Skip to main content

পিসিওএস নিয়ন্ত্রণ করতে খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপনে কী কী পরিবর্তন আনবেন?

পিসিওএস বা পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম, বর্তমান যুগের নারীদের জন্য অন্যতম প্রধান একটি স্বাস্থ্য সমস্যা। কারো হয়তো ইতিমধ্যেই পিসিওএস আছে বলে চিন্তিত, আবার কেউ হয়তো এটির ঝুঁকিতে আছেন। পরিসংখ্যান মতে, বাংলাদেশে ১৪ থেকে ৪৫ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে ৬ থেকে ১৪ শতাংশ পিসিওএসে আক্রান্ত। এটি কি আসলে একটি রোগ? সম্পূর্ণভাবে না, এটিকে পুরোপুরি রোগ বলা যায় না। এটিকে মূলত হরমোনাল সমস্যার জন্য সৃষ্টি হওয়া কতগুলো লক্ষণের সমষ্টিগত বহিঃপ্রকাশ বলা যেতে পারে! পিসিওএস নিয়ন্ত্রণ করতে খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপনে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া দরকার এবং নিজের কোন অভ্যাসগুলো পরিবর্তন করা দরকার তা নিয়েই আমাদের আজকের ফিচার।

পিসিওএস হওয়ার কারণ কী?

আমরা সবাই জানি নারীদের শরীরের প্রজনন অঙ্গ হলো ইউটেরাস ও জরায়ু। সুস্থ, স্বাভাবিক একজন নারীর শরীরে একটি ইউটেরাস থাকে এবং এর দুই পাশে দুইটি ওভারি বা জরায়ু থাকে। হরমোনজনিত কোনো তারতম্য দেখা দিলে, বিশেষ করে অ্যান্ড্রোজেন হরমোনের প্রোডাকশন বেড়ে গেলে পিসিওএস দেখা দেয়। স্বাভাবিকভাবে আমাদের দুইটি ওভারি থেকে দুইটি ডিম্বাণু উৎপন্ন হলেও পিসিওএস হলে ওভারি থেকে ডিম্বাণু উৎপন্ন হতে পারে না। এ সময় দুই ওভারিতে বেশ কিছু সিস্টের মতোন গঠন দেখা যায়। এই অবস্থাকেই তখন বলে পলি (যার অর্থ বহু) সিস্টিক কন্ডিশন এবং সমগ্র অবস্থাকে একত্রে বলে পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম। এ সমস্যাটি যে শুধু নারীর হরমোনাল সিস্টেমে গোলমাল বাঁধায় তা না, বরং প্রজনন স্বাস্থ্যের উপরেও বেশ নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

অনেক গবেষণার পরেও এখনও নির্দিষ্ট করে পিসিওএসের কোনো নির্দিষ্ট কারণ বিজ্ঞানীরা জানাতে পারেন নি। পিসিওএসের কারণে ওজন বেড়ে যাওয়া, পুরুষদের মতো বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য দেখা দেওয়া, একনে হওয়া, চুল পড়া, অবাঞ্চিত লোম গজানো, এমনকি সন্তান জন্মদানে জটিলতা দেখা দেয়। পিসিওএস আবার ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বাড়িয়ে দেয়, যার জন্য টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার আশংকাও বেড়ে যায়। সাথে নানা রকম মানসিক সমস্যা তো আছেই। তাই সময় থাকতে পিসিওএস নিয়ে সিরিয়াস না হলে পরে মূল্যটা হয়তো একটু বেশিই দিতে হতে পারে!

পিসিওএস নিয়ন্ত্রণে সঠিক খাদ্যাভাস

পিসিওএস নিয়ন্ত্রণ করতে খাবারে কী ধরনের পরিবর্তন আনবেন?

সঠিক খাদ্যাভাস আমাদের অনেক ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা থেকে দূরে রাখতে পারে। প্রথমেই চলুন জেনে নিই পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম থাকলে কোন খাবারগুলো খাওয়া আপনার জন্য ভালো হবে।

হোল-গ্রেইন খাবার

হোল-গ্রেইন বা পূর্ণ শস্যযুক্ত খাবার হলো সবচেয়ে বেশি ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার। এই খাবারগুলো আমাদের শরীরে ভালো আঁশের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয় এবং আস্তে আস্তে হজম হয়। ফলে গ্লুকোজ স্পাইক রোধ পায় এবং ইনসুলিন লেভেলের উপর সরাসরি সেভাবে প্রভাব ফেলে না। তাই এই খাবারগুলো হতে পারে আপনার প্রতিদিনের সঙ্গী। ওটস, ব্রাউন রাইস খেতে পারেন, এছাড়াও লাল আটা, কিনোয়া এসবও আশেপাশের স্টোরে পেলে খেতে পারেন। সেই সাথে বিভিন্ন লিগিউম, ডাল, বাদাম, বীজ এসবও খাওয়ার পরামর্শ দেন ডাক্তাররা।

হাই প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার

মানবদেহের বিল্ডিং ব্লক হলো প্রোটিন। প্রোটিন আমাদের পেট অনেক সময় পর্যন্ত ভরা রাখে, ফলে অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমে যায়। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন তার নিজের ওজনের ০.৮ গ্রাম প্রোটিন খাওয়া উচিৎ। আরেকটু সহজ করে বললে, আপনার ওজন যদি ৮০ কেজি হয়, তাহলে আপনার প্রতিদিন ৮০*০.৮= ৬৪ গ্রাম প্রোটিন খাওয়া উচিৎ। প্রোটিনের বেশ ভালো উৎস ডিম। এছাড়াও আছে মুরগি, কোয়েল পাখির মাংস ও ডিম, সয়াবিন, বিভিন্ন রকম ডাল, দুধ, টোফু ইত্যাদি। পিসিওএস নিয়ন্ত্রণ করতে এ ধরনের খাবার খেতে পারেন।

সবুজ শাকসবজি খেতেই হবে

সবুজ শাকসবজি খাওয়া

সুস্থ থাকতে সবুজ শাকসবজি খাওয়ার কোনো বিকল্প নেই। সবুজ শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার তো থাকেই, এর সাথে ভিটামিন ও মিনারেলের খুবই ভালো উৎস এগুলো। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব নারীরা পিসিওএসে আক্রান্ত হন, এদের মধ্যে ভিটামিন-বি এর অভাবে দেখা যায়। সবুজ শাকসবজি, যেমন-পালং শাক, সবুজ শাক, লাউশাক, কুমড়াশাক ইত্যাদি এইক্ষেত্রে ভিটামিন-বি র অভাব পূরণে বেশ কার্যকর।

জীবনযাপনে কী ধরনের পরিবর্তন আনবেন?

পিসিওএস থাকলে জীবনযাপনের ক্ষেত্রে একটু সতর্ক না থাকলে সুস্থ থাকাটা কিন্তু বেশ কঠিন। কী কী পরিবর্তন আনলে জীবনযাপন থেকে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পিসিওএসের উপর পড়বে না চলুন জেনে আসি-

ওজন কমানো

ওজন বেড়ে যাওয়ার কারনে হরমোনের তারতম্য দেখা যায়, যার কারনে পিসিওএসের লক্ষণগুলো আরো প্রকট হতে পারে। তাই যত দ্রুত সম্ভব ওজন কমানোর চেষ্টা করতে হবে। এতে করে শুধু পিসিওএস নয়, বরং আরো অনেক ধরনের জটিলতা থেকে দূরে থাকা যাবে। তবে হ্যাঁ, ওজন কমানোর জন্য একেবারে না খেয়ে থাকাটাও কিন্তু উচিত নয়। বরং অভিজ্ঞ একজন ডায়েটিশিয়ানের সাথে কনসাল্ট করে নিজের ওজনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি ডায়েট চার্ট বানিয়ে নিন।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা

যদি পিসিওএস হওয়ার আগে থেকেই আপনার ডায়াবেটিস থাকে, তাহলে দ্বিগুণ সতর্কতার সাথে দিনযাপন করাটাই বুদ্ধিমানের। বেশি মিষ্টিজাতীয় খাবার না খাওয়া, অতিরিক্ত তেল দিয়ে রান্না করা খাবার, ভাজাপোড়া, অতিরিক্ত মশলা এসব এড়িয়ে চলা স্বাস্থ্যকর ও বুদ্ধিমান মানুষেরই কাজ!

নিয়মিত এক্সারসাইজের বিকল্প নেই

নিয়মিত এক্সারসাইজ করা অথবা হাঁটা

একটু কঠিন হলেও প্রতিদিন যদি আপনি ৩০ মিনিট এক্সারসাইজ করতে পারেন বা নিদেনপক্ষে হাঁটতে পারেন, তাহলে সেটিও আপনার জন্য অনেকখানি উপকার এনে দিবে। তাই চেষ্টা করা উচিত প্রতিদিন নিজের জন্য হাঁটার কিছু সময় রাখা।

চিনি ও আলট্রা প্রসেসড খাবারকে না বলা

চিনি ও প্রসেসড ফুড আমরা প্রতিদিন স্বেচ্ছায় গ্রহণ করছি, এমনকি এখন আমাদের জীবনযাপনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গিয়েছে এগুলো। কিন্তু সত্যি বলতে এই দুটিই আমাদের স্বাস্থ্যের দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতির জন্য দায়ী। তাই যত দ্রুত এগুলোকে না বলতে পারবেন, তত দ্রুত নিজের সুস্থতাকে হ্যাঁ বলতে পারবেন।

পরিশেষে, পিসিওএস একটি শঙ্কার নাম এটি সত্য, কিন্তু আমরা পিসিওএস নিয়ন্ত্রণ করতে পারি শুধুমাত্র আমাদের কিছু অভ্যাস পরিবর্তন করে। তাই এ বিষয়ে সবার মধ্যে আরো বেশি করে সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য কাজ করতে হবে এবং সুস্থ একটি জীবনাচরণের দিকে নিজেকে আস্তে আস্তে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে!

ছবিঃ সাটারস্টক

The post পিসিওএস নিয়ন্ত্রণ করতে খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপনে কী কী পরিবর্তন আনবেন? appeared first on Shajgoj.



from Shajgoj https://ift.tt/0LKj9uX
Sumaiya Rahman

Comments

Popular posts from this blog

স্ট্রেসের কারণে একনে বা প্রিম্যাচিউর এজিং সাইনস দেখা দিচ্ছে না তো?

আপনি যখন এই লেখাটি পড়ছেন তখন আমি বুঝতেই পারছি আপনার হাতে টেকনোলজির সুবিধা রয়েছে। যার কারণে আপনি এখন চাইলেই যে কোনো ভিডিও দেখতে পারেন, যে কোনো তথ্য সম্পর্কে জানতে ইন্টারনেটে সার্চ করতে পারেন। জীবন আগের চেয়ে এখন অনেক সহজ। তারপরও কিন্তু আমরা সবাই কমবেশি স্ট্রেসের মধ্য দিয়ে যাই। আর এই স্ট্রেস মানসিকভাবে আমাদের যতটা অসুস্থ করে দিচ্ছে, ঠিক ততটাই এফেক্ট ফেলছে আমাদের স্কিনের উপর। যেমন- স্ট্রেসের কারণে একনে বা প্রিম্যাচিউর এজিং সাইনস দেখা দিচ্ছে, সেই সাথে হচ্ছে ত্বকের নানা সমস্যা। স্ট্রেস কতভাবে স্কিনের উপর প্রভাব ফেলে এবং কীভাবে স্ট্রেস কমিয়ে আনা যায় তা নিয়েই আলোচনা করবো আজ। স্ট্রেস কেন হয়? বিভিন্নভাবে স্ট্রেস হতে পারে। যেমন- এনভায়রনমেন্টাল বা টেম্পারেচার চেঞ্জ (এক্সটার্নাল ফ্যাক্টর)। ধরুন আপনি অনেকটা সময় ঠান্ডা রুমে ছিলেন। হুট করে যখন গরম পরিবেশে চলে আসলেন তখন শরীরে একটা স্ট্রেস হয়। আবার আর্থিক অবস্থা, লেখাপড়া, পারিবারিক সমস্যা ইত্যাদির কারণে সাইকোলজিক্যাল স্ট্রেস দেখা দেয়। স্ট্রেস এমন একটি বিষয় যেটার সাথেও আমরা থাকতে পারি না, যেটা ছাড়াও আমাদের থাকা সম্ভব নয়। সময়ের সাথে সাথে আমরা বেশ আধু

কীভাবে পারফেক্টলি ক্যামেরা বন্দী করা যায় সুন্দর মুহূর্তগুলো?

একটা সময় ছিল, যখন ছবি তোলা বা কারো কাছে ক্যামেরা থাকা যেন বড়সড় ব্যাপার। স্টুডিওতে যেয়ে ছবি তুলতে হতো বা কোনো কিছুর ছবি, ভিডিও এত সহজ ছিল না। অনেকদিন অপেক্ষা করে হাতে ছবি পাওয়া যেতো এবং সেটা অ্যালবামে যত্নের সাথে সংরক্ষণ করা হতো। আর এখন ছবি তোলা অনেক সহজ। বাজারের বিভিন্ন মডেলের ক্যামেরা বা হাই মেগাপিক্সেল সম্পন্ন ফোন সবার হাতে হাতে। আমরা এখন চাইলেই আমাদের সুন্দর সময়গুলোর বা শখের কাজ কিংবা ঘুরতে যেয়ে মনোমুগ্ধকর প্রকৃতির ছবি, ভিডিও ক্যামেরা বন্দী করতে পারি। এখন কীভাবে পারফেক্টলি ক্যামেরা বন্দী করা যায় সুন্দর মুহূর্তগুলো তা নিয়েই টুকিটাকি টিপস শেয়ার করবো আপনাদের সাথে। ক্যামেরা নিয়ে কিছু বেসিক ধারণা যেকোনো ডিভাইস ব্যবহার করার পূর্বে তার সম্পর্কে ধারণা নেওয়া জরুরী। অনেক সময় দেখা যায় একটা ডিভাইস সম্পর্কে ঠিকভাবে না জানার কারণে ছবি তুলতে গিয়ে আমরা অনেক অপশন মিস করে ফেলি। ফলস্বরূপ ছবি সুন্দর হয় না। এই জন্য ম্যানুয়ালটায় একবার চোখ বুলিয়ে নিতে পারেন। তবে ম্যানুয়াল পড়াটা অনেকের কাছে বিরক্তিকর লাগে। তাই বিভিন্ন ফিচার নিয়ে যদি বারবার প্র্যাকটিস করা যায় তাহলে ফটোগ্রাফি বিষয়টা সহজে আয়ত্তে আসে। এখন

Dr. Fariah Sharmeen - Woman Oncology Specialist

Dr. Fariah Sharmeen Specialty - Associate Consultant, Oncology Degree - MBBS, FCPS (Radiotherapy) Chamber: SQUARE Hospitals Ltd. Dhaka Address: 18/F Bir Uttam Qazi Nuruzzaman Sarak, West Panthapath, Dhaka - 1205, Bangladesh Call For Appointment 10616 Call Now About: Dr. Fariah Sharmeen successfully completed her MBBS from Cumilla Medical College, and subsequently completed a one-year internship at BIRDEM Hospital, Dhaka. After completing of the internship, she started her post-graduate training in Medical Oncology at the National Institute of Cancer Research & Hospital. She started her fellowship in Radiotherapy in 2010. She completed 4 years of training at the National Institute of Cancer Research & Hospital on External Beam Radiotherapy Planning and Brachytherapy. She achieved FCPS in Radiotherapy from the Bangladesh College of Physicians & Surgeons (BCPS) in 2015. She has obtained several hands-on pieces of training on Head - Neck, Lung, Genitourina