে যে আবেগ অনুভূতি নিয়ে তিথির সাথে কথা বলতে শুরু করে, খানিক পরেই টের পায় অপর পক্ষ থেকে সেভাবে সাড়া পাচ্ছে না। এতে কথা বলার আগ্রহ দিনে দিনে তার কমে যাচ্ছে। কিছুদিন আগে মিতু একটি জার্নালে পড়েছিল, আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা কম থাকলে মানুষ এমন আচরণ করে থাকে। তিথি কি তাহলে আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা কম সম্পন্ন মানুষ?
আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা (EQ) হলো নিজের ও অন্যের আবেগকে চেনার, বোঝার ও পরিচালনা করার ক্ষমতা। এটি ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই ক্ষমতা সম্পর্কের গুণমান, সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও সামগ্রিক সাফল্যকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করে। কম আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা (EQ) সম্পন্ন মানুষ প্রায়ই না বুঝে তাদের আশেপাশের মানুষের সাথে এমন সব আচরণ করে ফেলে, যার খারাপ প্রভাব অনেক ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী হয়ে থাকে। আজকের লেখায় থাকছে এই আচরণগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত।
আচরণ ১: স্ব-সচেতনতার অভাব
আত্মসচেতনতা হলো মানসিক বুদ্ধিমত্তার ভিত্তি। কম আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা (EQ)সহ লোকেরা প্রায়শই আত্ম-সচেতনতার সাথে লড়াই করে, তাদের কাজ এবং মুখনিঃসৃত শব্দগুলি আশেপাশের মানুষকে কীভাবে প্রভাবিত করে তা চিনতে ব্যর্থ হয়। আত্ম-সচেতনতার এই অভাব ভুল বোঝাবুঝি, দ্বন্দ্ব ও দুর্বল সিদ্ধান্ত গ্রহণের দিকে পরিচালিত করতে পারে।
আচরণ ২: কথা শোনার দক্ষতা কম
মনোযোগ সহকারে কথা শোনা বা শুনতে পারার ক্ষমতা কার্যকর যোগাযোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ও উচ্চ মানসিক বুদ্ধিমত্তার লক্ষণ। কম আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা (EQ) সম্পন্ন মানুষ প্রায়শই কানে কম শোনে, অন্যদের কথা বলায় বা শোনায় বাধা দেয়, কারো কথা মনোযোগ দিয়ে শোনে না বা তাদের নিজস্ব চিন্তাভাবনায় বেশি ডুবে থাকে। এই আচরণের ফলে অন্যদের কথা ঠিকমতো শোনা হয় না, এতে অপরপক্ষ মূল্যহীন বোধ করতে পারে। এতে ব্যক্তিগত এবং পেশাদার সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
আচরণ ৩: সহানুভূতি বোধ কম
সহানুভূতি হলো অন্য ব্যক্তির অনুভূতি বোঝা এবং ভাগ করে নেয়ার ক্ষমতা। কম আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন মানুষেরা প্রায়শই অন্য কারো স্থানে নিজেকে বসিয়ে তার অনুভূতি বোঝার ক্ষমতা রাখে না এবং তাদের দৃষ্টিকোণ থেকে যেকোনো পরিস্থিতিকে বুঝতে পারাকে চ্যালেঞ্জিং হিসেবে দেখে। সহানুভূতির এই অভাব অসংবেদনশীলতা ও ভুল বোঝাবুঝি বাড়ায়। এতে অন্যের সাথে পারস্পরিক সম্পর্ক ধরে রাখা কঠিন এবং নতুন সম্পর্ক গড়ে তুলতেও এটি অসুবিধার কারণ হয়ে থাকে। পেশাদারদের ক্ষেত্রে সহানুভূতির অভাব টিমওয়ার্ক ও সহযোগিতার হাতকে বাধা দিতে পারে।
আচরণ ৪: আবেগ নিয়ন্ত্রণে অক্ষমতা
মানসিক নিয়ন্ত্রণ হলো একজনের আবেগকে সঠিক ও যথাযথভাবে পরিচালনা করার ক্ষমতা। আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা যাদের কম, তাদের মন নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা কম থাকে। এমন ব্যক্তির ঘন ঘন মতের পরিবর্তন হয় এবং মেজাজের প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করতে অসুবিধা হয়। আবেগপ্রবণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ফলে এদের ব্যক্তি জীবন ও পেশাগত জীবনে প্রভাব ফেলে।
আচরণ ৫: অন্যদের দোষ দেওয়া
দায়বদ্ধতা হলো যে কোনো কাজের সিদ্ধান্ত ও দায়িত্ব নেওয়ার ইচ্ছা। কম আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন লোকেরা যখন কিছু ভুল হয়ে যায় তখন তাদের ভূমিকা মূল্যায়ণ করার পরিবর্তে অন্যদের দোষ দেয়। এই আচরণ পারস্পরিক বিশ্বাস নষ্ট করতে পারে, সম্পর্কের ক্ষতি করতে পারে এবং একটি বিষাক্ত পরিবেশ তৈরি করতে পারে ।
আচরণ ৬: প্রতিক্রিয়া গ্রহণ করতে অনিচ্ছুক
ব্যক্তিগত ও পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য গঠনমূলক আলোচনা এবং সমালোচনা অপরিহার্য। সাধারণত কম আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন লোকেরা প্রতিক্রিয়া গ্রহণ করতে অনিচ্ছুক থাকেন। এ সময়ে তারা নিজেদের রক্ষা করতে আলোচনা বর্জন করেন কিংবা অস্বীকার করেন। যখন কেউ তাদের সামনে সমালোচনা করেন বা উন্নতির পরামর্শ দেন, এতে তারা বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখান। এরুপ আচরণ তাদের সব পরিস্থিতিতে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে এবং তাদের সাফল্যের সম্ভাবনা সীমিত করে দেয়।
আচরণ ৭: অভিযোজিত হওয়ার যোগ্যতার অভাব
অভিযোজন যোগ্যতা হলো পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে প্রতিক্রিয়া হিসাবে একজনের চিন্তাভাবনা ও আচরণ সামঞ্জস্য করার ক্ষমতা। এমন পরিস্থিতিতে যারা নতুন সম্পর্ক, ধারণা কিংবা দৃষ্টিভঙ্গির সাথে খাপ খাইয়ে নিতে নিজের সাথে লড়াই করে, মানসিকভাবে তাদের স্থিরতা কম।
আচরণ ৮: দ্বন্দ্ব সমাধানে দক্ষতা কম
যে কোন দ্বন্দ্ব সমাধানের জন্য খোলাখুলিভাবে কথা বলা, পরস্পরের সাথে যোগাযোগ করা, সক্রিয়ভাবে শোনা ও সার্বিকভাবে একটি সমাধান খোঁজা প্রয়োজন। কম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন মানুষ এমন সমস্যা সমাধানের সময় সরাসরি কিংবা গঠনমূলক আলোচনা করার পরিবর্তে সমস্যাকে এড়িয়ে চলা, আগ্রাসী আচরণ বা ম্যানিপুলেশনের আশ্রয় নেয়। অমীমাংসিত দ্বন্দ্বগুলো ব্যক্তিগত ও পেশাদার উভয় ক্ষেত্রেই সম্পর্কের ক্ষতি করতে পারে।
আচরণ ৯: সামাজিক সংকেতগুলোর প্রতি সংবেদনশীলতা
সামাজিক সচেতনতা হলো সামাজিক সংকেতগুলো সনাক্ত ও ব্যাখ্যা করার ক্ষমতা। যেমন- দেহের অংগভংগি, ভাষা, কণ্ঠস্বর ও মুখের অভিব্যক্তি। যারা আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা কম ধারণ করে, তারা প্রায়শই এই সংকেতগুলোর ভুল ব্যাখ্যা করে। এই আচরণ তার অন্যদের সাথে সম্পর্কের ক্ষতির হতে পারে।
কম মানসিক বুদ্ধিমত্তার সাথে যুক্ত এই নয়টি আচরণকে স্বীকৃতি দেওয়া ব্যক্তিগত উন্নতির প্রথম পদক্ষেপ। আত্ম-সচেতনতা বিকাশ, সক্রিয় শ্রবণ অনুশীলন, সহানুভূতি গড়ে তোলা ও মানসিক নিয়ন্ত্রণে কাজ করার মাধ্যমে মানুষ তাদের আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা উন্নত করতে পারে এবং অন্যদের সাথে আরো বেশি ইতিবাচক ও সহায়ক সংযোগ তৈরি করতে পারে।
ছবিঃ সাটারস্টক
The post আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা কম থাকার ৯টি লক্ষণ appeared first on Shajgoj.
from Shajgoj https://ift.tt/qm02kXG
Sumaiya Rahman
Comments
Post a Comment