Skip to main content

থাইরয়েড রোগীদের সঠিক খাদ্যাভ্যাস কেমন হওয়া উচিত?

বিভিন্ন ধরনের উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে শোনা যায় থাইরয়েডের সমস্যা হয়েছে। বর্তমান লাইফস্টাইলে থাইরয়েডের সমস্যা খুব কমন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই রোগ পুরুষদের তুলনায় নারীদের বেশি হয়ে থাকে। এই রোগ ধরা পড়লে নিয়মিত ঔষুধের পাশাপাশি লাইফস্টাইলে, খাওয়া-দাওয়াতেও পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। কিছু কিছু খাবার আছে যা এই রোগীদের জন্য খুবই উপকারী আবার কিছু কিছু খাবার আছে যা একদমই বর্জনীয়। থাইরয়েড রোগীদের খাদ্যাভাস কেমন হওয়া উচিত চলুন তা জেনে নেই আজকের আর্টিকেলে।

থাইরয়েড কী?

এটি হলো একটি অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি। থাইরয়েড গ্রন্থি হরমোন তৈরির মাধ্যমে‌ দেহের প্রায় সকল বিপাকীয় প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে। থাইরয়েডে সমস্যা হলে এই গ্রন্থি সঠিকভাবে হরমোন রিলিজ করতে পারে না ফলে নানাধরণের সমস্যা দেখা দেয়। থাইরয়েডে সমস্যা দেখা দিলে অনেকক্ষেত্রে প্রয়োজনের বেশি হরমোন উৎপাদন করে যাকে বলা হয় হাইপারথাইরয়েডিজম, আবার প্রয়োজনের তুলনায় কম হরমোন উৎপাদন করলে বলা হয় হাইপোথাইরয়েডিজম। দুই ক্ষেত্রেই দেখা যায় রোগীর ওজন বেড়ে কিংবা কমে যেতে থাকে, গরম সহ্য করতে পারে না, বিষন্নতা দেখা দেয়, খুব সহজে ক্লান্ত হয়ে যাওয়া সহ নানাবিধ সমস্যা দেখা দেয়।

থাইরয়েড গ্ল্যান্ড

থাইরয়েড রোগীদের জন্য উপকারী খাবার

চিকিৎসার পাশাপাশি খাদ্যের প্রভাব এই রোগের উপর বেশ ভালোভাবে পরে। থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে খাবারের প্রতি বিশেষ নজর দেওয়ার প্রয়োজন। চলুন জেনে নেই থাইরয়েড রোগীদের জন্য উপকারী কিছু খাবার সম্পর্কে।

আয়োডিনযুক্ত খাবার

শরীরে সঠিকভাবে হরমোন উৎপাদন করতে আয়োডিনের অনেক ভূমিকা রয়েছে। আয়োডিনের অভাবে অনেকসময় হাইপোথাইরয়েডিজমের সমস্যা দেখা দেয়। থাইরয়েডের সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই খাবারের পাতে আয়োডিন সমৃদ্ধ খাবার রাখতে হবে। বিভিন্ন খাবারে আয়োডিন থাকলেও সামুদ্রিক মাছ আয়োডিনের সবচেয়ে বড় উৎস তাই চেষ্টা করতে হবে সামুদ্রিক মাছ খেতে।

ব্রাজিল বাদাম

ব্রাজিল বাদামে প্রচুর পরিমানের ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড ও সেলেনিয়াম থাকে। থাইরয়েডের সমস্যা দেখা দিলে তার প্রভাব পরে কোলেস্টেরলের উপর। ব্রাজিল বাদাম কোলেস্টেরল পরিমান কমিয়ে আনতে সাহায্য করে। ব্রাজিল বাদাম থাইরয়েডে ক্যান্সার হবার ঝুঁকি কমিয়ে আনে, এছাড়া ব্রাজিল বাদামের সেলেনিয়াম ইনসুলিনের পরিমান কমিয়ে আনে যার ফলে থাইরয়েড রোগীদের ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। থাইরয়েডের সমস্যা হলে রোগীদের মধ্যে অনেক সময় বিষন্নতা দেখা দেয় কিন্তু নিয়মিত ব্রাজিল বাদাম খেলে ব্রেইনের স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং বিষন্নতা সহ নানা রকম মানসিক সমস্যা নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।

ডিম

ডিমের উপকারীতা সম্পর্কে সবারই জানা। কিন্তু থাইরয়েড রোগীদের অবশ্যই নিয়ম করে ডিম খাওয়া উচিত। কারণ ডিমে রয়েছে আয়োডিন ও সেলেনিয়াম। মূলত আয়োডিন ও সেলেনিয়ামের অভাবেই থাইরয়েডে সমস্যা দেখা দেয়। ডিম থাইরয়েড ভালো রাখতে সাহায্য করে এবং হরমোনের ভারসাম্য ঠিক রাখে।

ডিম খান

নারকেল তেল

খাঁটি নারকেল তেলের মধ্যে রয়েছে ফ্যাটি এসিড। ফ্যাটি এসিড হরমোনের ঘাটতি পূরনে সাহায্য করে। তাই থাইরয়েডে সমস্যা থাকলে রান্নায় নারকেল তেল ব্যবহার করা উচিত। থাইরয়েড রোগীদের অনেক সময় ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দেখা দেয় সেক্ষেত্রে নারকেল তেল খুব উপকারী। নারকেল তেল হাড়ের ক্ষমতা বাড়ায় এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক রাখে। হরমোন ভারসাম্য হারালে হজমে সমস্যা দেখা দিতে পারে নারকেল তেল হজমের সমস্যা সারিয়ে তুলতে সহায়তা করে। থাইরয়েড রোগীদের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য নারকেল তেল খাওয়া উচিত কেননা এতে দেহের অতিরিক্ত অ্যাবডোমিনাল ফ্যাট কমে যায়।

মাছ

থাইরয়েড রোগীদের ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড খুব উপকারী। মাছে রয়েছে প্রচুর ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। বিশেষ করে স্যামন মাছে। এছাড়া টুনা মাছ ও চিংড়ি মাছে রয়েছে প্রচুর পরিমানের আয়োডিন। যেকোনো ধরনের মাছে রয়েছে ভিটামিন ‘ এ ‘ ও ভিটামিন ‘ ডি ‘।

এই সকল রোগীদের বর্জনীয় খাবার

গয়ট্রোজেনাস জাতীয় খাবার

বাঁধাকপি, ফুলকপি, শিম, সয়াসস, পালংক শাক ইত্যাদি খাবারে রয়েছে প্রচুর পরিমানের গয়ট্রোজেনাস। যা সাধারণত থাইরয়েড রোগীদের খেতে নিষেধ করা হয়। কিন্তু রান্না করলে এইসব খাবার থেকে গয়ট্রোজেনাস কমে যায়। তাই গয়ট্রোজেনাস জাতীয় খাবার খাওয়া যেতে পারে কিন্তু পরিমানমতো।

ক্যাফেইনযুক্ত খাবার

থাইরয়েড রোগী চা বা কফির মতো ক্যাফেইনযুক্ত খাবার থেকে বিরত থাকা উচিত। এটি সাময়িকভাবে আমাদের ক্লান্তিদূর করলেও ক্যাফেইন শরীরের জন্য অনেক ক্ষতিকর। ক্যাফেইন যুক্ত খাবার হজমে সমস্যা সৃষ্টি করে।

জাঙ্ক ফুড

অতিরিক্ত ভাজাপোড়া ও তেল মশলা জাতীয় খাবার আমাদের শরীরের উপর খুব খারাপ ভাবে প্রভাব ফেলে। যাদের থাইরয়েড সমস্যা রয়েছে এইসব খাবার তাদের উপসর্গকে আরো বাড়িয়ে তোলে। এছাড়া থাইরয়েড রোগীদের খুব সহজে ওজন বেড়ে যাওয়া প্রবণতা থাকে, ভাজাপোড়া ও জাঙ্ক ফুড এই প্রবণতাকে আরো বেশি বাড়িয়ে তোলে। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য থাইরয়েড রোগীদের জাঙ্কফুড খাওয়া কমিয়ে দিতে হবে।

হেলদি ফুড হেবিট গড়ে তুলুন

সুগার

চিনি কিংবা চিনিযুক্ত যে কোনো খাবার থাইরয়েড রোগীদের পরিহার করতে হবে। বিশেষ করে বোতলের সফট ড্রিংকস খাওয়া বন্ধ করতে হবে। সফট ড্রিংকসের পরিবর্তে ঘরে তৈরি ফ্রেশ ফলের জুস খাওয়া যেতে পারে কিন্তু তাতে চিনি মেশানো যাবে না।

থাইরয়েড রোগীদের এই সমস্যা দেখা দিলে প্রথমেই খুব আতঙ্কিত হয়ে যান। কিন্তু আতঙ্কিত না হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবন করলে এই রোগ খুব সহজে নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। ঔষধের পাশাপাশি আপনার ডায়েট চার্ট এর প্রতিও কিছুটা খেয়াল রাখতে হবে। তাই নিজের মধ্যে থাইরয়েডের কোনো উপসর্গ দেখলে দেরি না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে সঠিক চিকিৎসা নেয়া প্রয়োজন।

ছবিঃ সাটারস্টক।

The post থাইরয়েড রোগীদের সঠিক খাদ্যাভ্যাস কেমন হওয়া উচিত? appeared first on Shajgoj.



from Shajgoj https://ift.tt/RULs4zx
Apsara Hossain

Comments

Popular posts from this blog

স্ট্রেসের কারণে একনে বা প্রিম্যাচিউর এজিং সাইনস দেখা দিচ্ছে না তো?

আপনি যখন এই লেখাটি পড়ছেন তখন আমি বুঝতেই পারছি আপনার হাতে টেকনোলজির সুবিধা রয়েছে। যার কারণে আপনি এখন চাইলেই যে কোনো ভিডিও দেখতে পারেন, যে কোনো তথ্য সম্পর্কে জানতে ইন্টারনেটে সার্চ করতে পারেন। জীবন আগের চেয়ে এখন অনেক সহজ। তারপরও কিন্তু আমরা সবাই কমবেশি স্ট্রেসের মধ্য দিয়ে যাই। আর এই স্ট্রেস মানসিকভাবে আমাদের যতটা অসুস্থ করে দিচ্ছে, ঠিক ততটাই এফেক্ট ফেলছে আমাদের স্কিনের উপর। যেমন- স্ট্রেসের কারণে একনে বা প্রিম্যাচিউর এজিং সাইনস দেখা দিচ্ছে, সেই সাথে হচ্ছে ত্বকের নানা সমস্যা। স্ট্রেস কতভাবে স্কিনের উপর প্রভাব ফেলে এবং কীভাবে স্ট্রেস কমিয়ে আনা যায় তা নিয়েই আলোচনা করবো আজ। স্ট্রেস কেন হয়? বিভিন্নভাবে স্ট্রেস হতে পারে। যেমন- এনভায়রনমেন্টাল বা টেম্পারেচার চেঞ্জ (এক্সটার্নাল ফ্যাক্টর)। ধরুন আপনি অনেকটা সময় ঠান্ডা রুমে ছিলেন। হুট করে যখন গরম পরিবেশে চলে আসলেন তখন শরীরে একটা স্ট্রেস হয়। আবার আর্থিক অবস্থা, লেখাপড়া, পারিবারিক সমস্যা ইত্যাদির কারণে সাইকোলজিক্যাল স্ট্রেস দেখা দেয়। স্ট্রেস এমন একটি বিষয় যেটার সাথেও আমরা থাকতে পারি না, যেটা ছাড়াও আমাদের থাকা সম্ভব নয়। সময়ের সাথে সাথে আমরা বেশ আধু

কীভাবে পারফেক্টলি ক্যামেরা বন্দী করা যায় সুন্দর মুহূর্তগুলো?

একটা সময় ছিল, যখন ছবি তোলা বা কারো কাছে ক্যামেরা থাকা যেন বড়সড় ব্যাপার। স্টুডিওতে যেয়ে ছবি তুলতে হতো বা কোনো কিছুর ছবি, ভিডিও এত সহজ ছিল না। অনেকদিন অপেক্ষা করে হাতে ছবি পাওয়া যেতো এবং সেটা অ্যালবামে যত্নের সাথে সংরক্ষণ করা হতো। আর এখন ছবি তোলা অনেক সহজ। বাজারের বিভিন্ন মডেলের ক্যামেরা বা হাই মেগাপিক্সেল সম্পন্ন ফোন সবার হাতে হাতে। আমরা এখন চাইলেই আমাদের সুন্দর সময়গুলোর বা শখের কাজ কিংবা ঘুরতে যেয়ে মনোমুগ্ধকর প্রকৃতির ছবি, ভিডিও ক্যামেরা বন্দী করতে পারি। এখন কীভাবে পারফেক্টলি ক্যামেরা বন্দী করা যায় সুন্দর মুহূর্তগুলো তা নিয়েই টুকিটাকি টিপস শেয়ার করবো আপনাদের সাথে। ক্যামেরা নিয়ে কিছু বেসিক ধারণা যেকোনো ডিভাইস ব্যবহার করার পূর্বে তার সম্পর্কে ধারণা নেওয়া জরুরী। অনেক সময় দেখা যায় একটা ডিভাইস সম্পর্কে ঠিকভাবে না জানার কারণে ছবি তুলতে গিয়ে আমরা অনেক অপশন মিস করে ফেলি। ফলস্বরূপ ছবি সুন্দর হয় না। এই জন্য ম্যানুয়ালটায় একবার চোখ বুলিয়ে নিতে পারেন। তবে ম্যানুয়াল পড়াটা অনেকের কাছে বিরক্তিকর লাগে। তাই বিভিন্ন ফিচার নিয়ে যদি বারবার প্র্যাকটিস করা যায় তাহলে ফটোগ্রাফি বিষয়টা সহজে আয়ত্তে আসে। এখন

Dr. Fariah Sharmeen - Woman Oncology Specialist

Dr. Fariah Sharmeen Specialty - Associate Consultant, Oncology Degree - MBBS, FCPS (Radiotherapy) Chamber: SQUARE Hospitals Ltd. Dhaka Address: 18/F Bir Uttam Qazi Nuruzzaman Sarak, West Panthapath, Dhaka - 1205, Bangladesh Call For Appointment 10616 Call Now About: Dr. Fariah Sharmeen successfully completed her MBBS from Cumilla Medical College, and subsequently completed a one-year internship at BIRDEM Hospital, Dhaka. After completing of the internship, she started her post-graduate training in Medical Oncology at the National Institute of Cancer Research & Hospital. She started her fellowship in Radiotherapy in 2010. She completed 4 years of training at the National Institute of Cancer Research & Hospital on External Beam Radiotherapy Planning and Brachytherapy. She achieved FCPS in Radiotherapy from the Bangladesh College of Physicians & Surgeons (BCPS) in 2015. She has obtained several hands-on pieces of training on Head - Neck, Lung, Genitourina