Skip to main content

বায়ু দূষণ নীরবে ত্বকের ক্ষতি করছে না তো?

বায়ু দূষণ নিয়ে মোটামুটি আমরা সবাই এখন কমবেশি জানি। কয়দিন পরপরই যে ঢাকা আর দিল্লীর মধ্যে ‘কে প্রথম হবে’ এই নিয়ে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয় তা পত্রিকা আর ইন্টারনেটের বদৌলতে কারোরই আর অজানা নয়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই যেটা আমাদের অজানা থেকে যায় সেটা হলো এই বায়ু দূষণ আমাদের স্বাস্থ্যকে কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে? না না, হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট এসবের কথা একেবারেই বলছি না। বলছি আমাদের দেহের সবচেয়ে বড়ো অঙ্গের কথা, স্কিন! বায়ু দূষণ নীরবে ত্বকের ক্ষতি করছে না তো?

আমাদের শরীরের সবচেয়ে বড়ো অঙ্গটা হলো আমাদের ত্বক। তাই চলুন আজকে একটু জেনে আসি নগর জীবনের এই নিয়মিত ঘটনা বায়ু দূষণ কীভাবে আমাদের শরীরের এই অঙ্গকে প্রভাবিত করছে!

বায়ু দূষক কোনগুলো?

বায়ু দূষণের প্রভাব নিয়ে জানার আগে এইটা তো জানা দরকার কী কী উপাদান এই বায়ু দূষণ করে? বায়ু দূষণকারী উপাদানগুলো মূলত বায়ুজাত খুবই ছোটো পার্টিকেল এবং বিভিন্ন গ্যাসের একটি জটিল মিশ্রণ। চলুন জেনে আসি সেগুলোকে একটু সংক্ষেপে-

  • পার্টিকুলেট ম্যাটার (২.৫-১০)
  • গ্রাউন্ড লেভেল ওজোন গ্যাস
  • ভোলাটাইল অর্গানিক কম্পাউন্ডস
  • হেভি মেটাল
  • আল্ট্রাভায়োলেট রে
  • পলিসাইক্লিক এরোম্যাটিক হাইড্রোকার্বন
  • অক্সাইড
  • সিগারেট স্মোক

এইসব পদার্থগুলোর সংস্পর্শে যখন ত্বক বেশিক্ষণ থাকে তখন স্বাভাবিকভাবেই ত্বকে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। ত্বক আমাদের শরীরের সবচেয়ে বাইরের লেয়ার হওয়ার কারণে এটি বাইরে পরিবেশ থেকে আমাদের শরীরকে একটি ব্যারিয়ারের মতো রক্ষা করে। কিন্তু বায়ু দূষণ সেখানেই বিঘ্ন ঘটাচ্ছে।

অক্সিডেটিভ স্ট্রেসে ত্বকের ক্ষতি

বায়ু দূষক উপাদানগুলো অক্সিডেটিভ স্ট্রেস তৈরি করে আমাদের ত্বকের ক্ষতি করে। বায়ু দূষণের কারণে ফ্রি-রেডিকেল উৎপন্ন হয়, এবং এই ফ্রি রেডিকেল স্বল্প আকারে হলেও তেজস্ক্রিয়তা ছড়ায় যা কিনা অক্সিডেটিভ স্ট্রেস তৈরি করে ত্বকের উপরে। এর ফলে আমাদের ত্বকের কোলাজেন ও ইলাস্টিন ফাইবার, যেগুলো কিনা ত্বকের ইলাস্টিসিটি ধরে রাখতে অনেক বেশি প্রয়োজনীয়, সেগুলোর গঠন কাঠামোকে ভেঙে দেয়। তাহলে? এই কারণে আমাদের ত্বকে ফাইন লাইন দেখা দেওয়া এবং ত্বক ঝুলে যাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। এক কথায়, ত্বক সময়ের আগেই বুড়িয়ে যাওয়া শুরু করে।

স্কিন ইনফ্ল্যামেশন বাড়ানো

ত্বকে যাতে করে কোনো কেমিক্যাল প্রোডাক্টের কারণে ইনফ্ল্যামেশন না হয় এজন্য কতোকিছুই করি আমরা, তাই না? অথচ বায়ু দূষণের জন্য আমাদের ত্বকের ইনফ্ল্যামেশনের হার বেড়ে যেতে পারে এইটা ঘূনাক্ষরেও কখনও ভেবেছিলেন! অথচ এটাই সত্যি! পার্টিকেল ম্যাটার ২.৫ এবং ভোলাটাইল অর্গানিক কম্পাউন্ডসের সাথে শুরুতে পরিচিত হয়েছিলাম, মনে আছে? এই উপাদান দুটো খুব বেশি করে ট্রিগার করে ইনফ্ল্যামেশন। আর রেডনেস, ইচিং বা ত্বক ফুলে যাওয়া ইনফ্ল্যামেশনের সাথে ফ্রি-তেও চলে আসে!

এছাড়াও, একজিমা, সোরিয়াসিস বা ডার্মাটাইসিস-র মতো স্কিন কন্ডিশন থাকলে সেক্ষেত্রে এই উপাদানগুলো আপনার ত্বকের উপর দ্রুত আঘাত হানতে পারে!

স্কিনকে ডিহাইড্রেটেড করা

এইটা শুনতে বেশ অবাক লাগলেও আসলেই বায়ু দূষণের কারণে ত্বকের ন্যাচারাল ব্যারিয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায় এবং ত্বক থেকে অনুকূল পরিমাণের চেয়ে বেশি পানি বের করে দেয়। এর ফলে কী হয়?

  • স্কিন মাইক্রোবায়োম বা ভালো ব্যাকটেরিয়াগুলো বের হয়ে যায় বা মরে যায়
  • স্কিন ব্যারিয়ার বেশ বাজেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়
  • অকালে বার্ধক্যের ছাপ পরে যায়
  • অনেক ক্ষেত্রে স্কিন ক্যান্সারের মতো ঘটনাও দেখা যায়
  • ত্বক অনেক বেশি ড্রাই হয়ে যায়, ফলে অনেক সময় ফেটেও যেতে পারে
  • ত্বক অনেক বেশি সেনসিটিভ হয়ে যায়

 

স্কিন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ানো

অবাক লাগছে বেশ? বায়ু দূষণ থেকে স্কিন ক্যান্সার! কেন নয়! যদিও এটি এতো বেশি কমন না, তবে বায়ু দূষণের উপাদানের মধ্যে বিদ্যমান থাকা ফ্রি-রেডিকেলস বেশ ভালো খেলোয়াড় আমাদের ডিএনএ-র গঠন বদলে দিয়ে ত্বকের কোষকে ড্যামেজ করে দিতে! যেটা কিনা আস্তে আস্তে ঠেলে দিতে পারে স্কিন ক্যান্সারের দিকে! তবে এই ঝুঁকি যারা অনেক বেশি সময় খোলা জায়গায় বা রোদে থাকছেন তাদের জন্য বেশি। তাই বেশিক্ষণ খোলা জায়গায় থাকা, বিশেষত যদি বায়ু দূষণযুক্ত এলাকায় হয়, তাহলে অবশ্যই কমিয়ে আনতে হবে।

বায়ু দূষণ এখন আমাদের জীবনেরই একটি অংশ বলা যায়। আশেপাশের পরিবেশ যদি দূষিত থাকে এবং সেখানে যদি আমরা বেশিক্ষণ অবস্থান করি তাহলে স্কিনকেয়ার প্রোডাক্টস যতো ভালোই হোক না কেন খুব বেশি কাজে দিতে নাও পারে। বায়ু দূষণ নীরবে ত্বকের ক্ষতি করছে, এই সম্পর্কে জেনে বুঝে যদি সঠিক পদক্ষেপগুলো নেওয়া যায় তখন অনেক ক্ষেত্রেই ক্ষতির পরিমাণ আগে আগেই কমিয়ে আনা যায়। বায়ু দূষণ বেশি এরকম জায়গায় যথাসম্ভব কম অবস্থান করুন এবং ত্বককে সরাসরি এইসব জায়গায় এক্সপোজ করা থেকে বিরত থাকুন, কিছুটা হলেও হয়তো এতে ফলাফল মিলতে শুরু করবে!

ছবি- সাজগোজ, সাটারস্টক

The post বায়ু দূষণ নীরবে ত্বকের ক্ষতি করছে না তো? appeared first on Shajgoj.



from Shajgoj https://ift.tt/mNk6bOD
Munia

Comments

Popular posts from this blog

রেগুলার ব্রা vs পুশ-আপ ব্রা | সঠিক ইনার ওয়্যার কীভাবে সিলেক্ট করবেন?

রেগুলার ব্রা আর পুশ-আপ ব্রা, এই দু’টার মধ্যে আসলে পার্থক্য কী আর কখন কোনটা ইউজ করতে হবে, এই বিষয়গুলো আমাদের অনেকেরই অজানা। আমাদের অ্যাকটিভিটি আর আউটফিটের সাথে ইনার ওয়্যারেও ভ্যারিয়েশন আসে। যেমন সকালে ঘুম থেকে উঠে ওয়ার্ক আউট করছি, এরপর ভার্সিটি বা অফিসে যাচ্ছি, সন্ধ্যায় পার্টি অ্যাটেন্ড করছি। সব সময় কি আমরা সেইম ব্রা পরি? না তো! শাড়ি পরলে এক ধরনের ব্রা পরি, জিমে গেলে অন্য ধরনের ব্রা পরি, বাসায় থাকলে আবার আরেক রকম! কখন কোন ব্রা পরা উচিত বা কোন ড্রেসের সাথে কোনটা মানাবে এই বিষয়গুলো নিয়ে অনেকেরই কনফিউশন আছে। এই বিষয়গুলো এখনও অনেকের কাছেই ট্যাবু। দিন বদলাচ্ছে, এই সামাজিক ট্যাবু থেকে বেরিয়ে আসতে হবে সবাইকে। লঞ্জেরি মেয়েদের জন্য বেসিক একটি জিনিস। তাই লঞ্জেরির ক্যাটাগরিটা আমাদের জেনে রাখা উচিত। পুশ-আপ ব্রা কেন ইউজ করে, এটাই এখনও অনেক মেয়েরা জানে না! রেগুলার ব্রা এর সাথে সাথে নিজের কালেকশনে পুশ-আপ ব্রা কেন রাখা উচিত, সেটা কিন্তু অনেকে বুঝতে পারে না। চলুন এই কনফিউশনগুলো আজ দূর করা যাক। রেগুলার ব্রা vs পুশ-আপ ব্রা    বেসিক রেগুলার ব্রা-এর ক্ষেত্রে ফেব্রিক ম্যাটেরিয়াল ও কমফোর্টের বিষ...

বিবি ক্রিম vs সিসি ক্রিম | স্কিন টাইপ অনুযায়ী কোনটি আপনার জন্য স্যুইটেবল?

ন্যাচারাল মেকআপ লুকের জন্য এখন বিবি ক্রিম ও সিসি ক্রিম বেশ জনপ্রিয়। পার্টি মেকআপ বা ফুল কভারেজ মেকআপের ক্ষেত্রে ফাউন্ডেশন ইউজ করা হয়। কিন্তু যারা রেগুলার হালকা মেকআপ করে বাইরে বের হন, তাদের জন্য বেস্ট অপশন হচ্ছে BB বা CC ক্রিম । কিন্তু আমরা অনেকেই বুঝতে পারি না যে স্কিন টাইপ ও কনসার্ন অনুযায়ী কীভাবে রাইট প্রোডাক্টটি সিলেক্ট করতে হবে। এই দু’টি মেকআপ প্রোডাক্টের বেনিফিট বা কার্যকারিতা নিয়ে আজকের ফিচার। এগুলোর মধ্যে বেসিক ডিফারেন্সটা আসলে কোথায়, সেটাও জানা হয়ে যাবে। বিবি ক্রিম BB (Beauty Balm, Blemish Balm) ক্রিম স্কিনকে ইভেন টোনড করে এবং ব্লেমিশ হাইড করে ফ্ললেস লুক দেয় নিমিষেই। এতে স্কিন ময়েশ্চারাইজিং ও হাইড্রেটিং এলিমেন্টস থাকে, যার কারণে ড্রাই বা নরমাল স্কিনের জন্য এটি একদম পারফেক্ট। এর টেক্সচার ফাউন্ডেশনের থেকে লাইট, তাই কভারেজটাও হয় একদম ন্যাচারাল। মানে একদমই হেভি ফিল হয় না, আর স্কিনটাও পিকচার পারফেক্ট দেখায়। অনেক বিবি ক্রিমে সান প্রোটেকশন ফ্যাক্টর বা SPF থাকে। সিসি ক্রিম CC (Color Corrector, Complexion Corrector) ক্রিমের ফর্মুলা লাইট ওয়েট ও লং লাস্টিং। ম্যাট ফর্মুলার হওয়াতে অয়েল...

লো পোরোসিটি চুল | কীভাবে চিনবেন এবং সঠিক যত্ন নিবেন?

একরাশ সুন্দর ও ঝলমলে চুল কে না চায়? কিন্তু অনেক সময় সঠিক যত্নের অভাবে সুন্দর চুলগুলো দিন দিন নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ে। চুলের যত্নের ক্ষেত্রে আমাদের সবচেয়ে সবচেয়ে বড় ভুল হলো পোরোসিটি না বুঝে হেয়ার কেয়ার করা। এতে করে চুল আরো ড্যামেজ হওয়ার চান্স থাকে। আজকের ফিচারটি মূলত লো পোরোসিটি হেয়ার কেয়ার নিয়ে। লো পোরোসিটি চুল কীভাবে বুঝবো, কীভাবে যত্ন নিতে হবে, কী ব্যবহার করা যাবে ও যাবেনা ইত্যাদি বিস্তারিত জানবো আজকের ফিচারে। লো পোরোসিটি বলতে কী বোঝানো হয়? পোরোসিটি শব্দের বাংলা অর্থ হচ্ছে ছিদ্র। ত্বকে যেমন অসংখ্য পোর বা ছিদ্র থাকে, চুলের ক্ষেত্রেও কিন্তু তাই রয়েছে। অর্থাৎ প্রতিটি চুলে অসংখ্য ছিদ্র বিদ্যমান, যার মাধ্যমে চুলে আর্দ্রতা প্রবেশ করে এবং চুল আর্দ্রতা ধরে রাখার চেষ্টা করে। একেই হেয়ার পোরোসিটি বলে। পোরোসিটি ৩ রকম, হাই, মিডিয়াম ও লো। এই হেয়ার পোরোসিটির মাত্রা প্রত্যেক মানুষের ক্ষেত্রে আলাদা হয়ে থাকে। লো পোরোসিটির চুলগুলো কম ছিদ্র সম্পন্ন হয়ে থাকে। লো পোরোসিটি চুলের কিউটিকল লেয়ার খুব শক্ত ভাবে সংযুক্ত থাকে। যার ফলে এ ধরনের চুল আর্দ্রতা সহজে গ্রহণ করতে পারেনা, তবে একবার আর্দ্রতা গ্রহণ করলে এ ধরনের...