আমাদের সবারই জীবনে একটি লক্ষ্য থাকে। লক্ষ্য ছাড়া জীবনকে বলা হয় বৈঠা ছাড়া নৌকার মতো। লক্ষ্য নির্ধারণ করে রাখলে চলার পথ কিছুটা হলেও সহজ হয়ে যায়। কোনো কিছুই কিন্তু খুব সহজে অর্জন করা যায় না, লক্ষ্যে পৌঁছতে হয় অনেক বড় এক জার্নির মাধ্যমে। আমরা খুব উৎসাহ সহকারে যেকোনো জার্নি শুরু করলেও শেষ পর্যন্ত মোটিভেশন কিংবা ধৈর্য ধরে রাখতে পারি না। কিছুদিনের মধ্যেই দেখা যায় আমাদের মোটিভেশন কমে যায় এবং আমরা আমাদের লক্ষ্যের কথা ভুলে যাই। নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছানোর আগ অব্দি নিজের মোটিভেশন ধরে রাখা হচ্ছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের কাজ। তাই আজ আমরা জানবো জীবনের লক্ষ্য অর্জনের কিছু পদক্ষেপের কথা।
জীবনের লক্ষ্য অর্জনের কিছু পদক্ষেপ
বাস্তবধর্মী লক্ষ্য নির্ধারণ করুন
অনেক সময় আমরা অবাস্তব লক্ষ্য নির্ধারণ করি যা করা আমাদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পরে, তখন কিছুদিন যাওয়ার পর হাল ছেড়ে দেই। ধরেন কেউ ওজন কমাতে চায় এবং সে যদি লক্ষ্য নির্ধারণ করে যে সে দশ দিনে দশ কেজি ওজন কমাবে যা অসম্ভব। ওজন কমানোর জন্য প্রয়োজন সঠিক ডায়েট প্ল্যান ও ধৈর্য। তাই প্রথমে যতটুকু আপনাকে দিয়ে সম্ভব ঠিক ততটুকুই লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে।
ছোট ছোট পদক্ষেপ নিন
আপনি যদি পরিকল্পনা করেন আপনি ব্যায়াম করবেন তাহলে “আমি টানা এক মাস ব্যায়াম না করে নিজেকে বলুন আমি এক সপ্তাহ ব্যায়াম করব “। যেকোনো লক্ষ্যকে খুব বড় করে না ভেবে ছোট ছোট পদক্ষেপে এগিয়ে গেলে ব্যাপারটা সহজ হয়ে যায়। কথায় আছে নিচু থেকে উপরে তাকিয়ে পাহাড় দেখতে নিলে মনে হয় পাহাড় খুব উঁচু কেউ উঠতে পারবে না। তাই প্রথমেই পাহাড়ে দিকে না তাকিয়ে পাহাড়ে উঠার প্রথম সিঁড়িতে পা রাখুন।
নিজেকে উপহার দিন
ছোট ছোট পদক্ষেপ নিয়ে তা যদি পালন করতে সফল হন তাহলে নিজেকে উপহার দিন। উদ্দেশ্যে সফল হলে প্রিয় কোনো খাবার খেতে পারেন বা নিজেকে শখের কো্নো কিছু কিনে দিতে পারেন। এতে কাজের প্রতি আগ্রহ আসবে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমরা ছোটখাটো সফলতাগুলোকে গুরুত্ব দেই না, কিন্তু প্রতিটি ছোট বড় সফলতা উপভোগ করতে হবে।
ডায়েরি লেখার অভ্যাস করুন
প্রথমে ডায়েরিতে লিখে ফেলুন আপনার লক্ষ্য কী, ঠিক কত দিনে আপনি আপনার লক্ষ্য পূরণ করতে চান এবং আপনার লক্ষ্যের পথে কী কী বাঁধা আসতে পারে। যখন আপনি কোথাও গুছিয়ে লিখে ফেলবেন তখন আপনার কাছে আপনার লক্ষ্যে পৌঁছানোটা সহজ মনে হবে। আপনার জার্নিতে যদি আপনি কোনো ভুল কিছু করে থাকেন তাও সাথে সাথে ডায়েরিতে লিখে ফেলুন।
অন্যের সাথে নিজেকে তুলনা করবেন না
হতে পারে আপনার থেকে কম পরিশ্রম করেও কম সময় অনেকে নিজের লক্ষ্যে পৌঁছে গেছে। তা দেখে হতাশ হওয়া যাবে না কারণ তার সফলতার পেছনের গল্প তো আপনি জানেন না। আমাদের প্রত্যেকের লক্ষ্য ও জার্নি দুটোই আলাদা তাই নিজেকে অন্যের সাথে তুলনা না করে, নিজের পরিকল্পনা অনুযায়ী পথ চলতে হবে।
অন্যের সহযোগিতা নিন
কোনো জার্নি একা একা সম্পন্ন করা সম্ভব না। তাই কোনো সমস্যার সম্মুখীন হলে অবশ্যই বিশ্বস্ত কারো সাথে কথা বলতে হবে। বিশেষ করে তাদের সাথে যারা আপনার নির্দিষ্ট লক্ষ্যে ইতিমধ্যে পৌঁছে গেছে। কারণ যারা আপনার পথ অতিক্রম করে চলে গিয়েছে তারা আপনাকে ভালো পথ নির্দেশনা দিতে পারবে। তাই আপনি যাদের বিশ্বস্ত মনে করেন তাদের সাথে কথা বলুন।
কেন শুরু করেছিলেন তা মনে রাখুন
অনেক সময় কোনো লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য কাজ করতে করতে হঠাৎ অনুপ্রেরণা হারিয়ে যায়। তখন আর নিজেকে বা নিজের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করতে ইচ্ছে করে না। ঠিক সেই সময় চিন্তা করুন আপনি কেন শুরু করেছিলেন এবং এই কাজে সফল হতে পারলে আপনার জীবনে কী কী পরিবর্তন আসবে। আপনার নির্দিষ্ট লক্ষ্যের উদ্দেশ্য এর ফলাফল চিন্তা করলে আবার অনুপ্রেরণা ফিরে পাওয়া যাবে।
ইতিবাচক চিন্তা করুন
আমাদের জীবনে ইতিবাচক চিন্তার অনেক প্রভাব রয়েছে। তাই যেকোনো পরিস্থিতে নিজেকে কাউন্সেলিং করতে হবে। ” আমাকে দিয়ে হবে না ” জাতীয় কথা নিজেকে বলা পরিহার করতে হবে। যেকোনো লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য প্রথমেই নিজের উপর আস্থা ও বিশ্বাস রাখতে হবে। মানসিক শক্তির অভাবে অনেকেই লক্ষ্যের কাছাকাছি গিয়েও ফিরে আসে তাই সবসময় ” চেষ্টা করলে আমিও পারব ” বলে নিজের মস্তিষ্ককে ইতিবাচক বার্তা দিতে হবে।
সঠিক বন্ধু নির্বাচন করুন
তাদের সাথেই বন্ধুত্ব করুন যে আপনাকে লক্ষ্যে পৌঁছতে সাহায্য করবে। অনেক সময় কাউকে নিজের লক্ষ্যের কথা শেয়ার করলে তারা নেতিবাচক মন্তব্য করে আমাদের অনুপ্রেরণাকে আরো কমিয়ে দেয় কিংবা আপনার ইচ্ছেকে নিয়ে হাসাহাসি করে। এসব সব সঙ্গ ত্যাগ করা উচিত।
ব্যর্থতাকে মেনে নিতে হবে
অনেকে ব্যর্থতাকে মানতে পারে না। কোনো ভুল করে ফেললে নিজেকে ছোট মনে করে। যারা নিজেদের লক্ষ্যে পৌঁছে গেছে তাদের গল্প শুনলেও জানা যাবে অনেক ভুল করেই তারা আজ এই পর্যন্ত এসেছে। তাই নিজের জার্নিতে মাঝেমধ্যে কোনো ভুল করলে বা ব্যর্থ হলে তা মেনে নিয়ে পরের দিন আবার নতুন করে শুরু করতে হবে।
মেডিটেশন করতে পারেন
যেকোনো লক্ষ্যে অটুট থাকা অনেক বেশি জরুরী। বেশিরভাগ মানুষই নিজের লক্ষ্য স্থির থাকতে পারে না। একবার ব্যর্থ হলে চেষ্টা ছেড়ে দিয়ে নতুন লক্ষ্য নির্ধারণ করে এবং প্রতিনিয়ত অস্থিরতায় থাকে। মনকে শান্ত করতে মেডিটেশন করতে পারেন। মেডিটেশন আমাদের ধৈর্য বাড়ায় ও দীর্ঘ সময় কাজে মনোযোগ দিতে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিন মেডিটেশন করার অভ্যাস গড়ে নিতে পারেন।
মনে রাখতে হবে প্রতিদিন নিজেকে নিজেরই সবচেয়ে বেশি অনুপ্রাণিত করতে হবে। জীবনের লক্ষ্য স্থির করে সঠিক নির্দেশনা মেনে কাজ করলে যে কোনো লক্ষ্যে খুব সহজে পৌঁছানো সম্ভব। প্রতিদিন অনুপ্রাণিত থাকা কোনো মানুষের পক্ষেই সম্ভব না। মাঝেমধ্যে নিরাশ কিংবা কোনো কাজ করার আগ্রহ না পাওয়াটা খুবই স্বাভাবিক৷ কিন্তু তাই বলে নিজের লক্ষ্য থেকে সরে যাওয়া যাবে না।
ছবিঃ সাজগোজ, সাটারস্টক।
The post জীবনের লক্ষ্য অর্জনের জন্য কোন কোন পদক্ষেপগুলো নেওয়া উচিত appeared first on Shajgoj.
from Shajgoj https://ift.tt/jVDbmog
Apsara Hossain
Comments
Post a Comment