Skip to main content

অ্যালোপেশিয়া কেন হয় এবং কীভাবে প্রতিরোধ করা যায়?

বেশিদিন আগের ঘটনা নয়, গতবারের অস্কার মঞ্চে স্ত্রী জেডা স্মিথের চুল নিয়ে মশকরা করায় উপস্থাপকের মুখে সপাটে চড় বসিয়ে দিয়েছিলেন অভিনেতা উইল স্মিথ। মনে আছে নিশ্চয়? জেডা স্মিথের যে রোগের কারণে মাথার তালুর এই দশা হয়েছিলো তারই নাম অ্যালোপেশিয়া। সহজ কথায় অ্যালোপেশিয়া মানে হলো চুল পড়া। কিন্তু সাধারণত প্রতিদিন ই তো আমাদের চুল পড়ে। তাহলে সব রকমের চুল পড়াই কি অ্যালোপেশিয়া? সাধারণত দিনে আমাদের ১০০টার মতো চুল পড়ে। এখন যদি আপনার চুল পড়ার হার এর চেয়ে বেশি হয়, এবং মাথার তালুর কোনো একটি অংশ খালি হয়ে যায়, অতিরিক্ত চুল পড়ে তাহলে সেটাকে বলে অ্যালোপেশিয়া। অ্যালোপেশিয়া কেন হয়, সেটা জানতে ইচ্ছে করছে নিশ্চয়ই।

অ্যালোপেশিয়াতে কী হয়?

অনেক সময়ই দেখা যায় অ্যালোপেশিয়া হলে হঠাৎ করে মাথার কিছু অংশ হুট করেই ফাঁকা হয়ে গেছে বা চুল পড়ে গেছে। অনেক ক্ষেত্রেই এটি আবার রোগীর চোখে পড়ে না, হয়তো রোগীর আত্মীয়স্বজন বা পরিবারের লোক খেয়াল করেন। এখন আমাদের দেশে তো এসব মেডিকেল কন্ডিশন নিয়ে সচেতনতা এমনিতেই কম, অনেকেই ভাবেন মাথার উপর দিয়ে হয়তো তেলাপোকা হেঁটে গেছে। তাই তেলাপোকা হাঁটার নির্দিষ্ট জায়গা থেকে চুল পড়ে ফাঁকা হয়ে গেছে! হাস্যকর লাগলেও অনেকেই এসব ভেবে আর ডাক্তারের কাছে যান না এবং এই রোগ দীর্ঘস্থায়ী হয়ে যায়।

অ্যালোপেশিয়া কেন হয়

তবে অ্যালোপেশিয়া হওয়ার আসল কারণ কী? আমাদের স্ক্যাল্পে হেয়ার ফলিকল থাকে। এই হেয়ার ফলিকল থেকেই মূলত চুল গজায়। অ্যালোপেশিয়া হলে এই হেয়ার ফলিকলগুলোকে আমাদের দেহের ইমিউন সেলগুলো নষ্ট করে ফেলে। ইমিউন সিস্টেম ভুলক্রমে আমাদের হেয়ার ফলিকলকেই শত্রু বলে চিহ্নিত করে। যদি হেয়ার ফলিকল না থাকে তাহলে নতুন কি আর গজাবে? না তো! এইজন্যেই নির্দিষ্ট জায়গাগুলো থেকে সব চুল উঠে ফাঁকা হয়ে যায়।

অ্যালোপেশিয়া কি শুধু মাথাতেই হয়? অনেকের ক্ষেত্রেই অ্যালোপেশিয়া শুধু মাথায় নয়, বরং ভ্রু, দাঁড়ি গোঁফেও হতে পারে। সেক্ষেত্রে দেখা যায় দাঁড়ির কোনো একটা অংশ ফাঁকা হয়ে গেছে। আবার অনেকের ক্ষেত্রে বুকের লোম, হাত, পা ইত্যাদি জায়গাতেও হতে পারে।

অ্যালোপেশিয়া কেন হয়?

অ্যালোপেশিয়া হওয়ার বেশ কিছু কারণ আছে। ছোটো করে কারণগুলো নিয়ে নিচে কিছুটা আলোচনা করা হলো-

বংশগত

কারো বংশগত ইতিহাস থাকলে তাদের ক্ষেত্রে অ্যালোপেশিয়া হওয়া বেশ কমন। এক্ষেত্রে পুরুষদের হেয়ার লাইন পিছিয়ে যেতে থাকে ও নারীদের ক্ষেত্রে সিঁথি চওড়া হয়ে যাওয়া বা চুলের মধ্য দিয়ে মাথার ত্বক দেখা যেতে থাকে।

মাথার টাক

হরমোনের তারতম্য

অনেকের ক্ষেত্রে হরমোনের তারতম্য হলে অ্যালোপেশিয়ার লক্ষণ দেখা যায়। যেমন মহিলাদের ক্ষেত্রে মেনোপজের সময় হরমোনের ব্যাপক তারতম্য দেখা যায়, তখন তাদের মধ্যে অ্যালোপেশিয়া দেখা যেতে পারে। আবার অনেক সময় দেখা যায় গর্ভাবস্থায়, জন্ম নিরোধক ওষুধ খেলে বা হিস্টরেকটমি (জরায়ু অপারেশান করে বাদ দিয়ে দেওয়া) করলে চুল পড়ার এই সমস্যা দেখা দেয়। হরমোনের তারতম্যের এই বিষয়টি পুরুষদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

লাইফস্টাইল

আনহেলদি লাইফস্টাইল, অপুষ্টি, ঘুম ঠিকঠাক না হওয়া এগুলোও অ্যালোপেশিয়া হওয়ার অন্যতম কারণ।

ওষুধের প্রভাব

অনেক সময় দেখা যায় ক্যান্সারের ওষুধ বা কেমোথেরাপির প্রভাবে অ্যালোপেশিয়া হচ্ছে।

অন্যান্য কারণ

অনেক সময় দেখা যায় অন্যান্য রোগের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে, যেমন- থাইরয়েডের রোগ, লুপাস, পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রোম, সেবোরিক ডার্মাটাইটিস বা সোরিয়াসিস এর কারণেও অ্যালোপেশিয়া হয়। ক্রাশ ডায়েট বা হঠাৎ অতিরিক্ত ওজন কমালেও এই ঘটনা ঘটতে পারে।

লক্ষণ কী কী?

সাধারণত অল্প কিছু লক্ষণের মাধ্যমেই এই মেডিক্যাল কন্ডিশানটি সনাক্ত করা যায়। সেগুলো হলো-

  • ক্রমাগত অতিরিক্ত পরিমাণে চুল পড়া
  • ব্রহ্মতালুর চুল পাতলা হয়ে যাওয়া
  • গোল হয়ে মাথার বিভিন্ন জায়গায় ছোপ ছোপ চুল পড়ে যাওয়া
  • ফাঙ্গাল ইনফেকশনের জন্য ব্যথা হওয়া, চুলকানি হওয়া
  • হেয়ারলাইন ক্রমাগত পিছিয়ে যাওয়া

অ্যালোপেশিয়ার প্রতিরোধ ও চিকিৎসা

অ্যালোপেশিয়া কেন হয়

অ্যালোপেশিয়া হলে মাথার চুলের এরকম বেহাল দশা হওয়ায় অনেকেই ঘাবড়ে যান, তবে ঘাবড়ে না যেয়ে বরং দ্রুত চিকিৎসা নিলে এই রোগ নিরাময়ের সম্ভাবনা বেশি। এ ধরনের সমস্যা হলে দ্রুতই চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। সাধারণত স্টেরয়েড বা ট্যাক্রোলিমাস জাতীয় কিছু অয়েন্টমেন্ট ব্যবহার করলে প্রাথমিকভাবে ভালোই ফলাফল পাওয়া যায়। তবে যদি এতেও ফল না পাওয়া যায় মাথার ত্বকের যেসব জায়গায় অ্যালোপেশিয়া হয় সেসব জায়গায় ডাক্তারের পরামর্শে ইনজেকশন ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।

কিন্তু এই রোগ প্রতিরোধের কী ব্যবস্থা আছে? সেটারও উপায় আছে। অল্প কিছু নির্দেশনা মাথায় রাখলেই এটা এতো কঠিন কোনো বিষয় নয়।

কী কী করা উচিত?

  • খুব হার্শ বা কড়া রাসায়নিক আছে এরকম হেয়ার প্রোডাক্ট না ব্যবহার করা
  • নিয়মিত চুল স্ট্রেইট করা বা পার্মিং আয়রন ব্যবহার করা থেকে নিজেকে বিরত রাখা
  • একটি হেলদি হেয়ার রুটিন মেনে চলা
  • ডায়েট প্ল্যান করার সময় চুলের জন্য প্রয়োজনীয় নিউট্রিয়েন্টস, যেমন- ভিটামিন বি৬, ভিটামিন বি১২, ভিটামিন ডি, প্রোটিন, ভিটামিন ই এগুলোকে পরিমাণ মতো রাখা
  • লাইফস্টাইল থেকে স্ট্রেস কমানো

অ্যালোপেশিয়া কেন হয় এবং এর সমাধান কী, তা আমরা জেনে নিলাম। খুব সাধারণ কিন্তু অবহেলা করলে এই রোগই হতে পারে আপনার শত্রু। কারণ চুলের উপর আমাদের ব্যক্তিত্বের অনেকখানিক-ই কিন্তু নির্ভর করে। তাই নিজের যত্ন নেওয়া এবং চুলের যত্ন নেওয়াকে নিয়ম করে রুটিনে যোগ করে নিন!

ছবি- Shutterstock, plymouthmeetingdermatology.com

The post অ্যালোপেশিয়া কেন হয় এবং কীভাবে প্রতিরোধ করা যায়? appeared first on Shajgoj.



from Shajgoj https://ift.tt/5F8XHrt
Munia

Comments

Popular posts from this blog

রেগুলার ব্রা vs পুশ-আপ ব্রা | সঠিক ইনার ওয়্যার কীভাবে সিলেক্ট করবেন?

রেগুলার ব্রা আর পুশ-আপ ব্রা, এই দু’টার মধ্যে আসলে পার্থক্য কী আর কখন কোনটা ইউজ করতে হবে, এই বিষয়গুলো আমাদের অনেকেরই অজানা। আমাদের অ্যাকটিভিটি আর আউটফিটের সাথে ইনার ওয়্যারেও ভ্যারিয়েশন আসে। যেমন সকালে ঘুম থেকে উঠে ওয়ার্ক আউট করছি, এরপর ভার্সিটি বা অফিসে যাচ্ছি, সন্ধ্যায় পার্টি অ্যাটেন্ড করছি। সব সময় কি আমরা সেইম ব্রা পরি? না তো! শাড়ি পরলে এক ধরনের ব্রা পরি, জিমে গেলে অন্য ধরনের ব্রা পরি, বাসায় থাকলে আবার আরেক রকম! কখন কোন ব্রা পরা উচিত বা কোন ড্রেসের সাথে কোনটা মানাবে এই বিষয়গুলো নিয়ে অনেকেরই কনফিউশন আছে। এই বিষয়গুলো এখনও অনেকের কাছেই ট্যাবু। দিন বদলাচ্ছে, এই সামাজিক ট্যাবু থেকে বেরিয়ে আসতে হবে সবাইকে। লঞ্জেরি মেয়েদের জন্য বেসিক একটি জিনিস। তাই লঞ্জেরির ক্যাটাগরিটা আমাদের জেনে রাখা উচিত। পুশ-আপ ব্রা কেন ইউজ করে, এটাই এখনও অনেক মেয়েরা জানে না! রেগুলার ব্রা এর সাথে সাথে নিজের কালেকশনে পুশ-আপ ব্রা কেন রাখা উচিত, সেটা কিন্তু অনেকে বুঝতে পারে না। চলুন এই কনফিউশনগুলো আজ দূর করা যাক। রেগুলার ব্রা vs পুশ-আপ ব্রা    বেসিক রেগুলার ব্রা-এর ক্ষেত্রে ফেব্রিক ম্যাটেরিয়াল ও কমফোর্টের বিষ...

বিবি ক্রিম vs সিসি ক্রিম | স্কিন টাইপ অনুযায়ী কোনটি আপনার জন্য স্যুইটেবল?

ন্যাচারাল মেকআপ লুকের জন্য এখন বিবি ক্রিম ও সিসি ক্রিম বেশ জনপ্রিয়। পার্টি মেকআপ বা ফুল কভারেজ মেকআপের ক্ষেত্রে ফাউন্ডেশন ইউজ করা হয়। কিন্তু যারা রেগুলার হালকা মেকআপ করে বাইরে বের হন, তাদের জন্য বেস্ট অপশন হচ্ছে BB বা CC ক্রিম । কিন্তু আমরা অনেকেই বুঝতে পারি না যে স্কিন টাইপ ও কনসার্ন অনুযায়ী কীভাবে রাইট প্রোডাক্টটি সিলেক্ট করতে হবে। এই দু’টি মেকআপ প্রোডাক্টের বেনিফিট বা কার্যকারিতা নিয়ে আজকের ফিচার। এগুলোর মধ্যে বেসিক ডিফারেন্সটা আসলে কোথায়, সেটাও জানা হয়ে যাবে। বিবি ক্রিম BB (Beauty Balm, Blemish Balm) ক্রিম স্কিনকে ইভেন টোনড করে এবং ব্লেমিশ হাইড করে ফ্ললেস লুক দেয় নিমিষেই। এতে স্কিন ময়েশ্চারাইজিং ও হাইড্রেটিং এলিমেন্টস থাকে, যার কারণে ড্রাই বা নরমাল স্কিনের জন্য এটি একদম পারফেক্ট। এর টেক্সচার ফাউন্ডেশনের থেকে লাইট, তাই কভারেজটাও হয় একদম ন্যাচারাল। মানে একদমই হেভি ফিল হয় না, আর স্কিনটাও পিকচার পারফেক্ট দেখায়। অনেক বিবি ক্রিমে সান প্রোটেকশন ফ্যাক্টর বা SPF থাকে। সিসি ক্রিম CC (Color Corrector, Complexion Corrector) ক্রিমের ফর্মুলা লাইট ওয়েট ও লং লাস্টিং। ম্যাট ফর্মুলার হওয়াতে অয়েল...

লো পোরোসিটি চুল | কীভাবে চিনবেন এবং সঠিক যত্ন নিবেন?

একরাশ সুন্দর ও ঝলমলে চুল কে না চায়? কিন্তু অনেক সময় সঠিক যত্নের অভাবে সুন্দর চুলগুলো দিন দিন নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ে। চুলের যত্নের ক্ষেত্রে আমাদের সবচেয়ে সবচেয়ে বড় ভুল হলো পোরোসিটি না বুঝে হেয়ার কেয়ার করা। এতে করে চুল আরো ড্যামেজ হওয়ার চান্স থাকে। আজকের ফিচারটি মূলত লো পোরোসিটি হেয়ার কেয়ার নিয়ে। লো পোরোসিটি চুল কীভাবে বুঝবো, কীভাবে যত্ন নিতে হবে, কী ব্যবহার করা যাবে ও যাবেনা ইত্যাদি বিস্তারিত জানবো আজকের ফিচারে। লো পোরোসিটি বলতে কী বোঝানো হয়? পোরোসিটি শব্দের বাংলা অর্থ হচ্ছে ছিদ্র। ত্বকে যেমন অসংখ্য পোর বা ছিদ্র থাকে, চুলের ক্ষেত্রেও কিন্তু তাই রয়েছে। অর্থাৎ প্রতিটি চুলে অসংখ্য ছিদ্র বিদ্যমান, যার মাধ্যমে চুলে আর্দ্রতা প্রবেশ করে এবং চুল আর্দ্রতা ধরে রাখার চেষ্টা করে। একেই হেয়ার পোরোসিটি বলে। পোরোসিটি ৩ রকম, হাই, মিডিয়াম ও লো। এই হেয়ার পোরোসিটির মাত্রা প্রত্যেক মানুষের ক্ষেত্রে আলাদা হয়ে থাকে। লো পোরোসিটির চুলগুলো কম ছিদ্র সম্পন্ন হয়ে থাকে। লো পোরোসিটি চুলের কিউটিকল লেয়ার খুব শক্ত ভাবে সংযুক্ত থাকে। যার ফলে এ ধরনের চুল আর্দ্রতা সহজে গ্রহণ করতে পারেনা, তবে একবার আর্দ্রতা গ্রহণ করলে এ ধরনের...