Skip to main content

শিশুদের স্থূলতা | খাবারের ধরন, করণীয় ও সচেতনতা

বাড়ির ছোট্ট সদস্যদের যত্নে আমরা সবাই কম বেশি সচেতন থাকি। কী করলে তারা সুস্থ থাকবে তা নিয়ে চেষ্টার যেন কোনো ত্রুটি থাকে না। বর্তমান সময়ে শিশুদের স্থূলতা বেশ পরিচিত একটি সমস্যা, যার জন্য চিন্তিত হয়ে পড়ছেন অভিভাবকেরা। যেসব শিশু ওবেসিটি বা স্থূলতায় ভুগছে তাদের খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রায় কিছুটা পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। আজকের ফিচারে থাকছে শিশুদের স্থূলতা নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে কী করা যেতে পারে তা সম্পর্কে বিস্তারিত।

কীভাবে বুঝবেন আপনার শিশুর ওজন বেশি?

আদর্শ ওজন বলতে উচ্চতার সাথে সঠিকভাবে মানানসই ওজনকে বোঝানো হয়। যেকোনো বয়সের মানুষের একটি আদর্শ ওজন আছে, শিশুদের ক্ষেত্রেও তাই। আগে আপনারা শিশুর ওজন মেপে নিন। যদি আপনার সন্তানের ওজন আদর্শ ওজন থেকে ২০ শতাংশ বেশি হয়, তাহলে বুঝতে হবে আপনার সন্তান অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতায় ভুগছে। এক্ষেত্রে নিজের মতো করে কিছু করতে যাবেন না। মনে রাখবেন, শিশুদের অতিরিক্ত ওজন কমাতে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ আবশ্যক। তাই শুরুতেই শিশু পুষ্টিবিদ বা বিশেষজ্ঞ দেখিয়ে নিউট্রিশনাল প্ল্যান ঠিক করে নিন।

কীভাবে বুঝবেন আপনার শিশুর ওজন বেশি?

শিশুদের স্থূলতা দেখা দিলে খাবারের ধরন কেমন হবে?

শিশুদের স্থূলতা দেখা দিলে অভিভাবকদের অনেকে মনে করেন তাদের সন্তানদের একটি ডায়েট চার্ট ফলো করতে হবে। এটি একটি ভুল ধারণা। ছোটদের খাবারের তালিকা কখনোই নির্দিষ্ট কিছুতে সীমাবদ্ধ রাখা উচিত না। ওজন কমানোর ডায়েট চার্ট দিলে তাদের শারীরিক উচ্চতা বৃদ্ধি ও মানসিক স্বাস্থ্যের বিকাশ সঠিকভাবে হবে না। চলুন জেনে নেওয়া যাক ওবেসিটিতে ভুগে থাকলে শিশুদের প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাস কেমন হতে পারে সে সম্পর্কে।

প্রতিদিন কতটুকু ক্যালরি প্রয়োজন তা জেনে নিন

অনেকে মনে করেন, “আমার বাচ্চা যেহেতু অনেক হেলদি, তাই এখন তার খাবারের পরিমাণ অনেক কমিয়ে দিবো, এতে করে ওজন কমে যাবে।“ এমন কাজ ভুলেও করবেন না। কারণ তাতে শিশুর অসুস্থ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে। তাই কম খাবার না দিয়ে একজন বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলে নিন এবং আপনার শিশুর জন্য প্রতিদিন কতটুকু ক্যালরি প্রয়োজন তা জেনে নিন। স্থূল শিশুদের তাদের প্রয়োজনীয় ক্যালরির সমান পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে। এক্ষেত্রে তাদের খাদ্যতালিকা থেকে অধিক ক্যালরি যুক্ত খাবার বাদ দিয়ে কম ক্যালরির পুষ্টিকর খাবারকে প্রাধান্য দিতে হবে।

খাবারে পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান রাখুন

খাদ্যতালিকায় প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান রাখুন

ছোট-বড় সবার জন্য প্রোটিন একটি প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান। প্রোটিনের উৎস হিসেবে শিশুদের কম ফ্যাট যুক্ত মাছ, মাংস, ডাল, শিমের বিচি এগুলো দিতে পারেন। বাচ্চাদের খাবার তালিকায় ভিটামিন ও মিনারেল যুক্ত খাবারের প্রাধান্য থাকা আবশ্যক। বিশেষ করে ভিটামিন সি ফ্যাট বার্ন করতে অনেক সাহায্য করে। এক্ষেত্রে সবুজ শাকসবজি ও ফলমূল উপকারী ভুমিকা রাখতে পারে। হবে। এর পাশাপাশি দুধজাতীয় খাবার দিতে পারেন, তবে ফ্যাট ফ্রি বা লো ফ্যাট দুধ দিতে পারলে ভালো। সেই সাথে শিশুদের অবশ্যই বেশি বেশি পানি পান করতে হবে।

বাদ দিন কিছু খাবার

যেকোনো চিনি জাতীয় খাবার, যেমনঃ চকলেট, চিপস, আইসক্রিম, কোমল পানীয় ইত্যাদি গ্রহণ করা কমিয়ে দিতে হবে। সেই সাথে অতিরিক্ত ক্যালরি যুক্ত খাবার, যেমন: চাইনিজ ফুড, চাওমিন, পিজ্জা, বার্গার,পাস্তা এসব খাবার খাওয়া ধীরে ধীরে কমিয়ে দিতে হবে। কেননা এসবে খাবারে অতিরিক্ত সস,মেয়নেজ, টেস্টিং সল্ট ইত্যাদি অ্যাড করা হয়, যা বাচ্চাদের ওজন বৃদ্ধি করার সাথে সাথে তাদের মেধাবিকাশেও বাধা দেয়। তাছাড়াও বেশি লবণাক্ত বা চিনিযুক্ত খাবার থেকে যতটা দূরে রাখা যায় ততই ভালো।

কয়েকটি অভ্যাস পরিবর্তন করুন

শিশুদের স্থূলতার পেছনে অন্যতম দায়ী একটি কারণ হলো প্রতিদিনের কিছু অভ্যাস। যেমন ধরুন, শিশুদের টিভি দেখিয়ে বা মোবাইল হাতে ধরিয়ে দিয়ে খাওয়ানোর অভ্যাস বন্ধ করতে হবে। দিনে ৩০ মিনিট বা  ১ ঘন্টার বেশি ল্যাপটপ, টিভি, কম্পিউটার নিয়ে বসে থাকতে দেওয়া যাবে না। শিশুরা যেন বসে থেকে বোরড না হয়, সেজন্যে পরিবারের সদস্যদের যতটুকু সম্ভব শিশুদের সময় দিতে হবে।

শিশুদের স্থূলতা প্রতিরোধে তাদের খেলাধুলা করতে দিন

শিশুদের খেলাধুলা করতে উৎসাহ দিন

যেসব শিশু ওবেসিটিতে ভুগছে, তাদের প্রতিদিন কমপক্ষে ১ ঘন্টা বাইরে খেলাধুলা করতে দিতে হবে। শুধু খেলাধুলা না, হাঁটাহাঁটি, সাঁতার,নাচ, জাম্পিং, সাইক্লিং, দড়িলাফ এই জাতীয় এক্সারসাইজ গুলোতে তাদের মনোযোগী করে তুলতে হবে। ফলে তারা ফিজিক্যালি অ্যাকটিভ থাকবে এবং এতে করে ওজনও বাড়বে না।

আশা করছি শিশুদের স্থূলতা নিয়ে আপনাদের সব দ্বিধা দূর করতে পেরেছি। স্থূল শিশুদের খাদ্য নিয়ন্ত্রণ বা চিকিৎসায় তাড়াহুড়া করা যাবেনা। এজন্য কিছুটা সময় নেওয়া প্রয়োজন । শিশুদের আস্তে আস্তে খাদ্যাভ্যাস ও শারীরিক পরিশ্রমের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবন যাপনে উৎসাহিত করতে হবে। মনে রাখবেন, পারিবারিক সহযোগিতা ও সঠিক পুষ্টি পরামর্শ শিশুদের স্বাভাবিক জীবন যাপনের অন্যতম উপায়।

লিখেছেন,

সাদিয়া ইসরাত স্মৃতি

নিউট্রিশনিস্ট

ডক্টর সিরাজুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হসপিটাল

ছবিঃ সাটারস্টক

The post শিশুদের স্থূলতা | খাবারের ধরন, করণীয় ও সচেতনতা appeared first on Shajgoj.



from Shajgoj https://ift.tt/WfIV4TC
Sumaiya Rahman

Comments

Popular posts from this blog

রেগুলার ব্রা vs পুশ-আপ ব্রা | সঠিক ইনার ওয়্যার কীভাবে সিলেক্ট করবেন?

রেগুলার ব্রা আর পুশ-আপ ব্রা, এই দু’টার মধ্যে আসলে পার্থক্য কী আর কখন কোনটা ইউজ করতে হবে, এই বিষয়গুলো আমাদের অনেকেরই অজানা। আমাদের অ্যাকটিভিটি আর আউটফিটের সাথে ইনার ওয়্যারেও ভ্যারিয়েশন আসে। যেমন সকালে ঘুম থেকে উঠে ওয়ার্ক আউট করছি, এরপর ভার্সিটি বা অফিসে যাচ্ছি, সন্ধ্যায় পার্টি অ্যাটেন্ড করছি। সব সময় কি আমরা সেইম ব্রা পরি? না তো! শাড়ি পরলে এক ধরনের ব্রা পরি, জিমে গেলে অন্য ধরনের ব্রা পরি, বাসায় থাকলে আবার আরেক রকম! কখন কোন ব্রা পরা উচিত বা কোন ড্রেসের সাথে কোনটা মানাবে এই বিষয়গুলো নিয়ে অনেকেরই কনফিউশন আছে। এই বিষয়গুলো এখনও অনেকের কাছেই ট্যাবু। দিন বদলাচ্ছে, এই সামাজিক ট্যাবু থেকে বেরিয়ে আসতে হবে সবাইকে। লঞ্জেরি মেয়েদের জন্য বেসিক একটি জিনিস। তাই লঞ্জেরির ক্যাটাগরিটা আমাদের জেনে রাখা উচিত। পুশ-আপ ব্রা কেন ইউজ করে, এটাই এখনও অনেক মেয়েরা জানে না! রেগুলার ব্রা এর সাথে সাথে নিজের কালেকশনে পুশ-আপ ব্রা কেন রাখা উচিত, সেটা কিন্তু অনেকে বুঝতে পারে না। চলুন এই কনফিউশনগুলো আজ দূর করা যাক। রেগুলার ব্রা vs পুশ-আপ ব্রা    বেসিক রেগুলার ব্রা-এর ক্ষেত্রে ফেব্রিক ম্যাটেরিয়াল ও কমফোর্টের বিষ...

বিবি ক্রিম vs সিসি ক্রিম | স্কিন টাইপ অনুযায়ী কোনটি আপনার জন্য স্যুইটেবল?

ন্যাচারাল মেকআপ লুকের জন্য এখন বিবি ক্রিম ও সিসি ক্রিম বেশ জনপ্রিয়। পার্টি মেকআপ বা ফুল কভারেজ মেকআপের ক্ষেত্রে ফাউন্ডেশন ইউজ করা হয়। কিন্তু যারা রেগুলার হালকা মেকআপ করে বাইরে বের হন, তাদের জন্য বেস্ট অপশন হচ্ছে BB বা CC ক্রিম । কিন্তু আমরা অনেকেই বুঝতে পারি না যে স্কিন টাইপ ও কনসার্ন অনুযায়ী কীভাবে রাইট প্রোডাক্টটি সিলেক্ট করতে হবে। এই দু’টি মেকআপ প্রোডাক্টের বেনিফিট বা কার্যকারিতা নিয়ে আজকের ফিচার। এগুলোর মধ্যে বেসিক ডিফারেন্সটা আসলে কোথায়, সেটাও জানা হয়ে যাবে। বিবি ক্রিম BB (Beauty Balm, Blemish Balm) ক্রিম স্কিনকে ইভেন টোনড করে এবং ব্লেমিশ হাইড করে ফ্ললেস লুক দেয় নিমিষেই। এতে স্কিন ময়েশ্চারাইজিং ও হাইড্রেটিং এলিমেন্টস থাকে, যার কারণে ড্রাই বা নরমাল স্কিনের জন্য এটি একদম পারফেক্ট। এর টেক্সচার ফাউন্ডেশনের থেকে লাইট, তাই কভারেজটাও হয় একদম ন্যাচারাল। মানে একদমই হেভি ফিল হয় না, আর স্কিনটাও পিকচার পারফেক্ট দেখায়। অনেক বিবি ক্রিমে সান প্রোটেকশন ফ্যাক্টর বা SPF থাকে। সিসি ক্রিম CC (Color Corrector, Complexion Corrector) ক্রিমের ফর্মুলা লাইট ওয়েট ও লং লাস্টিং। ম্যাট ফর্মুলার হওয়াতে অয়েল...

লো পোরোসিটি চুল | কীভাবে চিনবেন এবং সঠিক যত্ন নিবেন?

একরাশ সুন্দর ও ঝলমলে চুল কে না চায়? কিন্তু অনেক সময় সঠিক যত্নের অভাবে সুন্দর চুলগুলো দিন দিন নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ে। চুলের যত্নের ক্ষেত্রে আমাদের সবচেয়ে সবচেয়ে বড় ভুল হলো পোরোসিটি না বুঝে হেয়ার কেয়ার করা। এতে করে চুল আরো ড্যামেজ হওয়ার চান্স থাকে। আজকের ফিচারটি মূলত লো পোরোসিটি হেয়ার কেয়ার নিয়ে। লো পোরোসিটি চুল কীভাবে বুঝবো, কীভাবে যত্ন নিতে হবে, কী ব্যবহার করা যাবে ও যাবেনা ইত্যাদি বিস্তারিত জানবো আজকের ফিচারে। লো পোরোসিটি বলতে কী বোঝানো হয়? পোরোসিটি শব্দের বাংলা অর্থ হচ্ছে ছিদ্র। ত্বকে যেমন অসংখ্য পোর বা ছিদ্র থাকে, চুলের ক্ষেত্রেও কিন্তু তাই রয়েছে। অর্থাৎ প্রতিটি চুলে অসংখ্য ছিদ্র বিদ্যমান, যার মাধ্যমে চুলে আর্দ্রতা প্রবেশ করে এবং চুল আর্দ্রতা ধরে রাখার চেষ্টা করে। একেই হেয়ার পোরোসিটি বলে। পোরোসিটি ৩ রকম, হাই, মিডিয়াম ও লো। এই হেয়ার পোরোসিটির মাত্রা প্রত্যেক মানুষের ক্ষেত্রে আলাদা হয়ে থাকে। লো পোরোসিটির চুলগুলো কম ছিদ্র সম্পন্ন হয়ে থাকে। লো পোরোসিটি চুলের কিউটিকল লেয়ার খুব শক্ত ভাবে সংযুক্ত থাকে। যার ফলে এ ধরনের চুল আর্দ্রতা সহজে গ্রহণ করতে পারেনা, তবে একবার আর্দ্রতা গ্রহণ করলে এ ধরনের...