প্রকৃতিতে এসেছে ঋতুরাজ বসন্ত। তাপমাত্রাও স্বস্তিদায়ক। কিন্তু এ ঋতুতে রোগ-ব্যাধির প্রকোপও একটু বেশি। বসন্তকালীন রোগের মধ্যে হাম, ইনফ্লুয়েঞ্জা, চিকেন পক্স, নিউমোনিয়া প্রভৃতি রোগের নাম প্রথমেই আসে। জ্বরে বাড়ির একজন আক্রান্ত হলে ছড়িয়ে পড়ে তা অন্য সদস্যদের মধ্যে। এভাবে এক ঘর থেকে রোগ বাসা বদল করে অন্য ঘরে। এ ঋতুতে শীতের আবহাওয়ায় সুপ্ত ভাইরাস গরম পড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাতাসের মাধ্যমে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। বসন্তকালে কোন রোগবালাই এ আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়, আসুন সেগুলো নিয়ে জেনে নেই।
বসন্তকালে কোন রোগবালাই বেশি হয়?
বসন্ত
একটি ভাইরাসঘটিত রোগ। এই রোগটি প্রধানত শীত ও বসন্তকালের সন্ধিক্ষণে হয়। অর্থাৎ, ঋতু পরিবর্তনের সময় এর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। রোগটির যথাযথ চিকিৎসা না করালে এর ফল মারাত্মক হতে পারে। বসন্ত রোগের ধরনঃ সাধারণত বসন্ত ২ ধরনের হয়। একটি হলো জলবসন্ত ও অপরটি হল গুটিবসন্ত। তবে সাধারণত এখন যে বসন্ত রোগে মানুষ আক্রান্ত হয় তা হল জলবসন্ত।
জলবসন্তের লক্ষণ
- শরীরে দুর্বল ভাব
- মাথাব্যথা
- সর্দি-কাশি ও জ্বরভাব
- কিছুদিনের মধ্যেই শরীরে ঘামাচির মতো দানা দেখা দেয়, পরে সেগুলো বড় হয়ে ভেতরে পানি জমতে থাকে
- সেই সঙ্গে বাড়ে জ্বর ও শারীরিক দুর্বলতা
একবার কারও বসন্ত হয়ে গেলে দ্বিতীয়বার সাধারণত হয় না। কারণ একবার আক্রান্ত হলে শরীরে এই ভাইরাসের ‘অ্যান্টিবডি’ তৈরি হয়ে যায়। এভাবে টিকা দেওয়া থাকলেও অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে রক্ষা পাওয়া যায়। রোগীর শরীর থেকেই এই ভাইরাস সুস্থদের মধ্যে ছড়ায়। এক্ষেত্রে বসন্তে আক্রান্ত হওয়ার প্রাথমিক অবস্থার চেয়ে সেরে ওঠার সময়টাই বেশি মারাত্বক। কারণ, সেরে ওঠার সময় পানিবাহী দানাগুলো ফেটে যেয়ে সেই স্থানের চামড়া শুকিয়ে যায়। এসময় স্বাভাবিকভাবে কিংবা চুলকানোর কারণে ঐ শুকনো চামড়াগুলো ঝরে পড়ে। এই শুকনো চামড়াগুলোই বহন করে ভাইরাস। বাতাসের মাধ্যম ছাড়াও রোগীকে স্পর্শ করা, রোগীর ব্যবহৃত জামা-কাপড়, বিছানার চাদর ও অন্যান্য ব্যবহার্য জিনিসের সংস্পর্শে আসার মাধ্যমেও এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে।
হাম
হাম একটি অতি মারাত্মক অথচ নিরাময়যোগ্য ব্যাধি। হাম হলে কিছুতেই রোগীকে ঠান্ডা লাগাতে দেওয়া যাবে না। এতে নিউমোনিয়া কিংবা ব্রংকোনিউমোনিয়া দেখা দিতে পারে। হাম হলে শিশুকে প্রোটিন খাওয়া কমানো যাবে না বরং প্রোটিনযুক্ত খাবার বেশি করে দিতে হবে।
ভাইরাস জ্বর
ভাইরাস জ্বরে সাধারণত সর্দি, কাশির সঙ্গে মাথাব্যথা এবং শরীর ব্যথা দেখা দেয়। এই ঋতুতে কিছু কিছু টাইফয়েড ও প্যারাটাইফয়েড জ্বরও দেখা দিতে পারে। করণীয় – ভাইরাস জ্বরে রোগীকে পুরোপুরি বিশ্রামে রাখতে হয়। সুষম পুষ্টিকর খাবার খেতে দিতে হবে। জ্বর ১০১ ডিগ্রি ফারেনহাইটের ওপর থাকলে রোগীকে স্পঞ্জিং দিতে হবে। রোগীকে বেশি করে তরল পানীয় খেতে দিতে হবে। এ অবস্থায় প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধে ১ থেকে ৪ দিনের মধ্যেই জ্বরের প্রকোপ কমতে থাকে, যা ৫ থেকে ৭ দিনের মধ্যে ভাল হয়ে যায়। এই নিয়মে জ্বর না কমলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
অ্যালার্জি ও শ্বাসজনিত রোগ
এই ঋতুতে ফুলের সমারোহ থাকায় প্রকৃতিতে অ্যালার্জেনের মাত্রা খুব বেশি থাকে। গাছগাছালি থেকে ফুলের পরাগ রেণু বাতাসে ভেসে বেড়ায়। সেই সাথে বাড়ে ধুলিবালি। এজন্য এই সময় অ্যালার্জিক রাইনাইটিস, হে ফিভার এবং হাঁপানি রোগের আধিক্য দেখা যায়। উপসর্গ: সর্দি, হাঁচি, নাক বা চোখের চুলকানি, নাক বন্ধ থাকা, চোখ ফুলে যাওয়া, চোখ থেকে ক্রমাগত পানি পড়া। ক্ষেত্রবিশেষে জ্বর, অ্যাজমা ইত্যাদি। গ্রাম বাংলায় এই ঋতুতে অ্যালার্জিক এলভিওলাইটিস দেখা দেয় এটা হাঁপানির মতো এক ধরনের শ্বাসকষ্টজনিত রোগ। এ থেকে মুক্ত থাকতে নাকে-মুখে মাস্ক কিংবা রুমাল ব্যবহার করতে হবে। পরিস্থিতি বেশি খারাপ হলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।
কিছু পরামর্শ
১) এসময় রোগীর পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার দিকে বিশেষ নজর দেওয়াটা জরুরি। ব্যবহার্য জিনিষপত্র আলাদা রাখা এবং নিয়মিত পরিষ্কার রাখা উচিত।
২) রোগীকে নিয়মিত গোসল করাতে হবে। তবে বসন্তের ক্ষেত্রে গোসলের পর গা মোছার ক্ষেত্রে সাবধান হতে হবে যাতে দানাগুলো ফেটে না যায়। সময়ের আগেই দানাগুলো ফেটে গেলে ওই স্থানে ঘা হয়ে যেতে পারে। দানাগুলো শুকিয়ে যাওয়ার সময় চুলকানি হয়। তবে কষ্ট হলেও চুলকানো থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করা উচিত। চুলকানি কমানোর জন্য হালকা গরম পানি দিয়ে গোসল করা যেতে পারে।
৩) এ সময় পুষ্টিকর খাবার খাওয়া উচিত। বাইরে বের হলে মাস্ক পরিধান করা উচিত।
বসন্তকালে কোন রোগবালাই এ আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়, সেগুলো আজ জেনে নিলেন। নিজে সচেতন হোন, অপরকেও সচেতন করুন। আজ তাহলে এই পর্যন্ত। সবাই ভালো থাকবেন।
লিখেছেন- ডা: তাজরিনা রহমান জেনি, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ, চট্রগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ
ছবি- সাটারস্টক
The post বসন্তকালে কোন রোগবালাই এ আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়? appeared first on Shajgoj.
from Shajgoj https://ift.tt/AIrfdtS
Munia
Comments
Post a Comment