Skip to main content

পায়ের গোড়ালি ফাটা কেন হয় এবং এর প্রতিরোধে করণীয় কী কী?

শীত এসেছে আর পায়ের গোড়ালি ফাটেনি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া বেশ বিরল। পায়ের গোড়ালি ফাটা এর কারণে সমস্যা যে শুধু সৌন্দর্য ক্ষুণ্ণতার, তা কিন্তু নয়। বরং এই গোড়ালি ফাটা অনেক ক্ষেত্রেই হতে পারে অন্য কোনো লুকানো রোগের লক্ষণ। এছাড়াও ফেটে যাওয়ার কারণে ব্যথা হওয়া বা চলাফেরায় অসুবিধা হওয়া তো আছেই। শীতের আগমন বার্তা পেলেই তাই বেশ সচেতন হয়ে যান, সারাবছর স্কিন কেয়ার না করা মানুষটিও এই সময় রাতে একবার, দুপুরে একবার নিয়ম করে পুরু লেয়ারে ভ্যাসলিন বা লোশন লাগিয়ে নেন পায়ে। কিন্তু সমাধান তো তখনই হবে যখন আসল কারণ খুঁজে সেই অনুযায়ী সমাধানের পথে যাওয়া হবে। তাই চলুন আগে বিজ্ঞান কী বলে পা ফাটার কারণ নিয়ে সেগুলো জেনে আসি, এরপর সমাধানটাও বের করি।

পায়ের গোড়ালি ফাটার কারণ

পা ফাটার সমস্যা আজকে নতুন নয়। আপনি, আমি বা আমাদের পরিবারের মোটামুটি সবাই জীবনের কোনো না কোনো সময়ে এই সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন। ছেলে হোক বা মেয়ে, সবার জন্য এই সমস্যা কমন। পা ফাটলে দেখতে তো খারাপ লাগেই, পা ঢাকা জুতো ছাড়া তখন বাইরে বেরোনোটাও দায় হয়ে যায়। পা ঢেকে না হয় লোকলজ্জা এড়ানো গেলো কিন্তু সমস্যা তো এড়াতে পারছেন না। তাই চলুন আগেভাগে জেনে আসি কারণগুলো কী।

ডিহাইড্রেশন এর ফলে পা ফাটা হয়

 

ডিহাইড্রেশন

পা ফাটার কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ডিহাইড্রেশন। শরীরে যখন পানিশূন্যতা হবে তখন স্বাভাবিকভাবেই পা ফাটবে, এছাড়াও অতিরিক্ত শুষ্ক পরিবেশে থাকার কারণেও পায়ের চামড়া ফেটে যেতে পারে।

নিউট্রিশনের অভাব

শরীরে নিউট্রিশনের অভাব হলে সেটাও পা ফাটার একটা কারণ হতে পারে। শুনতে অবাক লাগলেও এটা সত্য। আমাদের ত্বকের জন্য ভিটামিন বি ও সি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তাই যখন এই দুই ভিটামিন শরীরে কমে যায় তখন স্বভাবতই তার প্রকাশ পায় পায়ের চামড়া ফেটে যাওয়ার মাধ্যমে।

বাহ্যিক পরিবেশ

দীর্ঘসময় ধুলোবালির মধ্যে কাজ করা, ক্ষেত খামারে কাজ করা এগুলোর কারণেও পায়ের গোড়ালি ফেটে যেতে পারে৷

ব্যক্তিগত অভ্যাস

দীর্ঘসময় খালি পায়ে কাজ করা পায়ের গোড়ালি ফেটে যাওয়ার অন্যতম একটি কারণ। খালি পায়ে কাজ করলে ত্বকে ঘর্ষণের পরিমাণ বেড়ে যায়, ফলে পা ফেটে যায়। এছাড়াও দীর্ঘক্ষণ জুতা না পরা, শক্ত জুতা পরাও পা ফেটে যাওয়ার কারণ হতে পারে।

পা ফাটার পিছনে থাকতে পারে কিছু রোগ

এগুলো ছাড়াও বেশ কিছু রোগের কারণে পা ফাটা দেখা দিতে পারে। এসব রোগগুলো আমাদের খুব পরিচিত না বলে আমরা সেভাবে এগুলোর ব্যাপারে কথা বলি না, কিন্তু এসব ব্যাপারে না জানা হতে পারে পা ফাটা থেকেও বড় কোনো রোগের সূচনা।

সোরিয়াসিস এর কারণে ক্র্যাক হিল হয়

পামোপ্ল্যান্টার কেরাটোডার্মা

এই রোগটি জিনবাহিত। এই রোগের ক্ষেত্রে রোগীর চামড়া পুরু ও শক্ত হয়ে যায়। পুরু ও শক্ত চামড়া খুব সহজেই ফেটে যায়। ফাটা জায়গা দিয়ে রক্ত বের হওয়া তো খুব স্বাভাবিক। তবে মূল সমস্যা যেটা হয় তা হলো এই ফাটা জায়গা দিয়ে বিভিন্ন জীবাণু শরীরের মধ্যে ঢোকে আর সে থেকে শুরু হয় নানা ধরনের ইনফেকশন বা প্রদাহ।

সোরিয়াসিস

এটি একটি অটো ইমিউন রোগ, এই রোগের ক্ষেত্রে ত্বকের উপরিভাগে চাকা চাকা হয়ে যায়, প্রচন্ড চুলকানি হয়, চামড়া ওঠে। হাতের বা পায়ের তালুতে যদি সোরিয়াসিস হয় সেক্ষেত্রে চামড়া উঠে যায় এবং ভেতরের লালচে মাংসপেশি দেখা যায়।

পিটিরিয়াসিস রুব্রা পিলারিস

এই রোগটি জিনঘটিত, সোরিয়াসিসের মতো এটাতেও চামড়া উঠে যায় এবং চুলকানি হয়।

ক্র্যাক হিল প্রতিরোধে ঘরোয়া টিপস ফলো করুন

ক্র্যাক হিল প্রতিরোধের উপায়

পা ফাটা রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে একমাত্র ও প্রধান কাজ হলো পা পরিষ্কার ও মসৃণ রাখা। এটি নিশ্চিত করতে পারলেই প্রতিরোধ হবে অনাকাঙ্ক্ষিত পা ফাটা। কীভাবে প্রতিরোধ করা যায় তা নিয়ে কিছু ধারণা দেওয়া হলো নিচে-

১. খালি পায়ে চলাফেরা না করা।

২. এমন জুতা পরিধান করা যেটা একইসাথে নরম ও আরামদায়ক।

৩. প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা। যারা এসি রুমের মধ্যে বেশিরভাগ সময় থাকেন তাদের জন্য এই ধাপ আরও সতর্কতার সাথে পালনীয়।

৪. গোসলের পরে বা পা ধোয়ার পরে ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করতে ফুট ক্রিম বা লোশন ব্যবহার করা। চাইলে নারকেল তেল বা অলিভ অয়েলও মালিশ করতে পারেন। এতে করে রক্ত সঞ্চালনও ভালো হবে।

৫. ঝামা পাথর বা পিউমিস স্টোন দিয়ে পায়ের ত্বকের ডেড সেল বা মরা কোষগুলোকে পরিষ্কার করে ফেলা এবং পা ধুয়ে নেয়ার পরে নারকেল তেল/অলিভ অয়েল/ভালো ব্র‍্যান্ডের ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা।

৬. পা ফাটার সমস্যা বেশি হলে রাতে ঘুমানোর আগে পায়ে ভ্যাসলিন লাগিয়ে মোজা পরে ঘুমানো।

৭. শীতের আমেজ শুরু হলেই পায়ে মোজা পরার অভ্যেস শুরু করে দিন, এতে করে শুষ্ক আবহাওয়া থেকে ও ধুলোবালি থেকে ত্বক রক্ষা পাবে।

পায়ের গোড়ালি ফাটা রোধে ঘরোয়া টিপস ফলো করতে পারেন

ক্র্যাক হিল রোধে কিছু ঘরোয়া উপায়

খুব জলদি দুটো ঘরোয়া উপায় দেখে নিই চলুন। এই উপায়গুলো পা রাখবে সুন্দর, মসৃণ এবং সাথে পা ফাটাকে রাখবে আপনার থেকে বেশ দূরে।

১. একটি বালতি নিয়ে এর অর্ধেকটা কুসুম গরম পানি দিয়ে ভরে ফেলুন, পানির তাপমাত্রা যেন আপনার সহনীয় মাত্রার মধ্যে থাকে সেটা অবশ্যই খেয়াল রাখবেন। এরপর এতে কয়েক চিমটি লবণ মিশিয়ে নিয়ে পা ডুবিয়ে রাখুন আধঘন্টা। এতে করে পায়ের চামড়া নরম হবে, একইসাথে হাইড্রেটেড থাকবে।

২. একটি বাটিতে সমপরিমাণে গ্লিসারিন ও গোলাপজল নিয়ে নিন। ভালোভাবে দুটি উপাদান মিশিয়ে নিয়ে পায়ে লাগিয়ে রেখে দিন সারারাত, সকালে উঠে ধুয়ে ফেলুন। গ্লিসারিন ত্বককে মসৃণ করে। গোলাপজলে আছে নানা অ্যান্টি অক্সিডেন্টস, যা ত্বকে পুষ্টি জোগায়।

নিজেকে ভালোবাসলে ও আগে থেকেই একটু সচেতন হলে পায়ের গোড়ালি  ফাটা সহ সব ধরনের সমস্যা দূরে থাকবে আপনার ত্বক থেকে। তাই প্রচুর পানি পান করুন এবং ত্বককে দিন সেই ভালোবাসাটুকু যেটা আপনার ত্বক ডিজার্ভ করে।

ছবিঃ সাটারস্টক।

The post পায়ের গোড়ালি ফাটা কেন হয় এবং এর প্রতিরোধে করণীয় কী কী? appeared first on Shajgoj.



from Shajgoj https://ift.tt/NxOfWqj
Apsara Hossain

Comments

Popular posts from this blog

রেগুলার ব্রা vs পুশ-আপ ব্রা | সঠিক ইনার ওয়্যার কীভাবে সিলেক্ট করবেন?

রেগুলার ব্রা আর পুশ-আপ ব্রা, এই দু’টার মধ্যে আসলে পার্থক্য কী আর কখন কোনটা ইউজ করতে হবে, এই বিষয়গুলো আমাদের অনেকেরই অজানা। আমাদের অ্যাকটিভিটি আর আউটফিটের সাথে ইনার ওয়্যারেও ভ্যারিয়েশন আসে। যেমন সকালে ঘুম থেকে উঠে ওয়ার্ক আউট করছি, এরপর ভার্সিটি বা অফিসে যাচ্ছি, সন্ধ্যায় পার্টি অ্যাটেন্ড করছি। সব সময় কি আমরা সেইম ব্রা পরি? না তো! শাড়ি পরলে এক ধরনের ব্রা পরি, জিমে গেলে অন্য ধরনের ব্রা পরি, বাসায় থাকলে আবার আরেক রকম! কখন কোন ব্রা পরা উচিত বা কোন ড্রেসের সাথে কোনটা মানাবে এই বিষয়গুলো নিয়ে অনেকেরই কনফিউশন আছে। এই বিষয়গুলো এখনও অনেকের কাছেই ট্যাবু। দিন বদলাচ্ছে, এই সামাজিক ট্যাবু থেকে বেরিয়ে আসতে হবে সবাইকে। লঞ্জেরি মেয়েদের জন্য বেসিক একটি জিনিস। তাই লঞ্জেরির ক্যাটাগরিটা আমাদের জেনে রাখা উচিত। পুশ-আপ ব্রা কেন ইউজ করে, এটাই এখনও অনেক মেয়েরা জানে না! রেগুলার ব্রা এর সাথে সাথে নিজের কালেকশনে পুশ-আপ ব্রা কেন রাখা উচিত, সেটা কিন্তু অনেকে বুঝতে পারে না। চলুন এই কনফিউশনগুলো আজ দূর করা যাক। রেগুলার ব্রা vs পুশ-আপ ব্রা    বেসিক রেগুলার ব্রা-এর ক্ষেত্রে ফেব্রিক ম্যাটেরিয়াল ও কমফোর্টের বিষ...

বিবি ক্রিম vs সিসি ক্রিম | স্কিন টাইপ অনুযায়ী কোনটি আপনার জন্য স্যুইটেবল?

ন্যাচারাল মেকআপ লুকের জন্য এখন বিবি ক্রিম ও সিসি ক্রিম বেশ জনপ্রিয়। পার্টি মেকআপ বা ফুল কভারেজ মেকআপের ক্ষেত্রে ফাউন্ডেশন ইউজ করা হয়। কিন্তু যারা রেগুলার হালকা মেকআপ করে বাইরে বের হন, তাদের জন্য বেস্ট অপশন হচ্ছে BB বা CC ক্রিম । কিন্তু আমরা অনেকেই বুঝতে পারি না যে স্কিন টাইপ ও কনসার্ন অনুযায়ী কীভাবে রাইট প্রোডাক্টটি সিলেক্ট করতে হবে। এই দু’টি মেকআপ প্রোডাক্টের বেনিফিট বা কার্যকারিতা নিয়ে আজকের ফিচার। এগুলোর মধ্যে বেসিক ডিফারেন্সটা আসলে কোথায়, সেটাও জানা হয়ে যাবে। বিবি ক্রিম BB (Beauty Balm, Blemish Balm) ক্রিম স্কিনকে ইভেন টোনড করে এবং ব্লেমিশ হাইড করে ফ্ললেস লুক দেয় নিমিষেই। এতে স্কিন ময়েশ্চারাইজিং ও হাইড্রেটিং এলিমেন্টস থাকে, যার কারণে ড্রাই বা নরমাল স্কিনের জন্য এটি একদম পারফেক্ট। এর টেক্সচার ফাউন্ডেশনের থেকে লাইট, তাই কভারেজটাও হয় একদম ন্যাচারাল। মানে একদমই হেভি ফিল হয় না, আর স্কিনটাও পিকচার পারফেক্ট দেখায়। অনেক বিবি ক্রিমে সান প্রোটেকশন ফ্যাক্টর বা SPF থাকে। সিসি ক্রিম CC (Color Corrector, Complexion Corrector) ক্রিমের ফর্মুলা লাইট ওয়েট ও লং লাস্টিং। ম্যাট ফর্মুলার হওয়াতে অয়েল...

লো পোরোসিটি চুল | কীভাবে চিনবেন এবং সঠিক যত্ন নিবেন?

একরাশ সুন্দর ও ঝলমলে চুল কে না চায়? কিন্তু অনেক সময় সঠিক যত্নের অভাবে সুন্দর চুলগুলো দিন দিন নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ে। চুলের যত্নের ক্ষেত্রে আমাদের সবচেয়ে সবচেয়ে বড় ভুল হলো পোরোসিটি না বুঝে হেয়ার কেয়ার করা। এতে করে চুল আরো ড্যামেজ হওয়ার চান্স থাকে। আজকের ফিচারটি মূলত লো পোরোসিটি হেয়ার কেয়ার নিয়ে। লো পোরোসিটি চুল কীভাবে বুঝবো, কীভাবে যত্ন নিতে হবে, কী ব্যবহার করা যাবে ও যাবেনা ইত্যাদি বিস্তারিত জানবো আজকের ফিচারে। লো পোরোসিটি বলতে কী বোঝানো হয়? পোরোসিটি শব্দের বাংলা অর্থ হচ্ছে ছিদ্র। ত্বকে যেমন অসংখ্য পোর বা ছিদ্র থাকে, চুলের ক্ষেত্রেও কিন্তু তাই রয়েছে। অর্থাৎ প্রতিটি চুলে অসংখ্য ছিদ্র বিদ্যমান, যার মাধ্যমে চুলে আর্দ্রতা প্রবেশ করে এবং চুল আর্দ্রতা ধরে রাখার চেষ্টা করে। একেই হেয়ার পোরোসিটি বলে। পোরোসিটি ৩ রকম, হাই, মিডিয়াম ও লো। এই হেয়ার পোরোসিটির মাত্রা প্রত্যেক মানুষের ক্ষেত্রে আলাদা হয়ে থাকে। লো পোরোসিটির চুলগুলো কম ছিদ্র সম্পন্ন হয়ে থাকে। লো পোরোসিটি চুলের কিউটিকল লেয়ার খুব শক্ত ভাবে সংযুক্ত থাকে। যার ফলে এ ধরনের চুল আর্দ্রতা সহজে গ্রহণ করতে পারেনা, তবে একবার আর্দ্রতা গ্রহণ করলে এ ধরনের...