Skip to main content

ত্বকের যত্নে হিউমেকট্যান্ট কেন এত প্রয়োজনীয়?

এখনকার সময়ে ত্বকের যত্নে সবাই বেশ সচেতন। ময়েশ্চারাইজার বা সিরামের মত স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট কেনার সময় সেটির উপাদান তালিকায় হিউমেকট্যান্ট শব্দটি অনেক সময় দেখতে পাওয়া যায়। এটি এমন একটি উপাদান যেটি ত্বকের জন্য বেশ কার্যকরী। তবে হিউমেকট্যান্ট কী, এটি কেন ব্যবহার করা হয় কিংবা কাদের ত্বকে এটি ভালো মানিয়ে যায় ইত্যাদি সম্পর্কে বেশিরভাগেরই সেভাবে ধারণা নেই। আজকের ফিচারে থাকছে ত্বকের যত্নে হিউমেকট্যান্ট সম্পর্কে বিস্তারিত।

হিউমেকট্যান্ট কী?

আপনার ত্বকের ধরন যেটিই হোক, হাইড্রেশন কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ। হিউমেকট্যান্ট এমন একটি হাইড্রেটিং ইনগ্রেডিয়েন্ট যা ওয়াটার মলিকিউলকে আকর্ষণ করে নিজের চারপাশে ধরে রাখতে পারে। এটি ত্বকের এপিডার্মিস লেয়ারকে পানি শূন্যতা থেকে রক্ষা করে। এটি ত্বকের গভীর পর্যন্ত হাইড্রেশন পৌঁছে দেয়, যার ফলে ত্বক অনেক বেশি সফট, হাইড্রেটেড ও প্লাম্পি দেখায়। সবথেকে পরিচিত ও বহুল ব্যবহৃত ৩টি হিউমেকট্যান্ট হলো:

১. গ্লিসারিন: বেশিরভাগ হাইড্রেটিং প্রোডাক্টের উপাদানের তালিকায় গ্লিসারিনকে দেখা যায় শুরুর দিকেই।

২. হায়ালুরোনিক অ্যাসিড: এটি বর্তমানে বহুল পরিচিত একটি হিউমেকট্যান্ট যা অহরহই ময়েশ্চারাইজার, টোনার, সিরাম ইত্যাদিতে ব্যবহার করা হয়। হায়ালুরোনিক অ্যাসিড তার আণবিক ভরের থেকেও প্রায় ১০০০ গুণ বেশি পানির মলিকিউল ধরে রাখতে সক্ষম।

৩. অ্যালোভেরা:  অ্যালোভেরা অন্যতম একটি হিউমেকট্যান্ট যা স্কিন কেয়ার ও হেয়ার কেয়ার প্রোডাক্টগুলোতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

যারা ত্বকে ডিউয়্যি ও গ্লোয়িং ইফেক্ট পছন্দ করেন, হিউমেকট্যান্ট তাদের জন্য হলি গ্রেইল একটি উপাদান। আশা করি ত্বকের যত্নে হিউমেকট্যান্ট কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ তা বুঝতে পেরেছেন।

ত্বকের যত্নে হিউমেকট্যান্ট খুবই গুরুত্বপুর্ণ

কত ধরনের হয়?

হিউমেকট্যান্ট সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে, প্রাকৃতিক ও সিনথেটিক। এই দুই ধরনের হিউমেকট্যান্টই স্কিন কেয়ার ও হেয়ার কেয়ার প্রোডাক্টগুলোতে ব্যবহার হয়। প্রয়োজন অনুযায়ী এই দুই ধরনের হিউমেকট্যান্ট প্রোডাক্টের উপাদান তালিকায় যুক্ত করা হয়ে থাকে।

প্রাকৃতিক হিউমেকট্যান্টের মধ্যে রয়েছে

১. অ্যালোভেরা

২. বেটা গ্লুকান

৩. গ্লিসারিন

৪. মধু

৫. হায়ালুরোনিক অ্যাসিড

৬. ল্যাকটিক অ্যাসিড

৭. প্যানথানল (Panthenol)

৮. ফাইটিক এসিড( Phytic acid)

৯. স্যাকারাইড

১০. সোডিয়াম পিসিএ ( Sodium PCA)

১১. সরবিটল

১২. ইউরিয়া

হিউমেকট্যান্ট দুই ধরনের হয়

সিনথেটিক হিউমেকট্যান্টের মধ্যে রয়েছে

১. বিউটাইলিন গ্লাইকল

২. ডাইপ্রোপাইলিন গ্লাইকল

৩. গ্লুকোনোল্যাকটন

৪. Glycereth-26

৫. গ্লাইকোলিক অ্যাসিড

৬. হেপারান সালফেট

৭. হেক্সালেন গ্লাইকল

৮. প্রোপাইলিন গ্লাইকল

৯. সোডিয়াম ল্যাকটেট

ত্বকের ধরন বুঝে প্রোডাক্ট বেছে নিন

কোন ধরনের ত্বকে ব্যবহার করবেন?

ত্বকের যত্নে হিউমেকট্যান্ট ব্যবহার করার উপকারিতা অনেক। বিভিন্ন ধরনের ত্বকের জন্য হিউমেকট্যান্ট এর ব্যবহার ভিন্ন ভিন্ন হয়। শুষ্ক ত্বকের জন্য মানানসই স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টগুলোতে হিউমেকট্যান্টকে অক্লুসিভ বা তৈলাক্ত কোনো উপাদানের সাথে যুক্ত করে ব্যবহার করা হয়। এর কারণ হলো যেহেতু শুষ্ক ত্বকে ন্যাচারাল অয়েলের পরিমাণ কম থাকে, তাই অক্লুসিভ জাতীয় উপাদানের সাথে হিউমেকট্যান্ট যুক্ত করার মাধ্যমে ত্বক একই সাথে প্রয়োজনীয় হাইড্রেশন ও ময়েশ্চারাইজেশন দু’টোই পেয়ে থাকে। অক্লুসিভের কারণেই হিউমেকট্যান্ট শুষ্ক ত্বকে সঠিকভাবে কাজ করতে পারে। যাদের ত্বক খুবই শুষ্ক ও ড্যামেজড, তারা চাইলে হিউমেকট্যান্ট ও অক্লুসিভযুক্ত ব্যারিয়ার রিপেয়ার ক্রিম বা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে পারেন।

শুষ্ক ত্বকের পাশাপাশি তৈলাক্ত ত্বকের জন্যও হাইড্রেশন খুব জরুরি। যেহেতু এই ধরনের ত্বকে ন্যাচারাল অয়েল প্রোডাকশন বেশি হয়, তাই প্রোডাক্টে অক্লুসিভ জাতীয় উপাদানের ব্যবহার কম হয়ে থাকে এবং হিউমেকট্যান্টকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়। হিউমেকট্যান্ট ত্বককে অতিরিক্ত তৈলাক্ত না করেই যথেষ্ট হাইড্রেশন ও ময়েশ্চারাইজেশন প্রদান করে।

ত্বকের যত্নে প্রতিটি প্রোডাক্টের সঠিক ব্যবহার জানুন

কখন হিউমেকট্যান্ট এড়িয়ে চলতে হবে?

কিছু কিছু ক্ষেত্রে হিউমেকট্যান্ট এড়িয়ে চলাই ভালো, সেগুলো হলো:

১. যদি চারপাশের পরিবেশ ও আবহাওয়া খুব বেশি শুষ্ক হয়ে থাকে, তখন সরাসরি হিউমেকট্যান্ট আছে এমন প্রোডাক্ট এড়িয়ে চলতে হবে। এক্ষেত্রে হিউমেকট্যান্টের সাথে বিভিন্ন ধরনের অক্লুসিভ ও প্ল্যান্ট বেইজড অয়েল, যেমনঃ জোজোবা, আর্গন ইত্যাদি অয়েলযুক্ত প্রোডাক্ট ব্যবহার করতে হবে।

২. চোখের নিচের পাফিনেস বা ফোলাভাব দূর করতে যে প্রোডাক্টগুলো ব্যবহার করা হয় তা অবশ্যই হিউমেকট্যান্ট ব্যতীত হতে হবে। চোখের নিচে পানি জমা বা পানি ধরে রাখার কারণেই ফোলাভাব হয়, এই এরিয়াতে হিউমেকট্যান্ট ব্যবহার করা হলে চোখের নিচের অংশ আরো বেশি পরিমাণে পানি ধরে রাখবে, তখন কিন্তু ফোলা ভাব দূর হবেনা।

৩. ঠোঁটে ব্যবহৃত প্রোডাক্ট, যেমনঃ লিপ বামে শুধুমাত্র হিউমেকট্যান্ট থাকলে তা ঠোঁটের হাইড্রেশন ও ময়েশ্চারাইজেশন সঠিকভাবে ধরে রাখতে পারবে না। যেহেতু ঠোঁটের ত্বক খুব পাতলা হয়ে থাকে, তাই সহজেই সেখান থেকে ওয়াটার লস হয়৷ তাই অবশ্যই হিউমেকট্যান্ট ও অক্লুসিভযুক্ত লিপ বাম, লিপ জেল ইত্যাদি ব্যবহার করতে হবে।

আশা করি ত্বকের যত্নে হিউমেকট্যান্ট এর ভূমিকা নিয়ে আপনাদের আর কোনো কনফিউশন নেই। পরিশেষে বলা যায়, ত্বককে হাইড্রেটেড, স্মুথ ও গ্লোয়িং করে তুলতে এটি খুবই দারুণ একটি উপাদান। অথেনটিক প্রোডাক্টস পারচেজ করার জন্য সাজগোজ হতে পারে আপনার জন্য বেস্ট অপশন। তাই ভিজিট করুন সাজগোজের ওয়েবসাইট, অ্যাপ বা ফিজিক্যাল স্টোরে। অনলাইনে অথেনটিক প্রোডাক্ট কিনতে পারেন শপ.সাজগোজ.কম থেকে অথবা সাজগোজের ফিজিক্যাল শপ- যমুনা ফিউচার পার্ক, সীমান্ত সম্ভার, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার, ইস্টার্ণ মল্লিকা, ওয়ারীর র‍্যাংকিন স্ট্রিট, বসুন্ধরা সিটি, উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে), মিরপুরের কিংশুক টাওয়ারে এবং চট্টগ্রামের খুলশি টাউন সেন্টার থেকেও বেছে নিতে পারেন আপনার পছন্দের প্রোডাক্টটি।

 

ছবিঃ সাটারস্টক, সাজগোজ

The post ত্বকের যত্নে হিউমেকট্যান্ট কেন এত প্রয়োজনীয়? appeared first on Shajgoj.



from Shajgoj https://ift.tt/k2yTRWa
Sumaiya Rahman

Comments

Popular posts from this blog

রেগুলার ব্রা vs পুশ-আপ ব্রা | সঠিক ইনার ওয়্যার কীভাবে সিলেক্ট করবেন?

রেগুলার ব্রা আর পুশ-আপ ব্রা, এই দু’টার মধ্যে আসলে পার্থক্য কী আর কখন কোনটা ইউজ করতে হবে, এই বিষয়গুলো আমাদের অনেকেরই অজানা। আমাদের অ্যাকটিভিটি আর আউটফিটের সাথে ইনার ওয়্যারেও ভ্যারিয়েশন আসে। যেমন সকালে ঘুম থেকে উঠে ওয়ার্ক আউট করছি, এরপর ভার্সিটি বা অফিসে যাচ্ছি, সন্ধ্যায় পার্টি অ্যাটেন্ড করছি। সব সময় কি আমরা সেইম ব্রা পরি? না তো! শাড়ি পরলে এক ধরনের ব্রা পরি, জিমে গেলে অন্য ধরনের ব্রা পরি, বাসায় থাকলে আবার আরেক রকম! কখন কোন ব্রা পরা উচিত বা কোন ড্রেসের সাথে কোনটা মানাবে এই বিষয়গুলো নিয়ে অনেকেরই কনফিউশন আছে। এই বিষয়গুলো এখনও অনেকের কাছেই ট্যাবু। দিন বদলাচ্ছে, এই সামাজিক ট্যাবু থেকে বেরিয়ে আসতে হবে সবাইকে। লঞ্জেরি মেয়েদের জন্য বেসিক একটি জিনিস। তাই লঞ্জেরির ক্যাটাগরিটা আমাদের জেনে রাখা উচিত। পুশ-আপ ব্রা কেন ইউজ করে, এটাই এখনও অনেক মেয়েরা জানে না! রেগুলার ব্রা এর সাথে সাথে নিজের কালেকশনে পুশ-আপ ব্রা কেন রাখা উচিত, সেটা কিন্তু অনেকে বুঝতে পারে না। চলুন এই কনফিউশনগুলো আজ দূর করা যাক। রেগুলার ব্রা vs পুশ-আপ ব্রা    বেসিক রেগুলার ব্রা-এর ক্ষেত্রে ফেব্রিক ম্যাটেরিয়াল ও কমফোর্টের বিষ...

বিবি ক্রিম vs সিসি ক্রিম | স্কিন টাইপ অনুযায়ী কোনটি আপনার জন্য স্যুইটেবল?

ন্যাচারাল মেকআপ লুকের জন্য এখন বিবি ক্রিম ও সিসি ক্রিম বেশ জনপ্রিয়। পার্টি মেকআপ বা ফুল কভারেজ মেকআপের ক্ষেত্রে ফাউন্ডেশন ইউজ করা হয়। কিন্তু যারা রেগুলার হালকা মেকআপ করে বাইরে বের হন, তাদের জন্য বেস্ট অপশন হচ্ছে BB বা CC ক্রিম । কিন্তু আমরা অনেকেই বুঝতে পারি না যে স্কিন টাইপ ও কনসার্ন অনুযায়ী কীভাবে রাইট প্রোডাক্টটি সিলেক্ট করতে হবে। এই দু’টি মেকআপ প্রোডাক্টের বেনিফিট বা কার্যকারিতা নিয়ে আজকের ফিচার। এগুলোর মধ্যে বেসিক ডিফারেন্সটা আসলে কোথায়, সেটাও জানা হয়ে যাবে। বিবি ক্রিম BB (Beauty Balm, Blemish Balm) ক্রিম স্কিনকে ইভেন টোনড করে এবং ব্লেমিশ হাইড করে ফ্ললেস লুক দেয় নিমিষেই। এতে স্কিন ময়েশ্চারাইজিং ও হাইড্রেটিং এলিমেন্টস থাকে, যার কারণে ড্রাই বা নরমাল স্কিনের জন্য এটি একদম পারফেক্ট। এর টেক্সচার ফাউন্ডেশনের থেকে লাইট, তাই কভারেজটাও হয় একদম ন্যাচারাল। মানে একদমই হেভি ফিল হয় না, আর স্কিনটাও পিকচার পারফেক্ট দেখায়। অনেক বিবি ক্রিমে সান প্রোটেকশন ফ্যাক্টর বা SPF থাকে। সিসি ক্রিম CC (Color Corrector, Complexion Corrector) ক্রিমের ফর্মুলা লাইট ওয়েট ও লং লাস্টিং। ম্যাট ফর্মুলার হওয়াতে অয়েল...

লো পোরোসিটি চুল | কীভাবে চিনবেন এবং সঠিক যত্ন নিবেন?

একরাশ সুন্দর ও ঝলমলে চুল কে না চায়? কিন্তু অনেক সময় সঠিক যত্নের অভাবে সুন্দর চুলগুলো দিন দিন নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ে। চুলের যত্নের ক্ষেত্রে আমাদের সবচেয়ে সবচেয়ে বড় ভুল হলো পোরোসিটি না বুঝে হেয়ার কেয়ার করা। এতে করে চুল আরো ড্যামেজ হওয়ার চান্স থাকে। আজকের ফিচারটি মূলত লো পোরোসিটি হেয়ার কেয়ার নিয়ে। লো পোরোসিটি চুল কীভাবে বুঝবো, কীভাবে যত্ন নিতে হবে, কী ব্যবহার করা যাবে ও যাবেনা ইত্যাদি বিস্তারিত জানবো আজকের ফিচারে। লো পোরোসিটি বলতে কী বোঝানো হয়? পোরোসিটি শব্দের বাংলা অর্থ হচ্ছে ছিদ্র। ত্বকে যেমন অসংখ্য পোর বা ছিদ্র থাকে, চুলের ক্ষেত্রেও কিন্তু তাই রয়েছে। অর্থাৎ প্রতিটি চুলে অসংখ্য ছিদ্র বিদ্যমান, যার মাধ্যমে চুলে আর্দ্রতা প্রবেশ করে এবং চুল আর্দ্রতা ধরে রাখার চেষ্টা করে। একেই হেয়ার পোরোসিটি বলে। পোরোসিটি ৩ রকম, হাই, মিডিয়াম ও লো। এই হেয়ার পোরোসিটির মাত্রা প্রত্যেক মানুষের ক্ষেত্রে আলাদা হয়ে থাকে। লো পোরোসিটির চুলগুলো কম ছিদ্র সম্পন্ন হয়ে থাকে। লো পোরোসিটি চুলের কিউটিকল লেয়ার খুব শক্ত ভাবে সংযুক্ত থাকে। যার ফলে এ ধরনের চুল আর্দ্রতা সহজে গ্রহণ করতে পারেনা, তবে একবার আর্দ্রতা গ্রহণ করলে এ ধরনের...